এর এক ঘণ্টা পর রিখটার স্কেলে ৬.৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর ভূমিকম্প-পরবর্তী একের পর এক ভূকম্পন অব্যাহত থাকে কয়েক ঘণ্টাজুড়ে। ভীতসন্ত্রস্ত নিবাসীরা যে যেখানে ছিলেন বের হয়ে আসেন বাইরে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সবাই। ভবনগুলো ধসে পড়ে তাসের ঘরের মতো। উপড়ে যায় গাছপালা আর বৈদ্যুতিক পিলারগুলো। রাস্তা ঘাটে সৃষ্টি হয় বিশাল ফাটল।
চার পাশ ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বিভীষিকাময় স্থানে পরিণত হয় কাঠমান্ডু ও পোখরা শহরসহ আক্রান্ত এলাকাগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে লামজুংয়ে। নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কাঠমান্ডুতে।
শুধু সেখানেই নিহত হয় ৫৩৯ জন। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে প্রাচীন নিদর্শন বহনকারী অনেক স্থাপনা।
নেপাল সরকার আক্রান্ত এলাকাগুলোয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটি আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন অনেক মানুষ। উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
যেন ফিরে এল ৮১ বছর আগে জানুয়ারির সেই দুপুর! ১৯৩৪-এর এই ভরদুপুরে নেপাল কেঁপে উঠেছিল এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৮.১। নেপাল ও বিহার মিলিয়ে মারা গিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। শনিবার দুপুরে নেপালে জন্ম নেয়া ভূমিকম্প অবশ্য সেই মাত্রা পেরোতে পারেনি। মার্কিন ভূতত্ত্ব সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, এ দিন পোখরার লোপজাঙে জন্ম নেয়া ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭.৯। মূল ভূমিকম্পের পরে অন্তত ১৬ বার আফটার-শকে কেঁপে উঠেছে মাটি। এ দিনের ঘটনার পরেই ভারতের ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট দাবি করেছে, ১৯৩৪ সালের পর নেপালের ইতিহাসে এটাই সব থেকে বড় ভূমিকম্পের ঘটনা।
কি করবেন বা কি করার থাকে ভূমিকম্প হলে?
ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে লোকজন বিভিন্ন ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে হুড়োহুড়িতে বহু লোক আহত হয়েছেন।
শত শত মানুষ বাসা-বাড়ি এবং অফিস কার্যালয় থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। বহুতল অনেক ভবনের ছাদে উঠতে দেখা যায় অনেককেই।
কিন্তু ভূমিকম্প হলে আসলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে সচেতন নন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বিবিসিকে বলেন, ভূমিকম্প যখন চলতে থাকে তখন কোনভাবেই আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় নামা যাবে না।
তিনি বলেন, 'বাড়ি ঘর কিংবা অফিস যে যেখানে আছে সেখানেই শক্ত কোনো কিছুর আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করতে হবে। যেমন কলাম কিংবা বীমের সংযোগস্থলে, টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। কিন্তু ওপর তলা থেকে নিচে নামা কিংবা রাস্তায় দাঁড়ানো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।'
তিনি জানান, অনেক সময় দেখা গেছে কম্পনে স্থাপনার কোনো ক্ষতি না হলেও, লাফিয়ে পড়ে কিংবা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
‘বড় ভূমিকম্প হলে কোনোভাবেই অবকাঠামো টিকবে না। কিন্তু মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে কাঠামো টিকে যাবে এবং এভাবে আশ্রয় নিতে পারলে মাথা কিংবা শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রক্ষা পেতে পারে।
পরবর্তীতে উদ্ধারকর্মীরা এসে উদ্ধারকাজ চালাতে পারেন। কিন্তু ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক কামাল।
তবে ঢাকার মত একটি জনবহুল এবং বহুতল ভবনে ঠাসা শহরে সে ধরনের সুযোগ কতটা? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে অফিস বা ভবন নির্মাণের সময় নগর দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয় না। সেই দিক থেকে একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
অধ্যাপক কামাল মনে করেন, প্রতিবেশী দেশ নেপালে ৮০ বছর পর এ ধরনের বড় মাত্রার একটি ভূমিকম্প হল। বাংলাদেশে এক শ' বছরের বেশি সময় আগে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের ভূমিকম্প এখানেও হতে পারে বলে গবেষণায় জানা যাচ্ছে।
তার মতে, ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে সরকার ছোট ছোট তথ্যচিত্রের মাধ্যমে সচেতন করতে পারে। সেইসাথে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
নেপালবাসীর প্রতি আমার সমবেদনা এবং দ্রত এ প্রাকৃতিক দূর্যেোগ যেন মোকাবেলা করতে পারে সে দোআ রইল। - See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