somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ব্লগ দিবসের বিশেষ ম্যাগাজিন: বাঁধ ভাঙার আওয়াজ" পাঠ প্রতিক্রিয়া-- ০৩ (কবিতাংশ-১)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কবিতা: হাওয়া ঘর থেকে হাওয়া মুখ (মোকসেদুল ইসলাম)

কবিতার মূলকথা:

পৃথিবীতে জন্ম নেবার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়তই চলে যাচ্ছি মৃত্যুর কাছাকাছি। জন্ম নেবার পর পরই একটা শিশু চিৎকার করে তার আগমন জানান দেয়। জীবনের প্রতি বাঁকে চড়াই-উৎরাই পার হতে গিয়ে চোখের সে জলটুকুও থেমে যায় স্রোতহীন নদীর মত। বাঁচতে হয় জীবনের অলিগলিতে লড়াই করে। মাটির মানুষ আবার মাটিতে মিশে যাবার টান অনুভব করে। জীবনকে রাঙাতে পারে যারা তারাই হয় জীবন যুদ্ধে জয়ী। তারা হেরে যায় না। সফলকাম লোকেরাই নিয়মের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে মেলে ধরার প্রয়াস পায়। তখন তার মরণ ও স্বার্থক হয়।

কবিতাটি আমার কাছে বেশ কঠিন মনে হয়েছে। আমি যে অর্থ বুঝেছি আমার মত লিখেছি। আপনাদের কাছে কি মনে হয় জানাবেন। সবার জন্য মূল কবিতাটি এখানে শেয়ার করছি।

পৃথিবীর মুখ থেকে ঢুকে যাচ্ছি হাওয়া ঘরে
তুমুল আলোড়নে শুরু হলো বেদম চিৎকার
চোখ সে তো শীতের নদী
আদ্র হাওয়ায় ভিজে যায় নিত্যদিন।
নেশা আমার গলিপথ ধরে হাঁটা
অন্ত্যজ মাটির টান অনুভব হয় বুকে
যারা আঙুল ঘুরিয়ে শিল্পকলা দেখায় তারা
গোপন ঘরে লুকিয়ে রাখে সুগন্ধিজল।

নিয়ম হলো একটা বিচিত্র জ্যামিতিক সমীকরণ মাত্র
হাওয়া মুখে যারা গান গায় তারা জানে না চিহ্নের ব্যবহার
বেভুলা বাতাসে উড়ে যায় শ্মশানের ছাই।


কবিতা: আমি শপথ করিতেছি যে (বাক প্রবাস)

কবিতার মূলকথা:
কবিতায় কবির মনের ক্ষোভ বেশ লক্ষনীয়। "সত্যকথা আর নীতি মেনে চলা লোকেরা দাম কমই পায়। বড় বড় পদে বসে থাকা লোকেরা আর রাজনীতিবীদ নেতারা উন্নয়নের ফাঁকা বুলি ছাড়ে আর কাজের বেলায় ঠনঠনা। নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত সবাই। সত্য কথা বলতে গেলেই হামলা, মামলা আর ঘুম হতে হয়। সাথে আছে ক্রস ফায়ারের ভয়। সুতরাং নীতিবান আর সৎ থেকে লাভ নেই। তাই কবি এখানে মিথ্যায় ডুব দেবার শপথ নিয়েছেন।"-- এটাই কবিতার মূল ভাষ্য।

আমার কাছে কেমন লেগেছে:
ছন্দ আর অন্ত্যমিলে কবিতাটি বেশ সুখপাঠ্য। তবে কবিতা পাঠ করে কবিকে খুবই হতাশ মনে হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদিও কবিতার কথাগুলো মিলে যায় কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে আমাদের সমাজে। সেগুলো না বলে শুধু নেগেটিভ কথাবার্তা বলে হা-হুতাশ ছড়ানোটাকে আমি সমর্থন করতে পারলাম না। এতই যখন অপকর্ম আর মিথ্যার বেসাতি দেশে, তখন কবি পারতেন এগুলো দূর করে দেবার শপথ করতে। তা না করে কবিও নিজেকে মিথ্যায় মজে থাকার ব্যাপারে শপথ করেছেন। তাহলে আর অনিয়ম তুলে ধরে লাভ কি হলো??

