প্রিয় অভিনেতা রবার্ট ডি নিরোর ৭৪তম জন্মদিন আজ। প্রিয় অভিনেতার জন্মদিন উপলক্ষে তার অভিনীত এই সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা জাগলো।
মার্টিন স্কোরসেজি পরিচালিত সিনেমা গুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সাধারনত “ট্যাক্সি ড্রাইভার”, “রেজিং বুল”, “গুডফেলাস”, “গ্যাংস অফ নিউ ইয়র্ক”, কিংবা “শাটার আইল্যান্ড” নাম গুলো চলে আসে বা আলোচনার মূল ফোকাস এই সিনেমা গুলোর দিকেই থাকে।
নিঃসন্দেহে এই সিনেমা গুলো স্কোরসেজির অনবদ্য সৃষ্টি ও সেরা কাজ। তবে উপরোক্ত সিনেমাগুলোর তুলনায় কম আলোচিত হওয়া সিনেমা হচ্ছে “দ্য কিং অফ কমেডি”, ব্যাক্তিগতভাবে খুব প্রিয় একটি সিনেমা। অবসর সময়ে প্রায়ই এই সিনেমার শেষ মনোলগটি দেখা হয়।
The King of Comedy (1982)
Genre: Comedy, Crime, Drama
IMDb Ratting: 7.8/10
Rotten Tomatoes: 90% Freshness
Cast: Robert De Niro, Jerry Lewis, Diahnne Abbott
Writer: Paul D. Zimmerman
Director: Martin Scorsese
মার্টিন স্কোরসেজি-রবার্ট ডি নিরো জুটি মানেই বিশেষ কিছু, এই দুজনের কোলাবোরশনে স্বাভাবিকভাবেই এক প্রকার প্রত্যাশা তৈরি হয়ে যায়। যদিও সিনেমাটি প্রতি আহামরি কোন প্রত্যাশা ছিলনা কিন্তু গল্প ও রবার্ট ডি নিরোর পারফর্মেন্স অবাক করে দিয়ে আমাকে অতিরিক্ত মুগ্ধ করেছিল।
*গল্প সংক্ষেপঃ
রোপার্ট পাপকিন(ডি নিরো) একজন স্ট্রাগ্লিং কমেডিয়ান, নিজের কমিক প্রতিভার ক্ষেত্রে কনফিডেন্ট হলেও প্রতিভা দেখানোর কোন সুযোগ তথা ব্রেক পাচ্ছিলনা। নাটকীয়ভাবে একদিন কথা বলার সুযোগ হয়ে যায় কমেডি শো’র মেগা স্টার জেরির সাথে। অতঃপর গল্প অন্যদিকে মোর নিতে থাকে।
সিনেমার মূল কন্সেপ্টের পোস্ট মর্টেম করলে বলা যায়, মূল দুটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। প্রথমত, একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে স্টারদের নিয়ে আমাদের এডমায়ারেশন_ প্রিয় সেলিব্রেটিদের সাথে একটু কথা বলা, একটু ছুঁয়ে দেখা, এমন কৌতূহল ও বিভিন্ন ফ্যান্টাসি কাজ করে ফ্যানদের মধ্যে। এই বিষয়টা খুব বাস্তবিকভাবেই তুলে ধরেছে সিনেমায়।
দ্বিতীয়ত, অসংখ্য প্রতিভা থাকলেও এই পৃথিবীতে সহজে নিজের নাম উজ্জ্বল করা যায়না, ইতিহাস রচনা করা যায়না, আর শোবিজ জগৎ তো আরো নিষ্ঠুর। কেউ সহজে আপনাকে সিনেমা বা কমেডি শোতে ব্রেক দেবেনা, নিজে বারবার কষ্ট করে , রিজেকশনের পর রিজেকশন সহ্য করে এগিয়ে যেতে হয় নিজ লক্ষে।
যদিও সিনেমায় সরাসরিভাবে এই বিষয় গুলো উল্লেখ করেনি, সিনেমার গল্পের মূল ফোকাস ছিল রুপার্ট পাপকিনের বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনা, তবে সিনেমা দেখার সময়ে উপরোক্ত বিষয় গুলো উপলব্ধি করতে পারবেন। পরিচালকও প্রতীকী অর্থে উপরোক্ত বিষয় গুলো তুলে ধরেছিলেন।
অন্যান্য বিষয় গুলো বাদ দিলেও পুরো সিনেমা একটানা দেখে শেষ করা যাবে শুধু রবার্ট ডি নিরোর অভিনয়ের জন্য। পুরো সিনেমায় তার অঙ্গভঙ্গি, প্রিয় সেলিব্রেটির সাথে কল্পনায় কথোপকথনের অংশ এবং শেষে ক্লাইমেক্সের মনোলগ। প্রিয় এই অভিনেতার প্রশংসায় দু-তিন পেইজ লিখে ফেললেও অতি প্রশংসা করা হবেনা। পাশাপাশি রিয়েল লাইফ টক শো সেলিব্রেটি জেরি লুইসের অভিনয়ও দারুণ ছিলে। সিনেমায় মূল ক্যারেক্টার কম হলেও ফিমেইল এক্ট্রেসদের মধ্যে পাপকিনের সহযোগী চরিত্রে স্যান্ড্রা বার্নহার্ড, ও রিতা চরিত্রে ডিয়ান এবোটকে বেশ ভাল লেগেছে যিনি কিনা ব্যাক্তিগত লাইফে ডি নিরোর স্ত্রী ছিলেন।
মন খারাপ করা তথ্য হচ্ছে সিনেমাটি বক্স অফিসে ডিজেস্টার হয়েছিল। ৪০ মিলিয়ন বাজেটের সিনেমা আয় করেছিল মাত্র ৩ কোটি। হয়তো সমসাময়িকভাবে সিনেমাটি পারফেক্ট ছিলনা তবে ধীরেধীরে সিনেমাটি ঠিকই ক্লাসিকে পরিনত হয়েছে মুভি বাফদের মধ্যে।
মার্টিন স্কোরসেজি আমার সর্বকালের সেরা প্রিয় পরিচালক। সেই মিন স্ট্রিট থেকে শুরু করে হালের সাইলেন্স, প্রতিটি সিনেমায় বেশ কাছের, ভাল লাগার। এই সিনেমাতেও তিনি নিজের মুনশিয়ানা পরিচালনার প্রভাব দেখিয়েছেন।
মার্টিন স্কোরসেজি-ডি নিরো ও স্করসেজি-লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও জুটি আমার বরাবরই অনেক পছন্দের। এই সিনেমাও তার বিকল্প কিছু হয়নি।
আরেকটি প্রাসঙ্গিক খবর হচ্ছে ডি নিরো ও স্কোরসেজি জুটি ২০১৮ সালে ফিরছে “দি আইরিশম্যান” নামক সিনেমার মাধ্যমে, সাথে আছেন জো পেসি ও লেজেন্ডারি অভিনেতা আল পাচিনো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