somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদরের সন্তান, আমাদের সংসার

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার ছেলের বয়স দুই বছরের কাছাকাছি। কাজের বাইরে বাকিটা সময় ছেলেটাকে দেয়ার চেষ্টা করি। বাচ্চাটার সাথে সময় কাটাতে খুবই ভালো লাগে আমার। কাজে যাবার সময়টাতে ওর কাছ থেকে বিদায় নিতেও মন কেমন করে উঠে! সারাটাক্ষণ ওর সাথে কাটাতে মন চায়। বাচ্চাটা যখন হাতের আঙ্গুল ধরে ধরে হাটে তখন যে কি সুখানুভুতি হয় তা বলে বুঝাবার নয়! এই সুখ স্বর্গীয়! আল্লাহর রহমত। আমার চক্ষুশীতলকারী! বাচ্চাটা ভাঙা ভাঙা করে কথা বলতে পারে। আমাকে কখনো মা, কখনো বাবা, বাবাই, বাপ এইসব বলে ডাকে। আমি ছেলেটাকে যা বলি ছেলেটাও আমাকে তাই বলে। ব্যতিক্রম হলো আমি যখন বাচ্চাটাকে কয়েকবার ডাকার পরেও না আসে তখন বলি "ধুরু ব্যাটা"। আর বাচ্চাটা আমাকে রিপিট করে "ধুরু বাবা"। আর কিছক্ষণ পরে পরে বাইরে, বাইরে, বাইরে বলে বলে আমাকে দরজার কাছে নিয়ে যাবে। বাইরে ওকে নিয়ে যেতেই হবে তখন। আশেপাশের সব কিছুতেই ওর কৌতুহল। কৌতুহলের এই তো সময়। বিড়াল দেখলে ম্যাও ম্যাও বলবে, গরু দেখে হাম্বা বলবে আর গাড়ি দেখলে গায়ি... গায়ি... বলে গলাটা জড়িয়ে ধরবে। আকাশের চাঁদ দেখে আয় আয় আয় টি...প বলবে আর কপালে হাতের ইশারা করবে। সারাদিনে এমন হাজারো অ্যাক্টিভিটি করে আমার চারপাশটা ভরিয়ে রাখে সারাটাক্ষণ। ওর এমন আনন্দে আমিও খুশি হই। জান্নাতি সুখ অনুভব করি। হৃদয়-মন জুড়িয়ে যায়। কি যে সুখানুভুতি হয় তখন বলে বুঝানো যাবে না। একমাত্র সন্তানের মা-বাবারাই বুঝতে পারবেন। সন্তানের মুখের হাসি সারাদিনের ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেয়। নতুন করে বাঁচার প্রেরণা জোগায়। দোয়া করি সুস্থ ও সুন্দর থাক পৃথিবীর প্রতিটা সন্তান!

কয়েকদিন আগে লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় শিশুদের প্রাণহানি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। পত্রিকার পাতায় সে সংবাদ পড়ে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠে। ছোট ছোট শিশুদের এমন মৃত্যুর সংবাদ শুনে মনটা ঢুকরে কেঁদে উঠে। লঞ্চের ডেকে ফিটারের আগুনে পুড়া ছবি বিষাদ এই মনটাতে আরো নাড়া দিয়ে যায়! কিভাবে সহ্য করছে তাদের মা-বাবারা! সন্তানকে কোলে নিয়ে লঞ্চ থেকে লাফ দেয়া আর তীরে এসে সন্তানের মৃত মুখ!! কি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! দোয়া করি কারো শত্রুরও যেন আর এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। মনে পড়ে আমার ছেলেটার কথা। আল্লাহ যেন পৃথিবীর প্রতিটা শিশুর আগামী নিরাপদ ও সুন্দর করে দেন দোয়া করি।

আমি কন্যা শিশু ও ছেলে শিশুর মাঝে কোন পার্থক্য করিনা কখনো। বরং আমার কন্যা শিশুর প্রতিই বেশি দূর্বলতা কাজ করে। তারপরেও কন্যা শিশুর বাবা হতে নিজের মনে এক ধরনের ভয় কাজ করে। চারিদিকে শিশুদের প্রতি যে নৃশংসতার সংবাদ চোখে পরে সেই থেকেই আমার ভয়ের উৎপত্তি। ধর্ষণের যে খবরগুলো পত্রিকাতে পড়ি তাতে করে আর মেয়ে শিশু চাইতে পারিনা! আমরা যে শিশুদের জন্য এই পৃথিবী বাসযোগ্য করতে পারিনি! নৈতিকতার অবক্ষয় আর কত দূর গিয়ে ঠেকবে আমার জানা নেই। আমাদের বিচার ব্যবস্থার করুন দশা ধর্ষণকে আরো উৎসাহিত করে বলে মনে হয়। শিশু বান্ধব বাংলাদেশ আমরা কি তৈরী করতে পেরেছি? আসুন সুকান্তের ছাড়পত্র কবিতার মতো শপথ নেই শিশুদের জন্য নিরাপদ বিশ্ব গড়ার।

বাবা হবার আগে যখন বাসা থেকে দূরে থাকতাম তখন আমাকে বিদায় জানাতে গিয়ে প্রায়ই মায়ের চোখে জল দেখতে পেতাম। দেখতাম লুকিয়ে আচল দিয়ে চোখ মুছতে। তখন এতটা ফিল করতে পারতাম না। এখন বুঝি মা কেন সন্তানকে বিদায় দিতে গিয়ে চোখের জল মুছে। আমি ক্ষণিকের জন্য কাজে আসি, তবুও কেমন লাগে। আর সন্তান রেখে দূরে থাকাটা কত কষ্টের! বাড়ি যাবার সংবাদে দেখতাম বাবা আমার পছন্দের টুকটাক জিনিস গুছিয়ে রাখতো। মা আমার পছন্দের খাবার রান্না করতেন। এখনো করেন। বাবা-মা মুখে না বললেও বুঝি তাদের অন্তরে সন্তানের জন্য কেমন অনুভূতি হয়।

ছোটবেলায় যখন দেখতাম কারো বিয়ে হলে শ্বশুর বাড়ি যাবার সময় কান্না করে বাবা-মা তখন বলতাম কান্না করার কি আছে। মেয়েকে তো বিয়ে দিতেই হবে। আমি এখন এই বিষয়টা নিয়ে ভাবি মাঝে মাঝেই। আমার মেয়ে হলে তাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে কতটা কষ্ট হবে আমার। ছোট থেকে এত আদর-যত্ন করে মানুষ করার পর অন্যের ঘরে পাঠাতে প্রতিটা মা-বাবার কত কষ্ট হয়। সামাজিক এই নিয়মের বাইরে আমরা যেতে পারবো না এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য হলো আদরের মেয়েকে অন্যের ঘরে পাঠাতে গিয়ে মা-বাবাদের কলিজা ছিঁড়ে যাবার দৃশ্য! এই কথা মনে হলেই বাচ্চার মায়ের সাথে আর রাগ করতে পারিনা কোন কিছুতেই। দোয়া করি ভালো থাকুক প্রতিটা সন্তান।


পরিশেষে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতাটি নিবেদন করছি আপনাদের জন্য।

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।

এত দীর্ঘ পোস্ট কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি সকলকে। ভালো থাকবেন সবাই। দোয়া চাই আমার সন্তান আর পরিবারের জন্য।

ছবি: পরিবার ডট নেট
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:০৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×