যে লাইন দুটি ভালো লেগেছে:

ভন্ড নেতার আশার বাণী উন্নয়নের ফাঁদ
ভন্ড প্রেমিক শরীর পেলে হারায় প্রেমস্বাদ।

যে লাইন দুটি হতাশ করেছে:

আমিও তাই সত্য ছেড়ে মিথ্যায় দিলাম ডুব
যাহা বলিব মিথ্যা বলিব সত্যের বেলায় চুপ।

কবিতা: বাবা (কিরমানী লিটন)

কবিতা পাঠে অনুভূতি:
বাবাকে নিয়ে চমৎকার বন্ধনা। যেমন অন্ত্যমিল তেমন তার ভাব! অনবদ্য আয়োজন বললেও ভুল হবে। কবিতার ছন্দে ছন্দে হৃদয়ও নেচে উঠে। যতই প্রশংসা করি কোনকিছুতেই যথেষ্ট হবে না। সবাইকে অনুরোধ করবো কবিতাটি পাঠ করতে।

যে লাইনগুলো আমায় বেশি আকৃষ্ট করেছে:

বাবা মানে বট ছায়া- হৃদয়ের বন্ধন
সুশীতল স্নেহ ঘেরা- আত্মার স্পন্দন।
বাবা মানে নির্ভার- জীবনের খেলাঘর
সত্ত্বায় মিশে থাকা- আস্থার বাতিঘর।

বাবাহীন সন্তান- অনাবিল বালুচর
দুই তীরে খাঁ খাঁ মরু- আশাহীন বাড়ি-ঘর,
বাবা মানে রোদ্দুর- বাবা মানে নির্ঝর
বাবা তাই পৃথিবীতে বিধাতার সেরা বর।

কবিতা: অন্বেষা (কানিজ ফাতেমা)

কবিতার সম্পূর্ণ ভাব ধরতে পারিনি। প্রথম প্যারা পাঠ করে যা বুঝলাম: " সূর্যের প্রখর তাপ থেমে গেলে মরুবাসীরা জীবন ফিরে পায় যেন। চাঁদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে নদীগুলোও জেগে উঠে। জীবনের চলার পথে চাঁদ সূর্যের এই যে সমীকরণ তা মেলাতে মেলাতে নদীপারের মানুষগুলো হারিয়ে ফেলে আপন সংসার। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় নদীপারের উদ্ভিদ এবং অন্যান্য প্রাণীরাও।

এখানে কবতিাটি দিলাম।

মরুর জীবন জেগে উঠে সূর্য নেমে গেলে
উৎসাহী নদী ফুঁসে ওঠে চাঁদ উঠে এলে,
চাঁদ ও সূর্যের দূর্বোধ্য নিবন্ধে;
ছুটে গেছি বহুবার জলশূন্য যমুনার তীরে।
অদৃশ্য ঢেউয়ের কলতানে মরিয়া উঠেছে
রুক্ষ মাটি, আধমরা ঘাস, ঘাসের নিকটতম প্রতিবেশী
ও আত্মীয়েরা।

মাঝরাতে যখন আঁধার ও নক্ষত্র
একই মাত্রায় বিভাজিত হয়,
আমিও বিভাজিত হতে হতে;
আলোর ইতিহাস ও তার পথ হাতরেছি বহুবার!

শ্রাবণ আকাশের আমুল মেঘের গর্জনে
অতৃপ্ত নিসর্গের সুপ্তিহন বাসনা,
অন্ত:পুরের জীবন জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হলে,
অপার সাধনায়-
ক্ষমতার সীমায়িত পরিধি
অতিক্রম করেছি কতবার!

