শেখ হাসিনা ওয়াজেদ জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা।
মা বেগম ফজিলাতুননেসা। জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া । বাল্য শিক্ষাঃ টুঙ্গিপাড়া । ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারী বাসভবনে উঠেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন।১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে তাঁর বিয়ে হয । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। বোনদ্বয় সেইসময় পড়াশোনার জন্য পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। এবং স্মামী ওয়াজেদ মিয়া ৯ মে, ২০০৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) ।
বিবরন দেখলেই বুঝা যায় বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাি এমপি বেড়ে উঠাটা সোনার চামিচ মুখে দিয়ে নয়। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে বেড়ে উঠা। যা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে অনুমেয়।
ঘাতকদের বুলেটে বাবা সহ পরিবারের সবাই সবাই নিহত হওয়ার পর দিশেহারা শেখ হাসিনা । জাতিও দিশেহারা। আওয়ামীলীগ তখন নেতাদের ভারে ভারাক্রান্ত। সমপর্যায়ের এতবেশী নেতা যে কোন অভিভাবক নেই। অভিভাবক হিসাবে সবার উপরে স্থান দেয়া হয় শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে।আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। শুরু হয় রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বন্ধুর পথ চলা। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ত্ব দানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। মুজিবের রেখে যাওয়া সংগঠন । বিশালতা তার তৃনমুল। শেকর এত গভীরে যে তাকে আবিষ্কার করতে এবং গুছিয়ে নিতে তাকে হিমসিম খেতে হয়। তা ছাড়া সামরিক স্বৈরাচার তখন যগতদ্বল পাথরের মত জাতির ঘারের উপর গরম শ্বাস ছাড়ছে। শুরুতেই বিপত্তি। জিয়া হত্যা এবং সাত্তার হয়ে এরশাদের আগমন। শত্রু মিত্র চিন্হিত করা দুসাধ্য। ৭৫ পরবর্তী সময়ে অনেক মিত্র আপন ভুবনে চলে গেচে। বঙ্গবন্ধুর শুভাকাঙ্খিরা অনেকেই গত হয়েছেন। অনেকে ঘোলস পাল্টে স্বমহিমায় আবির্ভূত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সময়ের ছাত্র যুবক তখন আওয়ামী নেতা। সবাইকে সমিহ করতে হচ্ছে গুরুত্ত্ব দিতে হচ্ছে সবার কথায়। সবার কথা আবার নিজের মত। পরাশক্তি অনেক । একদিকে বাম উগ্রবাম ঘরানার পরাশক্তি অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধী ও স্বৈরাচারী সামরিক শাষকের পরাশক্তি। একেতে রাজনীতিতে নবীন তারপরে আবার ভয়ংকর সব পরাশক্তি। আস্তে আস্তে নিজেকে ধাতস্ত করতে থাকেন । এরই মধ্যে আওয়ামীলীগ দ্বিখন্ডিত । এক মালেক দুই মিজান। পরবর্তীতে আর একবার ভাঙ্গনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উত্তরাধীকার খ্যাত আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্ত্বে। আওয়ামী রাজনীতির মুল চালিকা শক্তি ছাত্র সংগঠনের বিশাল অংশ এবং তুলনামুলকভাবে প্রগতিশীল অংশ নিয়ে বেরিয়ে যান আওয়ামীলীগ থেকে জনাব আব্দুর রাজ্জাক।শুরু হয় স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। সকল গনতন্ত্রমনাদের যুগপদ আন্দোলন। দেশীয় রাজনীতিতে ছাত্র রাজনীতির একটা ভুমিকা সব সময়ই থাকে যা ঐ সময়েও পরিলক্ষিত হয়। সকল ছাত্র সংগঠন জোটবদ্ধ সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে। তিন ভাগে স্ব স্ব অবস্থান থেকে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন যা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামে আন্দোলন পরিচালনা করছে সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ। জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল অন্যদিকে অপশক্তি ইসলামী ছাত্র শিবির। ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে জাতীয় রাজনীতিও তিন গোষ্ঠতে বিভক্ত হয়ে শুরু হয় স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। ১৫ দল আওয়ামীলীগের নেতৃত্ত্বে। ৭ দল বিএনপির নেতৃত্ত্বে এবং জামাত। যুগপদ আন্দোলন।
অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন মুজিব তনয়া শেখ হাসিনা। এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয় শেখ হাসিনাকে। এর মধ্যে চট্রগ্রামের লালদিষী ময়দানের জনসভা সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল। নেতা কর্মীরাই তার একমাত্র ভরসা। পথ পরিক্রমায় স্বৈাচারের পতন হয় ১৯৯০ এ এবং গনতন্ত্র মুক্তি পায়। আন্দোলনের সফলতার খ্যাতি হিসাবে পেয়ে যান #গনতন্ত্রের মানস কন্যার স্বীকৃতি।
শুরু হলো জাতীয় নির্বাচন।আন্দোলন যুগপদ এবং জোটবদ্ধ হয়ে হলেও নির্বাচন আলাদা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এবং জামাত পৃথক নির্বাচন করলেও ভিতরের সমঝোতা রয়ে গেল। অন্যদিকে ১৫ দল যার যার তার তার। যেকারনে আওয়ামীলীগের ক্ষমতার সাধ গ্রহন অধরাই থেকে গেল। ১৫ দলের জোট তখনকার দিনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবাই ছিল শক্তিশালী। সবার ছাত্র সংগঠনগুলোও ছিল তুলনামূলকভাবে বৃহৎ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় ছা্ত্রলীগ(বাকশাল), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ(জাসদ), এ ছাড়াও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ড এবং বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রি স্থানভেদে ছিল শক্তিশালী।কৃষক শ্রমিক সংগঠন বিবেচনায় কমিউনিষ্ট পার্টি, ওয়ার্কারস পার্টি, সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ), বাকশাল বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। যে কারনে ৯০ এর নির্বাচনে ১৫ দল জোটবদ্ধ নির্বাচন করেনি। সবাই জনমত যচিাইয়ে পরীক্ষায় ব্যস্ত ছিল। ব্যর্থতার ক্ষন গুনতে থাকে ১৯৯৫ সাল নাগাদ।
১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক গভিরতা বাড়তে থাকে। সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা হয় প্রসারিত। দেশের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগে খুজতে থাকে ৭১ এর চেতনা। খুজতে থাকে বঙ্গবন্ধু সহ স্বপরিবারে হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার সুযোগ। অনুরোধ করতে থাকেন মুজিব হত্যার বিচারে সায় দিতে। সমমনা কিছু দল সায় দেয়্। সমমনা আমজনতা পাশে দাড়ায়। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র যুবক আস্তে আস্তে শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বকে আমলে নিতে থাকে। এবং সুযোগ করে দেয় ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার।
১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল। ততদিনে অনেক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা সরাসরি শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্ব স্বীকার করে নিজদল থেকে আওয়ামীলীগে পারি জমায়।শুরু হয় ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার।পাশাপাশি বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে মুজিব সহ তার পরিবার ও চার নেতা হত্যাকারীদের শাস্তির। শেখ হাসিনার বিচক্ষনতার চুড়ান্ত পরীক্ষা চলতে থাকে। ৭৫ এর ঘাতকদের বিচার এবং ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি অঙ্গীকার সবকিছু মিলিয়ে জামাত সহ ধর্মান্ধগোষ্ঠী এবং ৭৫ এর ঘাতকরা বিএনপির পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে। তার ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ২০০১ এ সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়।
