একদিন হঠাৎ করেই শাহবাগে মিশুর সাথে দেখা। আমারে দেইখাই
এক মস্ত চিল্লানি মারলো। ভয় পাইয়া গেলাম। না জানি ওর
চিৎকারে বারডেমের সব ডায়াবেটিক প্যাশেন্টের মূত্র বিয়োগ
হয়ে যায় !!
অনেকদিন পর দেখা। দোস্ত আমারে পারলে প্রায় জড়ায়ে ধরে।
আমি তো একটু লাজুক আছি ! আবেগ লুকানোর জন্যই
কিনা কে জানে একটা সিগারেট ধরালাম।
অতঃপর দুইজন হাটতে হাটতে রমনার শান বাধানো এক
বেঞ্চিতে বসলাম। পাচ টাকার বাদাম কিনে মিশুরে বললাম "খুব
ইচ্ছে ছিলো কেউ বাদাম ফু দিয়া খাওয়াবে,খাওয়াবি?"। আবার
চিল্লানি। আর বেশি কিছু বলার সাহস পাইলাম না। এই সেই মিশু
যে স্কুলের করিডোরে কিছু বললেই পেটে ঘুসি মারতো। সেই
ব্যথা আজো টের পাই।
দুপুর হয়ে এলো। দুজন আবার হাটা শুরু করলাম। শাহবাগ,
কাটাবন,এলিফ্যান্ট রোড ধরে হাটছি। দুপাশে কাচ
ঘেরা দোকানের দরজা আয়না বানিয়ে মিশু মাঝে মাঝেই নিজের
চুল ঠিক করে নিচ্ছিলো। আমিও এক
ফাকে নিজেকে দেখে নিলাম। মুখটা কেমন শুকনো লাগছে।
বুঝলাম ক্ষুদা পেয়েছে। পেট শান্তির উদ্দেশ্যে নিরিবিলি নামের
এক রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। মনের মত খেয়ে আয়েস করে একটু
মৌরী চিবুচ্ছিলাম। ওয়েটার বিল নিয়ে এলো। পকেটে হাত
দিলাম। মানিব্যাগ উধাও!!!
মিশুর কাছেও যথেষ্ট টাকা নাই। বেচারির মুখের
দিকে তাকানো যায়না। আমিও বিব্রত। কি করে সেদিন বিল
দিয়েছিলাম তা নাইবা বলি।
তারপর অনেকদিন মিশুর সাথে দেখা নাই।
এই সেদিন বিপ্লুর সাথে নিউ মার্কেটে ঘুরছি। কে যেন কানের
কাছে মস্ত জোরে চিল্লান মারলো। "কোন শালিরে?"
শালি না নতুন বউ। আমাদের মিশু ! এতো হাই স্কেল ভোকাল
ইশ্বর কেবল মিশুরেই দিছে। দোস্ত আমার বিয়ে করেছে। জামাই
নিয়া শপিং করতে এসেছে। বেচারা দুলাভাই 'র জন্য মায়া লাগছে।
ইচ্ছে করছে এক কেজি তুলা কিনে ভাইরে আমার গিফট করি।
কানে গুজতে কাজে আসবে !
হায় ব্যস্ততার কারনে একসাথে চা খাওয়াও হলোনা।
ইচ্ছে ছিলো মিশুরে ডেকে বলি "এমন বৃষ্টির দিনে আয়
বৃষ্টিতে ভিজি আর গলা ছেড়ে চিল্লাই।" দুলাভাই পাছে মাইর
দেয় এই ভয়ে সাহস পাইলাম না।
আবার কবে দেখা হবে জানিনা। এমনি হুট-হাট কোথাও হয়তো ।
মিশু আগের মতই আছে। চঞ্চলা, চপলা এক জীবন্ত সাউন্ড
বক্সের মতো। শুধু সিংগেল থেকে ডাবল হয়েছে।
দোয়া করি দোস্তের ডাবল জীবন রিডাবল হোক !
চিল্লানিতে হুল্লোর তুলুক প্রতিটা মুহূর্ত।
সুখে থাক দোস্ত আমার