আগুন কেন লাগবেনা ??????
আমি বুঝিনা, কিছুতেই বুঝতে পারিনা, ঘরবাড়ীতে আগুন লাগার ঘটনায় প্রথমেই সকল সংস্থার হোমরা-চোমরারা রাজউকের বিল্ডিং কোড মেনে ইমারতটি বানানো হয়েছিলো কিনা তা খুঁজতে গিয়ে আকাশ-পাতাল এক করে ফেলেন কেন? মিডিয়ার লোকেরাও সেই ইমারতের প্লানিং পাশ করা আছে কি নেই, থাকলে কে তা পাশ করেছে , কেন করেছে, পরিদর্শন করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে পি.এইচ.ডি থিসিস রচনায় বসে যান।
আমাকে কেউ কি বলবেন – রাজউকের পাশ করা প্লানিং দেখে আগুন লাগা কি বন্ধ হয় নাকি প্লান অনুমোদিত না হলে সেখানেই শুধু আগুন লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ?
আগুন যে রাজউক এর প্লানিং আর বিল্ডিং কোড দেখে লাগেনা একথা সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে বোঝাবেন কে? বহুতল ইমারতের কমপ্লায়েন্স এর খুটিনাটি - ইলেক্ট্রিক ফ্যাসিলিটিজ সমূহের সুচারু নিরাপত্তা, ফায়ার সিকিউরিটির হাল নাগাদ সক্ষমতা, দাহ্য পদার্থের পরিমান, পর্যাপ্ত পানি (ষ্প্রিঙ্কলার) ও বালুর ব্যবস্থা, ইমার্জেন্সি এস্কেপওয়ের রক্ষাবেক্ষন, লিফট-সিড়ি সহ মূল ইমারত থেকে বেরুনোর প্রশস্ত নির্গমনপথের (যেখানে অধিকাংশ ফ্লোরেই কোলাপসিবল গেট তালা মারা থাকে) সার্বক্ষনিক উন্মুক্ততা আছে কি নেই এই গুলো নিয়ে কাউকে কথা বলতে শুনিনা। আগুন লাগার হাযারো কারন থাকতে পারে কিন্তু সে আগুনের হাত থেকে বাঁচার একটি রাস্তাও থাকবেনা , একটি উপায়ও রাখা হবেনা তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনা। মিডিয়ার লোকজনদেরও তেমন করে বলতে শুনিনি, “দূর্ঘটনার জন্যে দায়ী সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে দোষী সাবস্ত্য করে শাস্তির আওতায় আনা হবে কিনা” এমন প্রশ্ন করতে। তারা কখনও জানতে চেয়েছেন কিনা, বিল্ডিং কোডে জানমালের নিরাপত্তার জন্যে রাজউক কি কি বিধান সংযুক্ত করেছেন এবং তা মেনে চলার গ্যারান্টি ক্লজ কিছু আছে কিনা সেখানে। ফিজিক্যাল ইন্সপেকশান তো পরের কথা।
এরকম ঘটনা ঘটার পরপরই এর দোষ ওর ঘাড়ে চাপানোর সংস্কৃতিতে যেটা বলে পার পাওয়া যায় তা হলো- “রাজউকের বিল্ডিং কোড মেনে ইমারতটি বানানো হয়নি” এই এস্কেপগোট বাক্যটির আকছার ব্যবহার। যাতে সাধারন পাবলিক দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দোষ না খুঁজে ইমারতের মালিকের দোষটাই বড় করে দেখেন। এতেই আসল অপরাধীরা ফাঁকতালে বেরিয়ে যেতে পারে নির্বিধায় এবং যায়ও।
আমাকে কেউ বলবেন কি, বনানীর কামাল আতাতুর্ক রোডের প্রায় বিল্ডিংয়েরই হয় প্রবেশ পথ কোলাপসিবল গেট দিয়ে বন্ধ, নয় পেছনের গেট বন্ধ থাকে, কেন? প্রবেশ বা বেরুনোর গেট যদি বন্ধই থাকে তবে উর্দিপড়া সিকিউরিটির লোক রেখে লাভ কি ? এ তো জেনে-শুনে-বুঝে একটি মৃত্যু ফাঁদ তৈরী করে রাখা যেখানে বিল্ডিংগুলো পুরনো ঢাকার মতো গায়ে গায়ে লাগানো!
বৈদ্যুতিক আর অন্যান্য সার্ভিস সংযোগ গুলো যে কি ভয়ঙ্কর ভাবে জট লাগানো তা মনে হয় কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবেনা। বনানী কেন সারা দেশেই এই একই অবস্থা।
গুলশানের চিত্র এমন। প্রতিমূহুর্তে বিপদের ঝুঁকি..................
