somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমুসলিমদের হাতে অন্ন খেলে ৪০ দিনের ঈবাদত নষ্ট হয়

১৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি: আরিশের নতুন গার্লফ্রেন্ড (GF), ক্লিক: আরিশের আব্বু

আমরা বিয়ে করেছি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের ০৫ তারিখ।
সামনের ডিসেম্বরে সাত বছর পূর্ণ হবে আমাদের দাম্পত্য জীবনের। বিয়ের এতটা বছর পেরিয়ে গেলেও একসাথে সংসার করা হয়ে উঠেনি। আরিশ হওয়ার পর আমরা একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। আরিশের দুই মাস বয়সে আমরা বাসায় উঠি। এত ছোট বাচ্চা কিভাবে বড় করবো এই আশংকায় বাড়ির অনেকেই মানা করেছিলেন। কিন্তু আরিশের আম্মু যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি আর সে সিদ্ধান্তে অমত করিনি। বাধ্য ছেলের মতো বাসায় উঠার সরঞ্জাম জোগাড় করেছি। বাসা ভাড়া করা থেকে শুরু করে সব কিছুই আমাদের দুজনের পছন্দে হয়েছে। ভিডিও কলে সব কিছুর ডিজাইন এবং রঙ দেখে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আরিশের আম্মু।

নতুন বাসায় নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
মা-ছেলে বাসায় সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাটায়। মাঝে মাঝে ছোট ছোট কারনেও রাগ দেখায় আমার উপর। আমি ওর একাকিত্ব বুঝি। জেলখানার মতো থাকতে কারই বা ভালো লাগে! ওর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এমনি করতাম। নতুন পরিবেশ তার উপর কোভিড সিচুয়েশন, সব মিলিয়ে পাশের বাসার কারো সাথেও ভালো করে কথা বলা হয়ে উঠেনা। প্রথম এক মাসের মতো সময় অবশ্য আরিশের খালামনি ছিল বাসায়। ও যাবার পর একাকীত্ব আরো আকড়ে ধরে আয়েশাকে।

আমরা থাকতাম তিন তলা বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায়। প্রতিটি ফ্লোরে ৪ টি করে ইউনিট হলেও তৃতীয় তলায় একটি বাসা খালি ছিল। আর দুই ভাড়াটিয়া যথাক্রমে ব্যাংকার এবং ব্যবসায়ী। একমাস পর আস্তে আস্তে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠতে থাকে। টুকটাক রান্না-বান্না করে আরিশের আম্মু পাশের বাসায় হাদিয়া পাঠাতেন। তারাও দিতে থাকে মাঝে মাঝে। এভাবেই আসা যাওয়া করে করে বেশ ভালোই সময় পার করছিলো আয়েশা।

চতুর্থ মাসে পাশের খালি বাসাটাতে এক হিন্দু পরিবার উঠলো।
অমুসলিম হওয়ায় কেউই তাদের সাথে ভালো করে কথা বলতো না প্রথম প্রথম। আরিশের আম্মু আবার তার অভ্যাস অনুযায়ী হাদিয়া হিন্দুঘরেও পাঠান। তাদের ঘর থেকে আসা খাবার আমরাও গ্রহন করি সানন্দে। একদিন ব্যবসায়ীর স্ত্রী আয়েশাকে বলতেছে "তোমরা যে ওদের ঘরের খাবার খাও এটা তো জায়েজ না। হিন্দুদের হাতের খাবার খেলে ৪০ দিনের ঈবাদত নষ্ট হয়।" আয়েশা মনে কষ্ট পেলেও তাকে কিছু বলেন নি। ওই কথা আবার হিন্দু মহিলাটি শুনে ফেলে। কষ্টও পান খুব।

রাতে বাসায় ফেরার পর হিন্দুদের থেকে কিছু খেলে ঈবাদত নষ্ট হবার ব্যাপারে আয়েশা আমাকে জিজ্ঞেস করে। আমি বললাম কোন সমস্যা নেই, খাওয়া যাবে। আমরা তো বাইরে থেকে খাবার কেনার সময় দেখিনা কোনটা হিন্দু দোকান কোনটা মুসলিম দোকান। তাছাড়া হাদিস-কোরআনে কোথাও এ ব্যাপারে নিষেধ করা হয়নি। আয়েশা আশ্বস্ত হলো।

