somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজেকে ভালো না বাসলে অন্যজনকে ভালোবাসা যায় না।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নির্ভানা ইভা আত্মহত্যা করার পর তার এক নিকটতম বান্ধবী ইভার বাপরে বলে, আংকেল আপনার মেয়ে ইভা সুইসাইড করছে। উত্তরে ইভার বাপ নিকটতম বান্ধবীরে বলেছিলো, মাগী মরছে ভালোই হইছে। বাঁইচ্চা থাকতে আমাদের মান সম্মান কিছুই বাকি রাখে নাই! এখন মইরা গিয়া আমাদের ইজ্জত বাঁচাইছে।

পুলিশ ইভার বাসায় আইসা লাশ উদ্ধার কইরা মর্গে পাঠানোর পর ইভার বাপরে ফোন দিয়ে বলে, থানা থেকে বলছি, আপনি কী নির্ভানা ইভার বাপ বলতেছেন? উত্তরে ইভার বাপ "হুম" বইলা পরিচয় কনফার্ম করে। অফিসার বলে, আপনাকে একবার থানায় আসতে হবে। উত্তরে ইভার বাপ অফিসারকে বলে, তার বাসায়তো একটা ল্যাপটপ ছাড়া আর কোন প্রয়োজনীয় জিনিস নাই। ঐ ল্যাপটপটা আমরা কিভাবে পেতে পারি? অফিসার ফোন লাইন কাইটা দিয়া সামনে বসে থাকা ইভার নিকটতম বন্ধুদের বলে, এইটা কি ইভার আসলেই বাপ!

ইভার বাপ ইভাকে দেখে শুনে বুঝে সুজে একটা ছেলের কাছে বিয়ে দেয়। ইভা সেই বিয়াটা মাইনা লইতে পারে নাই মানসিক ভাবে। ইভার কথা ছিলো, আমার বিয়া ক্যান আমার বাপ দিবে! আমি বিয়া করবো আমার পছন্দে। অথচ সেই ছেলেটি ইভাকে খুবই ভালোবাসতো। কিন্তু ইভা ছেলেটিকে একেবারেই সহ্য করতোনা। ছেলেটির পরিবারও ইভাকে খুবই আদর যত্নে রাখতো। কিন্তু ইভা ছেলেটিকে মাইনা লইতে না পাইরা বিয়া ভাইঙ্গা দিয়া একটা ফ্রি লাইফ বাঁইচা লইছিলো।

সব চাইতে হৃদয় বিদারক ঘটনা হইলো, সেই ছেলেটি বিয়া বিচ্ছেদের পরেও বেনামে ইভার ঠিকানায় গিফট পাঠাইতো। আর ইভা সেই গিফট নিয়া কাইটা কুচি কুচি কইরা ফেইসবুকে ভিডিও আপলোড করতো! আর সেই ভিডিও ছেলেটি দেখতো! আর ইভা জানতো ছেলেটি ইভার টাইমলাইন সার্চ দিয়ে দেখে!

ইভা বিয়া বিচ্ছেদের পর থেকে সুইসাইড করার আগ পর্যন্ত একাধিক ছোট বড় সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু তার মধ্যে একটা রিলেশনই স্টাবলিশড করতে পারে নাই। হতাশা বাড়তে থাকে ইভার। বন্ধু বান্ধবদের আড্ডায় অনিয়মিত হয়ে কমপ্লিট কিছুদিন নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করে। কিন্তু ইভা হতাশা নিরসন করতে পারে নাই। হতাশা থেকে বাঁচতে ইভা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় সুইসাইডের।

সুইসাইডের পর ইভার লাশ নিতে কিংবা লাশ দেখতে পরিবারের কেউই আসে নাই। ইভার লাশ দেখতে এসেছিলো, সেই ছেলেটির [যার সাথে ইভার বিয়ে হয়েছিলো] এক বোন এবং এক ফুফু। ইভার বন্ধু বান্ধবরা মর্গের সামনে গিয়ে যখন দেখে ইভার পোষ্টমর্টেমের পর ইভার কলিজা, মগজ এবং আরো অন্যান্য শরীরের পার্টস একটা সিমেন্টের ব্যাগে করে বের করে একটা জায়গায় ফেলে রাখা হয় তখন তারা কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি করে ফেলে!

নির্ভানা ইভা দেখতে খুবই আদুরী ছিলো। খুব ভালো মন্দিরা বাজাইতো। সুন্দর এবং হার্ট টাছি করে কথা বলতো। প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতন ব্যাপার ছিলো। কিন্তু জীবনে একটা ভুল সিদ্ধান্ত তাকে সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করলো।

কিছুদিন আগে আকাশ নামের এক ডাক্তার সুইসাইড করেছে। এই সুইসাইড কেইস কাহিনী আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমরা এইটা জানিনা আত্মহত্যা কোন সমাধান নয় সকল সমস্যার সমাধান মৃত্যুর আগেই করে নিতে হয়।

জীবনটা একান্তই নিজের। অন্যের জন্য না বাঁচলেও আমাদেরকে নিজের জন্যেই বেঁচে থাকতে হবে। সবচাইতে বড় বিষয় হলো, নিজেই যদি নিজেকে ভালো না বাসি তাইলে অন্যজনকে কিভাবে ভালোবাসবো? নিজেকে ভালোবাসেনা যেইজন অন্যজনকে ভালোবাসবে সেইজন- এই কথা বিশ্বাস করবে কয়জন?

নির্ভানা ইভার সুইসাইড এবং আকাশের সুইসাইড আমাকে কিঞ্চিৎ পরিমাণও কষ্ট দেয় নাই তবে আমাকে ভাবিয়েছে অনেক। আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে, যার নিজেকে হত্যা করার মানষিকতা আছে তাকে ভালোবাসা যায় না তার থেকে দূরে থাকা যায়। নিজের কাছেই যার নিজের মূল্য নাই অন্যজনকে সে কোন ভাবেই মূল্যায়ন করবেনা। নিজের জন্য বাঁচলেই কেবল অন্যজনকে বাঁচাইতে পারবে।

নির্ভানা ইভা এবং আকাশ হোক আমাদের জন্য বেঁচে থাকার শক্তিশালী অনুপ্রেরণা। আমরা কেউই নির্ভানা ইভা কিংবা আকাশ হইতে চাইনা। ইভা, আকাশ আমাদের কাছে স্রেফ উদাহরণ হয়ে থাকুক বেঁচে থাকার।

দ্যাটস অল ইউর অনার।

[লেখাটি লেখার পর আমার বউ পড়ে আমাকে বারবার অনুরোধ করেছে লেখাটি পোষ্ট না করতে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এই দুইজন হাজারো হতাশাগ্রস্ত মানুষের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা হইতে পারে। এই লেখা পড়ে যদি কেউ সুইসাইডের সিদ্ধান্ত বদলায় তাইলেই কেবল সার্থকতা। ]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×