somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ "থানা থেকে আসছি (২০১০)" একটি ডায়রির ইতিকথা!!!

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বজ্রপাত আর বৃষ্টি মুখর সন্ধ্যা বেলায় বস্তিতে এক তরুণী যখন পৃথিবীর সব আনন্দ-মায়া ত্যাগ করে আত্মহত্যা করছে ঠিক তখনই অন্যদিকে বিলাসবহুল এক ধনী ব্যাক্তির মেয়ের ঢাক ঢোল পিটিয়ে এনগেজমেন্ট হচ্ছে। কিন্তু রহস্যময় এক যোগসুত্র রয়েছে এই দুই ঘটনার মধ্যে। সিনেমার শুরুটা ঠিক এমনই এক রোমাঞ্চকর সিচুয়েশনের মাধ্যমে।


থানা থেকে আসছি (২০১০)
জনরাঃ থ্রিলার । ড্রামা
স্ক্রিপ্টঃ অজিত গঙ্গোপাধ্যায়
অভিনয়েঃ সব্যসাচী চক্রবর্তী,পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়,রুদ্রনীল ঘোষ, পাওলি দাম প্রমুখ
সঙ্গীতঃ জিৎ গাঙ্গুলী
পরিচালকঃ সারণ দত্ত

◆বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অমরনাথ মল্লিকের বিলাসবহুল বাড়িতে তার একমাত্র মেয়ের এনগেজমেন্ট হচ্ছে। এনগেজমেন্ট শেষে গেস্টরা চলে যান, সর্বশেষে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী সুতপা মল্লিক,একমাত্র ছেলে অরিন,মেয়ে রিনিতা এবং মেয়ের হবু জামাই রজত। এমন সময় থানা থেকে “তিনকড়ি হালদার” নামে একজন পুলিশ অফিসার উপস্থিত হোন। অফিসার তাদের বলেন, পাশের বস্তিতে একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে ও লাশের কাছে একটি ডায়রী পাওয়া গেছে যেখানে তার আত্মহত্যার কারন বর্ননা দেয়া আছে এবং ডায়রীতে তাদের সবার নাম আলাদা ভাবে উল্লেখ করা আছে।
তারপর শুরু হয় পরিবারের প্রত্যেক মেম্বারের সাথে ওই মেয়ের আত্মহত্যার যোগসুত্রের চাঞ্চল্যকর গল্প।

সিনেমার সবচেয়ে পজিটিভ দিক হচ্ছে, সিনেমার শুরুতেই পরিচালক আপনাকে গল্পের সাথে বেঁধে ফেলবে। কারন সিনেমার শুরুটায় বেশ নাটকীয়তার মধ্যে। আর তারপর রহস্যময় আবহাওয়া ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আপনাকে সিনেমার বাকি অংশ দেখাতে সাহায্য করবে।
আর সিনেমা শেষে আপনার ভিতর অনেক ভাবনা জাগবে। খুব সুন্দর ভাবে সিনেমায় মেসেজ দেয়া আছে। গল্পকার চেষ্টা করেছেন ভদ্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিছু মানুষের কুৎসিত রূপ। নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণী “সন্ধ্যা মন্ডল” যেন এই সমাজের সকল নিপীড়িত মানুষদের রিপ্রেজেন্ট করছে।


এবার আসি অভিনয় প্রসঙ্গে, সিনেমায় তিনজনের অভিনয় আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে, সন্ধ্যা মন্ডল চরিত্রে “পাওলি দাম” এক কথায় অসাধারন। পুরো সিনেমায় সব চরিত্রের চেয়ে কম কথা বলেছে সে কিন্তু তার চোখের অভিব্যক্তি কি বলবো!! তার চোখই যেন বলে দিচ্ছে সমাজের বিভিন্ন মহলের মানুষ গুলোর শোষণের সচিত্র। তার চাহনির মধ্যেই যেন লুকিয়ে ছিল সমাজের প্রতি তার অনীহা,কস্ট,অভিমান।

দ্বিতীয় “তিনকড়ি হালদার” চরিত্রে সব্যসাচী চক্রবর্তী, উনার অভিনয়ে বরাবরি আমি সন্তুষ্ট থাকি, এই মুভিতেও ব্যাতিক্রম হয়নি। একদম ন্যাচারাল অভিনেতা। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে তার চৌকুশ ও স্থির আচরন অনেক ভাল লেগেছে। সিনেমায় তার কন্ঠেই যেন এক প্রকার রহস্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তৃতীয়, মেয়ের হবু জামাই এর চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষ, তার কথা বলার ধরন, অঙ্গভঙ্গি, নেগেটিভ এক্সপ্রেশন অনেক ইম্প্রেসিভ লেগেছে। নেতিবাচক চরিত্রে সে পার্ফেক্ট অভিনয় করেছে। তার পার্ফমেন্সে যে কেউ তাকে ঘৃণা করতে বাধ্য।
তাছাড়া পরমব্রত,দুলাল লেহরী ও অন্যান্যদের অভিনয়ও মোটামুটি ভালোয় ছিল।


অজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ক্রিপ্টের উপরই ১৯৬৫ সালে পরিচালক হিরণ নাগ নির্মান করেছিলেন “থানা থেকে আসছি” মুল চরিত্রে ছিলেন উত্তম কুমার। একই স্ক্রিপ্ট্ রাইটার এর সহযোগিতায় ২০১০ সালে এসে পরিচালক সারণ দত্ত এই সিনেমাটি নির্মান করলেন। ১৯৬৫ সালের সিনেমাটি যেহেতু দেখা হয়নি তাই কোন রকম তুলনায় যাচ্ছিনা। বর্তমান প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে সারণ দত্ত রিমেইক এর কাজটি দারুন ভাবে সম্পন্ন করেছেন।
তাছাড়া আবহ সঙ্গীতে যারা ছিলেন তারাও তাদের কাজ ঠিকঠাক ভাবে করেছেন। সিনেমাটোগ্রাফি তে সৌমিক হালদার প্রশংসার দাবীদার,বিশেষ করে সিনেমা শুরুর দিকের রহস্যময় আবহাওয়া তৈরির জন্য।

সুতরাং থ্রিলার জনরাই বাংলা ভাষায় সিনেমা,সময় করে দেখে ফেলুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×