somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবি ব্লগ: আমার গ্রাম আমার ঠিকানা।

২৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(১) দূরন্ত শৈশব।
ছবিটি আয়েশার নানু বাড়ির কাছ থেকে ঈদের পরদিন তুলেছি। নদীর নাম ধলেশ্বরী। যমুনা নদীর যে স্থান থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎপত্তি, ছবিটি সে স্থানের। বর্তমানে যেখানে আয়েশার নানুবাড়ি গত দুই বছর আগে এখানে ছিলো না। যমুনা নদীর ভয়াল থাবায় ভেঙে গেছে বসত ভিটা। আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে গত পাঁচ বছর আগে যমুনা নদীতে যেতে হলে ঘন্টা খানেক হাটতে হতো। সেই যমুনা নদী এখন ঘরে শুয়েই দেখা যায়। আগামী দুই বছর পর হয়তো ওদের বাড়িও নদীগর্ভে বিলিন হবে। বার বার মানববন্ধন আর প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দিয়ে শুধু আশ্বাসই মিলেছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাস্তু হারা হয়েছে হাজারো মানুষ, এখনো হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে টাঙ্গাইল শহর আগামী ৫০ বছরে হয়তো যমুনা নদীর পেটে চলে যাবে।



(২) বাবার সাথে নদী দেখা।
আরিশ আমার সাথে ঘুরতে খুবই পছন্দ করে। আমার কাছ থেকে সহজে কারো কোলে যেতেই চায় না। এমনকি ওর মায়ের কাছেও না। শিশুরা নদীতে ঝাপাঝাপি করে গোছল করছে। বাপ ছেলে মিলে তাই উপভোগ করছি সন্ধ্যা নামার আগে। ছবিটি ক্লিক করেছেন আরিশের আম্মু। ছবি তোলার স্থান: ধলেশ্বরীর উৎসমুখ, আয়েশার নানুবাড়ি।



(৩) কোথাও আজ হারাবার নেই মানা।
এই রকম ঝাঁপাঝাঁপি দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমেছিল। গ্রামের প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণ। আমারও ইচ্ছা করছিল এমন করে গোসলে মেতে উঠি। কিন্তু আমি যে সাঁতার জানি না। আমার ইচ্ছে ছেলেকে ছোট বেলায়ই সাঁতার শিখাবো। গ্রামে বড় হলেও বাবা-মা আমাকে কখনো জলে নামতেই দেই নি। আমাদের বাড়ির একমাত্র পুকুরটির পানি তখন গ্রামের সুপেয় পানির উৎস ছিল। পুকুরের পাশ দিয়ে জুতা পায়ে হাটাও নিষেধ ছিল। গোছল করতে হতো কলসি দিয়ে পানি উঠিয়ে। যদিও পুকুরটি এখন আর তেমন নেই। হাতমুখ ধোয়াও অযোগ্য হয়ে উঠেছে সেই পুকুরের পানি। ঘরে ঘরে টিউবয়েল আর সাবমার্সিবল পাম্প হয়ে কদরহীন পুকুরটি ভরাট হয়ে যাবে তিন/চার বছরের মধ্যে।



(৪) মেহেদী ফুল।
গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আগে মেহেদী গাছ ছিলো। যে কোন উৎসবে সেই মেহেদী পাতা বেটেই হাতে লাগাতাম। বিয়ের সময় মেহেদী পাতা তুলতে যেতো গায়ের মা-চাচীরা। আমরা ছোটরা যেতাম গুড় মুড়ি বাতাসা খেতে আর গীত শুনতে। এখনতো বিভিন্ন ব্রান্ডের টিউব মেহেদীই ভরসা। কেউ আর পাতা বাটার কষ্ট করতে চায় না। এখন আর তেমন মেহেদী গাছ দেখা যায় না। এলাকার মধ্যে একমাত্র মেহেদী গাছটি এখন আরিশের নানুবাড়িতে। ছবিটি তুলেছেন আরিশের খালামনি। মাঝে মাঝে আরিশের খালামনি আমাকে মেহেদী পাতা বেটে দেয় চুল-দাড়িতে লাগানোর জন্য। ওর নাম মরিয়ম। আমরা ডাকি মধু বলে। দেখতে খুবই মিষ্টি চেহারার বলে এমন নামে ডাকি। দোয়া করি ওর একটা ভালো বিয়ে হোক।



(৫) পাকা করমচা।
খেতে খুবই টক। টক আমি খুবই পছন্দ করি। আরিশও পছন্দ করে। আয়েশা একদমই টক খায় না। আরিশ যখন পেটে ছিলো তখনো খেতো না। করমচা একাই পেড়েছি। খেয়েছি বাপ-বেটা মিলে।



