somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ- শৈশবে ফিরে যাও্য়া

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন ছোট ছিলাম তখন বড় হওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতাম আমারও বড় দের মতো দাড়িগোঁফ হবে, লোকে দেখলে সালাম দেবে।
এখন বড় হয়ে গেছি, কিন্তু ছোট হওয়ার জন্য আফসোস হয়, ছোটদের মতো গাল হবে, কেউ এসেই কোলে নিয়ে গালে চুমু খাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই যেন সাদমান সাহেবের মন টা খারাপ হয়ে গেলো। এখন উনার দাড়িগোঁফ আছে। বউ আছে, সন্তান আছে। একজন বড় মানুষের যে যে লক্ষণ থাকা দরকার সব ই উনার শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ফুটে উঠেছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আবার উনার ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। বাচ্ছাদের মতো খেলতে ইচ্ছা করছে। পাখির মতো কিচিরমিচির করতে ইচ্ছা করছে। এর ই মধ্যে স্ত্রী নাফিজা বেগম হঠাৎ বাজারের ব্যাগ সাদমান সাহেবের দিকে দিয়ে বললেন, বাজার শেষ, তাড়াতাড়ি বাজার থেকে খরচ নিয়ে আসো।
নাফিজা বেগম ব্যাগ দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন সাদমান সাহেব নাফিজা বেগম কে বললেন, নাফিজা আমাকে একটা চুমু দিবে?? গলায় জড়িয়ে দুই গালে যেমন টা বাচ্চাদের দেয়।
নাফিজা বেগম আশপাশ থাকিয়ে দেখলেন এই কথা টা কেউ শুনেছে কি না। তারপর সাদমান সাহেব কে এক ঝাটকি কথা শুনিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন। বুড়ো বয়সে ভিমরতি। আশ্চর্য এই সব পাগল-ছাগল ও কোথায় থেকে যে আমার কপালে এসে জুটছে আল্লাহ জানেন।
সাদমান সাহেব মন খারাপ করে ব্যাগ হাতে নিয়ে বাজারের দিকে যেতে লাগলেন। রাস্তায় দেখলেন ছোট ছোট বাচ্চারা বাবার আঙ্গুল ধরে পিঠে স্কুল ব্যাগ জুলিয়ে জুলিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলে ঘণ্টা দেয়ার সাথে সাথে আবার দৌড়ে বের হচ্ছে। এসব দেখে সাদমান সাহেবের ইচ্ছে হলো উনি আবার ছোট্ট বেলার স্কুল লাইফে ফিরে যেতে।
বাজার শেষ করে বাসায় সব খরচ নিয়ে গেলেন কিন্তু নাফিজা বেগম সব কিছু দেখে বললেন, তুমি রাঁধুনি মশলার প্যাকেট টি আনো নি কেন?? আমি এখন মাংস কিভাবে রাঁধবো। মেয়ে আর মেয়ের জামাই আসছে অথচ মাংস খাবে না এটা কেমন কথা।
সাদমান সাহেব চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।
নাফিজা বেগম তখন আবারো গলার স্বর উঁচু করে বললেন, কি হলো উত্তর দিচ্ছ না কেন??
সাদমান সাহেব তখন পাঞ্জাবির পকেট থেকে কয়েকটা লজেন্স জুস বের করে নাফিজা বেগমকে দেখালেন। নাফিজা বেগম বললেন, এই তুমি লজেন্স কার জন্য আনছো। আর লজেন্স আনার জন্য মশলার প্যাকেট টা আনো নি?? এই লজেন্স গুলো কি নাতি-নাতনী দের জন্য??
সাদমান সাহেব তখন একটি লজেন্স জুস খুলে মুখে দিয়ে বললেন, না এই লজেন্স গুলো আমার জন্য। নাজমা বেগম ফটাফট সাদমান সাহেবের কপালে হাত দিয়ে বললেন, এই তোমার কি হয়েছে?? জ্বর এসেছে নাকি উলটা পালটা কি করছ এসব??
সাদমান সাহেব কিছু না বলে আরেকটা লজেন্স মুখে দিয়ে চুপচাপ উনার রুমের দিকে চলে গেলেন।
রাতে উনার ছেলের রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছিলেন। উনার ছেলে আর উনার ছেলে বউ বসে বসে তখন গল্প করছিল। ছেলে দেখতে পেলো কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বিছানা থেকে দরজার বাইরে গিয়ে দেখলো বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। তুমি বাইরে কেন বাবা?? ভিতরে আসো বলে সাদমান সাহেব কে উনার ছেলে ভিতরে ঢুকালো।
সাদমান সাহেব- তকে আমি একটা কথা বলবো রাখবি??
ছেলে - বলো বাবা কি কথা....
সাদমান সাহেব - আমাকে তর ছেলের স্কুলে ভর্তি করাবি?? আমি আবার স্কুলে যাবো। বাচ্ছাদের মতো খেলবো.. লাফ-ঝাফ দিবো..তর ছেলের সাথে একসাথে স্কুলে যাবো আবার ফিরে আসবো।
ছেলে - বাবা তুমি ঠিক আছো ত?? এসব কি বলছো??
