ফেসবুকের নিউজফিডে যখন দেখি কাদের মোল্লার ফাঁসিতে কেউ হাহাকার করছে, শহীদ হয়েছেন বলে বড় গলা করছে, তার আইনজীবি এবং সন্তান ন্যায়বিচার পায়নি বলে অভিযোগ করছে, স্ত্রী আঙুল দেখাচ্ছে তখন নতুন করে ভাবনা হয়। কারন এই সংখ্যাটা নিতান্ত কম না এবং এরা আমাদের সমাজের বাইরের কেউ না। আমরা স্বীকার করি বা না করি এরা আমাদের পাশের বাড়ীতেই থাকে, আপনার-আমার বন্ধুদেরই একজন, হয়তো স্বজন কিংবা প্রিয়জন।
এই রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনী একাত্তরে যা ক্ষতি করার তা তো করেছেই, সম্ভবত সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে গেছে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের মুল্যবোধের জায়গায়, স্বাধীন বাংলায় নব্য রাজাকারের জন্ম দিয়ে। যা সংখ্যায় একাত্তরের চেয়ে ঢেড় বেশী।
একজন রাজাকারের ফাঁসিতে আমি যতনা আনন্দিত তার চেয়ে বেশী আতংকিত এই প্রজন্মে জন্ম নেয়া এই সব রাজাকারের অনুসারীদের নিয়ে। যারা স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরেও মনে করে কাদের মোল্লা,গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ কোন অপরাধ করেনি। সম্পূর্ন রাজনৈতিক কারনে এই লাখ লাখ তরুন একাত্তরকে দেখে সম্পূর্ন ভিন্ন চোখে, এই সব স্বীকৃত রাজাকারদের দেখে একেবারে ভিন্ন দৃষ্টিতে।
বাংলাদেশ কোন আইনে এদের বিচার করবে ! স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তির বিচার চলছে, বিচার সম্ভব। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী মুল্যবোধের বিচার কী কোনদিন সম্ভব !
আমি দুঃখিত। একজন রাজাকারের ফাঁসিতে আমি অতটা উল্লসিত নই। আমি সেইদিন উল্লাস করবো যেইদিন বাংলাদেশে আর কোন রাজাকার জন্ম নেবে না। একজন রাজাকারের সন্তান তার বাবার মৃত্যুতে কাঁদবে, কিন্তু সেই সাথে লজ্জিত হবে দুঃখিত হবে যে তারা বাবা একজন রাজাকার ছিলো। গনতন্ত্রের নামে বাংলাদেশে আমরা কোন রাজাকার কিংবা রাজাকারের স্ত্রীর উদ্ধত আঙুল দেখতে চাইনা।
এক ব্যক্তি রাজাকারের দৈহিক ফাঁসিতেই হয়তো এর শুরু হলো,এক প্রজন্ম রাজাকারের ভ্রান্ত-নষ্ট-কলুষিত মুল্যবোধের মৃত্যুতে এর শেষ হোক।