গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধন অধ্যায়ের ১৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধানের কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত করার অনুমতি দিলেও প্রজাতন্ত্র অধ্যায়ের ৭ (খ) ধারানুযায়ী সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে বলে উল্লেখ আছে। অন্যদিকে,৭ (ক) ধারা মতে, এই সংবিধান বা এর কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করলে অথবা এমন কিছু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে ; কিংবা এই সংবিধান বা এর কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে কিংবা এমন কিছু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে- তার এই কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে।
ধর্মহীন জাতি গঠনে রাষ্ট্রের মুষ্ঠিমেয় কিছু লোক রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম তথা সংবিধানের ২(ক) ধারাকে বাতিল করার জন্য সরব হয়ে আছে। যেখানে সংবিধানের একই ধারা এবং মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ৪১ নং অনুচ্ছেদ অন্যান্য ধর্মেরও সমান অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে, সেখানে এই যড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য অত্যন্ত গভীরভাবে পরিলক্ষিত হওয়া উচিত। তবে এখানে একটি যুক্তি হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ের ৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে চারটি মূলনীতির কথা বলা হয়েছে তার শেষটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। তবে এখানে কিন্তু বলা হয়নি যে, রাষ্ট্রের কোন ধর্মই থাকবে না। এই নিরপেক্ষতার উদ্দেশ্য হলো সকলেই সমান অধিকার লাভ করবে এবং অন্য ধর্মের প্রতিও অবিচার করা হবে না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম থেকে বাদ দিতে হবে। এটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব- যেন সকল নাগরিক সুন্দরভাবে নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। ইসলাম যদিও রাষ্ট্র ধর্মের মর্যাদা পেয়েছে তারপরও রাষ্ট্র ইসলামী নীতি অনুসরণ করে না। শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশের জনগণ তবুও সন্তুষ্ট যে অন্ততপক্ষে সংবিধানের পাতায় উল্লেখ তো আছে যে ইসলাম এদেশের রাষ্ট্র ধর্ম। আসলে কিছু গোষ্ঠী দেশে সব সময়ই অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে বদ্ধ পরিকর। সেই ক্রমধারাতেই এবার রাষ্ট্র ধর্ম সংশোধনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু প্রগতিশীল গোষ্ঠী। সংবিধানের এমন অনেক অনু্চ্ছেদই রয়েছে যাদের সঠিক বাস্তবায়ন রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয়। রাষ্ট্রের প্রথম তিনটি মূলনীতির একটিও তো শতভাগ বাস্তবায়িত হয় না। তবে কেন শুধু শুধু ধরনিপেক্ষতার নামে অযৌক্তিকভাবে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্মের শিরোনাম থেকে বাতিল করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করতে হবে। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই তো ধর্মহীনতা নয়। আর সংবিধানে একমাত্র ইসলামই রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে মর্যাদা লাভের যৌক্তিকভাবে অধিকার রাখে।।।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০৪