somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ ভালো লাগা - মন্দ লাগা

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ধরুন, সিন্ডারেলা যদি সে রাতে তার শতচ্ছিন্ন নোংরা পোষাক, ছেঁড়া জুতা নিয়ে পায়ে হেঁটে রাজপ্রাসাদে ঢোকার চেষ্টা করতো তাহলে কি তাকে রাজপ্রাসাদে ঢুকতে দেয়া হতো? আর যদি ঢুকতেও দেয়া হতো রাজপুত্র কি তার সাথে নাচতো? মনে করলাম, কোন কারণে রাজপুত্র একবার তার সাথে নাচলোও কিন্তু অমন করে পাগলের মত সারা রাজ্য সিন্ডারেলা কে খুঁজে ফিরতো? বাড়ী বাড়ী গিয়ে ছেঁড়া জুতার মাপ নিতো? এতটাও বোধহয় কল্পনা সাজে না! রাজপুত্র সিন্ডারেলার জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে দরজার কড়া নেড়েছিল কারণ সিন্ডারেলা ছিল তার কাছে রহস্যময়ী এক নারী। যে অসম্ভব সুন্দরী, প্রচন্ডমাত্রায় ঝলমলে ব্যক্তিত্বের অধিকারী কিন্তু যার মধ্যে ভণিতা নেই একটুও, আছে শিশুসুলভ দৌঁড়ে চলা মানসিকতা; শেষমুহুর্তে পেয়েও পেলাম না মনোভাব থেকেই কিন্তু রাজপুত্র পিছু নিয়েছিলো সিন্ডারেলার।

আহা! সুন্দর! সুন্দর! সুন্দর! - বলতে বলতে কি সিন্ডারেলার জীবনের আরেকটি দিক ভুলে যাই আমরা? যে জীবন একদম রঙহীন-অবহেলিত, একদমই অন্ধকার ঘরে আবদ্ধ; প্রচন্ড কষ্ট আর অপমানের আরেকটি জীবন ছিল সিন্ডারেলার। ঠিক মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।

মিথ-কল্পনা-অবাস্তব-জেন্ডারড যেভাবেই সিন্ডারেলার গল্পকে সংজ্ঞায়িত করি না কেন একটা বিষয় কিন্তু একদম সত্য। মানব চরিত্র-মানব জীবন! মানুষের একটা ভালো দিক যেমন আছে, ঠিক তার উল্টাদিকে একটা খারাপ দিকও কিন্তু আছে। একই সাথে হাসি যেমন আছে, অন্যদিকে কান্নাও কিন্তু আছে। খেয়াল করবেন, আমি খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনার একদম গভীরে যাচ্ছিঃ

একজন ভদ্রলোক আছেন যাকে আমি প্রচন্ড পছন্দ করি। কেন? কারণ, তিনি আমাকে নিয়মিত চকলেট দিতেন এবং এখনও প্রতিদিন তিনি আমাকে চকলেট দেন। এইজন্য উনি যদি কাউকে মেরেও আসেন, আমি বলিঃ নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে! না হলে উনি মারবেন কেন! কোনদিন উনি অন্যায়ভাবে মারতে পারেনই না! অন্যায় না হোক, ওনার আসলে ভুল হতে পারেই না! বিষয়টা এমন যে, আমাকে চকলেট দেয়ার কারণে ওনার কোন অপূর্ণতা আসলে অপূর্ণতাই নয় আমার কাছে। আবার তার স্ত্রী যাকে আমি প্রচন্ড অপছন্দ করি। কারণ, আন্টি আমাকে চকলেট দিতে চান না আমার দাঁতে পোকা হবে বলে। উনি যদি আমাকে হেসে বলেন, এসো মা! এই ঝাল তরকারিটা দিয়ে ভাত খেয়ে যাও! আমি চিন্তা করি, নির্ঘাত মহিলার কোন বদ মতলব আছে, নিশ্চয়ই ওনার তরকারিটা পঁচে যাচ্ছিলো তাই আমাকে খেতে দিচ্ছেন।

খেয়াল করে দেখুন, আমার যাকে ভালো লাগে তাকে একদম আগাগোড়া ভালো লাগে। সে আমাকে কাঁটা দিলেও বলবো, এই কাঁটার কলম করে আমি ফুল বানাবো! আবার যাকে মন্দ লাগে তাকে একদম আগাগোড়া মন্দই লাগে। সে আমাকে ফুল দিলেও আমি সেখানে কাঁটা খুঁজে বের করবো!

আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রেই কি এমন ঘটে? প্রশ্নটা করি নিজেদের?

