(১) সেদিন আর এদিন, মাঝখানে চুয়াল্লিশ বছর-- ( কর্নেল খায়রুল আহসান (অব.))
প্রতিক্রিয়া: লেখক কর্মজীবনের স্মৃতিকথা তুলে ধরেছেন এই লেখায়। লেখাটি পাঠ করে লেখকের কর্মজীবনের প্রতি টান লক্ষ্য করা যায় বিশেষ ভাবে। বিউগলের ধ্বনিতে লেখকের যে মায়াভরা কথা ফুটে উঠেছে তা সত্যিই অনন্য, অসাধারণ। তিঁনি বলেছেন, " সেই যে বার বছর বয়সে ক্যাডেট কলেজে যাবার পর বিউগল এবং হুইসেল এর সাথে জীবনটা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে গেল, সেটা এখনও অব্যাহত রয়েছে, হয়তো আমৃত্যু তা থাকবে!" বিউগলের ধ্বনি নিয়ে একটি কবিতাও লিখেছেন এই লেখায়। কবিতার কোন এক জায়গায় তিঁনি লিখেছেন,
"বন্ধুরা আসো তবে আজ মোরা গাই,
বিউগল বাজুক কিংবা বাজুক সানাই,
পুরনো সেই দিনের কথার এ গানখানি
'আউল্ড ল্যাং সাইন' এর প্রতিধ্বনি।"
দেশমাতৃকার সেবাই যারা নিয়োজিত, লেখক তাদেরই একজন। তিঁনি ধন্য এ পেশায় আসতে পেরে। কথারচ্ছলে টেনেছেন কবি নজরুলের "চির উন্নত মম শির"-এর কথা। বলেছেন কবির অমর বানী " একজন সৈনিক যে পথ ধরে হেঁটে যায়, সে পথের ধূলোবালিও পবিত্র হয়"- এর কথা। তবে লেখক খায়রুল আহসান ভাইকে আমরা যে মাপের লেখক হিসেবে চিনি-জানি তা থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন মনে হলো এই লেখাটি পড়ে। কেমন যেন অতৃপ্ত রয়ে গেল মন। আরো বেশিকিছু আশা ছিল লেখকের কাছে। যারা লেখাটি পড়েছেন তাদের অনেকেই একমত হবেন আমার সাথে।
(২) রক্তবদলা ৭১ -- (ওয়াসিম ইফতেখার)
প্রতিক্রিয়া: লেখক এই লেখায় ১৯৭১-এর একটি চিঠির কথা তুলে ধরেছেন, যা তিঁনি খুঁজে পেয়েছেন ঘরের পুরনো কোন ট্রাংক থেকে। অত্যন্ত আবেগঘন একটি চিঠি। '৭১-এর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা মনে পড়ে যায় লেখাটি পড়ে। চিঠিতে ডাক্তার নাইমুল ইসলাম নামের একজন যোদ্ধার প্রতি পাকিদের নির্মমতার কথা পড়ে মনটা ভিজে উঠবে যে কারো। ড. নাইমুল ইসলাম যুদ্ধে আহত মুক্তিকামীদের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতেন বলে পাক বাহিনীরাও তার শরীর থেকে বের করে নেয় সবটুকু রক্ত! রক্তশুন্য নাইমুল ইসলামকে সংসদ ভবনের পাশে পুঁতে রাখা হয়! কি নির্মম, কত হৃদয় বিদারক!
চিঠিটি পড়ে বুঝা যায়, এটি ১৯৯৩ এর পড়ে লেখা। কারন চিঠির এক পর্যায়ে বলা হয়েছে " '৯৩-এ ডা. নাইমুলের ছবি সম্বলিত সম্মান সূচক ডাক-টিকিট ছেড়ে দিল সরকার।" তবে চিঠিটি কে কাকে উদ্দেশ্য করে লেখেছেন তা কিছুই বলা হয়নি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখায়। লেখাটির শেষে লেখক (ওয়াসিম ইফতেখার) বলেছেন, ''অনুগ্রহ করে কোন প্রশ্ন করবেন না আমাকে। শ্রেফ জেনে রাখেন, এই দেশের জন্য এমন অনেক মানুষ ও পরিবার প্রাণ দিয়েছে, যাদের কথা জাতিকে জানতে দিতে প্রবল আপত্তি একটা গোষ্ঠীর।" আবার লেখার শুরুতে বলেছেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি সত্য মিথ্যা কিছুই জানেন না। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তিনি কিছুই জানতে পারেন নি।
এখন আমার প্রশ্ন হলো:
--- বর্তমানে তো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় রয়েছেন। তবুও লেখকের মনে এত সংশয় কেন?
--- '৯৩- এ ডাক টিকেটে যদি ডা. নাইমুল ইসলামের ছবি থেকে থাকে তাহলে তো প্রমান থাকার কথা। লেখক কেন তবে এর প্রমান খুঁজে পান নি?
--- লেখক বলেছেন, "যাদের কথা জাতিকে জানতে দিতে প্রবল আপত্তি একটা গোষ্ঠীর"। কোন সেই গোষ্ঠী? স্বাধীনতার এত বছর পরও কেন তাদের কথা ইশারা-ইঙ্গিতে বলতে হয়?
(৩) আমার প্রেমিকেরা --- (শায়মা)
প্রতিক্রিয়া: শিরোনাম পড়ে ভেবেছিলাম লেখিকার সত্যিকার প্রেমিকা বোধহয়। মনে হয়েছিল, লেখিকা অনেক সুন্দরী বিধায় তার পেছনে অনেক ছেলেরা ঘোর ঘোর করতো, তাদের নিয়েই লিখেছেন। লেখাটি পড়ে ভুল ভাঙল। আসলে লেখিকার প্রেমে কেউ পড়েনি, তিনিই বার বার বিভিন্নজনের প্রেমে পড়েছেন, সে কথাই বলেছেন এই স্মৃতিকথায়!
রবিঠাকুরের সমাপ্তি ছোট গল্পের নায়ক অপূর্বকৃষ্ণ লেখিকার প্রথম প্রেমিক। ভালোবেসেছিলেন যখন লেখিকার বয়স মাত্র ১৪ বছর! ভাবা যায়, কত ছোট বয়সে পেঁকেছেন তিনি! তারপর একে একে শরৎচন্দ্রের দেবদাস, বুদ্ধদেব গুহের সুখরঞ্জন, হুমায়ূন আহমেদের হিমু, শীর্ষেন্দুর ধ্রুব কাউকেও বাদ দেননি লেখিকা। অবশেষে সব প্রেমিকার রূপ খুঁজে পেয়েছেন একজনে। লেখিকার কথাতে বিষয়টি আরো স্পষ্ট, " কেন যেন মনে হয় শীর্ষেন্দু বুঝি একটু দেবদাস, একটু অপূর্ব বা একটু একটু সুখরঞ্জন এবং একটু নিজের থেকে নিয়ে গড়েছেন ধ্রুব কে। (ইশ, হিমুকে আর বাদ কেন দিলেন? )
লেখিকার সাহিত্য প্রেমের অনন্য এক নিদর্শন/সাক্ষী এই লেখা। তিনি বলেছেন, " আবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে কিশোরীকালে। যে কিশোরীকাল আমাকে কাঁদতে শিখিয়েছিলো, হাসতে শিখিয়েছিলো নির্ঝরনী নদীর মতো, ভাসতে শিখিয়েছিলো আনন্দ আর উচ্ছলতায় .. কাব্য, গল্প, উপন্যাস বা সঙ্গীতের সাথে আজও ভাসতে চাই, ভেসে যেতে চাই অজানায় .... যেখানে সহস্র বছর ধরে অপেক্ষমান আমার প্রেমিকেরা .... ।
(৪) এলেবেলে --- (শের শায়রী)
প্রতিক্রিয়া: লেখাটি পড়ে মেজাজ খারাপ হয়েছে। অবশ্য লেখক বলেও দিয়েছেন, " আমার এলেবেলে টাইপ লেখা দেখে কারো মেজাজ গরম হলে সে আমার না ওই ৫০০০ বছর আগের পূর্ব পুরুষের আবিষ্কারের ফল।" কিন্তু তাই বলে এমন আঞ্চলিকতার মিশ্রণের এমন খিচুরি টাইপ লেখা লেখকের কাছ থেকে আশা করিনি। বেশ এলামেলো ....... তিনি তো ব্লগে এমন লেখা দেন না!
লেখাটি পড়ে জানতে পারলাম:
---- লেখকের লেখালেখির হাতেখড়ি তাঁর নানা বাড়ীতে।
---- স্কুলের আলাউদ্দিন স্যার কইছিলেন, "তুই একটা পাডা হবি বড় হইলে।"
---- মিশ্র স্যার অভিশাপ দিয়েছেন, " খারাপ কিছু করিস না"।
---- "হাল চইয়াও তো খাইতে পারবি না" - স্কুলের স্যারেরা বলতো।
সে যাই হোক, লেখাটার মধ্যে ভালো লাগার উপকরনও আছে। লেখক চাইলে আরো সাজিয়ে একই ভাষায় (আঞ্চলিকতা/আধুনিক) লিখলে সুখপাঠ্য হত লেখাটি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৯