somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার জীবনের শেষ পিকনিক 'হেমলক সোসাইটি"

০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"শুনুন, আমি হেমলক সোসাইটি বলে একটি প্রতিষ্ঠান চালাই। আমরা মনে করি যদি মানুষকে মরতেই হয় তাহলে ভালো ভাবে মরা উচিত। দেখুন, আত্মহত্যা মোটেও সোজা কাজ নয়, অন্তত কঠিন কাজ। মরবো বললেই তো মরা যায়না। এর জন্য লাগে টেকনিক্যাল শিক্ষা, লাগে মনের জোর। আর এগুলো না থাকলেই অধিকাংশ সুইসাইড 'এটেমটেড সুইসাইড' হয়ে থেকে যায়। তারপর আসে পাড়াপড়শিদের জানাজানি, লজ্জা, ট্রমা, পুলিশ, এমন কি জেলও হতে পারে। আমাদের প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে সফলভাবে সুইসাইড করার যাবতীয় শিক্ষা প্রদান করে থাকে।"

কথা গুলো বলছিলেন হেমলক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ কর(পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়), যার প্রতিষ্ঠানে “কিভাবে সফলভাবে আত্মহত্যা করতে হয় তা হাতে কলমে শেখানো হয়। আর যাকে বলছিলেন তিনি মেঘনা সরকার(কোয়েল মল্লিক) নামের এক তরুণী, যে কিনা জীবনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হতাশায় ভুগছেন। মা মারা যাওয়ার পর সৎমাকে মেনে নিতে না পারা, বাবার সাথে সম্পর্কের দূরত্ব, ১৪ বছরের সম্পর্ক প্রতারণার কারনে ভেঙে যাওয়া সহ বিভিন্ন কারনে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। আর তখনই তাকে সার্বক্ষণিক ভাবে সাহায্যের হাত বাড়ান আনন্দ কর।

সিনেমা সম্পর্কিত আলোচনায় যখন কেও বলে, "আপনার সবচেয়ে প্রিয় সিনেমা গুলোর নাম বলুন তো", তখন অধিকাংশ সিনেমাপাগল মানুষের মধ্যেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। সেই সাদাকালো নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ থেকে শুরু করে বর্তমানের সিনেমাটিক টেকনোলজি ও আর্টিস্টিক উন্নয়ন পর্যন্ত এত এত মাস্টারপিসের ভিড়ে হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমার নাম বলা অনেকটা দুরূহ হয়ে পরে। তবুও তৎক্ষণাৎ কিছু সিনেমার নাম ভাবনায় আসে, যেই সিনেমা গুলো আমাদের মনে দাগ কেটেছে, ভালো লাগার অন্তিম মুহূর্তে নিয়েছে, উপভোগ্য সময় উপহার দিয়েছে, ভাবিয়েছে, বারংবার দেখার ইচ্ছে জাগিয়েছে এবং নিঃসন্দেহে প্রিয় চলচ্চিত্রের এমন তালিকা গুলো অনেক বিশেষ হয়ে থাকে। আমার ক্ষেত্রেও এমনি একটি সিনেমা 'হ্যামলক সোসাইটি"
প্রথমবার দেখার পর ভালো লাগাতেই সীমাবদ্ধ ছিল, যা ধীরেধীরে সিনেমাটির প্রতি অন্তিম ভালোলাগায় পরিণত হয়েছে। প্রতিবারই যেন সিনেমাটির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব খোঁজে পেয়েছি। সৃজিতের মত পরিচালকের যেখানে অটোগ্রাফ, বাইশে শ্রাবণ, জাতিস্মর, চতুষ্কোণ, রাজকাহিনী ,উমা, এক যে ছিল রাজা এর মত সিনেমা ঝুলিতে আছে, সেখানে হ্যামলক সোসাইটি সবচেয়ে প্রিয় হওয়াটা খানিকটা আদিখ্যেতা ও পক্ষপাতিত্বই বলা চলে। আমার কাছে সিনেমাটি কেন এত বিশেষ? প্রশ্নটির উত্তর দিতে আমাকে কক্সবাজারের মেরিন সিটি মেগা শপিং কমপ্লেক্সের বিজ্ঞাপনের মত উচু সূরে বলতে হবে,
"কি নেই এখানে? এএএএ!"



