গ্রাহক সিম নিবন্ধন নিয়ে অনেকেই তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তীতে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে কিংবা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেসব কথা বলেছিলেন। সেই অনাঙ্খাকিত সমস্যাগুলির ব্যাপারেও আমিও তেমন ভাবেই শঙ্কিত। কারণ হলো-আমি আমার তিনটি সিমের মধ্যে দুটি সিমের নিবন্ধন সম্পন্ন করেছি দুই বার করে! তিন নম্বরটি নিবন্ধনের সময় আমার এক বন্ধু সিম নিবন্ধন নিয়ে সাম্যক কিছু সমস্যার ব্যাপারে আমাকে ধারণা দিলেন। তারপর সেই সিমটি আমি নিবন্ধন না করে একটা নির্ধারিত সমসয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ঠিক সেই সময় পার হওয়ার পর আমি যখন আমার তিন নম্বর সিমটি নিবন্ধন করার জন্য সার্ভিস সেন্টারে গেলাম, ঠিক তখন কেউ একজন আমাকে বলল; আগের নিয়মে সিম নিবন্ধন ঠিক হয়নি। আপনি সার্ভিস সেন্টার থেকে পুণরায় নিবন্ধন করে নেন! এই পর্যন্ত আমার কোনো বক্তব্য নেই কিন্তু যখন আমার আগের নিবন্ধন করা দুটি সিম সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কিনা যাচাই করতে গেলাম; সার্ভিস সেন্টার থেকে আমাকে জানানো হলো, আপনার সিম নিবন্ধন হয় নি। অর্থাৎ আমাকে পুনরায় ঐ দুটি সিম নিবন্ধন করতে হবে! তাহলে কথা হলো-আমার ঐ দুটি সিমের ব্যাপারে যা কিছু দিলাম অর্থাৎ ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর ফটোকপি, আঙ্গুলের ছাপ এবং এক কপি করে ছবি! এগুলির কি হবে!?
এখন আমার প্রশ্ন, সিমের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য আমাদের দেশে কোনো আইন আছে কি? যতদূর জানি, নাগরিকদের ব্যাক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ব্যাক্তির নিজের প্রাইভেসি বা অনাকাঙ্খীত উপদ্রব বা নজরদারি থেকে মুক্ত থাকার অধিকারের সাথে যুক্ত। বিদেশী মোবাইল কোম্পানীগুলোর কাছে সিম ব্যবহারকারী বাংলাদেশীদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কেনো জরুরী হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেটাই বিশাল একটি প্রশ্ন? নাগরিকদের বায়োমেট্রিক ডাটাবেইজ তৈরি ও সংরক্ষণ সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। তাহলে মোবাইল কোম্পানির বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই সত্যিই বিপদজ্জনক।
এখন কথা হলো-আমি তো সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, কিংবা খুনী নই তবে কেনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সিম নিবন্ধন করতে ভয়!? এটা ভীতু বা বীরত্ব প্রদর্শনের তর্ক নয়। অনেকেই বলেন, এতে ভুয়া আইডি নিবন্ধন বন্ধ হবে? আসলেই কি তাই? আমার মতে, এটাও হাস্যকর যুক্তি।
এতে বরং বিপদ বাড়বে। ঠিক যে এখন অপরাধীরা ভুয়া আইডি ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু কোথা থেকে কল করেছে নতুন প্রযুক্তিতে তা ট্রেস করা সম্ভব এবং ধরা মোটেও কঠিন কাজ নয়। ফোন কল অনুসরণ করে অপরাধী ধরা পড়েছে তার বিস্তর নজির আছে। কিন্তু এখন ভুয়া আইডি ব্যবহার না করে অপরাধীরা অন্যের নামে, ধরুন আপনার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করবে। অপরাধী হবেন আপনি। মোবাইল কোম্পানিগুলো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, তারা ব্যবসার জন্য ডাটাবেইজ থেকে অন্যের তথ্য ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে অপরাধীদের কাছে সিম বিক্রি করতে পারে। এটা রোধে কোনো আইনি ব্যবস্থা আছে কি? তারা যে সেটা করবে না তারও কোনো গ্যারান্টি আছে কি?
নিরাপরাধ নাগরিক অপরাধী হিসাবে শাস্তি পেয়ে যেতে পারেন। সাধু সাজার জন্য বা আমি অপরাধী না তাহলে সিম নিবন্ধনে ভয় কী বলে অনেকে সিম নিবন্ধনের যে যুক্তি দিচ্ছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন বা অনায়াসেই স্বীকার করবেন-চোর, ডাকাত, খুনিসহ নানান প্রকার ছোট-বড় অপরাধীও বায়োমেট্রিক কায়দায় সিম নিবন্ধন করেছে। তো আপনি সিম নিবন্ধন করে একই কাতারেই যোগ দিয়েছেন, সাধু হন নি! সিম নিবন্ধনের মধ্যে নিজেকে অপরাধী না ভাবা, নিজেকে সাধু জ্ঞান করা, অন্যে করছে, আপনি করছেন না বলে ভীতু বা অপরাধী ভাবার মতো আহাম্মকি আর কিছুই হতেই পারে না। আশা করছি ব্যাপারটি সকলের কাছে অনুধাবণ যোগ্য হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



