স্বল্পমাত্রার উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে নানান সমস্যা বিদ্যমান থাকাটা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো কোন বিষয় নয়। কিন্তু এদেশের সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যার সমাধানগুলোও নানান সমস্যায় জর্জরিত। বিশ্ব ব্যাংকের বিগত বছরের একটি তথ্য মতে, এদেশে ১০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ৫ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। সরকারি হিসেব মতে, এদেশে প্রায় ৩০ লক্ষের মতো শিক্ষিত বেকার রয়েছে। এই বিশাল সমস্যাটির প্রধান সমাধান হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। অধিকাংশ মানুষের তীব্র বাসনা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু যে পরিমাণ সম্ভব তার অধিকাংশই চরমভাবে বিরক্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কোটাভিত্তিক বৈষম্য অধিকাংশ মানুষকেই চরমভাবে বিরক্ত করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ের ১৯(১) ধারায় বলা হয়েছে: ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ সুযোগের সমতার অর্থ এই নয় যে যোগ্যতা থাক বা না থাক সবাইকে একই রকম সুযোগ দিতে হবে। সুযোগের সমতার অর্থ অধিকতর যোগ্য আগে সুযোগ পাবে। এবং সেই সুযোগ পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। সেই সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করা তাকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘনও বটে। বাংলাদেশের যুবসমাজের সবচেয়ে যোগ্য একটি অংশকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে রাষ্ট্র কোটা-ব্যবস্থার কারণে। অন্যদিকে, রাষ্ট্র নিজে বঞ্চিত হচ্ছে যোগ্যতর মানুষের সেবা থেকে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ড. আকবর আলী খান এর মতে, বাংলাদেশের মতো এমন আজব কোটা ব্যবস্থা পৃথিবীর কোথাও নেই। সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপক জটিলতার মধ্যেও ধৈর্য্য সহকারে যারা ধাপগুলো অতিক্রম করতে চায়, তাদের অধিকাংশই একটা পর্যায়ে চরম হতাশা নিয়ে ঘরে বসে যায়। বেশিরভাগ চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকে এরকম যে, “এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কারণে আবেদনকারীর পরীক্ষা গ্রহণ করতে/তাঁকে প্রার্থিত পদে নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবে না।” এই সূত্রে বাংলাদেশে বহু চাকরির বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বহু টাকা খরচ করে আবেদন করার পরও হঠাৎ শোনা যায় বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়েছে বা স্থগিত করা হয়েছে। এই রকম আজব প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা কথা বলার তেমন কেউ নেই। শুধু তাই নয়, নানান পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েও যে শেষ পর্যন্ত কেউ উক্ত পদে নিয়োগ পায়, সেটি তাঁর সাত জনমের ভাগ্যের মতো ব্যাপার। আর নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ তুলে আমি মহা অন্যায় করতে চাই না।
সমস্যা সমাধানের জন্য গৃহিত পদ্ধতি বা পদক্ষেপ যদি নতুন সমস্যারই সৃষ্টি করলো, তাহলে এখানে গৃহিত ব্যবস্থার স্বার্থকতা কতটুকু তা উপলব্ধির জন্য মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। সরকারের উচিত চাকরি সংক্রান্ত পদ্ধতিগুলোকে আরও নমনীয়, সহজীকরণ ও স্বচ্ছ প্রকিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া। অন্তত চাকরি না পেলেও যেন কেউ সরকারিভাবে হেনস্থ হয়ে হতাশ না হয়, সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যন্ত আধুনিক কৌশল ও জবাবদিহিমূলক আশু সংস্কার আনা সকলের প্রাণের দাবী।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:১১