যৌতুকের টাকা আর ভোজন সরবরাহ যথাযথ না হলে সুকন্যার পিতাকেও নিমপাতা বাক্য শুনতে হয়। ফিরতি পথে বরযাত্রীরা কনের পিতা-মাতাকে নিয়ে জারি-সারী বেঁধে ইথারে সম্প্রচার করতে করতে ঘরে ফেরে। এতে করে কখনো কখনো কনের মেক-আপ এর রংও গলে যায়।
- বিয়ে তো করেন নি ! তাই এতো কথা।
- আরে ভাই, বিয়ে করিনিতো কি হয়েছে ? বরযাত্রীতো হয়েছি !
- বিয়ের বরযাত্রী আর যাত্রাপালার দর্শক হয় কারা, জানেন ?
- আপনিই বলুন ?
- আপনার মেক-আপ নষ্ট হয়ে যাবে।
- যাক না, তবু আপনার কথা শুনি !
- বেঁচে গেলেন, আপনার প্রথম কথাটা ভালো লেগেছে বলে মাফ করে দিলাম। বলুন, ভালোই লাগছে।
লেখার মুড নষ্ট করে দিলেও লিখতে হবে। সমাজের এই ভালো লোকগুলোর জন্যই সামাজিক দোষত্রুটি কোথাও আলোচনা করা যায় না। আরে বাবা ! সমস্যা নিয়ে আলোচনা না হলে তার সমাধান হবে কিভাবে ? ডাক্তারের কাছে রোগ গোপন করলে কি অসুখ সারে ? মুখে বলি বাক স্বাধীনতার কথা, অথচ কিছু বলতে গেলেই বাধা ! কেন রে বাপু !
স্বপ্রণোদিত হয়ে আবার আরম্ভ করতে যাই। চোখ কচলিয়ে আমার দিকে তাকায় সে। আমি প্রসংগ পাল্টানোর তাগিদ অনুভব করি না। যা বলতে চাই বলতেই হবে। ছাড় দিতে দিতে এই ভালো মানুষগুলোর বাড়ো বাড় বেড়েছে। আজ ওর তোতা মুখ ভোতা করেই ছাড়তে হবে। শব্দের সাথে শব্দের জোড়া দিতে অগ্রসর হই।
রফিক হাসান রচিত-
কান্নাসমগ্র
প্রকাশক : ঘাসফুল
পরিধি : তিন ফর্মা
১০০ গ্রাম অফসেট সাদা কাগজে মুদ্রিত এবং অসম্ভব সুন্দর প্রচ্ছদে মোড়ানো
সে জন্যই বলতে আরম্ভ করেছিলাম কন্যা যত সুকন্যা-ই হোক যৌতুকের টাকা আর ভোজন সরবরাহ যথাযথ হওয়া চাই। কাব্যগ্রন্থের বেলায় কবিতার গুণগত মান তো সকলে পরে দ্যাখে। আগে দ্যাখে প্রচ্ছদ, গ্রন্থের নাম, মুদ্রণ কোয়ালিটি, বাঁধাই ইত্যাদি। কান্নাসমগ্র এ পরীক্ষায় যথাযথভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে। নামকরণের কথা বলতে গেলে জীবের তাড়না বলতেই তো বিরহ। অর্থনীতিতে চাহিদা সংজ্ঞা পড়েছিলামড় কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা-ই চাহিদা নয়। চাহিত বস্তুটি সংগ্রহ করার মতো অর্থ থাকতে হবে। আবার কেবল অর্থ থাকলেই হবে না, তা খরচের ইচ্ছা থাকতে হবে ! তাহলে ? এতোসব কি জীব ভাবে ! বালিশে মাথা রাখতেই ক্লিউপেট্রা, উঠে বসলে আলেকজান্ডার। আসলে কোনো কিছু পাওয়ার মুরোদ নেই। আকাঙ্ক্ষার সাথে অধ্যবসায়কে যুক্ত করার করার কোন প্রচেষ্টা নেই। কবি এখানে না পাওয়ার বেদনাকে, হতাশার হাহাকারকে পুঁজি করে- শোক যেন শক্তিতে, কান্না যেন আনন্দে রূপান্তরিত হয় এমনই শব্দমালার আশ্রয়ে কান্নাসমগ্র একত্রিত করেছেন। সেদিক থেকে বলতে গেলে কব ‘র মন ও মনন এবং ইচ্ছাসমূহ দ্বারা সমাজের পিছিয়ে পড়া ও ধ্বজাধারী মানুষকে একটা ধাক্কা দেওয়া। কান্নাসমগ্র নামকরণের ক্ষেত্রে কবি সফল সে কথা অকপটে বলা যায়।
