somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Silenced (2011): মাইলফলক সৃষ্টি করা এক অসামান্য চলচ্চিত্র।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে দর্শকদের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনোদিত হওয়া। এই বিনোদন কখনো থ্রিলার বা হরর মুভির টান টান উত্তেজনা উপভোগ, কমেডি মুভির হাস্যরসাত্মক ঘটনায় মনোরঞ্জনীত হওয়া, একশন মুভির আকর্ষণীয় দৃশ্য কিংবা সাইন্স ফিকশনের ক্ষেত্রে কল্পনার বাহিরের অন্য এক দুনিয়ার অভিজ্ঞতা পাওয়ার মধ্য দিয়ে নেয়া হয়।

আর নির্মাতাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে দর্শকদের বিনোদন দেয়া। নির্মানের এই উদ্দেশ্যের মধ্যে শিক্ষণীয় বার্তা কিংবা সচেতনতা বৃদ্ধিও আওতাধীন থাকে। চলচ্চিত্র নির্মাণ যেহেতু একটি পেশা সেহেতু শিল্পের পাশাপাশি অর্থলাভের ব্যাপারটাও সংযুক্ত থাকে।

তবে কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ ও উপভোগের গতানুগতিক ধারনাগুলোর উর্ধে চলে যায়। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া সাউথ কোরিয়ান "সাইলেন্সড" মুভির ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। চলচ্চিত্রটি শুধু বিনোদন কিংবা সচেতনা বৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সবকিছু টপকে এই সিনেমার তুমুল প্রভাব দেশের ৪ মিলিয়ন মানুষের উপর পরেছিল,
বদলে দিয়েছিল দেশের আইন। এমনকি তৎকালীন কোরিয়ান প্রেসিডেন্টও এই সিনেমা দেখে নড়েচড়ে বসেছিল। এই সিনেমাকে বিশেষায়িত করতে গিয়ে অতিরঞ্জিত কথাবার্তা লিখলেও অন্যায় হবেনা।

Silenced (2011)/The Crucible (2011)
★Korean Title: Dogani (2011)
★Genre: Drama
★Director & Screenplay: Dong-hyuk Hwang
★Stars: Yoo Gong, Yu-mi Jung, Hyeon-soo Kim
★IMDb Rating: 8.1/10 - ‎8,786 votes
★Based on the novel "The Crucible" by Gong Ji-young

চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। অনেকেই ইতিমধ্যে জানেন যে সাউথ কোরিয়ার ১৮-৩৫ বয়সের সকল পুরুষদের ২ বছরের বাধ্যতামূলক মিলেটারি সার্ভিস দিতে হয়। সিনেমার মূল অভিনেতা "গোং-ইয়ো" মিলেটারি সার্ভিসে থাকাকালীন প্রতিবন্ধী শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের সত্য ঘটনা অবলম্বনের একটি উপন্যাস পড়ে। উপন্যাসের হৃদয়বিদারক গল্প তার মনে নাড়া দেয় এবং উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

শিশুদের উপর সেক্সুয়াল এসাল্ট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ নতুন কিছু নয়। ২০১৬ সালে অস্কার পাওয়া মুভি "স্পটলাইট" এর মূল গল্পও ছিল শিশুদের উপর ধর্মযাজকদের যৌন নির্যাতনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে। তাছাড়া একই সাব্জেক্টে আরো অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে।



