somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন, মস্তিষ্ক ও হৃদয়

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিজ্ঞান ও শরীর সম্বন্ধীয় কোন বিষয়ে আলোকপাতের চেষ্টা অনুরোধে ঢেঁকি গেলা আর কি ! একজন সাধারণ জ্ঞানানুসদ্ধিৎসু হিসাবে দুই একটা মন্তব্য করার সাজা স্বরূপ বন্ধুবর ফিরোজ আহমেদ এর অনুরোধ রক্ষার একটি চেষ্টা-

মন, মস্তিষ্ক ও হৃদয়
Mind, Brain & Heart

শরীর সম্বন্ধীয় এই তিন পরাশক্তির কোনটিরই ক্ষমতা অন্যটির চেয়ে এককভাবে কম নেই। তিনটি পরাশক্তি পরিপূরক হিসাবে কাজ করে বলেই মহাপরাক্রমশালী এই মানব শরীর সুন্দর ও সাবলিলভাবে চলতে পারে। এই তিন পরাশক্তির ভারসাম্যে বিচ্যুতি ঘটলেই নেমে আসে বিপর্যয়।

সম্পূরক বা পরিপূরক আলোচনার আগে তিন পরাশক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলাদা আলাদা আলোচনা করা দরকার। কারণ কোন শক্তিহীন আলোচনা আলোচ্য বিষয়ের শক্তিমত্তার দ্বারা উৎরে যেতেও পারে। কার্যকরণের দিক থেকে মস্তিষ্কের প্রাধান্য বেশি। বিজ্ঞানের ভাষায় মানুষের সকল ক্রিয়া কর্ম মস্তিষ্কের দ্বারাই সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ জন্য মস্তিষ্কের আলোচনা পূর্বাহ্নে করা হলো।

১) মস্তিষ্ক
মস্তিষ্ক কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের পুরোভাগ, যা মাথার মধ্যে অবস্থিত এবং দেহের প্রধান নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। মস্তিষ্কেরও তিনটি ভাগ রয়েছে। যেমন- অগ্র মস্তিষ্ক, মধ্য মস্তিষ্ক এবং পশ্চাৎ মস্তিষ্ক। মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এখনো পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে জটিল ও রহস্যময় বস্তু হলো মানুষের মস্তিষ্ক। গড়পরতায় মানুষের মগজের ওজন দেড় কিলোগ্রাম যার মধ্যে প্রায় এক বিলিয়ন সংখ্যক নিউরন বা স্নায়ুকোষ আছে। দেহের ওজনের তুলনায় মানুষের মগজের ওজন ও আকৃতি আমাদের নিকটতম প্রজাতির তুলনায় অনেক বেশি। মস্তিস্কের স্নায়ুকোষগুলো খুবই সংবেদনশীল। স্নায়ুকোষ একবার মরে গেলে আর নতুন করে গজায় না। দেহের অন্যত্র কোষের প্রতিস্থাপন ঘটলেও স্নায়ুকোষ তার ব্যতিক্রম। তাই মস্তিস্ক কোনো কারণে আঘাত পেলে বা স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে আঘাত থেকে ফিরে আসা যায় না।মস্তিষ্ক আঘাত পেলে মানুষের মানসিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।

আমাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, হাসি-কান্না, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, অশ্রু এসবের উৎপত্তি আমাদের মস্তিষ্ক থেকেই, অন্য কোথাও থেকে নয়। এর সাহায্যেই আমরা চিন্তা করি, বুঝি, দেখি ও শুনি, সুন্দর ও অসুন্দরের পার্থক্য করি, আরাম ও কষ্টের পার্থক্য করি, ভালো ও মন্দের পার্থক্য করি।”

মস্তিষ্কেই মানুষের মননের উৎস, তার চেতনা, তার ‘আমিত্ব’।

২) মন
মন দর্শনশাস্ত্রের একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় ধারণা। মন বলতে, বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের এক সমষ্টিগত রূপ যা চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মন কি এবং কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অনেক রকম তত্ব প্রচলিত আছে। এ সব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা আরম্ভ হয়েছে মূলত প্লেটো এ্যারিস্টটল এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকিদের সময়কাল থেকে।

মন এর সঠিক সংজ্ঞা সম্ভব নয়। তবে এই ভাবে বলা যেতে পারে, মন হলো এমন কিছু যা নিজের অবস্থা এবং ক্রিয়াগুলি সম্পর্কে সচেতন। মনের সরুপ লক্ষণ হলো চেতনা যার থেকে মনকে জড়ো থেকে আলাদা করা হয়।

