somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেত্নী মেয়ের ডায়েরি থেকে... (১)

০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময়ে মা বলতো, এখন বুঝবে না, যেইদিন নিজের বিয়ে হবে, বাবা-মা হবে সেইদিন বুঝবে কথা কত মেপে মেপে বলতে হয়, কত বুঝে শুনে পা ফেলতে হয়, যত চিৎকার এখন করে নাও, যত উঁচু স্বরে কথা আমার সাথে বলে নাও। বিয়ের পর আর এসব পারবে না। তখন ফিক করে হেসে দিতাম। মা যে কি বলে না! আমি যেই পরিমাণ ঊড়নচণ্ডী! কেউ কিছু বললে, এক ঘুষিতে দাঁত ফেলে দিবো না! নিজের বাপকে মানি না! আবার অন্য ব্যাটায় আমাকে কথা শুনিয়ে যাবে! তাছাড়া আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমার এত্ত ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং! জীবনেও আমাকে মেপে মেপে চলতে হবে না।

বিয়ের আগে যখন ঊড়ে বেরাতাম তখন জীবনটাকে শেয়ার করতে হতো সবার সাথেই। বাবা-মা-ভাই-বোব-বয়ফ্রেন্ড-বন্ধু সবার সাথে। তখন এই ভাগাভাগিটা আমি করতে চাইতাম না। মনে হতো কেন আমার জীবনের ভাগ আমি অন্য আরেকজনকে দেবো! যখনই এই ভাগটা দিতে চাইতাম না আর আরেকজন জোর করে ভাগ বসাতে চাইতো তখনই লেগে যেত দ্বন্দ্ব, ঝগড়া। কেউকে কিচ্ছু বলতাম না, চুপচাপ রুমের দরজা বন্ধ করে পড়ে থাকতাম ছোট্ট সেই সার্ভেন্ট রুমটাতে। আর মা ক্যাটক্যাট করতেন, এই দমবন্ধ রুমের মধ্যে কি করিস! গরমে ঠান্ডা লেগে যাবে, বের হ! আমি একটা শব্দও করতাম না, চুপচাপ ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ধীরে ধীরে ছাদটা একদম মাথার কাছে নেমে আসতো, দম আরো বন্ধ হয়ে আসতো; একটা সময়ে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হত। তখন বের হয়ে যেতাম বাসা থেকে। মনে হতো দূরে কোথাও চলে যাই, কিন্তু সাহস হতো না। দৌঁড় থাকতো সেই ভার্সিটি পর্যন্তই। এরপর একটু দম ফিরে পেলে বাসায় ফিরতাম।

গত আগস্টে গেলাম শ্বশুড়বাড়ীতে। শ্বাশুড়িমা আদতে কিছু না বললেও, উঠেপড়ে লাগলেন আমাকে তার নিজের বাড়ীর আদলে গড়ে নিতে। যেমন গড়ে নিয়েছেন নিজেকে আর বড় বৌকে। একটা সময়ে দম বন্ধ বিষয়টা এত বেশি ফ্রিকোয়েন্টলি ঘটতে থাকলো যে তখন বাড়ী ছেড়ে পালানোরও উপায় ছিল না। যেই জীবনে পাঁচজন মানুষের খবরদারি সহ্য করতে পারতাম না, সেই জীবনে আরো নতুন পাঁচজন চলে আসলো ভাগ করে নিতে আমার সময়টাকে। গুটিইয়ে নিতে থাকলাম নিজেকে আস্তে আস্তে। এমন না যে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল, সেটা জীবনেও বন্ধ করা সম্ভব না আমার পক্ষে। তবে লেখালেখিটা বন্ধ হয়ে গেল, আশেপাশের লোকজন ফিসফিস করে বলা শুরু করলো, ওর কাজের প্রতি ডেডিকেশন কমে গেল! আমি চুপচাপ সব শুনতে থাকলাম।

গত জানুয়ারিতে স্বামীর কর্মস্থলের সুবিধার জন্য শ্বশুড়বাড়ী ছেড়ে দুইকামরার এক বাসায় এসে উঠলাম। আনাড়ী আমি একটু একটু করে সব জোড়া দেয়া শুরু করলাম, নিজের সংসার বানানো শুরু করলাম। কিন্তু ওই যে! ঊড়নচণ্ডী স্বভাব! সব ঠিকমতো করতে পারলাম না। সারাজীবন ডাবল বার্ডেন না নেয়ার প্রতিজ্ঞা করা আমি ট্রিপল বার্ডেন নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম। কাজ, সংসার, শ্বশুড়বাড়ী, মায়ের বাড়ী সব জায়গায় ভো ভো করে দৌঁড়াতে লাগলাম। এই দৌঁড়াদৌঁড়িতে কোথায় যেন সেই তেইশ বছরে উচ্ছ্বল আমি টা মরে গেল, সেখানে এসে ভর করলো ছাব্বিশ বছরের আমার ভূত (নাকি পেত্নী বলবো?)। ছটফট করা এই আমি সম্পর্কগুলোকে ঠিক সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি না এখনো, মেপে মেপে কথা বলতে পারি না এখনো, তাই ভেতরের ভূতটা আস্তে আস্তে বাড়তেই থাকে। কেউকেটাটা সরে গিয়ে কেঁচো জায়গা করে নিতে থাকে।

কেউ আবার শুনে ভাববেন না যে, আমার মায়ের বাড়ী-শ্বশুড়বাড়ী-স্বামী সবাই রাক্ষস! যখন সম্পর্কের ভূতটা ঘুমিয়ে থাকে আমার মধ্যে তখন এরা খুবই ভালো মানুষ আমার কাছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কয়েকটা মানুষের মধ্যে প্রথম কাতারে থাকবে এরা হয়তো। আমার দ্বন্দ্বটা নিজের মনের মধ্যে, মানিয়ে নেয়ার মধ্যে, সম্পর্কের পেত্নীগুলোর মধ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:০৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×