সাধারণত কোন সিনেমা বা সিরিজে *Based on True Story* লিখা থাকলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই ভাবি যে একটি সত্য ঘটনাকে সিনেমার জন্য উপযুক্ত করে তুলতে অনেক নাটকীয় ও অতিরঞ্জিত ঘটনার সাহায্য নেয়া হয়েছে। তবে এই সিনেমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে। উপন্যাসের লেখিকার ভাষ্যমতে মূল ঘটনার অর্ধেক উপন্যাসে তূলে ধরা হয়েছে এবং সিনেমায় অল্প সময়ে ভিজুয়ালি মূল বিষয়বস্তু তোলে ধরতে উপন্যাসের চেয়ে কমই উপস্থাপন করা হয়েছে।
.
সিনেমার গল্প সংক্ষেপে বলতে গেলে, সাউথ কোরিয়ার এক শ্রবণ-প্রতিবন্ধী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের ফিজিক্যাল ও সেক্সুয়াল এসাল্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যা এই স্ক্ললে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। স্কুলে নতুন এক শিক্ষকের যোগদানে এই ব্যাপারগুলো নজরে আসার মধ্য দিয়েই সিনেমার মূল ঘটনার শুরু। সিনেমার প্রথমার্ধে শিশুদের যৌন নির্যাতন ঘটনা ধীরেধীরে প্রকাশ ও দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা কোর্টরুম ড্রামা ধরনার।
.
চাইল্ড এবিউজ বা শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ব্যাপারগুলো একই সাথে স্পর্শকাতর ও ভয়ানক। প্রাপ্ত বয়স্ক ভিক্টিমদের ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করার সুযোগ থাকলেও শিশুদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ থাকেনা।
তাছাড়া শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে সারাজীবন শারীরিক ও মানসিক ট্রমার মোকাবেলা করে যেতে হয়। সাইলেন্সড সিনেমাতেও এই লোমহর্ষক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো উটে এসেছে। সিনেমায় কিছু দৃশ্য রয়েছে যেখানে প্রতিবন্ধী শিশু গুলো তাদের নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। দৃশ্যগুলো এতটাই প্রভাবক ছিল যে, কঠিন হৃদয়ের মানুষদেরও চোখ ভিজে আসার মত পরিস্থিতি তৈরি হবে।



সিনেমার স্কুল টিচারের ভুমিকায় ছিলেন "Train to Busan" ও "The Age of Shadows" খ্যাত Gong Yoo। শিশুদের দুঃখে কাতর হওয়ার দৃশ্য গুলোতে তার প্রতিক্রিয়া দর্শকদেরও আবেগপ্রবণ করে তোলেবে। তবে সিনেমার প্রাণ হচ্ছে বোবা ও বধির চরিত্রে অভিনয় করা বাচ্চাগুলো। এত রিয়েলেস্টিক ও কনভিন্সিং অভিনয় ছিল যে আমি ভেবেছিলাম এই ক্যারেক্টারগুলোর জন্য সত্যি কোন প্রতিবন্ধী শিশুদের কাস্ট করা হয়েছে। তাছাড়া সিনেমার হিউম্যান রাইটের কর্মীর চরিত্রে অভিনেত্রী Jung Yu-mi ও নেতিবাচক চরিত্রের অভিনয় করা মূল তিনটি চরিত্রও বেশ ভাল অভিনয় করেছেন।
পরিচালক ও স্ক্রিনপ্লের দায়িত্বে ছিল Dong-hyuk Hwang। এই চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে সে শতভাগ সফল।
,
এবার আলোচনা করবো দর্শকদের উপর সিনেমাটির প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে। সিনেমাটি একইসাথে বক্স অফিস সফলতা ও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে। সাউথ কোরিয়ার সর্বোচ্চবার দেখা মুভির তালিকাতেও স্থান পেয়েছে। যে মূল ঘটনা নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ হয়েছে সেটি ঘটেছিল ২০০০ সালের দিকে ও আইনগতভাবে ২০০৪-২০০৫ সালে শেষ হয়েছিল। তবে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর ভিক্টিমদের উপর অবিচার ও যথাযত আইনি সহায়তা না পাওয়ার কারনে দর্শকদের মধ্যে তুমুল প্রটেস্ট দেখা যায়। অনলাইনের এক পিটিশনে মোট ১ লক্ষ মানুষ সিগনেচার করে তাদের সাপোর্ট জানায়। দর্শকদের স্ট্রং প্রটেস্ট ও বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসা শুরু করলে কোর্ট কেইসটিকে নতুনভাবে ওপেন(রি-ইনভেস্টিগেশন) করে। ফলাফল হিসেবে ক্রিমিনালদের কঠিন শাস্তি হয় এবং এই সিনেমার নামে(Dogani) ২০১১ সালের অক্টোবরে "Abolish the statute of limitations for sex crimes against minors and the disabled" নামের আইনটি সংশোধন করা হয়।

চলচ্চিত্র হিসেবে এটি একটি মাইলফলক তৈরি করেছে। একটি সিনেমা দেশের মানুষ ও আইনের উপর কি ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তার বড় প্রমাণ হয়ে থাকবে এটি। সিনেমার হিসেবেও যথেষ্ট মানসম্মত। সুতরাং সিনেমাপ্রেমীদের বলব শিগ্রই দেখে ফেলুন। আশা করি সিনেমাটি আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×