বিএনপি বলছে জনগণ তাদের সাথে, আওয়ামী লীগ বলছে জনগণ তাদের সাথে রয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশে সবচে' গুরুত্বপূর্ণ অথচ অতি সহজ প্রশ্ন "জনগণ আসলে কার সাথে?" অপশনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মূখ্য হিসেবে বিবেচিত এখানে অন্যান্য দলগুলো গৌণ। এখানেও দেশের প্রধান দুই দলের মধ্যে রয়েছে মতৈক্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো দল-ই কোনো সাধারণ জনতাকে জিজ্ঞাসা করিনি তারা কার সাথে আছে অর্থাৎ কাকে সমর্থন করছে। বিএনপির সহিংস আন্দোলন না কি আওয়ামী লীগের ভোটার বিহীন নির্বাচন দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় থাকা? কোনটি চায় দেশের মানুষ? যদি নিরপেক্ষভাবে কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় তবে সে কোনো চিন্তা ও দ্বিধা ছাড়া অবলীলায় উত্তর দিবে, সহিংস আন্দোলন যেমন কাম্য নয় তেমনই ভোটাধিকার ছাড়া ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা সরকারও কাম্য নয়। অর্থাৎ জনগণের প্রধান ও একান্ত আকাঙ্ক্ষা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসা জনপ্রতিনিধি যাদের মূল উদ্দেশ্য হবে জনগণের কল্যাণ, দেশের সার্বিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, বেকার সমস্যার সমাধান, চাকরি ক্ষেত্রে দলীয়করণ বন্ধ করা, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন, অপরাধী যেই হোক না কেন তার শাস্তি নিশ্চিত করা একইসাথে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মারামারি, হানাহানি, বিচারবিহীন হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে তোলা। কিন্তু বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কোনো দল-ই এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। না বিএনপি সরকার, না আওয়ামী সরকার। মধ্যখান থেকে প্রতিবছর বহু শান্তিপ্রিয় সাধারণ লোক সহিংস আন্দোলনের নিচে চাপা পড়ে অকালে ঝরে পড়ছে পৃথিবীর বৃন্ত থেকে, বহু পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে, দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে তাদের নায্য অধিকার থেকে, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ দিন দিন অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো সরকারের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই, অতীতের সরকারেরও ছিলো না। কিন্তু জনগণের না চাওয়া সত্ত্বেও এগুলো প্রত্যেক সরকার(অতীত,বর্তমান) এ কাজগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছে যা দেশের মানুষকে প্রতিবার-ই হতাশ করেছে। এ জন্য প্রতিবার-ই তারা ভোট দিয়ে নতুন সরকার এনেছে। ভেবেছে নতুন সরকার অতীতের সবকিছু ভুলে জনগণের জন্য ও দেশের জন্য কাজ করবে। কিন্তু না তা হয়নি। প্রতিবার-ই তারা ক্ষমতায় এসে জনগণের কথা ভুলে নিজের পকেট ভারি করেছে সাথে সাথে একাধিক্রমে কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় সে চেষ্টাও করেছে। যা বর্তমান সরকারেও লক্ষণীয়!
যে কারণে আবারো শুরু হয়েছে জ্বালাও পোড়াও মারমার কাটকাট অবস্থা! চলছে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের পাশাপাশি লাগাতার হরতাল, পুড়ছে বাস, ট্রাক, আবালবৃদ্ধ, বনিতা, শিশু। কেউ এই আগুন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সাধারণ জনগণের মুখে মুখে উল্টো প্রশ্ন বিএনপি ও সরকারের কাছে এর শেষ কোথায়? কিন্তু কেউ বলতে সঠিক উত্তর দিতে পারছে না। চিরন্তন রীতিমতো একের দোষ অন্যের ওপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েই তারা ভবছে জনগণকে কী বোকাটায় না বানিয়েছি। বর্তমান চলিষ্ণু সহিংসতায় এপর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছ। এ থেকে শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি। সংলাপ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলা এ আন্দোলনকে আমলে না নিয়ে সরকার তা দমন করতে সচেষ্ট। আর আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আরো বেড়ে চলেছে। এতে আন্দোলন থামছে না বরং আরো বেগবান হয়েছে ও হচ্ছে। ফলে লাশের সংখ্যা দিন দিন সুউচ্চ পাহাড় অতিক্রম করার উপক্রম হয়েছ। অথচ সরকার সাধারণ জনতাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েও পদত্যাগ কিংবা আন্দোলন থামানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের আপামর জন সাধারণ! কাজে বের হতে না পেরে দিনমজুর শ্রেণিরা অভুক্ত দিনাতিপাত করছে। শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। তবুও সরকারের হুশ ফিরছে না। বাতাসে লাশের গন্ধ, চারিদিকে স্বজন হারানো আর্তনাদধ্বনি আর ভালো লাগে না। অতএব.........!
সরকার যদি মনে করে জনগণ তাদের সাথে আছে তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে অস্বীকার করছে কেন? জনগণ বিএনপির সাথে না কি সরকারের সাথে তা নির্বাচন দিলেই সত্যতা পাওয়া যাবে। এ নিয়ে দুদলকে বাগাড়ম্বর না করা অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করি কারণ জনগণ কাকে সমর্থন করবে তা জনগণ-ই নির্ধারণ করবে, কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা অনির্বাচিত সরকার নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