ছোট বেলায় মাকে দেখতাম হাঁস-মুরগি লালন পালন করতেন। এগুলো হাঁটে নিয়ে বিক্রির সময় মায়ের চোখে জল দেখতে পেতাম। বুঝতে পারতাম এদের সাথে থাকতে থাকতে মায়া জন্মে গেছে মায়ের। একবার বাড়িতে পালিত এক গাভী কুরবানী দিয়েছিলাম। সেবারও মায়ের চোখে জল দেখেছি। গাভীর শরীরে তেল দিতে দিতে আদর করে দিতেন আর আঁচলে চোখ মুছতেন। আসলে বোবা প্রাণীদের প্রতিও যে এতো ভালোবাসা জন্মাতে পারে তা সরাসরি না দেখলে টের পাওয়া যাবে না। যাদের টাকা আছে তারা ঈদের আগে নগদ টাকায় পশু কিনে কুরবানী করেন। পশুর প্রতি তাদের মায়া থাকে না অতটা। এজন্যই নিজের পালিত পশু কোরবানির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
প্রথম ছবিটি দেখে ছোটবেলায় ছাগল পালনের কথা মনে পড়ে গেল। বৃষ্টি আসলে ছাগলগুলো খুবই ডাকাডাকি করতো। মা বলতো ছাগলের দড়ি ভিজে যাবার ভয়ে নাকি ছাগল এমন ডাকাডাকি করে। আমরা ছাগল ছানা কোলে করে আনতাম আর মা ছাগল পিছন পিছন দৌড়ে আসতো। ছাগল পানিতে নামতে খুবই ভয় পায় এর আসল কারণ অবশ্য আমিও জানি না।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে এক বৃদ্ধ চাচা তার পালিত ছাগল বিক্রির উদ্দেশ্যে হাটে নিয়ে এসেছেন। বৃষ্টি নামার পর ছাগলগুলো নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন একই ছাতার নিচে। প্রাণি দুটি তার মালিকের নিকট নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। ওরা তো আর জানে না তাদেরকে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে!
কয়েকদিন আগে প্রথম আলোর নিউজে দেখলাম বাসে করে নির্মম ভাবে কয়েকটা ছাগল আনা হয়েছে ঢাকায়। ছবিটি দেখে কিছুক্ষণ থমকে গিয়েছিলাম। চিন্তা করলাম কতই না কষ্ট হয়েছে ওদের!
প্রাণিদের জন্মই হয়েছে মানুষের জন্য, মানুষের খাদ্য হিসেবে ওদেরকে সৃষ্টিকর্তা হালাল করেছেন। কিন্তু অযথা কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। এক মহিলা কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য ক্ষমা পেয়ে যাবেন আবার আরেক মহিলা বিড়ালকে খাবার না দিয়ে কষ্ট দেবার জন্য জাহান্নামে যাবেন।
কুরবানি আল্লাহর পক্ষ থেকে সামর্থ্যবান বান্দার উপর ফরজ ঈবাদত। হযরত ইসমাইল আ. এর কোরবানীর ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতি এই বিধান আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। ইব্রাহিম আ. কে নির্দেশ দেয় হয়েছিল প্রিয় বস্তু কোরবানী করতে। ইব্রাহিম আ. তাঁর প্রতি আরোপিত হুকুম পালন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিম আ. এর আনুগত্যে খুশী হয়ে ইসমাইল আ. এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম জাতির পিতার কোরবানি কবুল করে নেন।
অনেকেই কোরবানি দেবার নিয়ত করেছেন। ইতিমধ্যে কোরবানির প্রাণীটিও ক্রয় করেছেন অনেকে। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে প্রাণিটির প্রতি খেয়াল রাখবেন। তাকে ঠিক মতো পানি এবং খাদ্য দিবেন। যথাসম্ভব কম কষ্ট দিয়ে কোরবানি করুন। আর একটি কথা মনে রাখবেন, কোরবানির পশুর রক্ত, চামড়া কিংবা গোশত আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না। পৌঁছাবে আপনার তাকওয়া, আল্লাহর প্রতি আপনার আনুগত্য। সবার প্রতি অনুরোধ কোরবানির গোশতে ফ্রিজ না ভরে গরীবদের যথাসম্ভব দান করে দিন। যারা বছরের এই একটি দিনের আশায় বসে থাকে গোশত খাওয়ার জন্য।
কোরবানি মানে ত্যাগ। কোরবানির মাধ্যমে মনের পশুরও কোরবানি হোক। জাগ্রত হোক মনুষ্যত্ব। ঈদের ছুটিতে ভুলে গেলে চলবেনা আমরা করোনা অতিমারির কঠিন সময় পার করছি। যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। অন্যকেউ উৎসাহিত করুন।
এই মাসে হয়তো আর পোস্ট দেয়া হয়ে উঠবেনা। ঈদের পর আবার ব্লগিংয়ে ফিরবো। কিন্তু আপনাদের লেখা পড়বো। ভালো থাকবেন সবাই। সবাইকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। তাকাব্বালাল্লাহু মিন্নি ওয়া মিনকুম।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:০১