ব্যক্ত অব্যক্তর ক্রান্তিলগ্নে,
বেনামী ইচ্ছের পিঠাপিঠি আসে অবসর।
গলিত ম্যগমার দুস্তর ঢেউ
পাথর পোড়া গন্ধে; ভেঙ্গে পড়ার অসহ্য বেদনায়,
আগুনের ফুল
একবার নয়;
অজস্রবার খোঁজে
সেই এক প্রমিখিউস!!!


কবিতা: ভেজা বর্ষায় (জাহিদুল কবির রিটন)

কবিতার মূলভাব:
ভিজে যাবার পর সব কিছুর সৌন্দর্য ফুটে উঠে। না ভেজা পর্যন্ত বুঝা যায় না তার গন্তব্য। রক্তে ভেজা না হলে মিছিল পূর্ণতা পায় না। প্রতিষ্ঠা পায় না গনতন্ত্রও। কোন কিছুর আসল সৌন্দর্য পেতে চাইলে তাকে ভিজিয়ে দেখুন। যদি তা আসল হয়, ভেজানোর পর যদি তার প্রতি মুগ্ধতা বেড়ে যায় তবে বুঝবেন এ আকর্ষণ স্থায়ী হবে। রক্তের বৃষ্টিতে ভেজা ব্যতিত গনতন্ত্রও স্থায়ী হয় না।
তাইতো সবাই অপেক্ষায় থাকে বৃষ্টিস্নাত হতে।

কবিতার কিছু লাইন পড়ে দেখুন:

বাতাবি লেবুর গাছ ভেজা, নিমের পাতা ভেজা
পিচ ঢালা পথ ভেজা
পথের উপর হামাগুড়ি দিয়ে চলা মিছিল ভেজা,
পেটানো লাটি ভেজা
গণতন্ত্র ভেজা।

পাতার সৌন্দর্য উন্মুক্ত হয় ভিজে ভিজে
সিক্ত হয়ে,
মাটি সাজবতা পায়
ভিজে ভিজে কাদা হয়ে...

সবাই অপেক্ষায় থাকে বৃষ্টিস্নাত হতে।


কবিতা: প্রহর ফুরালে (মাববুবুল আজাদ)

কবিতার সারমর্ম:
কবি তার প্রিয়তমাকে রেখে দূরের কোন শহরে থাকেন। কথা হয় রোজ তাদের প্রেমের ভাষায়। প্রতিনিয়ত কথা দিয়ে রাখেন কবি তার প্রিয়তমাকে। ছুটির ঘন্টা বেজে উঠলে, বৈশাখ শেষে, শ্রাবণের বারিধারা থেমে গেলে কবি পৌঁছাবেন প্রিয়ার কাছে। ট্রেনের পিষ্ঠে চড়ে কবি সওয়ার হবেন অপেক্ষমান প্রিয়তমার সান্নিধ্যে। আর কোন প্রহর গুনতে হবে তার প্রিয়তমার। শেষমেশ থাকবে শুধু প্রণয় প্রহর, সিথানের সিন্দুকে, খুব গোপনে।

পাঠ অনুভূতি:
চমৎকার কিছু শব্দের গাঁথুনিতে কবি গেঁথেছেন বিরহের মালা। যতই পড়বেন অবাক হবেন কবির শব্দ চয়নে। আপনি নতুন করে ভাববেন অপেক্ষার সৌন্দর্যকে। আর নিজের অজান্তেই বলবেন, "এভাবেও ভাবা যায়!"

