.
ইনবক্সে অধীর আগ্রহ নিয়ে যখন মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, "মহাপুরুষ, ভালো আছো?"
তখন মহাপুরুষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়।কি বলবে ভেবে পায় না।আসলে সে ভাল আছে কি না এমন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পায়।মুখ নিচু হয়ে আসে। মুখ লুকায় বুকের কাছে।তার চোখ ছলছল করে ওঠে।হয়ত দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে ফোনের স্ক্রিনে।স্ক্রিন ভেদ করে ভিজে ওঠে ফেইসবুকের পাতা। সিক্ত হয় "জ্ঞানহীন মহাপুরুষ" নামটি।
.
মহাপুরুষের চোখের নোনাজলে ভেসে ওঠে সব পুরনো স্মৃতি।স্মৃতির পাতা ওল্টাতে গিয়ে সে একটি আঁচল দেখতে পায়।আঁচলখানি লম্বা হয়ে শাঁড়ি হয়।মহাপুরুষের চোখ তখন শাঁড়িতে একটি শরীর খোঁজে।খুঁজতে গিয়ে পেয়েও যায় নদীর মত বাঁকা,সবুজ ধানক্ষেতের মত যৌবনে উপচে পড়া একটি শরীর।মেয়েটির বুকের ভাঁজে সে একটি সংসারের স্বপ্ন দেখে।চোখের নোনাজলে মেয়েটির নতুন জেগে ওঠা নদীর মত শরীরে সে ভালবাসার ঘর বানায়। সেই ঘরে ছোট ছোট অনেক স্বপ্ন আঁকে।আবিরের অভাবে স্বপ্নগুলো রঙিন হয় না। সেগুলো ধূসর হয়।মেয়েটি আবার ধূসর রঙের স্বপ্নে বেশ ভয় পায়।ভয়ে ঢোক গিলতে গিয়ে তার শ্বাসরুদ্ধকরের মত হয়।সে চিৎকার দিয়ে গা ঝাড়া দেয়।মহাপুরুষের বানানো ভালবাসার ঘরখানি ভেঙ্গে যায়।স্বপ্নগুলো ছুটে চলে যায় দূর থেকে বহুদূরে।
.
মহাপুরুষ মেয়েটির চোখের দিকে তাকায়।সে ওর চোখে মরুভূমি দেখতে পায়।সেই মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে কিছু স্বপ্ন ওড়ে।স্বপ্নগুলো মরীচিকার মত দেখায়।মহাপুরুষ মরীচিকার পেছনে ছুটতে থাকে।ছুটতে গিয়ে সে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।সে প্রচন্ড ব্যাথা পায়।যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।ওর যন্ত্রণা দেখে মেয়েটি হাসে।
অদ্ভুত রকমের হাসি।সে হাসিতে সদ্য যৌবনে পা দেয়া হৃদয়ও ভয় পায়।এ হাসি মোনালিসার হাসির মতো ছবির ফ্রেমে বন্দি করা যায় না।
কিন্তু মহাপুরুষ ভয়কে জয় করতে চায়।মেয়েটির শরীরের ভাঁজে নতুন করে ভালবাসার ঘর বানাতে চায়।সে মেয়েটির ঐ অদ্ভুত ভয়ংকর হাসিকে মনের ফ্রেমে বন্দি করে।
মেয়েটির ভয়ংকর হাসিতে চৈত্র মাসের রোদের মত আগুন ঝরে। সেই আগুনে মহাপুরুষের মন পুড়ে যায়।পুড়ে ছাই হয়।ছাইগুলো সে আকাশে উড়িয়ে দিতে চায়।কিন্তু পারেনা।চোখের জলে ওর বুক ভিজে যায়।ভেজা বুকে ছাইগুলো এঁটেল মাটির মত শক্ত হয়ে জমাট বাঁধে।জমাটবাঁধা ছাইয়ের খন্ড মহাপুরুষের বুকের বামপাশটায় কাঁটার মত আটকে থাকে।
.