(৬) বিচি কলার চারা।
একসময় আমাদের বাড়িতে প্রচুর বিচি কলার গাছ ছিলো। এখন দুই চার বাড়ি খুঁজলেও বিচিকলার গাছ পাওয়া যাবে না। আমার দাদি নিয়ম করে প্রতি মাসেই শিন্নি দিতো বাচ্চা ছেলে পেলেদের। এই কলা পাতায় খেতাম আমরা সবাই। মসজিদে খীর-খিচুরি দেয়ার প্রচলন আছে আমাদের এইদিকে। সেই সময়ও এই কলা পাতাতেই দেয়া হতো খীর খিচুরী। এখন দেয়া হয় পলিথিনে। আগে গ্রামের বিয়ে বাড়িতে এই বিচি কলার গাছ দিয়েই গেট সাজাতাম। বরপক্ষ ১০০/২০০ টাকা যা দিতো তাতেই তুষ্ট থাকতাম। এখন তো ডেকোরেশনের গেট সাজানো হয়। আগে থেকেই বরপক্ষের সাথে কত টাকা গেটে দিবে তার কন্টাক্ট করা হয়। কিন্তু আগেকার সেই মজা আর পাওয়া যায় না।



(৭) মাটির সাথে সখ্যতা।
আরিশ এই রকম মাটি দিয়ে খেলতে খুবই পছন্দ করে। সাথে একটু পানি পেলে তো আর কথাই নেই। সারাদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু কাদা করবে। ছোট বেলার আনন্দ এই কাদা মাটিতেই।



(৮) ধানের চারা বোনা হচ্ছে খেতে।
আমিও এমন করে অনেক ধান বুনেছি গ্রামে থাকতে। চাচারা হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন। বলেছেন, কাজ শিখলে ফালানো নেই। লেখাপড়া করো তাতে কি। কখন কোনটা কাজে লাগে বলা যায় না। তাই তো হালচাষ থেকে শুরু করে ধানকাটা সবই পারি। সারাদিন কামলা দেয়ার অভিজ্ঞতাও আছে। তখন একজন শ্রমিকের মজুরী ছিল ৩০০ টাকা। এখন অবশ্য ৬০০/৭০০ টাকার কমে শ্রমিক পাওয়া যায় না।



(৯) এই বানরটির অনেক বয়স। গায়ের চামড়া ঝুলে গেছে। মাঝে মাঝেই ঘরের চালে আসে গাছে বসা পোকা খেতে। লাউ ও খায়। আমরা বাঁধা দেই না। ওর খাওয়া শেষ হলে আবার চলে যায়।



(১০) আয়েশা খুব ভালো রান্না করতে পারে। আমার কাছে দারুণ লাগে ওর রান্না। বিরিয়ানিটি খুবই মজার হয়েছিল।



(১১) গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই জ্বরের রোগী। আমাদের বাড়িতে সবাই আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ। এই ছবিটি দেখলে কি মনে হবে দেশে করোনা আছে? ছবিটি ঈদের পরদিন আমার এক বন্ধু তুলেছেন।



(১২) শৈশবের এমন সুন্দর দৃশ্যের সাথে গ্রামে বড় হওয়া সবাই পরিচিত।



(১৩) চারিদিকে শুধু জল আর জল। পাথরঘাটা, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।


(১৪) বাসুলিয়া, বাসাইল, টাঙ্গাইল।



(১৫) ধলেশ্বরী নদীর চরে।



(১৬) ভালুকা ব্রিজ। ময়মনসিংহ।



(১৭) যমুনায় সূর্যাস্ত।



(১৮) যমুনার পাড়ে। সকাল বেলা।



(১৯) সকাল হলে যমুনার পাড়ে মাছের বাজার বসে। সারারাত মাছ ধরে জেলেরা বিক্রি করেন এই বাজারে। বাজারের স্থায়িত্ব ১ ঘন্টা। ছয়টা থেকে সকাল সাতটা। আগের মতো তেমন আর মাছ পাওয়া যায় না। তাইতো যমুনার পাড়ের কেউ যমুনার মাছ খেতে পারেন না। শহর থেকে ব্যাপারীরা মাছ কিনে নেন চড়া দামে। জেলেরাও হয়তো মাছ খেয়ে দেখেন না।



(২০) বাড়ির আশে পাশে এমন হাজারো আমের চাড়া গজায়। দুই একটা বাদে সবগুলোয় মরে যায় অযত্নে।



(২১) নাম না জানা ফুল। এমন শত শত ফুল বর্ষায় আমাদের বাড়ির পাশে ফুটতে দেখি।



(২২) বলেন দেখি এই চারটা হাসের মধ্যে কয়টা পুরুষ?



(২৩) মোরগ ফুলের গাছ। আমরা একে এ নামেই চিনি। ফুল এখনো ধরেনি। এর কি অন্য কোন নাম আছে?




(২৪) রঙধনুর দেখা সচারাচর মিলে না। আমার কাছে রঙধনু বড়ই চমৎকার লাগে।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:০১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×