কিছু চুম্বক অংশ:

আর কোন দেরী হবে না, আমি আসবো।
কুপির আলোয় প্রহরগুলো পুড়িয়ে অপেক্ষার ইতি হবে,
হ্যাঁ, সত্যিই হবে।
শেষ ট্রেন ধরতে পারিনি, ফাঁকা প্লাটফর্মে
আমি শুন্যতার হুইসেল শুনি, সিগন্যালে এখনো লালবাতি।
বিশ্বাস রেখো সমান্তরাল রেললাইনে, লাল আলো ফুরালেই
তোমার বাড়ি পৌঁছাবে আমার উত্তাপ।

তোমাদের ছোট্ট স্টেশনের বেঞ্চটাতে অপেক্ষা করো।
আমি আসবো উল্লাসের জোনাকি নিয়ে
তারপর দুজনে বাড়ি ফিরব,
আর কোন ছুটির অপেক্ষা থাকবেনা,
থাকবেনা বৈশাখ শ্রাবণের চৌকাঠ।
থাকবে শুধু আমাদের প্রণয় প্রহর, সিথানের সিন্দুকে, খুব গোপনে।


কবিতা: ভীষণ কবিতা বিদ্বেষীরা কবিতা লিখতে বসবে একদিন ( স্বপ্নবাজ সৌরভ)

কবিতার সারমর্ম:
এই শহর আর শহরের মানুষগুলো কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। কার্বনডাইঅক্সাইড বেড়ে যাবার সাথে সাথে বেড়ে যাচ্ছে মেজাজের ভোল্টেজ। সব কিছুতেই সাধারণ মানুষের বিরক্তি। কবিরা সেদিকে একটু কমই নজর দেন। কি হবে নজর দিয়ে? হতাশ হয়ে উঠেন ভিতরে ভিতরে। উপরে শুধু প্রকাশ পায় দীর্ঘশ্বাস আর অবাক চাহনি। খুব বেশি চাওয়া-পাওয়া থাকে না তাদের। তাই তাদের ঘরে হাড়িও থাকে ফাঁকা পড়ে। খুব বেশি ক্ষুধা পেলে পুর্ণিমার চাঁদটাকে লুচি বানিয়ে খেয়ে ফেলেন কবিতার শব্দে ভেজে।

বদলে যাওয়া এই শহরের বাতাস আর বৃক্ষশুন্য শহরের মতো কবিশুন্য হয়ে যাবে পুরো শহর। বৃষ্টিরা নিয়ে যাবে ছুটি। খাই খাই করা মানুষগুলো তখন বুঝবে, পুকুর বোঁজিয়ে শপিং কমপ্লেক্স করলেই সুখ পাওয়া যায় না। কংক্রিটের দেয়ালে আর যখন চারারা জন্মাবে না, তখন সভ্যতার মুখোশ পড়া মানুষগুলো ঠিকই বুঝবে, এসির বাতাসে অক্সিজেন থাকে কতটুকু!! নির্মমতার শেষ পর্যায়ে যখন সবকিছু, তখন কবিতা বিদ্বেষীরাও কলম ধরবে। কবিদের গালী দেয়া মানুষাটিও ছন্দ মেলাতে মেলাতে প্রস্থান করবে ইহজগত।

পাঠ অনুভূতি:

আমার এ পর্যন্ত পড়া কবিতার মাঝে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা মনে হয়েছে এই কবিতাটিকে। যেমন ভাব, তেমনই তার ভাষা। বারবার পড়ার জন্য পোস্টে রেখে দিলাম পুরো কবিতাটি।

ভীষণ কবিতা বিদ্বেষীরা কবিতা লিখতে বসবে একদিন

ইদানীং এই শহরে চোখ কুঁচকানো মানুষের সংখ্যা
ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে , তিতিবিরক্ত মানুষগুলো লোকাল বাসের ভীড়ে
গায়ে গা ঠেকলেই ছ্যাৎ করে জ্বলে ওঠে।
জানালার পাশে সিট ফাঁকা থাকলেও
কেউ আর সরে বসতে চায়না , বরঞ্চ বসতে চাইলে
এমন ভাবে তাকায় - ' আর কি সিট ছিল না ?'

