পলাশীর যুদ্ধের পুর্বেই রবার্ট ক্লাইভ মীর জাফরের সাথে গোপন চুক্তি করে; এই চুক্তির ১৩টি শর্তছিল;
চুক্তির নামা শুরুতে আল্লাহ ও রাসুল ( সাঃ) এর নামে কসম/ শপথ করছি যে, এই সন্ধির শর্তগুলো আমি আজীবন অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
রবার্ট ক্লাইভের গোপন চুক্তির ১২টি শর্ত ছিল মীর জাফরের জন্য অবশ্য পালনীয়-
১) নবাব সিরাজউদ্দৌলা ( মনসুর উল মূলক কুলি খাঁ বাহাদুর) এর সাথে শান্তিকালীন সময়ে যে সব সন্ধি শর্ত স্বীকৃত হয়েছে, তা আমি ( মীর জাফর) এতদ্বারা সে সব শর্ত যথা্যথ পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছি।
২) ইংরেজদের শত্রুরা আমার ও শত্রু, তা তারা এ দেশেরই হোক অথবা ইউরোপীয় যেখানেরই হোক।
৩) ফরাসিদের যে সব কুঠি ও সম্পত্তি সুবাহ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় রয়েছে,সেগুলো সবই ইংরেজদের দখলে থাকবে। ফরাসিদের অধিকৃত আর তিনটি সুবাহর কোনখানেই তাদের কে আমি বসতি স্হাপন করতে দেবনা।
4) নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কর্তৃ্ক কলকাতা দখল ও লুটপাটের ফলে ইংরেজদের যা ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ হিসাবে এবং কলকাতার নিরাপত্তা জন্য যে সেনাবাহিনী পালন করতে হয়, তার খরচ হিসাবে এক কোটি টাকা ইংরেজদেরকে প্রদান করবো।
৫) কলকাতার ইংরেজ বসতিকারীদের যে সম্পত্তি লুট হয়েছে, তার জন্য আমি তাদেরকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণ দেব।
৬) কলকাতার বিদেশী ভদ্রলোক, মুসলমান ও অন্যান্য অধিবাসীদের মালামাল লুট হওয়ার দরুন ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে।
৭) কলকাতার আর্মেনিয়ান অধিবাসীদের মালামাল লুট হওয়ায় যে ক্ষতি সাধিত হয়,তার জন্য ক্ষতিপূরন হিসাবে দেয়া হবে ৭ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। বিদেশী ইংরেজ, দেশী ভদ্রলোক, আর মুসলমাল অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ যে টাকা দেয়া হবে, তা এডমিরাল ও কর্ণেল ক্লাইভ (সাবুত জংবাহাদুর) ও কাউন্সিলের সদস্যরা ইচ্ছেমত বিতরণ করবেন।
৮) কলকাতার সীমানার চতুর্দিকে যে পরিখা আছে, তার ভেতরের জমি বিভিন্ন জমিদারের হলেও সেগুলো এবং পরিখার বাইরের ৬০০ গজ পর্যন্ত বিস্তৃত জমি ইংরেজদের কে আমি দান করবো।
৯) কলকাতার দক্ষিনে কুলপি পর্যন্ত জমি ইংরেজ কোম্পানির জমিদারীর শামিল হবে এবং এ এলাকার সকল কর্মচারী ইংরেজদের কথামত চলবে। তারা (কোম্পানি) অন্যান্য জমিদারের মত করেই খাজনা আদায় করবে।
১০) যখনই আমি ইংরেজদের সাহায্য চাইব, তখন তাদের সব খরচ বহন করতে আমি বাধ্য থাকবো।
১১) হুগলির নিচে গঙ্গা নদীর কাছাকাছি কোনখানে আমি নতুন দুর্গ স্হাপন করতে পারব না।
১২) তিনটি সুবাহর সরকারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে উপরোক্ত শর্তসমূহ অনুযায়ী আমি টাকা দিতে বাধ্য থাকব।
সাক্ষর ও মোহর / মীর মোহাম্মদ জাফর খাঁ বাহাদুর, বাদশা আলমগীরের খাদেম
তারিখঃ ১৫ রমজান, জলুস চতুর্থ বছর
১৩)এই বারটি শর্ত পরিপালনের অঙ্গীকার করলে এর সাথে যুক্ত করে কোম্পানীর পক্ষে গড কে সম্মুখে জেনে বাইবেল হাতে নিয়ে নিম্ন সাক্ষরকারীগন শপথ করছি যে, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে মীর জাফর খাঁ বাহাদুর কে সাহায্য করবো বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার সুবাহদারী অধিকার করতে। আমরা আরও সাহায্য করতে বাধ্য থাকবো, যখনই তিনি সব রকম শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য চাইবেন। তবে নবাব পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর উপরোক্ত শর্তসমূহ পালন করলেই আমরা এরূপ বাধ্য থাকবো।
-সাক্ষর/ এডমিরাল ও কর্ণেল ক্লাইভ
গভর্ণর ড্রেক ও ওয়াটসন।
উল্লেখ্য এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার তারিখটি হল পলাশীর যুদ্ধের ২০ দিন আগে। এই গোপন চুক্তির শর্তগুলো নেয়া হয়েছে-
- জানা -অজানায় পলাশীর যুদ্ধ ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা - আ শ ম বাবর আলী -গ্রন্হপ্রকাশ ২০১৩
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