সাধারণত মনকে তিনটি ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করা হয়:-

• মন বলতে চিন্তা,অনুভুতি ও ইচ্ছা-এই মানসিক কাজ গুলোর সমষ্টিগত রূপ বুঝায়।
• মন বলতে চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা-এই মানসিক কাজগুলি থেকে স্বতন্ত্র দেহাতিরিক্ত এক স্থান, অপরিবর্তিত আধ্যাত্ম সত্তাকে বুঝায়।
• মন বলতে বুঝায় এক মূর্ত আধ্যাত্মিক ঐক্যের সম্বন্ধ যা চিন্তা,অনুভুতি ও ইচ্ছা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়া ছাড়া কিছুই নয়, অথচ যা নিজের স্বাতন্ত্র না হারিয়ে এই সকল মানসিক কাজের ভিতর দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে।

প্রথমটি হলো মন এর অভিজ্ঞতামূলক মতবাদ পরেরটা আধ্যাত্মিক-মতবাদ, শেষেরটা ভাববাদীদের মতবাদ।

৩) হৃদয়
হৃদয় বা হৃৎপিণ্ড মানবদেহের একটি পেশিবহুল অঙ্গ। এটি পৌন:পৌনিক ছান্দিক সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালীর ভেতর দিয়ে রক্ত সারা দেহে প্রবাহিত করে। গড়পড়তায় একটি মানব হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৭২ বার স্পন্দিত হয়।

মানব হৃৎপিন্ড ৪টি মূল প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় । অলিন্দদ্বয় আন্তঅলিন্দ দেয়াল এবং নিলয়দ্বয় আন্তনিলয় দেয়াল দ্বারা পৃথক থাকলেও ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝে ট্রাইকাস্পিড কপাটিকা এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মাঝে বাইকাস্পিড কপাটিকার মাধ্যমে একমুখী সংযোগ বিদ্যমান । হৃৎপিন্ডের সর্ববামের নিম্নগামী ভোঁতা অংশকে এ্যাপেক্স বলে। হৃৎ স্পন্দন শোনার জন্য একটি স্টেথোস্কোপ সরাসরি এ্যাপেক্সের উপর স্থাপন করা যায়। এটি বাম মধ্য-ক্ল্যাভিকুলার রেখায় ৫ম ইন্টারকস্টাল স্থানের পেছনে অবস্থিত। স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির হৃৎপিন্ডের ওজন ২৫০-৩৫০ গ্রাম (৯-১২ আউন্স)।

• প্লেটো মনে করতেন যেহেতু মস্তিষ্ক গোলাকার, গোলক একটি আদর্শ ঘনক, তাই এই মস্তিষ্কই চেতনার আধার। লিওনার্দোর আঁকা ছবিগুলো থেকে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর বিন্যাস সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জানতে পারি। মস্তিষ্ক নিয়ে বিজ্ঞান-সম্মত পর্যবেক্ষণের এটাই প্রথম ধাপ।

• দেকার্তের মতে পশু ও মানুষের দেহের যান্ত্রিকতা তুলনীয়, কিন্তু অতুলনীয় হলো মানুষের মনন। এই মননই মানুষকে পশুর থেকে আলাদা করে। তিনি মনে করতেন মনন বা চেতনার উৎস মস্তিষ্কের পেছনের দিকে অবস্থিত পিনিয়াল গ্রন্থি।
• হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করে এবং যেহেতু রক্ত বিনা শরীর মৃত, তাই অ্যারিস্টটল মনে করতেন হার্টই সকল চেতন-শক্তির আধার।

শেষকথা:
উপরের বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, কোন পরাশক্তির অবস্থানই কম নয়। তবে মস্তিষ্ক এই তিনের লিডার। মানুষের কামনা বাসনার সাফল্য নির্ভর করে শরীরের সামর্থের উপর। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সক্ষমতা নির্ভর করে রক্তগুণের উপর। মনের চাহিদানুপাতে মস্তিষ্ক নির্দেশ দান করলে শারীরিক সামর্থের অভাবে যদি সেই চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে ? আবার মনের চাহিদা অনুযায়ী মস্তিষ্ক যদি নির্দেশ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ? মস্তিষ্ক এবং মন এই দুইয়ের মধ্যে যাতে সমন্বয় হয়, সে কাজ করে হৃদয়। হৃদয় হলো রক্ত শোধনাগার। রক্ত ভালো যার, সব ভালো তার।
-
২১।১১।২০১৫

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×