কবিদের এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।
পা আর সিটের সামান্য জায়গা গলিয়ে বসে জানালার ঠিক পাশে ,
দুপা জড়ো করে , নির্বিষ নিরীহের মত।
তবে বড্ড বেশি অভিমান হলে , তাকায় -
জানালার বাইরে , রাস্তায় - ফুটপাতের ধার ধরে
অযত্নে ঝরে পড়া অকাল প্রয়াত অক্ষরমালা গুলোকে
একের পর এক সাজাতে থাকে পুনরায়।
নিমেষেই দৃশ্যপট বদলায় -
রাস্তার ধার ঘেঁষে সারি সারি তরুণীরা জলকেলিরত হয়,
কিন্নরী কণ্ঠে গেয়ে ওঠে , ছিটিয়ে দেয় শীতল পানি
আর ছড়িয়ে দেয় থোকা থোকা বকুল।
কবিদের রান্না ঘরে খুব একটা ভাত চড়ে না
শুকনো আধখানা রুটিতে চলে যায় দিব্যি
তবে যখন খুব খিদে পায় তখন , ঘোর লাগা চোখে -
পূর্ণিমার চাঁদটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে।
এই শহরে গাছ কাটা হলে কবিরা মন খারাপ করে খুব
পুকুর বোঁজালে বুক ভারী করে কষ্টে
কবিরা কিছু বলে না , শুধু প্রার্থনারত হয় কবিতায়।

এই শহরে বৃষ্টি এলে
আকাশ থেকে ঝরঝর করে পংক্তিমালা গুলো নেমে আসে
তখন কবিরা মুঠোবন্দি করে , ছড়িয়ে দেয় বিরাণভূমিতে
অনাবাদি ভূমি উর্বর থেকে উর্বরতা বাড়ায় আর
মাটির বুক ফুঁড়ে মাথা তোলে নিপীড়িত মানুষ।
ধু ধু বালুচরে রোপিত হয় স্বপ্ন , বিস্তৃতি বাড়ায় সবুজ ঘাসের গালিচা
আর বৃষ্টি কিংবা স্বপ্ন জমা থাকে পংক্তিমালায় ।

তবে এই শহরে একদিন কবিরা থাকবে না।
এই শহরে একদিন কিন্তু সত্যিই আর বৃষ্টি হবে না ।
গাছ কাটা শহরে শীতল বাতাস বইবে না , পানির স্তর নেমে যাবে
গভীর থেকে গভীরে।
একফোঁটা পানির জন্য হাহাকার হবে আর প্রলয় দেবে ডাক।
পুকুর বোঁজানো শপিং কমপ্লেক্সে ফাঁটল ধরবে
তাপের তীব্রতায় , কর্পোরেট আর বহুতল আবাস ভবন গুলো হেলে পড়বে একদিকে ।
কংক্রিটে নতুন চারার অংকুরোদগম
ঘটবে না কোন ভাবেই।

দু'হাত আকাশে তুলে প্রার্থনারত হবে মানুষ
কাঁদবে , অশ্রু ঝরাবে , বুভুক্ষের মত বুকে চাপড় মারবে
প্রচন্ড চিৎকারে মাতম তুলবে বাতাসে -
'' আমাকে জল দাও , আমাকে সিক্ত করো''।

এই শহরে একদিন সত্যিই আর কবিরা থাকবে না
থাকবে না স্বপ্ন , ছন্দ , কাব্য , কলা
জলাভাবে মরা কবিরা ছটফট করতে থাকবে
পুনর্জন্মের আশায় আর ভীষণ কবিতা বিদ্বেষীরা কবিতা
লিখতে বসবে একদিন।
কারণ কবিদের সমস্ত প্রার্থনা তো কবিতায় !