মহাপুরুষের মন এখন একটুকরো ছাইয়ের খন্ড।যে কখনো হাসে না,কখনো কাঁদে না।যার অনুভুতিগুলো মরা নদীর মত।সে নদীতে কখনো ঢেউ ওঠে না।
.
তাই মহাপুরুষ ভাল আছে কি না, বুঝে উঠতে পারে না।ইনবক্সের অপর প্রান্তে জিজ্ঞাসু চোখে অপেক্ষমান মেয়েটিকে "ভাল আছো?" এই প্রশ্নের জবাবও দিতে পারে না।কিন্তু মেয়েটি চাতক পাখির মত জবাবের আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা অনলাইনে বসে থাকে।বারবার মেসেজ চেক করে।দেখে "জ্ঞানহীন মহাপুরুষ" নামে কোন মেসেজ এসেছে কি না।
নাহ্ ঐ নামে নতুন কোন মেসেজ সে খুঁজে পায় না।তাই আবার মেসেজ দেয়। বার বার দেয়।প্রতিদিন দেয়।কিন্তু তার ডাকে মহাপুরুষের অনুভুতিহীন হৃদয়ে কোন সাড়া জাগে না।
যৌবনে দোলা লাগে না।
মেয়েটি আর মহাপুরুষের অবহেলা সহ্য করতে পারে না। সে কষ্ট পায়।ওর বাঁকা চোখ দু'টি থেকে কষ্ট, জল হয়ে ঝরে পড়ে।সেই জলে ফোনের ডাটা কানেকশন অফ হয়ে যায়।আইডি ডিএক্টিব করে সে ফেইসবুক থেকে চলে যায়।ওর কাজল মিশ্রিত চোখের জলে "রুপন্তীর নোনাজল" নামটি কালো হয়ে ভাসে "জ্ঞানহীন মহাপুরুষের" ফেসবুকের পাতায়।
.
একবছর পরের কথা
.
শীতু ঋতু চলে এসেছে।কুয়াশার সাদা চাদরে ঢেকে গেছে প্রকৃতি। ইদানিং কুয়াশা একটু বেশি পড়তেছে। একহাত দূরে কি আছে সেটা ঠাহর করতেও বেশ সময় লাগে।দু' পাটি দাঁত ঠক ঠক করে কাঁপতে থাকে।বস্তা বস্তা কাপড় গায়ে দিয়েও গায়ের কাঁপুনি থামানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।
মধ্যরাত।
মহাপুরুষ লেপের তলায় পুরো শরীর ঢুকিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে।শুধু মুখ আর হাত দুটো বাইরে আছে। ঠান্ডা কাটানোর জন্য সিগারেটও টানছে সে।সেই সাথে ফেইসবুকের পাতায়ও চোখ বুলাচ্ছে।
হঠাৎ একটি ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট আসলো।আইডি নেম "রুপন্তির নোনাজল।"
নাম দেখে মহাপুরুষের হৃদয়টা হাপরের মত উঠানামা করতে লাগলো।তার হৃদয়ের মরা নদীতে বান ডেকে উঠল।একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল বুকের বামপাশটায়।সে নিজেকে সামলে নেয়ার আগেই কালবৈশাখী ঝড়ের গতিতে একটি মেসেজ চলে আসল মেসেন্জারে।
"মহাপুরুষ, ভালো আছো?"
