চারদিকে সুনসান নিরবতা।পূর্ণিমা রাত।কি সুন্দর জোস্না নেমেছে।মনে হচ্ছে আলোর চাদরে ঢাকা পড়েছে পৃথিবী।গ্রামের নির্মল বাতাসে শিহরিত হচ্ছে শরীর, মন।আহ্ কী সুন্দর!কী মায়াবী!কী পবিত্র এই রাত।রাতেরও যেন যৌবন ঠিকরে পড়ছে।এত সুন্দর এই রাতটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নষ্ট করার কোন মানেই হয় না।সময় এসেছে রাত জেগে জোস্না দেখার।
উঠোনে পাটি পেতে বসেছি।পুরনো স্মৃতিগুলো যেন বারে বারেই উঁকি দিচ্ছে মনের কোণে।এমনি কোন এক রাতে বাবার পাশে বসে জোস্নার আলোয় মন মাতিয়েছি।চন্দ্রস্নান বাবার কাছ থেকেই শিখেছি।প্রতি পূর্ণিমা রাতেই বাবা উঠোনে পাটি পেতে শুতেন।হাত পা ছড়িয়ে চাঁদের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকতেন।পাশে আমিও শুয়ে থাকতাম।বাবা বলতেন, "চাঁদের নরম আলোয় মন শান্ত হয়,কলুষ মুক্ত হয় ।মনে এক ধরনের প্রশান্তি চলে আসে।পূর্ণিমা রাতে চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে।মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয় নিজের আলো।মানুষকে আলোকিত করেই যে চাঁদের আনন্দ।"
আমি মুগ্ধ হয়ে বাবার অদ্ভুত সব কথাবার্তা শুনতাম।আর নিজেকে মেলে ধরতাম প্রকৃতির কাছে।বাবা পাগলাটে ধরনের মানুষ।তার পাগলামীতে আমি ভীষণ মজা পেতাম।রাতে ঘুম না আসলে বাবা কবিতা শুনাত।রাতভর চলত কবিতা আবৃত্তি।সুনীলের "ভালবাসি" কবিতাটা বাবার মুখে কতবার শুনেছি তার হিসেব নেই।একই কবিতা বাবা বারবার আবৃত্তি করত।কিন্তু যতবারই শুনি ততবারই মনে হয় বাবার মুখে এই প্রথম শুনছি।মাঝে মাঝে মা বলত, "তুমি পারোও বটে।নিজের মাথায় তো কবিতার ভুত ঢুকিয়েছো,এবার ছেলেটার মাথায়ও ঢোকাও।"বাবা বলত,"আরে কবিতাই তো সব।জীবন যদি প্রতারণা করে,তবে কবিতা দেবে শান্তি।জীবন হোক কবিতার মতো সুন্দর।"বাবার এইসব পাগলাটে কথাবার্তা আমাকে ভীষণ টানতো।আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম।
বাবার সিগারেটের নেশা ছিল খুব।তিনি প্রচুর সিগারেট খেতেন।মায়ের নিষেধ স্বত্তেও খেতেন।
আমি প্রথম সিগারেট খাই বাবার প্যাকেট থেকে চুরি করে।মাঝে মাঝেই সিগারেট চুরি করতাম। বাবা অবশ্য বুঝতে পারতেন না।হয়তবা বুঝতে পারলেও আমাকে লজ্জায় ফেলতে চান নি।
আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে বাবার অবদান অনেক বেশি।বাবার সাথে কাটানো সময়গুলো আজ বড্ড বেশি মনে পড়ছে।জানি না কেন এমন হচ্ছে। হয়তো বাবাকে খুব বেশি ভালবাসতাম।নয়তো তার ভালবাসাটা ভুলতে পারিনি।