সাদমান সাহেব - বল্ করাবি ভর্তি??
ছেলে কোন উত্তর না দিয়ে মাকে ডাকলো, মা...মা...মা.....।
নাফিজা বেগম তাড়াতাড়ি এসে বললেন, কি হয়েছে বাবা এত জোরে ডাকছিলি কেন??
ছেলে - মা দেখনা বাবা কি সব উলটা পালটা কথা বলছে।
নাফিজা বেগম - কেন কি বলছে??
ছেলে - বাবা নাকি আবার আমার ছেলের সাথে কে.জি স্কুলে যাবে।
নাফিজা বেগম সাদমান সাহেব কে আড়ালে নিয়ে বললেন, কি হচ্ছে এসব। ছেলে আর ছেলের বউ এর সামনে এসব কি আবুল তাবুল কান্ড করছ?? লজ্জা শরম গেছে সব??
তোমাকে নিয়ে ত দেখছি আর পারা যাচ্ছে না।
নাফিজা বেগম ছেলে আর ছেলের বউ কে বললেন, আসলে তর বাবার শরীর টা ক'দিন ধরে ভাল যাচ্ছে না। তাই শরীর খারাপের ঘোরে এসব বলছে। তোমরা ঘুমাও। মনে মনে বললেন, ভাগ্যিস মেয়ে আর মেয়ের জামাইর রুমে গিয়ে এসব বলে নি। তাহলে ত সব মান-সম্মান রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াত।
তারপর সাদমান সাহেব কে নিয়ে নাফিজা বেগম ছেলের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
সাদমান সাহেবের মানসিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ইদানীং নাতি-নাতনীর বই, খাতা, কলম নিয়ে টানাটানি করছেন। সিগারেট ছেড়ে দিয়ে এখন লজেন্স খাচ্ছেন। বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখছেন। দেখে মনে হচ্ছে কোন মানসিক রোগী। তাছাড়া সাদমান সাহেবের কলিগ যারা ছিলেন, তাদের ও সাদমান সাহেব চিনতে পারছেন না। ছোট বাচ্ছা দেখলেই খেলনা নিয়ে খেলতে বসে যাচ্ছেন। সাদমান সাহেবের আচরণ পাড়া প্রতিবেশীদের মজা দিচ্ছে। সবাই নাটক সিনেমা দেখার মতো এখন সাদমান সাহেবের রোজকার কর্মকাণ্ড দেখছেন।
সবাই আর সহ্য করতে না পেরে উনাকে একজন সাইকোটিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো.
ডাক্তার সাহেব সাদমান সাহেবের সাথে চেম্বারে অনেকক্ষণ কথা বললেন তারপর উনার স্ত্রী আর ছেলে কে ডেকে পাঠিয়ে বললেন,
ডাক্তারঃ- আসলে উনার কোন রোগ নেই। উনি পাগল ও নন। যা হয়েছে তা হলো একাকীত্ব থেকে উনার মনের মধ্যে একটা সাইকো এফেক্ট পড়েছে। উনি দেখছেন যে একটা বাচ্ছার লাইফ উনার থেকে ভাল। একটা বাচ্ছা যেভাবে সবার সাথে কথা বলছে অথবা একটা বাচ্ছার সাথে একজন মানুষ যেভাবে কথা বলছে উনার সাথে তেমন করে কেউ কথা বলছে না..। নিজেকে সব সময় একা ভাবছেন। কিন্তু উনি একা থাকতে পারছেন না। আবার সবার সাথে কথা বলার সুযোগ ও পাচ্ছেন না যার ফলে উনি মানসিক দিক থেকে ভেঙ্গে পড়েছেন। দিন দিন শিশুর মতো হতে গিয়ে হয়ে যাচ্ছেন একজন সাইকো পেশেন্ট।
-"আমাদের এখন কি করতে হবে ডাক্তার সাহেব?? "
-" এসব পেশেন্টের সাথে বন্ধুসহিত আচরণ করলেই ৯০% রোগী সুস্থ বোধ করেন"
পরেরদিন সকালে শুক্রবারে.......
সাদমান সাহেব একা একা রুমে বসে আছেন। উনি খেয়াল করলেন উনার কাঁধে কে যেন হাত রেখেছে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলেন উনার ছেলে..
ছেলে - বাবা বাইরে যাবে না?? চলো আমরা সবাই আজ কানামাছি খেলবো।
সাদমান সাহেব ছেলের মুখের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছেন..
- কি হলো বাবা যাবে না?? তোমার নাতি-নাতনী মেয়ে, বৌমা সবাই বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে...।
কিছুক্ষণ পর সবাই সবাই বাইরে একসাথে কানামাছি খেলছে। বারান্দায় নাফিজা বেগম খেয়াল করছেন উনার স্বামীকে আর মানসিক রোগী বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সেই আগের স্বামী যে রোজ বিকেলে উনাকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যেতো। নাফিজা বেগমের শিশু জীবনে ফিরে যেতে মন না চাইলেও এই মুহূর্তে উনার ইচ্ছে হচ্ছে যৌবনে ফিরে যেতে যখন উনি উনার স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখতেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×