এক রাত্রে হঠাৎ করেই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে বিপিসি , এমনটা কি করে হয় সেটা মাথায় ঢুকছেনা বলেই একটি মহাবেকুবীয় প্রশ্ন রাখছি আপনাদের কাছে -
" বিপিসি" বা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশান কে আর চলতে দেয়ার কোনও অর্থ আছে কি?
যে কর্পোরেশান জন্মলগ্ন থেকেই জ্বালানী খাতের সবটাতেই মূল্য না কমিয়ে কেবল বাড়িয়েই চলেছেন নিজেদের মনগড়া, অযৌক্তিক অজুহাত খাড়া করে তার থাকার দরকারটা কি ? শুরু থেকে এপর্যন্ত মূল্যহ্রাসের কোনও ইতিহাস তাদের আছে কি ? সে তো "জন্ম থেকেই জ্বলছি"র মতো জ্বলেই চলেছে । মনে হচ্ছে বিপিসি একটি সিন্ডিকেটেড মাফিয়া !
দু'দিন আগেই তারা বিশ্বে জ্বালানী তেলের দাম বাড়া আর পাচার হওয়ার অজুহাতে সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কেরোসিন আর দেশের তাবৎ পরিবহন আর কৃষিখাতে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম বাড়িয়েছেন ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ। ভাবুন তো ; এক টাকা দু'টাকা নয়, একলাফে ১৫টাকা লিটার প্রতি! কোন দেশে আছি আমি আপনি? অথচ যখন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম অনেক কম ছিলো তখন তারা তেলের দাম কমান তো নি ই বরং বাড়ানোর হার অব্যাহত রেখেছেন। ২০১৬ সালে জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণের সময়ও দেশীয় বাজারে জ্বালানির দাম বেশি ছিল আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায়। তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন তেলের দাম বেশি নেওয়া হয়েছে কেন? তখন তো কম নেওয়া হয়নি। ওই টাকা কোথায় গেছে ?
অথচ বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যখন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তখন ভারত পেট্রল ও ডিজেলের দাম লিটারে যথাক্রমে ৫ ও ১০ রুপি কমিয়েছে। আসন্ন রবি শস্যের মৌসুমে কৃষকেরা যাতে উপকৃত হন, সে জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো হচ্ছে বলে গেলো বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণায় বলা হয়েছে। ভোক্তাদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকারগুলোকে জ্বালানি তেলের ওপর ভ্যাট কমানোর অনুরোধও করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ।
উল্টো চিত্র আমাদের দেশে।
গত বুধবার রাতে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম শতকরা ২৩ ভাগ বাড়িয়ে প্রতি লিটারের দাম ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এর এক দিন যেতে না যেতেই বৃহস্পতিবার এলপি গ্যাসের দাম ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা থেকে ১ হাজার ৩১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৪ মাসে এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ । বিপিসি বলছে,তারা লোকসানে চলছে!
এখন মহাবেকুব বিপিসিকে একটা বেকুবী প্রশ্ন করতেই পারে --- যদি হর বচ্ছর লোকসানেই চলেন তবে দোকান খোলা রেখেছেন কেন?
কোভিডের মধ্যে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। মোট দরিদ্রের সংখ্যা ৪২ শতাংশ বা প্রায় ৭ কোটি। বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এর মধ্যে দফায় দফায় নিত্য-পণ্যের মূল্য বেড়েছে। বহু পণ্যের মূল্য এখনো ঊর্ধ্বগতিতে। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করাটাকে কি বলবেন আপনারা ? কি ভাবেই বা নেবেন ?
ভাবুন তো, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতেই কি এটা সীমিত থাকবে ? বাড়বে পরিবহন ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য এবং সেবার মূল্যও । ইতিমধ্যেই পরিবহন খাতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে । লঞ্চমালিকেরা ভাড়া দ্বিগুন করার আন্দোলনে নেমেছেন। আর বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ী আর দোকানদারদের তো এতেই ষোলআনা সুবিধা । একলাফে সব জিনিষের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা রাতারাতি। বিপিসি'র মতো তাদেরও অজুহাত একটাই- জ্বালানী তেলের দাম বেড়েছে! সহব্লগার "শাহ আজিজ" এর লেখায় দেখলুম ইতিমধ্যেই বাজার নাকি গরম। হট্টগোল পরিবহন সেক্টরে!
এইসব প্রতিক্রিয়ার ভয়ানক ধাক্কাটা কিন্তু আমার আপনার জীবন আর পকেটে এসে লাগবে ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় কি আম পাবলিককে টাকার খনি হিসেবে দেখছে ? নাকি তারা সকল দুবৃত্তায়ন কর্মকান্ডের বেনেফিসিয়ারি ?বিপিসির লোকসানের দোহাই কাজে লাগিয়ে পাবলিকের ঘাড় ভেঙে সেই লোকসান পোষানোর চেষ্টা কি তাদের?
জ্বালানি বিভাগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও কমবে ।
তারা পাবলিককে এতো "ভোদাই" ভাবছে কি করে যে , পাবলিক তাদের এই প্রতিশ্রুতি খাবে ?
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার বলেছেন , ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নাকি দশ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে । মূল্যবৃদ্ধি জায়েজ করতে আবার পাশাপাশি এও বলেছেন যে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় গত সাড়ে পাঁচ মাসে ডিজেলে বিপিসি’র মোট লোকসান প্রায় ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
কেমনে কি ? দশ হাযার কোটি জমার বিপরীতে এক হাযার কোটি লোকসান। ঘাপলা আছে কোথাও!
এখন মহাবেকুবকে গালে হাত দিয়ে ভাবতেই হয়, এমন উল্টোরথে চলা একটি অব্যহত মূল্যবৃদ্ধির সিন্ডিকেটেড সংস্থাকে পেলেপুষে রাখার মাজেজাটা কি ???????
তথ্যসূত্র -- প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন , বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩৯