বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ইসলামিক রাষ্ট্র না হলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশের প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় মসজিদের অভাব নেই। সেই সাথে নামে বেনামে মাদ্রাসা, মক্তব আর এতিমখানা তো আছেই। স্কুল-কলেজের পাশাপাশি এই সব ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট শিক্ষার্থীর সিংহভাগ অধ্যয়ন করে থাকে। ছেলেমেয়েদের এই সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেয়া ছাড়া দরিদ্রজনগোষ্ঠির আর কোন উপায় থাকে না। যে পরিমান ছাত্র-ছাত্রী ধর্মীয় পড়াশোনা শেষ করে বের হয় তাদের বেশির ভাগই কোন না কোন মসজিদে মোয়াজ্জিন অথবা ইমামতির দায়িত্ব পালন করে থাকে। বাংলাদেশ যতই ডিজিটালাইজড হোক না কেন গ্রামের সহজ সরল মানুষজন এইসব হুজুরদের কথা বিশেষ ভাবে মেনে চলেন।
আলিয়া মাদ্রাস ছাড়া আর কোন প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানের পাঠ দেয়া হয় না। আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে যে শিক্ষা দেয়া হয় তা ঐ বিজ্ঞানের অ আ ক খ পর্যন্তই। দিনশেষে এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া হুজুরেরা যখন বক্তৃতা দেয় তখন আদিকালের কিচ্ছা কাহিনী ছাড়া কিছুই পারেন না। ইসলামের জ্ঞানের অপ্রুতলতা এর অন্যতম কারণ। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী দাবী করা হয় সেগুলোও ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা দেয় না। ফলে মসজিদের ইমামসাহেবরা বিভ্রান্তি ছাড়া ভালো কথা খুব কমই শুনাতে পারেন।
সাম্প্রতিক করোনা অতিমারির সময় আমরা দেখেছি গ্রামে-গঞ্জের মসজিদগুলোতে করোনাকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনিহা দেখা যাচ্ছে মানুষের মাঝে।
গতকাল একটা ফার্মেসীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দাঁড়িপাকা এক মুরুব্বি বলছে "এই সব করোনা টরোনা কিছু না। আল্লাহ যেদিন নিবো এমনিই যাইতে হইবো। টিকা নিয়া আর মরবার চাই না।" বললাম, চাচা আপনার হাতে দেখি গ্যাস্টিকের ট্যাবলেট! চাচা বললো, হ বাবা, বুকটা জ্বালা করতাছে খুব। করোনার ভয় নেই যাদের, তাদের গ্যাস্টিকের ট্যাবলেট লাগে। হাস্যকর! কে বুঝাবে এদের বলুন?
পাশের চায়ের দোকানের মামাও করোনা নিয়ে দেখলাম ভালো লেকচার দিলো। মসজিদের হুজুর নাকি বলছে করোনা কোন রোগ না। আল্লাহর নাফরমানির জন্য মানুষকে আল্লাহ নিয়ে যাচ্ছে। আমি বাবা সহজ সরল মানুষ। আমারে করোনা ধরবো না। সব বিষয়ে চাচার ভালো দক্ষতার সাথে লেকচার দিতে পারে। সব খবর চাচার কাছে পাওয়া যায়। ট্রাম্প কেন হারলো, ফিলিস্তিনি কেন মার খাচ্ছে কিংবা বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর..... সব কিছু তার নখদর্পনে। শুধু মাত্র চা টাই ভালো বানাতে পারেন না।
যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মসজিদে যান না তারাও অন্তত শুক্রবারে নামাজে মসজিদে যান। শুনেন হুজুরের খুতবা। ইমাম সাহেবের আলোচনা ভালোই প্রভাব পড়ে জনমনে। শীতকালে তো ওয়াজের মৌসুম আছেই। সব মিলেই এই মাওলানারা বাংলাদেশে জনগনদেরকে সচেতন করতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষন না থাকার কারনে উল্টো ফল হচ্ছে।
সরকারের কাছে আহবান থাকবে, অতিশীগ্রই ইমামদের প্রশিক্ষনের আওতাও আনুন। যত্রতত্র মসজিদ নির্মানে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকতে হবে। আপনার এলাকায় মসজিদে ইমামসাহেব কি বলছে শুনুন। আলতু ফালতু কিছু বললে প্রতিবাদ করুন।
ছবি কালেক্টেড
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:২৯