এই যে গুলশান কাঁচা বাজারে আগুন লাগার পরপরই কেউ বললেন – যে কোনও মূল্যে মার্কটটি ভেঙে শপিংমল বানাতে হবে। শপিংমল বানালেই জিন্দেগীতে আর আগুন লাগবেনা ওখানে, এই রকম থিসিস আমি আসলেই বুঝিনি। কেউ আমাকে বুঝিয়ে বলবেন ?
তৎক্ষনাৎ প্রতিক্রিয়ায় খোদ পূর্তমন্ত্রী সহ উত্তরের মেয়রও জোর দিলেন, বিল্ডিং কোড না মানার কারনে বিল্ডিংয়ের মালিকের (তাও আবার অবৈধ অংশটুকুর সম্ভবত) কঠিন থেকে কঠিন শাস্তির বিধান নিশ্চিত করবেন। অবশ্য পরে পূর্তমন্ত্রী বলেছেন , এমন দূর্ঘটনার জন্যে মালিক, ডেভেলপার এমনকি রাজউক এর কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।
আরো ভালো হতো যদি উনি বলতেন, যে কোনও দূর্ঘটনার সব কারন চিহ্ণিত করে তা দূর করার ব্যবস্থা করবেন।
আমি বুঝিনা, যে কোনও স্থানে আগুন লাগার অনুঘটকগুলোকে দুর করা ও সাথে সাথে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কথা উপর মহলের কেউ বলেন না কেন ? ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে কি হবে, ঘাতক বিষয়গুলোকে যথা সম্ভব দূরীভূত করার প্রচেষ্টা কেন নেই ?
মহাখালির চিত্র। আগুন লাগবেনা কেন ?
একই কথা সড়ক দূর্ঘটনার বেলাতেও। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে দেখতে চান যে, গাড়ীটির ফিটনেস আছে কি নেই। ভাবখানা এই যে, ফিটনেস থাকলে আর এক্সিডেন্টই হতোনা। ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকলেই এক্সিডেন্ট হবে। আমাকে কেউ একটু বুঝিয়ে বলবেন কি, দেশের এক তৃতীয়াংশ পাবলিক ট্রান্সপোর্টেরই যেখানে ফিটনেস সার্টিফিকেট তো ভালো কোনও কাগজই নেই সেখানে এই থিয়রী মোতাবেক প্রতি মিনিটে সড়কে তো কয়েক হাযার এক্সিডেন্ট হবার কথা, তা হয়না কেন ?
এদের থামানোর কি কেউ নেই ???????
মিডিয়া পর্যন্ত এই পার্মানেন্ট ধারনার বাইরে যেতে পারেনা। ড্রাইভার- হেলপারের লাইসেন্সও খোঁজে সবাই। দূর্ঘটনার আসল জিনিষগুলো প্রায়ই খুঁজে দেখেনা কেউ, সেসবের কথা জোর গলায় বলেও না কেউ। চুক্তি ভিত্তিক গাড়ী, যাত্রী তোলার প্রতিযোগীতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, রাস্তায় কোন ধরনের যানবাহন কি ভাবে- পথচারীরাই বা কিভাবে পথ চলবে সে সম্পর্কে কারোই ধারনা না থাকা-
এই হলো পাবলিক ...............
যত্রতত্র পথচারী পারাপার, যেখানে সেখানে থামিয়ে বাস-ট্যাক্সিতে যাত্রী তোলা, চলাচলের রাস্তার অপ্রতুলতা, ফুটপাতের অব্যবস্থা ও দখল ইত্যাকার বিষয়গুলো জেনেও সমাধানের পথে হাটেন না কেন কেউ? কেন সড়কে নিরাপত্তার আইনগুলো কঠোর ভাবে পালিত হবেনা এটা জানতে চেয়ে কোনও দায়িত্বশীল পক্ষ অনশন করেন না কেন ?
সবাই একটি সার্টিফিকেট এর দোহাই পাড়েন , কেন ?
আমি বুঝিনা ....... কিছুই বুঝিনা...............................
ছবিসূত্র : নেট থেকে । ছবির যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।
[ প্রিয় পাঠক ব্লগার! ব্লগের লেখা নিয়ে আমি একটি ছোট্ট ঘর বানিয়েছি যে ঘরের দেয়ালে সামু ব্লগে আমার লেখাগুলোর কিছু কিছু লটকে দিয়েছি। ভাবছি সামুর মানসম্মত সেরা লেখাগুলোকেও (লেখকের নাম ও সামুতে প্রকাশের তারিখ সহ) সময় পেলে ধীরে ধীরে সেখানে লটকে দেবো এক এক করে। আপনাদের সদয় অনুমতি চাইছি আমার ঘরটিকে "মিনি সামু" হিসেবে আপনাদের সামনে অবারিত করার------- আহমেদ জী এস এর ব্লগ .......... "অতল জলের আহ্বান"]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৩৮