বটগাছের মত বিশাল বুকেও তখন কাঁপুনি ধরেছে।হয়ত ভালবাসার, নয়ত পুরনো বন্ধু ফিরে আসার।তার অজান্তেই চোখের কোণে লবণ জমতে শুরু করে।সেই লবণ গলে জল হয়ে পড়ে ফেইসবুকের পাতায় "রুপন্তির নোনাজল" নামটির উপর।
এই এক বছরে মহাপুরুষ বুঝতে পারে যে
মানুষের হৃদয় মরা নদীর মত সবসময় মরা থাকে না।তার হৃদয়ের নদীতে বান ডেকে উঠতে পারে যে কোন সময়।প্রিয়জনের বিরহে বা প্রিয় বন্ধুর বিরহেও মন কেঁদে উঠতে পারে। মহাপুরুষের এঁটেল মাটির মত মনটাও আজ বহুদিন পরে দু'ফোটা জল শুষে নিয়ে কাদার মতো নরম হয়েছে।সে বুঝতে পেরেছে এই কাদা চোরাবালি তে পরিনত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।সে এই চোরাবালিতে ডুবে যাবে।আর উঠে আসতে পারবে না।
এই একবছরে রুপন্তির নোনাজল নামটা কতবার যে সে সার্চ করেছে তার ইয়ত্তা নেই।কিন্তু সে পায়নি। খুজে পায়নি রুপন্তির নোনাজলকে।কিসের টানে সে রুপন্তির নোনাজল আইডিটা বারংবার সার্চ করত সে নিজেও জানে না।কিন্তু কেন জানি তার মনে হত রুপন্তির নোনাজলকে জানানো দরকার যে সে ভাল নেই।
.
এইবার মহাপুরুষ জবাব দিতে দেরি করে না। ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার আগেই সে রিপলে দেয়,
"আমি ভাল নেই রুপন্তি।আমার জমাটবাঁধা ছাই খন্ডের মত মনটা নোনাজলে গলে গিয়েছে।সেখানে একটা সমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে।সেই সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে আমার বুকে।"
ইনবক্সের অপর প্রান্তে রুপন্তির নোনাজল নিজেকে মহাপুরুষের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে চায়। অব্যক্ত কামনায় সেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।
দেখা করতে চায় সে মহাপুরুষের সাথে।
মহাপুরুষের মনেও কেন জানি রুপন্তিকে দেখার বাসনা জেগে উঠেছে।
.
সুরভী উদ্যান শিশু পার্ক।পার্কে শিশুদের চেয়ে প্রেমিক-প্রেমিক
ারাই বেশি। আমাদের শিশু পার্কগুলো এখন প্রেমিক-প্রেমিক
াদের দখলে চলে গেছে।সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা পার্কে প্রেমের মেলা বসে।সেই মেলায় হৃদয়ের গল্প শোনানো হয়।গল্প হয় সাজানো সংসারের।এক মুঠো সুখের। একটি রঙিন পৃথিবীর।যে পৃথিবীতে শুধু প্রেমিক-প্রেমিক
াদেরই স্থান হয়।অন্য কারো নয়।
.
পার্কের এক কোণায় বসে আছে দুজন ছেলে মেয়ে। মেয়েটির নাম নীলা।ছেলেটির নাম মামুন।এরাই ফেইসবুকের "রুপন্তির নোনাজল" এবং "জ্ঞানহীন মহাপুরুষ"।
নীলা যুবতী মেয়ে।বিশ-বাইশ বছর বয়স হবে।হালকা সবুজ রঙের শাঁড়িতে ওকে বেশ মানিয়েছে।সবুজ ধানক্ষেতের মত যৌবন যেন ঠিকরে পড়ছে ওর শরীরে।মেয়েটি সুন্দর। অন্যরকম সুন্দর। এ সুন্দরের মধ্যে পবিত্রতা আছে।মায়া আছে।মন চুরি করে নেয়ার ক্ষমতা আছে।
অন্যদিকে মামুন তালগাছের মত লম্বা।বটগাছের মত সুবিশাল বাহু তার।যে বাহুডোরে অনেক মেয়েই নিজেকে আবদ্ধ করতে চাইবে।তবে মামুনের চোখ দুটো ভেজা ভেজা। মনে হয় এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে।মামুন আজ ভেজা ভেজা চোখে নীলাকে ওর জীবনের গল্প শোনাবে।মামুনের জীবনে একটা গল্প আছে। গল্পে একটা নদী আছে।মরা নদী।মামুন নীলাকে গল্প বলা শুরু করল,
.