হিন্দু পরিবারের সাথে আয়েশার সখ্যতা বাড়তে থাকে।
ঐ পরিবারেও একটা বাচ্চা ছিলো। নাম সৃষ্টি। খুবই মিষ্টি মেয়ে। সারাদিন আরিশের সাথে খেলতো। সৃষ্টির মা ও আরিশকে রাখতো রান্না করার সময়। এতটা হেল্প মুসলিম পরিবার থেকেও পাইনি এই দুই মাসে। এমন কোন দিন যেত না যেদিন সৃষ্টিদের ঘর থেকে খাবার আমাদের ঘরে আসে নি। একেবারে আপনজনের মতো হয়ে ছিলাম ওদের সাথে। সৃষ্টিরা বাসায় ওঠার আগে আমাকে সারাদিনই ফোন করতো অথবা টেক্সট করতো। আমিও চিন্তায় থাকতাম। ওরা আসার পর আয়েশা দিনে একবার কি দুইবার খোঁজ নিতো। তবুও আমি নিশ্চিন্ত থাকতাম যে কোন সমস্যা হলে সৃষ্টির মা আছে। ওরা হিন্দু হলেও ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলে আলহামদুলিল্লাহ বলতো। বলতো আল্লাহ ভালো রাখছেন। যেটা অনেক মুসলিমের মধ্যেও পাওয়া যায় না। আমাদের গত বিবাহ বার্ষিকীতে সৃষ্টির মা একটা ইসলামিক সো পিস গিফট করে, যেটাতে আয়াতুল কুরসি এবং সূরা ফাতিহা খচিত। আমরা যখন ঐ বাসা থেকে চলে আসি তখনো গিফট করেছে একটা জায়নামাজ এবং সো পিস। এত ভাল ব্যবহার আর কোন পরিবার থেকে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

এবছর ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ আমরা শিফট করি ভালুকাতে।
যখন থেকে ওরা জানতে পারে আমরা বাসা ছেড়ে দেবো তখন থেকেই মন খারাপ করে। শিফট করার কথা শোনার পর দিনের প্রায় সময়ই আমাদের বাসায় থাকতো সৃষ্টি আর ওর মা। যেদিন শিফট করবো সেদিন সকাল বেলা সৃষ্টি সে কি কান্না...! একেবারে হাউমাউ করে কান্না করছিলো। সৃষ্টির মায়ের কান্না আর দেখে কে। আয়েশার গলা ধরে শিশুর মতো কান্নায় ভেংঙে পড়ে দুজনেই। মনে হচ্ছিল কোন প্রিয়জন চলে যাচ্ছে। কোন আপন মানুষ চলে গেলেও হয়তো এতোটা কান্না করে না কেউ। ওদের কান্না দেখে আমার গলাটাও ভারী হয়ে আসছিলো। কন্ঠ থেকে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছিলো না আমার।

এখানে এসেছি প্রায় ছয় মাস হতে চললো।
এখনো আয়েশার পুরাতন অভ্যাস অনুযায়ী নতুন কিছু রান্না করলে পাশের দু' তিন বাসায় সে খাবার পৌঁছে। তারাও দেন নিয়মিত। মেন্যুতে থাকে বড়লোকী আইটেম। কিন্তু সৃষ্টিদের মতো ভালোবাস মিশানো থাকে না সেই খাবারে। এখনো কেউ সৃষ্টির মায়ের মতো হলো না এখানে। আয়েশা প্রায়ই সৃষ্টিদের কথা বলে। সৃষ্টির মা ও ফোন দেয় মাঝে মাঝে। আরিশের আম্মু আর সৃষ্টির আম্মুর মধ্যে ভালোবাসা দেখে আমারও আনন্দ হয়। ধর্মের কারণে যে বিভেদ তৈরী করে সমাজ তার দেয়াল আমাদের আড়াল করতে পারে নি। পারবেও না কোনদিন!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৫৯
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×