somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মা একজন মস্ত কবিরাজ!

৩০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রামের মানুষ এখনো ঝাঁড়ফুকে বিশ্বাস করে।
ছোট খাটো অসুখ থেকে শুরু করে প্যারালাইসিস রোগীকেও ঝাঁড়ফুকের চিকিৎসা দেয়। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম আমার মায়ের কাছে নিয়মিতই দুই-একজন মানুষ আসতো চিকিৎসা নিতে। তাদেরকে ঝাঁড়ফুক করতেন। বিশেষ করে সকাল বেলা। ফজরের পরপরই খালিপেটে চিকিৎসা করতেন। তারা নাকি ভালোও হয়ে যেত। এখনো এরকম চিকিৎসা করে চলছেন। কারো কাছ থেকে মা কখনো টাকা নেন না। চিকিৎসা শেষে বলে দেন যদি ভালো হয় তাহলে যেন ভিক্ষুকদেরকে অথবা মসজিদে দান করে দেয় সাধ্যমত। প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও না করতাম না কখনো। ঝাঁড়ফুকের সরঞ্জাম আমাকেও আনতে বলতো মাঝে মাঝে। আমি এনে দিতাম।

অনেকগুলো রোগের চিকিৎসা করেন আমার মা।
কিছু রোগ আছে রোগী ছাড়াই চিকিৎসা দেন দেখি। এতেও নাকি কাজ হয়। যে সব রোগের চিকিৎসা করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো:
(১) সাপের বাতাস
(২) হাড় মচকানো
(৩) কোন কিছু দেখে ভয় পেয়ে জ্বর আসলে
(৪) স্যুত উঠা
(৫) কাটা বিঁধলে বের করা
(৬) সলম

সাপের বাতাস: এক ধরনের সাপ আছে যে সাপের নি:শ্বাস শরীরে লাগলে নাকি এমন রোগ হয়। আসলেই এমন কোন নাম আছে কি না আমার জানা নেই। এর কোন বৈজ্ঞনিক ভিত্তিও আমি জানি না। আমার মনে হয় সবটাই চলে বিশ্বাসের উপরে। এই রোগের চিকিৎসা করা হয় কচুপাতায় পানি ভরে তাতে কোরআনের আয়াত পরে ফুক দেয়ার মাধ্যমে। পড়া পানি রোগীকে খাওয়াতে হয়। রোগীকে না খাওয়ালেও চলে। যিনি রোগের সংবাদ বলেন সে খেলেই নাকি ভালো হয়ে যায় রোগী। ফোন করে বললে কবিরাজ নিজেই পান করে নেন পড়া পানি। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো:
- হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়াই বমি
- বমির সাথে পাতলা পায়খানা হওয়া
- স্যালাইন খাবার পরেও পাতলা পায়খানা ভালো না হওয়া।

হাড় মচকানো: এই রোগ মূলত শরীরের হাড়ের স্হানচ্যুতি থেকে হয়। কোথা থেকে পড়ে গিয়ে হাতে বা পায়ের জয়েন্টে ফুলে গেলে বা ব্যাথা হলে এর চিকিৎসা করা হয়। এর চিকিৎসা পদ্ধতি দুইটা। একটা হচ্ছে চুলার বাসি ছাই কাঠাল পাতার কোকড়ানো পাতার মধ্যে নিয়ে তার সাথে পিঁপড়ার মাটি মিশিয়ে নিতে হয়। সবগুলো উপকরণ মিশিয়ে কি পড়ে যেন ফুক দেয় আমি জানি না। তিন দিন এই চিকিৎসা করলেই নাকি ভালো হয়ে যায়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো শরীরের সাথে এক ধরনের গাছের শিকর বেঁধে রাখা হয়। গাছটি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

কোন কিছুর ভয় পাওয়া: এই রোগের চিকিৎসার অভাব নেই। কখনো দুইটা বাঁশের ছেট কঞ্চি দ্বারা কখনো বা পানি পড়া দিয়ে। প্রথমে পানি পড়া দেয়া হয় না সাড়লে বাঁশের দুইটা কঞ্চি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। যদি আসলেই ভয় পেয়ে থাকে তাহলে একটা কঞ্চি আরেকটা থেকে বড় হয়। ভয় পেলে না সারা পর্যন্ত রোগীর গায়ে জ্বর থাকে।

স্যুত উঠা: এই রোগের এমন নাম কেন আমি জানি না। এর উপসর্গ হলো তলপেতে গুড়গুড় ডাকে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, বার বার পাতলা পায়খানা হয়। ভারী জিনিসপত্র তুলতে গিয়ে এই রোগ হয় বলে শুনেছি। এর চিকিৎসা নিতে আসে বেশি মানুষ। প্রায় প্রতিদিন সকালেই আসে। দুই হাতেই কোরআনের একটা আয়াত পড়ে ফুক দেয়া হয় আর মধ্যমাঙ্গুলি ধরে হাতে টানতে হয়। একবারের চিকিৎসাতেই নাকি রোগী ভালো হয়ে যায়।

পায়ে বা শরীরেরর কোন স্থানে কাটা বিঁধলে বের করার জন্য এক বিশেষ ধরনের ভেষজ গাছ বেঁধে দেয়া হয়। তিন দিনেই কাটা বের হয়ে যায়। ভেষজ গাছটি আগে থেকেই ঘরে সংরক্ষণ করে রাখেন আমার মা।

সলম হলো এক ধরনের দাঁদ। শরীরের সাদা সাদা রেশ পড়ে। চুলকায় মাঝে মাঝে। ফিটকিরি আর নারিকেল তেলের সাথে কি একটা উপাদান মিশিয়ে যেন এর মেডিসিন প্রস্তুত করা হয়। আক্রান্ত স্থানে এক সপ্তাহ লাগালেই ভালো হয়ে যায়।

আমাদের বাড়ির আশেপাশে আরো দুই একজন বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করে থাকেন। এই যেমন পেটে পাথর হলে তার চিকিৎসা করেন লেবু দিয়ে। কারো শারিরিক সমস্যার দরুণ বিয়ে বউ না থাকলে চিকিৎসা। জ্বীনে ভুতে ধরলে তারও চিকিৎসা আছে আমাদের গ্রামে। বলা যায় কবিরাজ গ্রাম। লোকজনও আসেন দূরদূরান্ত থেকে। কারো কাছ থেকেই চিকিৎসা বাবদ টাকা নেন না কেউই। দুই একটা ভেষজ যেগুলো কিনে আনতে হয় সেগুলো ছাড়া ঝাঁড়ফুক সবই করেন বিনে পয়সায়।

এই পোস্টটি লেখার উদ্দেশ্য হলো এখনো মানুষ কি পরিমান ঝাঁড়ফুকে বিশ্বাস করেন তার একটা প্রমান দেয়ার জন্য। এইরকম টোটকা চিকিৎসায় আবার রোগী ভালো হয় দেখেও আশ্চর্য লাগে।

ছবি সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৪১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×