মানুষ নাকি আশরাফুল মাকলুকাত। মানে সেরা জীব। সবচেয়ে মর্যাদাবান। এই মানুষের ভেতর আত্মা আছে। বিবেক আছে। বুদ্ধি আছে। চিন্তা ভাবনা করা সক্ষমতা আছে। মানবিকতা আছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষমতা আছে। প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে বেঁচে থাকার সামর্থ্য আছে। মানুষই একমাত্র প্রাণী প্রকৃতির প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে করে আজও বহাল তবিয়তে আছে। অন্য প্রাণীকূল থেকে মানুষ আলাদা। মানুষের সক্ষমতা অনেক। আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা যে সকল প্রযুক্তির সাথে পরিচিত ছিলাম। আমাদের পরের প্রজন্ম আরো অনেক বেশি উদ্ভাবনী চিন্তার অধিকারি। কেননা তারা আরো অনেক বেশি বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। নতুন নতুন জ্ঞান, দক্ষতা, কারিগরি কৌশল কিংবা নিত্য ব্যবহার্য প্রযুক্তি তাদের হাতে বেশি। যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। মোবাইল প্রযুক্তির পর ইন্টারনেট, সাইবার টেকনোলজি এই সব বদলে যাওয়ার পশ্চাদে কাজ করেছে।এখনকার ছেলে মেয়েরা অনেক বেশি অগ্রগামী এই সব বিষয়ের চর্চা, ব্যবহারে। এখানেও মানুষের দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
কিন্তু আমাদের মানবিকতার উন্নতি কি হয়েছে? তিন দিন আগে আমার কাছে এক উচ্চ শিক্ষিত যুবক আসে। সে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। আমার কাছে আসার উদ্দেশ্য ছিল একটা সফটওয়ার নিয়ে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কথা বলতে। ভদ্রলোক উচ্চশিক্ষিত। সফটওয়ার সম্পর্কে জানে, বুঝে। এই বিষয়ে কথা বলতে বলতে বেশ কয়েকবার মুখে ইনশাল্লাহ, সুবাহানাল্লাহ উচ্চারণ করে। কথা শোনে অনেক ভাল লাগছিল। আমাদের সাথে তার কোম্পানীর ব্যবসায়িক সম্পর্ক। আমাদের কাছ বিদায় নেবার আগে সে যে কথাটি বলে তাই আজ এখানে লিখছিঃ ভাই গতকাল আমার বাবা মারা গিয়েছে!
আমি বললাম, তো আপনি আজ এখানে!! উনি কি বিদেশে মারা গিয়েছে?
ভদ্রলোক বললেন, না ঢাকায়।
আমি বললাম, আপনি কোথায় ছিলেন?
ভদ্রলোক বললেন, আমি চট্রগ্রামেই ছিলাম।
আমি বললাম, আপনি ঢাকায় যান নি?
উনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলল, না ভাই যেতে পারিনি। কাজে ছিলাম। আমার বাবার শিক্ষা হল সব সময় যেন কাজে থাকি। তাই ঢাকায় যাইনি। ভাবলাম আজকের মিটিংটা শেষ করে যাই।
আমি বললাম, তাহলে, জানাজা -দাফন কি হয়েছে।
উনি বলল, হ্যাঁ গতকালই হয়েছে। আমি ইমোতে সব দেখেছি। গত কয়েকদিন আগে বাবা দেখা হয়েছিল। গলায় ধরে কান্না কাঁটি করে এসেছি। উনি অসুস্থ ছিলেন।
আমার আর কিছু জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা হয়নি। উনি চলে গেলেন। আমি আমার রুমের দরাজার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি। আমার সামনে বসা ছিল আমারই আরেক কলিগ। উনার মুখের দিকে তাকালাম। উনি তাজ্জব হয়ে গেছে। কিছু বলার নেই। ভাবনার আছে। আমাদেরও সন্তান আছে। সারা জীবনের সঞ্চয় খরচ করে তাদের ভরনপোষণ শিক্ষা-দীক্ষার জন্য ব্যয় করছি; তারাও কি এইভাবে ইমো সংস্কৃতিতে বিকশিত হচ্ছে? না জানি সামনে আমাদের আর কি কি দেখতে হবে এবং শোনতে হবে?কিছু দিন আগে আমাদের নিজস্ব শিক্ষা সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানবিকতা কি হারিয়ে গেছে? পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব, ভরনপোষণ ইত্যকার বিষয়াবলীর কি কোন মূল্যই নাই?