somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

..............অতঃপর মুক্তি

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মায়া যখন রহিমার পেটে, তখন কাজের খোঁজে শহরে যায় সবুজ মিয়া । অনেক স্বপ্ন লালন করে শহরে যায় সে—ছোট মেয়ের জন্য ভালো ভালো জামা কিনবে, ভালো খাবার খাওয়াবে, সুন্দর সুন্দর খেলনা কিনে দিবে । কিন্তু শহরে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একসময় মৃত্যুকে বরণ করতে হয় ।

মায়া জন্মানোর তিনদিন আগে তার নিথর দেহটি গ্রামে আসে । দেহটি নিথর হলেও বুকে জমানো স্বপ্নগুলো ছিল তাজা । সবুজ মিয়া তার কামাই করা টাকা দিয়ে মায়ার জন্য অনেক কিছু কিনে ব্যাগ ভরিয়েছে ।

মায়ার জন্ম হল । তাকে সবুজ মিয়ার কেনা খুব সুন্দর লাল একটি তোয়ালে দিয়ে জড়ানো হল । মায়ার মা নির্বাক চেয়ে থাকে মায়ার দিকে । তার মনে আজ খুশি নেই, স্বামী হারানোর বেদনায় সে স্তব্ধ ।

গ্রামের মাতবর মফিজ শেখ । রহিমা যখন ক্লাস ফাইভে তখন মফিজ শেখ কলেজের ছাত্র । সে রহিমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছিল । রহিমা রাজি হয়নি । তখন থেকেই মফিজ শেখ মায়াকে রাস্তায় পেলেই উত্ত্যক্ত করতো ।আর এই কারণে রহিমার পড়াশোনার গন্ডিটা ক্লাস ফাইভেই আটকে যায় ।

বাপমরা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হোন রহিমার মা ।

কিন্তু সেই মফিজ শেখ আজও তার পিছু ছাড়েনি ।
সবুজ মিয়া মারা যাবার পর থেকেই সে রহিমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় । রহিমার উত্তর যখন কোনভাবেই না থেকে হ্যাঁ হয় না তখন মফিজ শেখ হুমকি দেওয়া শুরু করে ।
এক পর্যায়ে রহিমা বাধ্য হয় তাকে বিয়ে করতে রাজী হয় ।

বিয়ের পর ছায়া আর মায়াকে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে মফিজ শেখ । রহিমা কিছুই বলতে পারে না । তার মেয়েরা যে দুইবেলা খেতে পারছে, এটাই তার কাছে অনেক ।

সেই সকাল থেকে শুরু হয় ছায়া আর মায়ার সংগ্রাম । সংসারের সব কাজ তাদেকেই করতে হয় ।

রহিমাও দিনদিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে । তাদের আর আগের মত ভালোবাসে না । সব কথাতেই শুধু মফিজ শেখের পক্ষ নেয় ।

রহিমা আর মফিজ শেখের একটি ছেলে হয়েছে । রহিমা তার ছেলে নিয়ে থাকে সারাক্ষণ । আর সংসারের সব কাজ করে ছায়া আর মায়া । আর কাজে যদি একটু ভুল হয়, তাহলে খাবার বন্ধ করে দেয় ।

দিন দুই আগের কথা ।
মায়ার হাত থেকে পড়ে একটি চা খাওয়ার কাপ ভেঙে যায় । সঙ্গে সঙ্গে মফিজ শেখ এসে মায়ার চুলের বেণি ধরে বেধম মার মারে আর বলে, "এই শুয়োরের বাচ্চা দুইটা যদি একটা কাজও ঠিকমত করে । তোর দুইবেলার খাওয়ন বন্ধ । ঐ রহিমা ওক খাওন দিবি না ।"

সেদিন রহিমা সত্যি সত্যিই মায়াকে খেতে দেয়নি । ছায়া তার পাতের পুরো খাবার মায়াকে তুলে খাইয়েছে ।

ছেলে হওয়ার পর থেকে রহিমা পরিবর্তিন আরও ভয়ানক রুপ নেয় । ছায়া আর মায়াকে যেনো সে চেনেই না ।
আগে ছায়া আর মায়ার জন্য একটা ছোট বিছানা ছিল । কিন্তু ছেলে হওয়ার পর থেকে তাদের মেঝেতে শুতে হয় ।

দুপুর বেলা ।
রহিমা গোসল করতে পুকুরে যাবে ।
"ঐ ছায়া, কি রে কই গেলি ?"
"এই তো মা এখানে ।"
"কই থাকিস সারাদিন, খুঁজেই পাওয়া যায় না । শোন আমি নাইতে গেলাম,বাবুকে দেখিস । ও যেনো না কাঁদে ।"

ছায়া বাবুর দোলনার পাশে বসে আছে । বাবু ঘুমাচ্ছে আর ছায়া দোলনায় দোল দিচ্ছে । দোলনার প্রতিটি দোলে ছায়া যেনো তার অতীতে ফিরে যেতে লাগল ।

