"পেট নয়, মনটা বড় করে দেশকে ভালোবাসুন।" ধামরাই উপজেলার ইসলামপুর আর সাভার উপজেলার নয়ারহাটকে পৃথককারী নদীর পাশে একটা সাইনবোর্ডে কথাটা লেখা আছে। প্রথমে লেখাটা দেখে হেসেছিলাম সত্যি কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই এর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পেরে লজ্জিতও হয়েছিলাম। যে নদীর পাশে কথাটা লেখা আছে সেই নদীর কথাই ধরি, কি কুৎসিত এই নদীর পানি! নদীর পাশে বসে বুক ভরে নি:শ্বাস নেয়া তো দূরের কথা, নাক না ধরে দাঁড়িয়ে থাকাই কষ্টকর! শুধু এই নদী কেন, দেশের সব নদীরই প্রায় একই দশা! কোনটি দখলের কবলের পড়ে মরা খাল আবার কোনটির পানি কয়লার চেয়েও কালো। কিছুদিন ধরে নদী রক্ষার জন্য বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু যে সমস্ত কারখানার কারনে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে সেগুলোও কি ধ্বংস করা হবে? তাই যদি না হয়, তাহলে নদীর পরিধি বাড়িয়ে আর কি লাভ? নদী হয়তো বাঁচবে তবে তা ক্যান্সার বুকে নিয়ে!
গাবতলীর নদীর কথায় ধরুন, কি হাল এর! শিল্পায়নের ফলে আমরা উন্নত হচ্ছি ঠিকই তবে তা পরিকল্পিত নয়। আমাদের উন্নয়নের ভিত্তিটা মজবুত নয়।
দেশের অধিকাংশ নদীর পানি পোশাক কারখানার বর্জ্যের কারনেই দূষিত হচ্ছে। আমরা পোশাক খাতের উন্নতির কথা বলছি, এর থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্সের কথা বলে পত্রিকা গরম করছি, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলে পোশাক শিল্পের প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে ফেলছি, কিন্তু এর মাধ্যমে যে ক্ষতি হচ্ছে তাকে আমরা খুব সামান্যই সামনে নিয়ে আসছি! শুধু পোশাক কারখানার কথা কেন বলবো, সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানই তো একই কাজ করছে। শুধু নিজেরটাই বুঝছে। দেশের পেছনে বড় বড় বাঁশ দিয়ে কর প্রদানের প্রথম সাড়িতে থাকার সুবাধে তারাই আবার পদকও হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব দেখার দায়িত্ব কার? সরকারের, সাধারণ মানুষের নাকি কারখানা মালিকদের?
ছোট বেলায় পড়েছিলাম "মাছে-ভাতে বাঙ্গালী"। প্রবাদটা ভালো করে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, এর প্রথমে কিন্তু আছে মাছের কথা। তার মানে আগে ভাতের তুলনায় নদীতে বেশি পরিমান মাছ পাওয়া যেতো। বাপ-দাদাদের কাছ থেকেও সেই গল্পই শুনেছি। কিন্তু এখন? নদীতে এখন কি আগের মতো মাছের দেখা পাওয়া যায়? প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীও হুমকির মুখে! এমন চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর পদ্মার ইলিশও থাকবেনা। মাছে-ভাতে বাঙ্গালী কথার মতো পান্তা-ইলিশও হয়তো বই পুস্তকেই থাকবে। ইলিশের দাম হবে স্বর্ণসম। শুধু মাছের প্রসঙ্গই বা আনছি কেন! আমাদের স্বাস্থের উপর যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তাও কি কম? পেটের ক্ষিদায় আমরা খাল-বিল খেয়েছি অনেক আগেই। এখন নদী খাচ্ছি! বাকি রইলো সমূদ্র। নজর এখন সেদিকেও। সব মিলিয়ে পেট বড় হচ্ছে, মনের পরিধি কমছে। বাংলা নববর্ষের এই দিনে সবার প্রতি আহবান, আসুন আমরা মনটাকে বড় করে দেশকে ভালোবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:১০