সিনেমাটি একাধারে রোমান্স, ডার্ক কমেডি, শিক্ষা, জীবনবোধ, পরিবার ও সম্পর্কের আদলে নির্মিত হয়েছে। দারুন একটি কনসেপ্টকে হিউমারের আদলে আমাদের পারিপার্শ্বিক জীবনগুলোর সাথে সম্পর্কিত করে নিদারুণ উপায়ে উপস্থাপনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সুইসাইডের মত একটি সেন্সেটিভ ইস্যুকেও সুক্ষ ও সচেতনভাবে সাজানো হয়েছে।
এই সিনেমার গানগুলোর কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। অনুপম রয়ের সূর ও কথায় জল ফড়িং, এই তো আমি চাই, এখন অনেক রাত, ফিরিয়ে দেয়ার গান এবং "আমার মতে" গানগুলো শুধু শ্রুতি মধুর নয়, অনেক কাব্যিকও বটে। গানের কথা গুলোকে সহজে কবিতা হিসেবে পরিচিতি দেয়া যাবে। আর অনুপম ও সৃজিত কমবিনেশন পরিক্ষিত_বরাবরি দারুন হয়ে থাকে।

পুরো সিনেমাটি মূলত দুজন অভিনয় শিল্পীকে ঘিরেই সাজানো হয়েছে। দুটি মুখ্য চরিত্র, প্লেবয় ও ডানপিটে স্বভাবের চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও মানসিক সঙ্কটে থাকা তরুণী চরিত্রে কোয়েল মল্লিক। পরমব্রত বর্তমানে কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা অভিনেতা, তার অভিনয় গুণে ইতোমধ্যেই সে দর্শক ও সমালোচকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। এই সিনেমাতেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি, নির্দ্বিধায় পরমব্রতের অন্যতম সেরা পার্ফরমেন্স। বিশেষ করে পুরো সিনেমায় তার ডায়লগ ডেলিভারি ছিল একদম টপ নচ!
কোয়েল মল্লিকের ক্ষেত্রে এই সিনেমাটি অনেকটা "ওয়ান্স ইন-এ লাইফটাইম" ধরনার। কোয়েল মল্লিক কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার ও তার কমফোর্ট জোন কমার্শিয়াল সিনেমা। সে সুবাদে এই সিনেমায় সৃজিত তাকে নিয়ে যে বাজি ধরেছিলেন তা অনেকটাই সফল হয়েছে।
তবে পরম ও কোয়েল ছাড়াও সিনেমাটিতে বিভিন্ন অতিথি চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, বরুন চন্দ, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, জিৎ, প্রিয়াঙ্কা সরকার ও রাজ চক্রবর্তীর মত তারকারা।



সিনেমা উপভোগ ও সার্প্রাইজিং এলিমেন্টস এর স্বার্থে প্লট নিয়ে আলোচনায় গেলাম না। তবে সিনেমাটি যেহেতু "সুইসাইড" নিয়ে নির্মিত, তখন তা নিয়ে সামান্য আলোচনা করায় যায়। প্রতি বছরই সোশাল মিডিয়া, টিভি বা পত্রিকা খুললেই দেখা যায় আত্মহননের খবর। জীবনের প্রতি চরম অনীহায় ভুগা মানুষগুলোর কাছে "ধনধান্যে পুষ্প ভরা, আমাদেরই বসুন্ধরা" তিক্ততায় পরিনত হওয়া সত্যি বিয়োগান্তক। তবে কোন ভাবেই সুইসাইডকে জাস্টিফাই করা যাবেনা। সুইসাইড কখনোই নিজ হত্যায় সীমাবদ্ধ থাকেনা, এটি একটি পুরো পরিবার, বন্ধুমহল, স্বজন এবং কিছু ক্ষেত্রে একটি সমাজ ও দেশকেও প্রভাবিত করে।
তবে কিছু বিষয়ে আমাদেরও সোচ্চার হতে হবে। আমাদের সমাজে মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা "মেন্টাল হেলথ" নিয়ে ততটা সচেতন নয়। উন্নয়নশীল দেশে হাজারো সমস্যা ও জীবনযুদ্ধে মানসিক সুস্থতা নিয়ে ভাবনাটা যেন অনেকটাই বিলাসিতা। কিন্তু আমরা ভুলে যাই রোগ বা সমস্যা মানেই ফিজিক্যাল নয়, মানসিক সুস্থতাও অনেক মুখ্য ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দিনশেষে এই মানসিক প্রশান্তিটায় ভালো থাকার মূল বাহন। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে অবহেলা করার কোন সুযোগ রাখা উচিত নয়। সুতরাং আমাদের আশেপাশের পরিবারের সদস্য, বন্ধু তথা কাছের মানুষদের ক্ষেত্রেও আমাদের সচেতন থেকে মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছে কিনা, কোন এবিউজ বা অন্যায় কিছু ঘটছে কিনা তাদের সাথে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে সতর্ক থেকে সাপোর্ট দিয়ে যেতে হবে। দিনশেষে ভালো থাকুক আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলো।


যাক নিম্নে সিনেমাটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দৃশ্য ও আমার পছন্দের উক্তি গুলো লিখে দিলাম। এই সিনেমার অনেক বড় একটি গুনাগুণ হচ্ছে "ডায়লগ", প্রতিটি দৃশ্য মনোযোগ সহকারে লক্ষ করলে দৃশ্য ও উক্তিগুলোর প্রতি এক অন্য রকম ভালো লাগা তৈরি হয়ে যাবে। আর আশা করি প্রথমবার সিনেমাটি দেখার সময়ে অনেককিছু এড়িয়ে গেলেও, এই উক্তিগুলো রিক্যাপ হিসেবে সাহায্য করবে।
___________________________________________

১৪ বছরের 'তুই' টাই ভালো ছিলো বুঝলি, 'তুমি" টা ঠিক পোষালো না।
.
একটা পয়েন্টের পর ছেলেমেয়েরও বুঝা উচিত তাদের বাবা মারাও একটা মানুষ,তাদের ইচ্ছে থাকতে পারে, তাদেরও একা লাগতে পারে।
.
আপনার ভয় নেই, আমি হিন্দি ছবির মত লণ্ডভণ্ড করে আপনার রুম মোটেও সার্চ করবোনা, অতে খোঁজতে আদোতে সমস্যা হয়।
.
-এই আমাকে বিয়ে করবেন? না সিরিয়াস্লি বলছি, সেই কোন ছোট্ট বেলা থেকেই ঠিক এমনটাই খোজছিলাম।
-এক্সকিউজ মি, হোয়াট?
-অহ সরি, মাই ফল্ট। আপনি তো আবার সুইসাইড করতে চলেছেন। প্ল্যান চ্যাটে ফুলশয্যা জমবেনা।
.
-আপনি কি জানেন আপনি একইসাথে চরিত্রহীন ও বাচাল?
-কেন এবং কেন?
.
আমি মানুষটা অনেকটা দিল চাহা তাহের সাইফ আলী খানের মত কিংবা ধরুন মেরে জীবন সাথির রাজেশ খান্নার মত। ভালোবাসতে ভালোবাসি।
.
এমন একজনকে খোজছি, যার সংগে ইন্টেলেকচুয়াল, ইমোশনাল ও কনজুগাল কম্পেটেবিলিটি থাকবে।
.
এমনিতেও আমাদের সিনেমায় গান না থাকলে চলে? মিউজিক ডিরেক্টররা খাবে কি?
.
না মশাই। আমি লোকটা খুব শহুরে , শহর ভালোবাসি। বিভূতিভূষণ পড়ি তবে এসিতে বসে। ফ্লাইঅভার আর ট্রাম লাইনের আমার ধানসিঁড়িটি, ঠিক মেরা গাও,মেরা দেশ টাইপ নয়।
.
আপনাকে কি একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি? না ভয় পাবেন না, চোখ ছোট করে, গলা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করবোনা মাকে মিস করেন কিনা, সেটা সবাই করে , অনেক সময় মা পাশে থাকলেও করে।
.
দেখুন আমি কিন্তু সিনেমার প্রথম রিলেই আপনাকে বলে দিয়েছি, একজন স্টেন্ডার্ট হিন্দি ছবির নায়কের যা যা গুণাবলী থাকা সম্ভব তার সবকটি আপনি আমার মধ্যে পাবেন। একমাত্র যে কোন ঘরে আমি দরজা দিয়ে ঢুকতেই পছন্দ করি, জানালা-টানালা দিয়ে প্রিফার করিনা।
.
হাসবেন না, হাসি জিনিস্টা আপনার ট্রেনিঙ্গের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। আপনাকে একটা ঘটনা বলি, একবার গোল্ডেন গেট ব্রিজে একটা সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছিল, তাতে লিখা ছিল, আমি এই ব্রিজটা দিয়ে হেটে যাচ্ছি, কেও যদি আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসে, তাহলে আমি আর এই ব্রিজ থেকে ঝাঁপাবো না। এবার আপনি ভেবে দেখুন, সত্যি কেও ভুল করে হলেও এনার দিকে তাকিয়ে একটি বার হেসে দিতো, কি অঘটন্টাইনা ঘটতো। একটা জলজন্ত মানুষ বেচে যেতো, একটা জীবন বেচে যতো। এই হাসি জিনিস্টা না খুবই বিপদজনক, ভেরি জেঞ্জারেস।
.
দেখুন, সুইসাইড ইজ এ সিরিয়াস ক্রাইম উইচ ইয়ু কমিট এগেইন্সট দোজ ইয়ু লীভ বিহাইন্ড, সো আই ওয়ান্ট এ জেনুয়েন স্টুডেন্ট, কোন দুঃখবিলাসী টিনেজ বিরহিণী নয়।
.
বাই দ্য ওয়ে, আপনার কি খবর বলুন তো, কোন খবর নেই, কোন দেখা সাক্ষাত নেই, নো পাত্তা। এমন করলে চলবে কি করে, আমি তো রাত্রে কোন মিষ্টি গানের সিকোয়েন্সই রাখতে পারছিনা।
.
আগের দিন একটু প্রেম চোপড়া হয়ে গিয়েছিলাম বলে রাগ করেছেন? রাগ করবেন না। শুধু চোপড়াটাও দেখলেন, প্রেমটা দেখলেন না?
.
তারপর, তো আপনার কোর্স তো শেষ, মরছেন কবে?




.__স্পয়লার এলার্ট এখান থেকে শুরু__

মরছেন না মানে কি? আপনার কি হল হঠাৎ করে , ভয় পেয়ে গেলেন? টেনশন খেয়ে গেলেন? মানে সবকিছু এত কাছ থেকে দেখে মিটে গেলো মরার সখ? হ্যাঁ? নাকি হঠাৎ করে বাবার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো? সেই বাবা যিনি সারা জীবন আপনাকে মুখ বুঝে ভালোবেসে গেছেন, শুধু আপনার মত বাজে বকতে পারেন না বলে তাকে আপনি সারাজীবন ভুল বুঝে এসেছেন। নাকি মায়ের কথা মনে পরলো? হ্যাঁ সেটাও হতে পারে। আপনার মা বেচে থাকলে কি খুশিটাই না হতেন, কি গর্বিতই না ভোগ করতেন আপনার ডেডবডি দেখে। ভাবতেন কি সুন্দর লড়াই করতে শিখেছে আমার মেয়ে। সেটাও না? এইবার বুঝতে পেরেছি, যতই রবি ঠাকুর কপচান না কেন, আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে একবার চলে গেলে সেই প্রভাতে আপনি নেই, সকল খেলার মধ্যে আপনি নেই, চিরদিনের সেই আপনি আর ফেরত আসতে পারবেন না , আপনি থাকবেন না আর এই সুন্দর পৃথিবীতে, আপনি পারবেন না সিদ্ধার্থ রায়ের গান শুনতে, আপনি পারবেন না গোল বাড়ির কষা মাংস খেতে, পারবেন না হলির দিন বাদুড়ের রঙ মেখে সবকিছু ভুলে গিয়ে পারার মুড়ে দাড়িয়ে পাগলের মত নাচতে, ভেনিসে গিয়ে গন্ডলায় চেপে "দো লাভসো কি হে" আর কখনো গাইতে পারবেন না, আফ্রিকার জঙ্গলে অন্ধকারের মধ্যে বসে টর্চের আলোয় চিতা বাঘের চোখ আর কোনদিন দেখতে পারবেন না, মশাই আপনি আর কোনদিন শচিন টেন্ডুল্কারের বেটিং দেখতে পারবেন না, কোনদিনই নয়।
.
আপনি মরছেন না ভালো কথা, দয়া করে বাহিরে গিয়ে আমাদের সোসাইটির কথা কাওকে বলবেন না। আমাদের কোন স্টুডেন্ট ৮০ বছর বয়সে কোলে নাতি পুতি নিয়ে বসে থাকলে সেটা আমাদের জন্য যথেষ্ট লজ্জার ব্যাপার। রেপুটেশনটা মাঠে মারা যাবে তো। এমনিতেই এখন যা কম্পিটেশন বেড়েছে, "চল মরি, কিছু করি ক্লাব, "এসোসিয়েশন অফ সিরিয়াসলি সুইসাইডাল স্টুডেন্টস" "বৈতরণী সংঘ"
.
-আরেকটা কারন আছে আমার ডিসিশন চেইঞ্জ করার
-এইরে কিছু মিস করে গেছি নাকি? ডিপাইটেন্ট লাইটের মমো? শাহরুখ খানের ছবি?
-না, আমি আপনার প্রেমে পরেছি!
-না মানে! প্রেমট্রেম মানে, এই দেখুন, এসবের আবার কি দরকার ছিল বলুন তো!
.
-আমি মেয়ে হয়ে আপনাকে প্রপোজ করছি আর আপনি বসে বসে ন্যাকামো করছেন?
-আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনি তো হাজার হোক আমার ক্লাইন্ট, তো একটা ওয়ার্কিং ইকুয়েশন আছে তো?
-ক্লাইন্ট যেহেতু বলছেন, ক্লাইন্ট সেটিস্ফেশনের ব্যাপারটাও মাথায় রাখা উচিত, তাই না?
.