কান্নাসমগ্র কাব্যগন্থে মোট ৩৬টি শিরোনামের কান্না সন্নিবেশিত হয়েছে। সুপাঠ্য সকল কান্না-ই অশ্রু বিসর্জনের জন্য উপাদেয়। কাব্য রসিক যারা তারা ভালো করেই কান্নাসমগ্র এর ব্যবচ্ছেদ করতে পারবেন। তবে ক্ষুদ্র জ্ঞানে এবং অল্প সময়ে পাঠ করা যেই কান্নাগুলো আমার মনকে স্পর্শ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১০ পৃষ্ঠার- আয়নামহল, ১২ পৃষ্ঠার- অনুদ্ধার স্বপ্নের শব, ১৫ পৃষ্ঠার- অপেক্ষা, ১৯ পৃষ্ঠার- রাত্রিকাহন, ২৪ পৃষ্ঠার- স্বপ্নের বয়সী আমার দু:খ রাতের যমজ, ২৮ পৃষ্ঠা- কান্নাসমগ্র, ৩২ পৃষ্ঠার এই শব্দেরা, ৪৩ পৃষ্ঠার মায়াপ্রপঞ্চ, ৪৬ পৃষ্ঠার- পাতার বাঁশি বাজে প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য।
একজন কবি’র সকল কাথা-ই কবিতা। আর কবি কখনো নিজের কথা বলে না। সে মানুষের কথা বলে। সমাজের কথা বলে। পরম গুরু আমাদের জাতী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থভাবেই তাঁর রাজবন্দীর জবানবন্দীতে বলে গেছেন- ”আমি সাদাকে সাদা বলেছি, আর কালোকে বলেছি কালো”। কবি তার সামনে যা আসে তা-ই তুলে ধরে। কবি’র দৃষ্টি সাধারণ্যের দৃষ্টির থেকে একটু আলাদা বৈকি ! একটা অনুচ্চারিত বৈষম্য কবি’র সামনে উদিত হলে কবি সেটাকে প্রকাশ না করে থাকতে পারেন না। অন্যেরা যা বে-মালুম চেপে যান, এড়িয়ে যান কবি সেভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন না। সেটাকে থামাচাপা দিতে পারেন না। এখানেই কবি’র সাথে সাধারণ মানুষের পার্থক্য। কান্নাসমগ্র গ্রন্থে কবি রফিক হাসান ওনার বিশাল অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে এমনই কিছু অসামঞ্জস্যতা, এমনই কিছু অপূর্ণতাকে এক মোড়কে বাঁধাই করে আবদ্ধ করেছেন।
কবি রফিক হাসান এর শব্দ চয়ন প্রশংসার দাবী রাখে। কৃষ্ণবর্ণ তরল আগুন, জলের উপর ভেসে থাকা হাজার দ্বীপের মেঘ, জল যমুনার বন্দনা, একরত্তি পাখির পালক তুই, নিমজ্জনের নৌকা জলে দুঃস্থ বসবাস, জ্বলজ্বলে বুক খুলে জ্যোৎস্না নামে জলে, সন্ধ্যার শশ্মানে পথহারা বালকের চোখে নীল জোনাকির আলো ইত্যাদি শব্দচয়ন যা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ যেমনটি হয় ঠিক তেমনই হয়েছে কান্নাসমগ্র। কবি’র বহুমুখী অভিজ্ঞতা একীভূত হয়েছে কান্নাসমগ্রে। এখানে কবি একটু কৌশল অবলম্বন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। আমরা আগামীতে কবি রফিক হাসান এর নিকট থেকে দিক নির্দেশনা তথা জীবন অতিক্রমের স্থলে সুন্দর জীবন যাপনের পথে কিভাবে আমরা অগ্রসর হতে পারি এমন দিক নির্দেশনামূলক শব্দচয়ন পেতে চাই।
মোস্তাফিজ কারিগরের আঁকা প্রচ্ছদে কান্নাসমগ্র বিদগ্ধ পাঠককুলের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সমর্থ হবে প্রত্যাশা করি। বইমেলা ২০১৫ তে ২১৮-২১৯ নম্বর স্টলে এ গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে। কান্নাসমগ্র সংগ্রহে রাখার মতো। বইখানির সার্বিক সফলতা কামনা করছি।
-
সাগর আল হেলাল
২৭-০৩-২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫১