somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উমা (২০১৮): ইচ্ছাপূরণ ও মানবতার এক অনন্য নিদর্শন।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেন্ট জর্জ শহরে বসবাসরত সাত বছর বয়সী 'ইভান ল্যাবারসেজ' বড়দিন(ক্রিসমাস) খুব ভালোবাসতো। বয়স যখন মাত্র দু বছর ছিল তখনই ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়, সার্বক্ষণিক সময়েই তাকে চিকিৎসা ও হাসপাতালে আসা যাওয়ার মধ্যেই থাকতে হত। তাই কখনো ঠিকঠাক ভাবে বড়দিন পালন করা হয়ে উঠেনি। খুব ইচ্ছে ছিল একদিন জাকজমকপূর্ণ ভাবে বড়দিন পালন করবে।

কিন্তু ২০১৫ সালে অক্টোবরে ডাক্তার ইভানের মা নিকোল ওয়েলউডকে জানিয়ে দিল হাতে খুব বেশি সময় নেই ইভানের। বড়জোর টেনেটুনে মাসখানেক ,কিন্তু বড়দিন তো ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ। ছেলের শেষ ইচ্ছেটুকো কি তাহলে পূরণ হবেনা? না, পুরো পরিবার মৃতপ্রায় ছেলেটির শেষ ইচ্ছে পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলা হল অনলাইন পোল ও ইভেন্ট। এগিয়ে আসলো সবাই। ইভান বড়দিনের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ক্রিসমাসের কাছে যেতে না পারলেও সেন্ট জর্জ শহরের হাজার হাজার মানুষ অক্টোবর মাসেই ইভানের কাছে ক্রিসমাস নিয়ে আসলো। ক্রিসমাস লাইটিং, ক্রিসমাস ট্রি, প্যারেড আর স্যান্টা ক্লজের সাজ_সবকিছু মিলিয়ে অক্টোবরেই ক্রিসমাসের আমেজে সাজলো পুরো শহর।

প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি শোনে মনে হতে পারে ডিজনির অ্যানিমেশন মুভি, শিশুতোষ গল্প কিংবা কিশোর ফিকশনাল কোন উপন্যাসের গল্প। কিন্তু কানাডার সেন্ট জর্জের মানুষগুলো বাস্তবেই পুরো পৃথিবীকে দেখিয়েছিল মানবতার এক অনন্য নিদর্শন।





সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইভানের ঘটনাটি চোখে পরে কলকাতার অন্যতম সেরা পরিচালক সৃজিত মুখার্জির। যে কিনা আমাদের ইতোমধ্যেই উপরহার দিয়েছে বাইশে শ্রাবণ, মিশর রহস্য ও চতুষ্কোণের মত মাস্টারপিস থ্রিলার, হেমলক সোসাইটির মত ডার্ক কমেডি এবং অটোগ্রাফ, জাতিস্মর ও রাজকাহিনীর মত মানসম্মত ড্রামা।
ঘটনাটি সৃজিতকে চরমভাবে প্রভাবিত করে এবং সে মানবতার এমন মহৎ দৃষ্টান্তটি পর্দায় উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছুদিন পরেই ইভানের মা নিকোল ওয়েলউডের সাথে যোগাযোগ করে ও চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি নেয়। ছেলের গল্পের অনুপ্রেরণায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা নির্মানের ব্যাপারে নিকোল বলেন, "তার(সৃজিত) সাথে আমার কথোপকথনের মাধ্যমেই আমি বুঝতে পারি যে সে সত্যিকার অর্থেই ইভারের ঘটনাটি দ্বারা উৎসাহিত হয়েছে এবং তার এমন স্বদিচ্ছাকে আমি স্বাগত জানাই", সিনেমার স্পেশাল স্ক্রীনিং-এ আমন্ত্রণ জানালে সেখানেও উপস্থিত ছিলেন নিকোল।



