somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'পকেটমার কাটিং' - (রম্য) :P =p~

৩১ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




খড়ের গাঁদা সদৃশ্য এক মাথা নিয়ে এক খদ্দের গেল নাপিতের কাছে। নাপিত শুধু চুলে বিলি কেটে যাচ্ছে, চুল কাটার নাম নাই। খদ্দের বিরক্ত হয়ে খেঁকিয়ে উঠলো- আধা ঘণ্টা ধরে মাথায় বিলি কাটছিস, চুল কাটবি কখন?
নাপিত ততোধিক ক্ষিপ্ত হয়ে বলল- রাখেন আপনার চুল কাটা ! চুলের মধ্যে কাঁচি হারাই ফেলছি!

এ হচ্ছে অন্যের ঘটনা অন্যের বায়ান। এবার আমি করতে চাইছি ঈদের আগে নিজের চুল কাটানোর এক নিরস বয়ান।
‘নাপিত ছোঁড়া, কবিরাজ বুড়া’ বলে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। অর্থাৎ নাপিত কম বয়সি হলে ভাল, কবিরাজ বেশি বয়সি হলে ভাল। অপ্রাসঙ্গিক হলেও কবিরাজ বিষয়ে আরেকটি উর্দু প্রবাদ মনে এলো-‘ নিম হাকিম খাতরায়ে জান,নিম মোল্লা খাতরায়ে ঈমান।‘ কম জানা কবিরাজ জানের জন্য হুমকি,কম জানা মোল্লা ঈমানের জন্য হুমকি।‘ তবে কম জানা নাপিত কিসের জন্য হুমকি এবিষয়ে প্রবাদে কিছু বলা নাই। বলা নাই বলে আফসোসেরও কিছু নাই। বলা নাই বলা হবে। আমিই নাহয় বলছি।

প্রবাদে অনেক ভাল ভাল কথা বলা আছে তবে সে সব আমরা সব সময় মানি না। আমিও ‘নাপিত কম বয়সি হলে ভাল’ এই প্রবাদ না মেনে বেশি বয়সি রমনীর কাছে চুল কাটাই। রমনী শুনে কেউ আবার ভেবে বসতে পারেন আমি বোধ হয় পার্লারের কোন ষোড়শীর কাছে চুল কাটাই। তাদের জ্ঞাতার্থে- এই রমনী সেই রমনী নয়,এ হচ্ছে রমনী মোহন শীল।

সকালে তার দোকানে গিয়ে দেখি অনেক লোক ওয়েটিংএ। রমনী আমার দিকে পত্রিকা বাড়িয়ে দিয়ে তেলতেলে এক হাসি দিল, বলল – বিশ মিনিট অপেক্ষা করেন। বিশ মিনিট পেরিয়ে যখন এক ঘন্টা পেরুলো তখন বাধলো এক বিপত্তি। চুল কাটা, শেভ শেষ হওয়ার পর অপারেশন চেয়ারে বসা এক কাস্টমার দুই হাত উপরে তুলে উঁ উঁ করছে। আমি ভাবলাম বেটার কাছে মনে হয় চুল কাটানোর টাকা নাই তাই স্যারেন্ডার করছে।

রমনীর রাডারে কিন্তু সংকেতটি ঠিক মতই হিট করেছে, সে বলল- ঈদের সিজনে এসব কামাই না।
কি কামায় না দেখার জন্য আমি উঁকি দিলাম! দেখলাম বেটার বগল তলে ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার দিশা’ অবস্থা!! অনায়াসে ছনের চালের গোয়াল ঘরের এক চাল হয়ে যাওয়ার কথা! চুদুর পুতের মনে হয় বছরে একবার মানে রমজান ঈদের আগেই ওগুলা কাটার কথা মনে হয়। যাক নাজুক তবীয়তের পাঠকের ঘেন্না লাগতে পারে তাই সেদিকে আর গেলাম না।

‘হালার পুত কেন কাটবিনা বলে স্যারেন্ডারকারির তেলেবেগুনে জ্বলে উঠা, বাদানুবাদ, হাতা হাতিতে আরো ২০ মিনিট কেটে গেল। রমনীর পাশের চেয়ারের কম বয়সি ছোড়াটার (নাপিত) চেয়ার খালি হলেই আমাকে ডাকছিল। দাদা আসেন দাদা আসেন। যেন তার কাছে চুল কাটতে আমি মুখিয়ে আছি।

এই বেটার কাছে আমি এখন আর ভুলেও চুলকাটা বা শেভ করিনা। কিছুদিন আগে বেটার চেয়ারে শেভ করতে বসেছি। সে হাত ভিজিয়ে আমার নাকের নিচের অংশে পানি লাগাতে গিয়ে অসতর্কতায় তার একটা আঙ্গুল আমার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে।
পরে খেয়াল করে দেখি তার ওই আঙ্গুল থেকে সদ্য ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে, এখনো ঘা শুকায় নি। ওয়াক!! এখন বেটাকে দেখলেই আমার গা রি রি করে উঠে। সুতরাং তার ডাকে সাড়া দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। আমি অপেক্ষা করছি রমনীর জন্য। মোট ঘন্টা দুয়েক পরে অপেক্ষার অবসান হয়। আমার ডাক আসে।

মাথার সামনের কিছু চুল কাটার পরেই শুনি দরজায় দাঁড়িয়ে কে যেন হুঙ্কার দিল- ‘রমইন্না, তুই বলে সেয়ানা হইছস?’ তাকিয়ে দেখি – রুদ্রমুর্তিটি এলাকার ত্রাস কিরিচ কাদের।
ভয়ে কুঁকড়ানো রমনী শুধু দাদা দাদা করে গেল।

-তুই না সকালে বাসায় গিয়ে আমার পোলার চুল কাটার কথা?
-দাদা এক্ষুনি যাচ্ছি বলেই সে ক্ষুর কাঁচি গোছাতে লাগলো।
- যাচ্ছি বলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বলেই লাথি দিতে উদ্যত হল এমন সময় কিরিচের নজর পড়লো পাশের চেয়ারের কাস্টমারের উপর। বুঝা গেল এ মাল কিরিচ কাদেরের পুর্ব শত্রু।

অনেক দিন পর তোরে বাগে পাইছি বলেই সে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপর। ধস্তাধস্তি, কাস্টমারদের হুড়োহুড়িতে শিকার ফসকে গেল। মুহূর্তে সেলুন ফাঁকা। রমনীও দিল দৌড়। যাওয়ার আগে আমাকে আঙ্গুল চোষানো ছেলেটাকে বলে গেল- বিশু তুই দাদার চুলগুলি কেটে দে।

এতক্ষণ রণক্ষেত্রের মধ্যেও সাহস করে বসে ছিলাম। এই ক্ষণে বিশুর আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে খিঁচে দৌড় দিতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। কারন আয়নায় তাকিয়ে দেখি চেয়ারে আমি বসে নেই। সেখানে বসে আছে সদ্য ধৃত এক পকেটমার, উত্তেজিত জনতা যার চুল গুলি এবড়োথেবড়ো করে কেটে দিয়েছে।
(RP)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:০৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×