-কিন্তু তাই বলে তিনদিনের আলাপে?
-সো হোয়াট? ১৪ বছরের চেনাশুনার পরেও মানুষকে আগন্তুক হয়ে যেতে দেখেছি। আর আলাপই বলুন বা পরিচয়, ও বারি হোনা চাহিয়ে, লাম্বি নেহি।
-বাহ! বাবুমশাই ফাটিয়ে দিয়েছেন!! কিন্তু বাবুমশাই, এতো ভালোবাসা ভালো নয়।
.
-আপনাকে আমার এইভাবে সেইভাবে সবভাবেই ভালো লাগে, কিন্তু...লিম্ফোসাইটোপেনিয়া
-শেষমেশ কাল হো না হো?
-আমার সিরিয়াস্লি লিম্ফোসাইটোপেনিয়া আছে, খুব লো-হোয়াইট ব্লাড করপারসেল কাউন্ট, ছয় মাস অন্তর ব্লাড ট্রান্সফিউশন লাগে, ডাক্তাররা বলে দিয়েছে, আর বড়জোর টেনে টুনে বছর দুয়েক।
.
-দিনের পর দিন, ঘন্টার পর ঘন্টা আপনি আমার সাথে নিলজ্জের মত ফ্লার্ট করে গিয়েছেন, জেনেও যে আমি ভনারেবল ছিলাম, ইয়ু টুক এডভান্টেজ অফ মি!
-অটা ট্রিটমেন্টের একটা অংশ। এট লিস্ট শুরুতে এটাই ছিল।
-মানে? কিসের ট্রিটমেন্ট?
-প্রো-লাইফ ট্রিটমেন্ট! মানুষকে আবার নতুন করে প্রেমে পরতে শেখানো, প্রেমে বিশ্বাস করতে শেখানো।
-এই প্রো-লাইফ ট্রিটমেন্টটা বাদ দিলেই পারতেন, এন্টিডোজটাই যথেষ্ট ছিলো।
-ট্রিটমেন্টটা করতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পরবো জানলে হয়তো তাই দিতাম।
.
-হ্যামলক সোসাইটি খুব কাছ থেকে মৃত্যুভয়কে দেখায়। আর বুঝায় যে অনেকের তুলনায় আমরা অনেকটা ভালো আছি। সুইসাইড কোন সলুয়েশন নয়, হতে পারে না।
-বাহ! ব্রিলিয়েন্ট, তা এই মহৎ কার্য সম্পন্ন করার হঠাৎ সখ হল কেন?
-অইযে! হঠাৎ করে ধরা পরলো, লিম্ফোসাইটোপেনিয়া। আমি হঠাৎ করে জানতে পারলাম আমার হাতে আর মাত্র বছর দুয়েক! হঠাৎ করে আমার কাছে জীবনের মূল্যটা অনেক বেড়ে গেলো।
.
-তাহলে এবার গিনিপিকের ছুটি তো?
-হু?, হ্যাঁ, তার কারন গিনিপিকের জন্য অনেকে অপেক্ষা করে বসে আছে। ততক্ষণ সাইন্টিস্ট বরং অপেক্ষা করুক শেষ মুহূর্ত অব্দি ল্যাব শাট ডাউন হবার, কেমন?
.
(হসপিটালের দৃশ্য)
-এই ট্রাজিক হিরো মার্কা ন্যাকামোটা কি না করলেই নয়?
-কোথায় ট্রাজিক হিরো মশাই। কতকিছু ভেবেছিলাম, একশোটা ভায়োলিন বাজবে! নাকে কানে সব টিউব গুজা থাকবে! তারপর এই দরজা দিয়ে আপনি ঢুকবেন স্লো মোশনে ছুটতে ছুটতে... তারপর আপনার কোলে মাথা রেখে আমি... ধুর!!, বেরসিকটা( ডাক্তার) বলে আরো নাকি বছরখানেক টেনে দেবো।
-আচ্ছা আপনি কি জানেন, আপনি একটি অত্যন্ত বদলোক?
-শুনুন না, বলছিলাম আপনাদের দেশের বাড়ি কি জঙ্গলে? সারাক্ষণ এমন মারমুখী হয়ে থাকেন কেন?
________________________________
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×