সিঁধেল চোর,গরু চোর, হাঁস চোর, মুরগী চোর, ভোট চোর,কাফন চোর, লাশ চোর,পদকের সোনা চোর সহ আমাদের দেশে রয়েছে হরেক রকম চোর। বলা যায় চোর উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র আমাদের এই সোনার বাংলা। পত্রিকা মারফত জেনেছিলাম, বাংলাদেশে একটি গ্রামের সব অধিবাসীই নাকি চোর। তারা ভোটার তালিকায় তাদের পেশা লিখেছিলেন “চোর”।
বঙ্গবন্ধুতো রীতিমত চোরের খনি পেয়েছিলেন এই দেশে। এই চোরা ঐতিহ্য কিন্তু আমাদের অতি প্রাচীন। সেই অঙ্গ,ভংগ,কলিংগ, মঘধ, কৌশল, কাঞ্চির যুগে এতদ অঞ্চলে ছিল এক বিখ্যাত ব্রাহ্মণ চোরের আবাস। চুরি করে পালিয়ে থাকার জন্য যিনি রীতিমত এক দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন। দুর্গটির নাম চোর চক্রবর্তীর দুর্গ । বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলায় চোরকাই রেল্ ক্রসিং এর পাশে অবস্থিত এই প্রাচীন দূর্গটি ১৯৬৮ সালে আবিষ্কৃত হয়। চোর মশাই একবার মগধের রাজ্যে চুরি করতে গিয়ে সৈন্যদের তাড়া খেয়ে নিজের দুর্গে ঢুকে তোরণ লাগিয়ে দেন। সৈন্যরা চোর কই,চোর কই বলে চিৎকার করতে থাকে, এই চোর কই থেকে দুর্গ অঞ্চলটির নাম হয় চোরকাই । এই চোর চক্রবর্তীর দুর্গ আবার বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
তো আমাদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা আবার খুব যত্নশীল। হেন কোন পেশা নেই যেখানে আমরা কোন না কোন ভাবে চুরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারি না। আমাদের দেশে স্বীকৃত পেশার সংখ্যা শতাধিক। রাজনীতিও একটা পেশা। এখানে চুরির এতই মহোৎসব চলে যে, রাজনীতি আর রাজনীতিবিদ অনেকটা চুরি আর চোরের সমার্থক হয়ে গেছে।
রাজনীতিবিদের কথা এলো যখন, প্রসঙ্গক্রমে না হয় একটা গল্পই বলি-
নাসা একবার মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল। প্রকল্পটা ঝুঁকিপুর্ন বিধায় কেউ যেতে সাহসী হচ্ছিল না। মানবকল্যানে কাউকে না কাউকে তো অবদান রাখতেই হবে ভেবে এক বৃটিশ রাজী হল, এই প্রকল্পে অংশ নিলে সারা বিশ্বে নাম ছড়িয়ে পড়বে এই ভেবে এক আমেরিকানও রাজী হয়। কি জানি ভেবে একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদও যেতে রাজী।
স্পেসশিপে একজনকেই পাঠানো সম্ভব, তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে তিনজনকে ডাকা হল। প্রথমে আমেরিকান। তাকে জিজ্ঞেস করা হল যাবার জন্য তিনি কত টাকা চান।। তিনি উত্তর দিলেন, ২ মিলিয়ন।। এর মাঝে ১ মিলিয়ন আমার পরিবারের জন্য আর বাকি ১ মিলিয়ন মেডিকেলের উন্নয়নের জন্য দান করতে চাই।
এর পরে বৃটিশ। তাকে জিজ্ঞেস করা হল তিনি যাওয়ার জন্য কত টাকা চান?
শুনে তিনি বললেন, ১ মিলিয়ন ডলার, সে টাকার অর্ধেক আমি আমার পরিবারকে দিতে চাই।বাকি অর্ধেক দান করতে চাই।
এবার তৃতীয় আবেদনকারী যিনি আমাদের বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ।। উনাকে জিজ্ঞেস করা হল তিনি কত টাকা চান।। তিনি প্রশ্নকর্তার কানে কানে ফিসফিস করে বললেন, ৩ মিলিয়ন!
প্রশ্নকর্তা শুনে অবাক।। বলল, এতো বেশি কেন??
তখন রাজনীতিবিদ আবার তার কানে কানে বলল, ১ মিলিয়ন আমি রাখবো।। এক মিলিয়ন আপনাকে দিবো।। আরেক মিলিয়ন ইঞ্জিনিয়ারটাকে দিয়ে তাকে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিবো!!
এই হচ্ছে আমাদের রাজনিতিবিধদের চিকন বুদ্ধি,বলা যায় চোরা বুদ্ধি!
এত এত চোর নিয়ে বেকায়দায় আছে বাংলাদেশ।সেদিন এক ইন্ডিয়ান ফেসবুকে লিখেছে, মোদী ভারতে হাসিনা স্টাইলে নির্বাচন করছে। বিদেশ থেকে আমরা উপদেষ্টা আর আইডিয়াবিদ আমদানি করি। আমাদের চোরা আইডিয়াও যে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে সে খবর আমরা রাখিনা। এদেশ আবার ম্যান পাওয়ার রপ্তানিতে পৃথিবীর শীর্ষ দেশ। আহা বিদেশে যদি চোর রপ্তানির সুযোগ থাকতো!
সুযোগ যে একদম নাই তাও নয়। এইতো সেদিন আমাদের ফেরদৌস মিয়াকে রাজনীতির মাঠে আমদানি করে নিয়েছে ভারত। চলতি সপ্তাহে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগরওয়ালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন ফেরদৌস। বিষয়টি সেদেশে বিরাট হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে।
তাঁর এ অংশগ্রহণের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে বিজেপি।তারা বলছে, আজ ফেরদৌসকে আমদানী করা হয়েছে, কাল আমদানী করা হবে পাকিস্তানের ইমরান খানকে, এ মেনে নেয়া যায়না। এরপর দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে প্রতিবেদন চায়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে তাকে কালো তালিকা ভুক্ত করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আরেকটি স্বাধীন দেশের রাজনীতির মাঠে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন কিনা এই নিয়ে দেশেও চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। তবে যে যাই বলুক, আমি কিন্তু এতে একটা সম্ভাবনা দেখছি,সেটা হচ্ছে চোর রপ্তানির সম্ভাবনা, রাজনীতিবিদ রপ্তানির সম্ভাবনা, ফরেন কারেন্সি আর্ন এর সম্ভাবনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:৪৮