জানো,নীলা,আমার একটা ভালবাসার মানুষ ছিল।খুব ভালবাসতাম ওকে।মন প্রাণ উজাড় করা ভালবাসা বলে একটা কথা আছে না।ঠিক সেরকম।ওর নাম ছিল নদী। বর্ষাকালে নদীর যৌবনে যেমন রুপ আসে ওর ও তেমনি রুপ ছিল। ওর চোখে আমি নিজেকে দেখতাম।একটি ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখতাম ওকে নিয়ে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নীরাকে নিয়ে যেমন কবিতা লিখতো,আমি তেমনি নদীকে নিয়ে কবিতা লিখতাম। ভালবাসতাম খুব। কিন্তু এত বেশি ভালবাসা বুঝি ওর সহ্য হত না।বা নিতে পারত না। ও আমাকে ঠকিয়েছিল।ওর ভালবাসার নৌকাটা অন্য কোন সমুদ্রের দিকে ভিড়িয়েছিল। যে সমুদ্রটা আমার ছিল না। আমি তা মেনে নিতে পারিনি। তাই তাকে মুক্তি দিয়েছি।মুক্তি দিয়েছি চিরকালের জন্য।সে এখন ভাল আছে।সুখে আছে তার নতুন ভালবাসার মানুষের সাথে।
.
কিন্তু আমায় দেখো!আজ এত বছরেও আমি ওকে ভুলে থাকতে পারিনি।প্রতিটা মুহূর্ত ও আমার মাঝে বিরাজ করে। আমার চিন্তার বেড়াজালে ও নিজেকে বন্দি করে ফেলে। ওকে চিন্তা করতে গিয়ে,ওর স্মৃতিগুলো ভাবতে গিয়ে আমি কষ্ট পাই।ভীষণ কষ্ট পাই। কষ্টের সাগরে সাঁতরাতে থাকি।সাঁতরাতে সাঁতরাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।তবুও কূলে আসতে পারি না।তাই তো কেউ যখন ভাল থাকার প্রশ্ন করে আমি চুপ করে থাকি।কথা বলতে পারি না।ভাষা হারিয়ে ফেলি।
আমি মুক্তি চাই নীলা,মুক্তি চাই।এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।সে যেমন আমার কাছ থেকে মুক্তি নিয়ে অন্য কারো কাছে সুখে দিন কাটাচ্ছে, আমিও তেমনি সুখে থাকতে চাই নীলা।
বলতে বলতে মামুনের গলাটা ধরে এলো।চোখ দু'টি ছলছল করে উঠল।চোখেরা আর বাধা মানল না।ঝর্ণার মত চোখ থেকে অঝোরে জল পড়তে লাগল। আজ অনেক দিন পর মামুন কাঁদছে।চোখভরে কাঁদছে।
.
নীলা মামুনের চোখের জল হাত পেতে ধরে আছে।টপ টপ জল পড়ছে নীলার হাতে।এ এক অপরুপ দৃশ্যের অবতারণা করছে তারা।ছেলেটি চোখভরে কাঁদছে আর মেয়েটি ওর চোখের জল হাতের মুঠোয় ধরে রাখছে।মাটিতে পড়তে দিচ্ছে না একফোটা জলও।
নীলা মামুনকে কীভাবে স্বান্তনা দেবে বুঝতে পারছে না।কিন্তু চোখের সামনে এ কান্নার সমুদ্রটাকেও সহ্য করতে পারছে না। বিশালদেহী একজন পুরুষ মানুষ এভাবে ছোট বাচ্চার মত কাঁদছে এটা নীলার মত মেয়ের পক্ষে সহ্য করা কঠিন।
কষ্ট কি জিনিষ নীলা খুব ভাল করেই জানে। তারও যে একটি গল্প আছে।কষ্টের গল্প।
.