তার বাবার কথা মনে পড়ছে । কাজ থেকে ফিরে এসে ছায়া ছায়া বলে ঘর মাথায় করত সবুজ মিয়া । আর তার ঘর্মাক্ত শরীরে লাফিয়ে পড়ত ছায়া । বাবা-মেয়ে সারাদিনের সব কথা একে অন্যকে বলত । বলতে বলতে একসময় ঘুমের দেশে চলে যেত সে । শহর থেকে সবুজ মিয়া ছায়ার জন্য খুব সুন্দর একটা থ্রি-পিস কিনেছিল । সেইটাই আজ পর্যন্ত তার কাছে নতুন । এরপর আর কোন কাপড় তার পড়া হয়নি ।

বাবুর কান্নায় ঘোর ভেঙ্গে যায় ছায়ায় । বাবুর ঘুম ভেঙে গেছে । সে প্রচন্ড জোরে শব্দ করে কাঁদছে ।ছায়া বাবুকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে । কিন্তু বাবুর কান্না কোনমতেই থামানো যাচ্ছে না ।

নাওয়া শেষে ঘরে ফেরে রহিমা । এসেই বাবুর কান্না শুনে তার মেজাজ গরম হয়ে যায় । বাবুকে কোলে নিয়ে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে দেয় ।
তারপর ছায়ার ঘাড় ধরে বেধড়ক মারধর করে । ছায়াকে মারা শেষ মায়া মায়া বলে চিৎকার করতে থাকে ।

সব কাজ শেষ করে মায়া উঠানে বসে চুল বাঁধছিল । চুলে চিরুনি জড়িয়ে দৌঁড়ে আসে মায়া । মায়াকে দেখেই চিল্লাতে শুরু করে, "নবাবজাদির বেটি, সারাদিন খালি সাজগোজ, তাই না ? ঘরদোর যে এখনও বাসি, সে খেয়াল আছে ?"
কথাটি শেষ না হতেই মায়ার পিঠে দুম দুম করে কিল বসিয়ে দেয় রহিমা ।

ছায়া আর মায়া বাড়ির পেছনের আম গাছের নিচে বসে কাঁদছে ।
"বুবুনি দেখছো মা আর আগের মত নেই । আমাদের আর ভালোই বাসে না । খালি মারে । বুবুনি, আমি আর এদের সাথে থাকবো না । কি হল বুবুনি, কথা বল না কেনো ?"
কথা শেষ না হতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে মায়া ।

ছায়া নিরবে চোখের পানি ফেলছে । তার দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসছে । ঘোলা দৃষ্টির অন্তরালে সে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন । সে আর এখানে থাকতে চায় না ।

হঠাৎ করে চোখ মুছে রাগের সুরে মায়াকে বলে ওঠে, "আজ রাতে ঘুমাবি না । আজি আমরা চলে যাবো ।"

ছায়ার কাছে এরকম কথা শুনে মায়া হতভম্ব হয়ে যায় । সে এরকম কথা আশাই করে নি । মায়া একনজরে ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে । আর ছায়া আমগাছের ভাঙা ডাল দিয়ে মাটিতে কি যেনো আঁকিবুঁকি করছে । তাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে !

রাত ১১টা ।
চারিদিক শুনশান । মাঝে মাঝে দু একটা নিশাচরের পাখা ঝাপটানোর শব্দ সেই নিরবতা ভাঙছে ।
হঠাৎ ছায়া-মায়ার ঘর থেকে হ্যারিকেন জ্বলে ওঠে । সেই আলোয় ওরা রেলস্টেশন পর্যন্ত চলে আসে ।

এরপর হ্যারিকেনের বাকী তেলটুকু বোতলে ঢেলে হ্যারিকেনটিকে রেলস্টেশনের পাশের জঙ্গলে ছুঁড়ে ফেলে ।
প্রথম ট্রেন আসবে ভোরে । তার আগে কোন ট্রেন নেই । রেলস্টেশনের এক কোণে ঘুমিয়ে নেয় তারা ।

কুলিদের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাদের । ট্রেন চলে এসেছে ।ছায়া মায়াকে ডেকে তোলে । ক্ষুধার জ্বালায় মায়া কাতরাচ্ছে । স্টেশনের একটা টিউবওয়েল থেকে পানি খেয়েই ট্রেনে উঠে পড়ে ।

তাদের গন্তব্য অজানা । হয়তো অসীমে ।ছায়ার মুখে বিষন্নতার ছাপ । মায়া ক্ষিদার জ্বালায় কাতরাতে কাতরাতে ঘুমিয়ে পড়েছে ।

হঠাৎই এক দমকা হাওয়া ছায়ার চুল উড়িয়ে দেয় । ছায়া আনমনে হয়ে জানালা দিয়ে দৃষ্টি ছুঁড়ে দেয় অসীমে । তারা আজ ক্ষুধার জ্বালায় বন্দী কিন্তু আপনজনদের দেওয়া কষ্ট থেকে মুক্ত..............
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×