২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপির নেতৃত্ত্বে জোট শাসনামলে দেশে চলতে থাকে নারকীয় সব কর্মকান্ড। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস থেকে শুরু করে নির্বিচারে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজনকে। বিচার ব্যবস্থার উপর নেমে আসে অবর্ননীয় হুমকি। ধর্মান্ধগোষ্ঠী হয়ে উঠে বেপরোয়া। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয় ডজন খানেক বার। সবচেয়ে বড় আঘাতটি হানে ২১ আগষ্ট ২০০৪ । শেখ হাসিনা সহ গোটা আওয়ামী পরিবারকে নেতা শুন্য করার ঘৃন্য অপচেষ্টায় মেতে উঠে জোট সরকার। শেখ হাসিনা বেছে গেলেও প্রানহানী ঘটে ২৪ নেতা কর্মীর। আহত হয় হাজার হাজার নেতাকর্মী। মুজিব হত্যা বিচারিক প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। নথিপত্র চলে যায় হিমঘরে।
শেখ হাসিনা ততদিনে অভিজ্ঞ রাজনীতিক এর খাতায় নাম লিখিয়েছেন।১/১১ জাতির জীবনে এক কাল অধ্যায়। দুই বড় দলের দুই নেতাকে মাইনাস করার ঘৃন্য পায়তারা চলতে থাকে। এমনকি হত্যার ষরযন্ত্রও করা হয়। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দৃঢ় মনোবল এবং নেতাকর্মীদের দৃঢ়তার কারনে অপমক্তি ব্যর্থ হয় । কিছু কিছু ডাকসাইডের নেতা সংস্কারের নামে ঘোলস পাল্টে ১/১১ এর ক্রিড়ানকদের সাথে হাত মিলায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব তার প্রকৃস্ট উদাহরন।
এত সব বাধা অতিক্রম করে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেন ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারের আওতায় আনার এবং মুজিব হত্যার বিচার চুড়ান্ত করার। ৪৩ বছরের পাপ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য শেখ হাসিনা তার অঙ্গীকারের সারা পায়। ছাত্র কৃষক শ্রমিক যুবক সমস্ত মুক্তমনা মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ, শহীদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা সহ সকলে স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মান্ধগোষ্ঠীর মুল উৎপাটনের লক্ষে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেয় ২০০৯ সালে।
তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা এখনও সরকার প্রধান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে কয়েকজনের শাস্তিও প্রদান করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান। শাস্তি হয়েছে অনেকের । অনেক কুখ্যাত রাজাকার পালিয়ে বেড়াচ্ছে শাস্তি মাথায় নিয়ে।
রননীতি এবং রনকৌশলের অংশ হিসাবে ১৯৮১ থেকে ২০১৫ এই বিশাল পথ পারি দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিছু সকলের চোখে গ্রহনযোগ্য কিছু সমালোচনাযোঘ্য কিছু বিতর্কিত। এটাই রাজনীতি। কিন্তু লক্ষ একটাই মুজিবের সোনার বাংলা। সেটা হবে সমৃদ্ধশালী, অসাম্প্রদায়িক, গনতান্ত্রিক, সুশাষন ও জবাবদিহিতামূলক।চলার পথে অনেকে এককালে আওয়ামীবিরোধী শক্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যায় মদদ বা পবিবেশ সৃষ্টিকারী, বাম, মডারেট বাম, উগ্রবাম, মডারেট ধর্মান্ধগোষ্ঠী, স্বৈরাচার সকলের সাথে সমঝোতা করেছেন । দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার দ্বিতীয় সেসনে এখন আবার উগ্র ডান এবং মডারেট ডানদের দলে ভিরানো হচ্ছে এটা কোন নুতন কৌশল কিনা সন্দেহ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে দলে ভিড়িয়ে দলকে শক্তিশালী করেছেন এবং সরকার গঠন করেছেন। এখন মডারেট উগ্র ডানদের দলে ভিড়িয়ে ধর্মান্ধগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা কিনা সেটাই দেখার বিষয়। তবে লাগাম শক্তহাতে টানতে হবে সেটাই শেষ কথা। তবে কোন অবস্থাতেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যারা দলভুক্ত এবং জোটবদ্ধ হয়েছে তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা বা হীন স্বার্থে বিরাগভাজন করা সমোচিন হবে না। কারন জোট শক্তি ২০+ দৃশ্যমান না হলেও ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করতে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।