সৃজিতের একটা ব্যাপার ব্যাক্তিগতভাবে অনেক ভালো লেগেছে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে প্রায় সব চলচ্চিত্রগুলোতে প্রথমে ছোটকরে "based on true story" কিংবা "Inspired By True Events" লিখে দায়ভার সেরে ফেলে কিন্তু এই চলচ্চিত্রে একদম প্রথমেই ইভানের ঘটনাটি বড়করে লিখে হাইলাইট করে ও সিনেমার শেষে ইভানের ছবিসহ সম্মানসূচক ক্রেডিট দেয়া হয়েছে। মূল ঘটনাটিকে লুকিয়ে নিজের স্ক্রিপ্টকে পুরো ক্রেডিট দেয়ার কোন চেষ্টায় তার মধ্যে ছিলনা।
.
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ক্রিসমাস সবচেয়ে বড় উৎসব। যেমনটা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ইদ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য দুর্গা পুজো। সত্য ঘটনাটিকে কলকাতার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন ও বড়দিনের বদলে দুর্গা পুজোকে বেছে নিয়ে সিনেমার গল্প সাজানো হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডে বসবাস করা বাঙ্গালী হিমাদ্রি সেন(যীশু সেনগুপ্ত) হঠাৎ করে জানতে পারে তার আট বছর বয়সী মেয়ে উমা (সারা সেনগুপ্ত) মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। উমা তার বাবার কাছ থেকে সবসময় কলকাতার দুর্গা পুজোর বিশাল জাজজমকপূর্ণ উৎসবের কথা শোনে এসেছে, উমা সুইজারল্যান্ডে বড় হওয়ার সুবাদে কখনো কলকাতার পুজো উদযাপনের সৌভাগ্য হয়নি। দুর্গা পুজোর অনেক আগেই যখন হিমাদ্রি সংবাদটি শোনে তখন সে চেষ্টা করে কলকাতায় নির্ধারিত সময়ের পূর্বে নকল দুর্গা পুজো আয়োজন করে মেয়ের প্রবল ইচ্ছাটি পুড়ন করতে। অধিকাংশ সিনেমার ক্ষেত্রে পুরো গল্প কিংবা সিনেমার শেষ বলে দিলে সিনেমাটি দেখার ইচ্ছে চলে যায় বা স্পয়েল হয়ে যায়। এই সিনেমাটি সেক্ষেত্রে ভিন্ন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ গল্প বলে দিলেও দর্শকরা সিনেমাটির সম্পূর্ণ স্বাদ আহরণ করতে পারবে।



গত বছরে মুক্তি পাওয়া 'উমা' সিনেমাটি একটি সুন্দর সহজ-সরল গল্প। এখানে আপনি টানটান উত্তেজনা, টুইস্টে অবাক করে দেয়া, তুমুল নাটকীয়তা বা জটিলকিছু পাবেন না। খুব সিম্পল কিন্তু হৃদয়স্পর্শী কনসেপ্টের আদলে পুরো সিনেমার গল্প গড়ে উঠেছে। আর এই সারল্যতা সিনেমার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। সিনেমাটির প্রতি ভালোলাগা তৈরি হবে একজন বাবা ও তার পরিবারের মৃতপ্রায় মেয়ের শেষ ইচ্ছাটি পূরণ করতে চাওয়ার অপ্রাণ চেষ্টা দেখে, ভালোলাগা তৈরি হবে বাবা-মেয়ের মিষ্টি সম্পর্ক দেখে। আর আমাদের উপ মহাদেশের, বিশেষ করে বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে খুব সর্বজনীন একটি ব্যাপার হচ্ছে মায়ের প্রতি ছেলের ও বাবার প্রতি মেয়ের বেশি টান থাকা। তেমনি এই সিনেমায় বাবা-মেয়ের সম্পর্কের সৌন্দর্যও দেখানো হয়েছে দারুণভাবে।

এই সিনেমার কাস্টিং-এর ক্ষেত্রে সেই গতানুগতিক "বাঘা বাঘা সব অভিনেতা" লাইনটি বললেও মিথ্যা হবেনা। তাছাড়া সৃজিতের সিনেমার কাস্টিং বরাবরি মাল্টিকাস্ট ও গুণী অভিনয় শিল্পীরা থাকে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। যীশু সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, রুদ্রনীল ঘোষের মত গুণীদ অভিনয়শিল্পীদের পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্রে ও অতিথি চরিত্রে কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির আর্টিস্টরাও রয়েছে।
মজার তথ্য হচ্ছে হিমাদ্রি(যীশু) এর মেয়ে 'উমা' চরিত্রে যে শিশুটি অভিনয় করেছে সে বাস্তব জীবনেও যীশু সেনগুপ্তের মেয়ে সারা সেনগুপ্ত। মেয়েটির এডোরেবল অভিনয়ও সিনেমা উপভোগ করতে সাহায্য করবে। সৃজিতের অন্যান্য সিনেমার মত এই সিনেমাতেও সংগীতের দায়িত্বে ছিল অনুপম রয়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×