somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার চকলেট

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চাকরির সুবাধে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। সপ্তাহে একদিন বাসায় যাবার সুযোগ মেলে। বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে যাই আবার শনিবার সকালে এসে অফিস করি। সপ্তাহের যে কয়টা দিন বাসার বাইরে থাকি সে সময়টাতে মোবাইলে কথা হয় ছেলেটার সাথে। বয়স পাঁচ বছর হলেও বেশ সুন্দর আর গুছিয়ে কথা বলতে পারে ও। ফোন করেই সবার প্রথমে যে প্রশ্নটা করবে সেটা হলো বাবা কখন আসবা? শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার, পুরো সপ্তাহ জুড়েই ওর এই একই প্রশ্ন। ছানাটার মাও চাকরি করে। ছানাটা আমার ঠিকমতো বাবা-মার সংস্পর্শ পায় না। সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে বাবার জন্য। বাবার কাছে হাজারটা বায়না ওর। মাঝে মাঝে ধমকও দেয় ওর মা। আমি নিষেধ করি কাছে থাকলে। ছানাটার মা ছানাটাকে বুঝায় এত বেশি আবদার করো বলে বাবা আসে না। আর বেশি কিছু আনতে বলবা না বাবাকে।

ছোট মানুষ, মা যা বুঝায় তাই বুঝে। অযথা কান্নাকাটিও করেনা তেমন। আমাকে ফোন দিয়ে বলে বাবা বাবা আমি আ....র তোমার কাছে কিছু চাইবো না। শুধু আমার জন্য চকলেট নিয়ে আইসো। মা বলেছে অনেক কিছু চাই বলে তুমি আমার সাথে থাকো না। চকলেট চাওয়া কি বেশি কিছু চাওয়া হবে বাবা? তাহলে চকলেটও চাইনা। তুমি তাড়াতাড়ি আসো বাবা। আমি ওর কথা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। গলাটা বারবার আটকে আসে আমার। কন্ঠ দিয়ে স্বর বের হয়না সহজে।

বাসায় ওর জন্য চকলেট নিয়েছিলাম সেদিন। আরো কিছু ছিলো। কিন্তু চকলেট বা অন্য সব কিছুর প্রতি দেখলাম কেমন একটা অনাগ্রহ ভাব। এমনিতেই আমার কাছ থেকে সরতে চায় না বাসায় গেলে, আজও তার ব্যতিক্রম হয় না। ও আমার সাথে লেগে থাকে। আমিও আদর দেই ছেলেটাকে। অবসরের সবটুুকুই ওকে দেবার চেষ্টা করি।

আনন্দের সময়গুলো শেষ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। পরিবারের সাথে থাকলে কোনদিক দিয়ে যে শুক্রবার চলে য়ায় টের পাই না। আবারও যাবার সময় হয়ে যায় আমার। শনিবার হলে যেন বাচ্চাটার ঘুম খুব তাড়াতাড়ি ভাঙে। কারণ যে আর কিছুই না। বাবাকে বিদায় দিতে হবে। এ বিদায় ক্ষনিকের হলেও কষ্টের। ছেলে আমার মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে দরজায়। বাসা থেকে যতক্ষন আমাকে দেখা যায় ও তাকিয়েই থাকে। সবশেষ যখন আমার রাস্তা পরিবর্তন করার সময় আসে আমিও ঘুরে তাকাই ওর দিকে। হাত নেড়ে বিদায় নেই পুন:রায়। বাবাটার জন্য এক বুক শুন্যতা নিয়ে কাজে ফিরি।

বাসা থেকে বের হবো এখনই। অফিসে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে বলে একটু তাড়াতাড়ি করছি। পাঁচ বছরের ছেলেটা বের হওয়া দেখলে আর পিছু ছাড়েনা। যেখানেই যাবো সাথে যেতে হবে ওর। বাথরুমে গেলেও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটা আমাকে খুবই ভালোবাসে বুঝি। আমারও মন খারাপ হয় ওকে রেখে দূরে থাকতে। কিন্তু আজ যেন একটু বেশিই ঘুর ঘুর করছে পিছুপিছু। আমি লক্ষ্য করলাম ও মাঝে মাঝে আমার পকেটেও হাত দেবার চেষ্টা করছে। যা কখনো করে না ও! কিন্তু আমি ওসবে পাত্তা দিচ্ছি না। আমার মতো আমি তৈরি হচ্ছি। এক সময় ওর একটা হাত আমার পেছন পকেটে ঢুকিয়েই দেই। আমি ব্যস্ততার মাঝে একটু বিরক্ত হই। ধমকের স্বরে ওকে বকা দিয়ে ফেলি। ও আমার এই রূপ দেখে না খুব একটা। বকা খেয়ে ভয় পেয়ে যায় ও। দূরে দাঁড়িয়ে থাকে আর আমার দিকে থাকে ওর করুন দৃষ্টি। কিন্তু ধমক খেয়ে কান্না করে না। আমি লক্ষ্য করলাম যে হাতটা আমার পকেটে ঢুকিয়েছিলো সেই হাত মুঠো করে আছে। আমি আবারো ধমকের স্বরে বললাম দেখি হাতে কি তোমার?

আমার ধারনা ছিলো ও হয়তো আমার পকেট থেকে টাকা নেবার জন্য এমন করছে। কাছে গিয়ে ওর হাতের মুঠি খুলে আমি অবাক হয়ে যাই। ওর ছোট মুঠিটার ভেতরে দেখি একটা চকলেট নিয়ে রেখেছে। আমি এবার একটু শান্ত হই। শীতল কন্ঠে জিজ্ঞাসা করি হাতে চকলেট কেন বাবা? ছেলেটা আমাকে বলে বাবা, তুমি তো অনেক দূরে যাচ্ছো। গাড়িতে যদি গলা শুকায় তখন তো পানি খেতে পারবা না। সে জন্য এই চকলেট টা তোমার পকেটে দিতে চেয়েছিলাম। ওর উত্তর শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ! নিজের পা দুটো সরাতে পারছিলাম না। স্ট্যাচু মনে হচ্ছিল নিজেকে। কিছু সময়ের জন্য নিজেকে সামলে নিলাম। ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমে খেলাম। এতটুকুন ছেলে, ওর এতো বুদ্ধি আসলো কোথা থেকে! ছেলেটার মাও পাশে দাঁড়ানো তখন। আমি লক্ষ্য করলাম গায়ের উড়নায় ছেলেটার মা ও অশ্রু লুকালো।

বাবা আর ছানাদের সম্পর্কগুলো এমনই হয়। এমন ভালোবাসা বেঁচে থাকুক আজীবন। দোয়া করি, ছেলেটা অনেক বড় হোক। দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করুক। আজকের শিশুই যে আগামীর ভবিষ্যৎ। লক্ষ পিতা ঘুমিয়ে আছে সব শিশুরই অন্তরে।


(দ্র: আমার এক সহকর্মীর বয়ান থেকে লেখা।)
ছবি কৃতজ্ঞতা: একুশে টিভি
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৭
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×