খুব কাছে থেকে এমন কয়েকটা ঘটনা দেখছি এবং অনুভব করছি বলেই কথাগুলো বারবার মাথায় ঘুরছে।

আমার এক ফ্রেন্ড তার এক্স বয়ফ্রেন্ডের বর্তমান গার্লফ্রেন্ড-কে "কুত্তী" সম্বোধন ছাড়া কথা বলতে পারে না। কারণ কি? কারণ তার ধারণা ওই মেয়ের কারণে তার এক্স বয়ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। অথচ আমি ব্যক্তিগতভাবে বর্তমান গার্লফ্রেন্ডকেও চিনি এবং জানি যে সে কোনভাবেই এসবে জড়িত ছিল না। এখন সমস্যাটা কোথায়? আমার ভালো লাগায়? নাকি আমার ফ্রেন্ডের মন্দ লাগায়?
আবার কিছুদিন ধরে খেয়াল করছি, আমার এক আমলের বেস্টফ্রেন্ড অন্য একটি মেয়ের সাথে খুব খাতির জমিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে; এইজন্যে আমি ওই অন্য মেয়েটিকে একদম সহ্যই করতে পারছি না। সমস্যাটা কোথায়? আমার বেস্টফ্রেন্ডের ভালো লাগায়? নাকি আমার মন্দ লাগায়? আরেকটা ছোট্ট ঘটনা, আমার এক বন্ধু আমাদের এক গুরুজনকে একদমই পছন্দ করে না। কেন? কারণ, ওই গুরুজনকে তার বান্ধবী পছন্দ করে না। ওই গুরুজন কোন একদিন রাগের মাথায় তার বান্ধবীকে অপমান করে ফেলেছিল।

এখন এই ভালো লাগা - মন্দ লাগা বিষয়টাকে আমার নিজের কাছেই ধোঁয়াটে মনে হচ্ছে। লিখতে লিখতে কোথায় যে চলে এসেছি, নিজেই তাল খুঁজে পাচ্ছি না! যা-ই হোক সব কথার এক কথা হচ্ছে, আমরা কেমন যেন চরমপন্থী হয়ে যাচ্ছি। যাকে পছন্দ করি না, সে রাস্তায় থু থু ফেললে বলি, ব্যাটে নোংরা! আর যাকে পছন্দ করি সে রাস্তায় থু থু ফেললে বলি, আহা! মুখে থু থু জমালে ওর রোগ হবে যে! কি স্বাস্থ্যসচেতন, দেখোই না!

এই চরমপন্থী হতে গিয়ে আমরা সিন্ডারেলার কাহিনীটা ভুলে যাই যে, মানুষের জীবনে ভালো-মন্দ দুটি দিকই থাকে। ঠিক দু'টি দিক বলবো না; বলবো এক এর অধিক দিক থাকে। ওই গুরুজন যেমন অপমান করেছিলেন, পরে কিন্তু রাগ ভুলে এসে জড়িয়েও ধরেছিলেন; বর্তমান গার্লফ্রেন্ড যেমন আমার ফ্রেন্ডের কাছে "কুত্তী", সে কিন্তু তার নিজের বয়ফ্রেন্ডের কাছে একদম স্বর্গের পরী! আমি যেমন ওই অন্য মেয়েকে সহ্য করতে পারছি না, আমারই বেস্টফ্রেন্ড সারাদিন তার কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটছে। কেন? যেই মন্দটা আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা কি তাদের মধ্যে নেই? নাকি যেই ভালোটা অন্যরা দেখতে পাচ্ছে সেটা আসলে তাদের মধ্যে নেই?

কার মধ্যে কতখানি ভালো-মন্দ আছে বিচার করার আগে শুধু দু'টি ব্যাপার যদি নিজের মাথায় একদম ইঞ্জেক্ট করার মত ঢুকিয়ে নিতে পারতাম! জীবনটা অনেক সুন্দর হতো, অনেক ঝামেলা এবং ঝগড়াহীন হতো! আমরা মানুষ। এবং মানুষে মানুষে মায়া বিষয়টা থাকা একদম জরুরী বিষয়, কিন্তু সাথে সাথে যুক্তি থাকাটাও জরুরী। আরো একটি জরুরী বিষয় হচ্ছে সঠিক জায়গায় সঠিক উপায়ে কথাটা বলে যোগাযোগের একটা সুন্দর মাধ্যম তৈরি করা।

এক বড় ভাই বলছিলেন, হালিমা! তুই বড় বেশি সরাসরি কথা বলিস! বড় বেশি ভুল ধরিয়ে দিস! ভুল ধরানোর জন্যও খুব সুন্দর একটা উপায় আছে। একটা মানুষকে যখন দেখবি বলেও বুঝাতে পারছিস না, ওর ভালো কাজগুলোর প্রশংসাটা যদি আগে করে এরপর বলিস যে এই কাজটিও ওইভাবে করলে দেখবে কত ভালো হবে! ও এমনিতেই সরে আসবে ওর ভুল জায়গা থেকে। আর এমন না যে মাথামোটা মানুষ নেই দুনিয়াতে। কিন্তু যে বুঝবে না তাকে তো আর মেরে বোঝাতে পারবি না! তখন অন্য উপায় দেখে নিস বরং!

ভালো লাগা- মন্দ লাগা থাকবেই। তাই বলে কেউ হাঁচি দিলেও সেখানে দোষ ধরতে হবে এ কেমন কথা! ভুলে যাই কেন, আলোর ঠিক নীচেই অন্ধকার থাকে, আর অন্ধকারের উপরে আলো!

(নিজে মানতে চাই সবার আগে!)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×