কবিতা: রাতজাগা ভোর (লাইলী আরজুমান খান লাইলা)

কবিতার সারমর্ম:
কবি এই কবিতায় নিজের প্রিয়তমার সাথে কাটানো সুখকর মুহুর্তগুলোকে স্মরণ করে রাত জেগে থাকেন। রাতের শেষ প্রান্তে হুতুম পেঁচার ডাকে কেঁপে উঠে যেমন বাঁশঝাড়, তেমনি কবিও কেঁপে কেঁপে উঠেন প্রিয় সখার বিরহে। শব্দের প্রান্তে প্রান্তে ভাব-বিরহের আনাগোনা বেশ লক্ষণীয়।

পাঠ অনুভূতি:
চেনা জানা বিষয়ের উপর কবিতা হলেও শব্দ চয়নের গুণে মোটেই বিরক্ত লাগেনি। সহজ ভাব আর ভাষার জন্যও পাঠে তৃপ্তি পেয়েছি।

দারুণ কিছু লাইন:

একটি রাতজাগা ভোর দেখবো বলেই ঘুমন্ত পাখিদের পাহারায় বসি
ঘুমের দেশে পাখিরা ঘুমায় বাতাসের দোলনায়, আর আমি দেখি তুমিহীনা আকাশ।

আমি অপেক্ষায় আছি শুধু তোমার, তুমি আস দামাল হাওয়ায় চুপিচুপি
একটি রাতজাগা ভোর দেখবো বলেই মেঠো পথে চেয়ে থাকি নিরন্তর।


কবিতা: সংগোপনে আমি চেয়ে থাকি দূর আকাশে (আশিক)

সারমর্ম:
অপ্রাপ্তির বেধনা কবিতায় দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। চাওয়া-পাওয়ার হিসেব যখন না মিলে তখন কেবল দীর্ঘশ্বাসই থাকে সম্বল। কারো কাছে যখন প্রকাশ করার থাকে না কিছু, তখন সংগোপনে দূর আকাশের দিকেই আশ্রয় খুঁজে বেড়ায় আশ্রয়হীন দুটি আঁখি।

দারুণ কিছু লাইন:

অলখ্যে নির্ণয় গল্প কবিতা আর দু:খ বিলাস
চায়ের পেয়ালায় বিকেলের লাল রোদ
ঘুঘুর ঠোঁটে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসগুলো
চুঁইয়ে পড়ে শিকারী বিড়ালের দেহে,
সংগোপনে আমি চেয়ে থাকি দূর আকাশে।


কবিতা: ধর্ষকহীন বাংলাদেশ চাই (কাজী ফাতেমা ছবি)

সারমর্ম:
কবিতার নামটাই এখানে কবিতার সারমর্ম বহন করছে। কবিতার পরতে পরতে বাস্তবতা আর সে পথ থেকে মুক্তি পেতে কবির আকুতি লক্ষণীয়। দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মমতা। কবি এদের নিয়ে লিখতে লিখতে ক্লান্ত। চারিদিকে নির্মমতার খবরে কবির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। শুনতে পান নিরীহ মা আর মেয়েদের চিৎকার। বিচারহীন মানবতার আর্তনাদ। পুরুষেরা পিতা হয়, বউ পায়.....। তবুও ওদের কেন মিটেনা স্বাধ? তবুও ওরা কেন খামছে ধরে নিজের মেয়ের দেহ? ধর্ষণ শেষে কেন হত্যায় উদ্ধত হয়? নাকি হত্যার পরই ধর্ষণ করে?

শিক্ষক, পিতা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নামধারী হুজুর......। কার কাছে নিরাপদ নারী। এখনো সময় আছে, বাসযোগ্য করে তোল এই ধরণী। বিদায় করো ধর্ষকদের।

দারুণ কিছু লাইন:

আমাদের বন্ধু ছিল ওরা, আমাদের বোন ছিল, ছিল কন্যা
প্রতিবাদী হতে গিয়েও মরতে হয় ওদের, অথবা আইনের আশ্রয়েও হয় মরতে,
কার ছায়াতলে নেবে আশ্রয়, কোথা থাকবে সম্মানে শ্রদ্ধায় অনন্যা?
আর কতদিন লাগবে শুনি, ধর্ষক পুরুষহীন বাংলাদেশ গড়তে?

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×