পনের বছর বয়স।নীলা তখন সবে যৌবনে পা দিয়েছে।মনে রঙিন সব স্বপ্ন প্রজাপতির মত ডানা মেলতে শুরু করেছে।বুকে তখনও তার সংসার জাগেনি,ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নে ভাটা পড়ে।নীলার বাবা ওকে বিয়ে দিয়ে দেয়। নীলার বর খুব ভাল মানুষ ছিল।খুব ভালবাসত নীলাকে।সে ওর স্বপ্নের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে।মনের ভেতর নীলার ডাক্তার হওয়ার ছবি আঁকে। সে নীলাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়।
নীলা মনের আনন্দে পড়তে থাকে।সেই সাথে আলাদা একটা পৃথিবী বানায়।সেই পৃথিবীতে একটি সংসারের ছবি আঁকে।ছবিতে একটা বর থাকে।একটা বউ থাকে।বর বউয়ের মাঝখানে একটা ফুটফুটে সুন্দর ছেলে থাকে।সে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকে ।রং তুলি দিয়ে ছবিটা সাজায় নীলা।
.
কিন্তু হঠাৎ নীলার জীবনে ঝড় নামে।কালবৈশাখী ঝড়।সেই ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় নীলার সাজানো সংসার।নীলার বর রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।নীলার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। অল্প বয়সে তার কপালে বিধবার ছাপ পড়ে।তার সমস্ত স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে থাকে।
কিন্তু নীলা হাল ছাড়ার পাত্রী নয়।সে আস্তে আস্তে জীবন সংগ্রামে জয়লাভ করতে থাকে।এগিয়ে যায় তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে।
আজ সে ডাক্তারী পড়ছে।সে তার স্বপ্নের কাছাকাছি এসে পড়েছে।কিন্তু একজন যুবতী নারীর পক্ষে কতদিন সঙ্গীবিহীন থাকা যায়।জীবনের পথে চলতে চলতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর তখনি ফেসবুকে পরিচয় হয় "জ্ঞানহীন মহাপুরুষ" ছদ্মনামের মামুনের সাথে।
ছদ্মনামটির প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব হয় তার মনে।ঐ আইডির স্ট্যাটাস, গল্প,কবিতা তার ভাল লেগে যায়।মনে হয় এ তো তারই গল্প।তারই গল্প অন্য একজনের মুখ দিয়ে প্রকাশ হচ্ছে।
তারপরে আইডির মানুষটির সাথে সে কথা বলে।বুঝতে পারে মানুষটির ভিতরে একধরনের চাপা কষ্ট আছে।যা সে কাউকে বলতে চায় না বা বলতে পারে না।
সে মামুনের কষ্টটা অনুভব করে।সে মামুনের সাথে কষ্ট ভাগাভাগি করতে চায়।কিন্তু মামুন ওকে এড়িয়ে চলছিল।সে মামুনের অবহেলা সহ্য করতে পারে নি।তাই দীর্ঘ একবছর ফেসবুকের বাইরে ছিল।পালিয়ে ছিল মামুনের কাছ থাকে।
.
পার্কের এক কোনার বেন্ঞ্চিতে বসে ওরা দুজন নিজেদের কষ্ট ভাগাভাগি করছে। মনে মনে নতুন একটি পৃথিবী আঁকছে।আঁকছে নতুন একটি সংসার।যে সংসারে থাকবে "জ্ঞানহীন মহাপুরুষ এবং রুপন্তির নোনাজল।"
.
পরিশিষ্টঃ নীলার ডাক্তারী পড়া শেষ হওয়ার পরে মামুনের সাথে সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে।দুটি ক্ষতবিক্ষত হৃদয় নতুন করে জীবন শুরু করে।
ওরা দুজনে একদিন আমার কাছে এসেছিল।ওদের জীবনের গল্প শোনাতে।
ভাল থাকুক দু'টি ক্ষতবিক্ষত হৃদয়। নাহ্ তাদের হৃদয়ে আর কোন ক্ষত নেই। সে ক্ষত শুকিয়ে গেছে অনেক আগেই।