somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. মুহম্মদ ইউনূস বনাম অকৃতজ্ঞ বাঙালি

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের কতিপয় বেশধারী মানুষ ড. ইউনুসকে সহ্য করতে পারে না। এসব নিন্দুকদের অভিযোগ ড. ইউনুস একজন সুদখোর এবং সুদখোর কখনও নোবেল পেতে পারে না। তাঁর নোবেল পাওয়া আমেরিকার চালবাজি এমন কথাও বলতে ভুল করে না। বাঙালি মন মাত্রই সন্দেহ প্রবণ। এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, সুদ খাওয়ার জন্য নয়, নোবেল বিজয়ের জন্য-ই ইউনুসকে এসব নিন্দুকেরা সহ্য করতে পারে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের অলিতে গলিতে গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে এনজিও সংস্থা গড়ে উঠেছে এবং উচ্চ সুদের বিনিময়ে জনগণকে টাকা লোন দিচ্ছে। এর মধ্যে ব্রাক, সুশীলন, আশা, উত্তরণ প্রভৃতি ছাড়াও এদেশের অলিতেগলিতে নামে বেনামে হাজার হাজার এনজিও আছে যারা প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে উধাও হয়ে যাচ্ছে। নিচের লিংক দেখলেই সহজে বোঝা যাবে Click This Link &sa=X&ei=ULnmVIjDIYu7ogTFtoLYDg&ved=0CAUQ_AUoAA এসব প্রতিষ্ঠান ও মালিকদেরকে কেউ কখনও শমালোচনা করে না, কাউকে করতেও দেখি না। কারণ এদের মালিকেরা কেউ এখনও সবচেয়ে সম্মানিত পুরষ্কার নোবেল জয় করতে পারেনি। যেদিন পারবে সেদিনও এদের শমালোচনায় বাঙালি মুখর হয়ে উঠবে। শুধু এনজিও সংস্থাগুলো নয়, ইসলামি ব্যাংক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বেসরকারি ব্যাংকের সবগুলোতে সুদের বিনিময়ে অর্থ লেনদেন হয়, হচ্ছে। কিন্তু এদের নিয়েও কেউ কিছু বলছে না কারণ এসব শমালোচনায় মুখর ব্যক্তিরা কোনো না কোনো ভাবে এসব সুদের কারবারের সাথে জড়িত। বর্তমানে ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর সুদের হার কমিয়ে ঋণের ওপর সুদের হার বাড়িয়ে ১৭ থেকে ২০ শতাংশ করেছে। নিচে লিঙ্ক Click This Link গ্রামীণ ব্যাংক পাঁচটি খাতে বা ক্যাটাগরিতে ঋণ দিয়ে থাকে এবং ক্যাটাগরি ভেদে সুদের হার ভিন্ন। গ্রামীণ ব্যাংক তাদের এক বিবৃতিতে জানায় তাদের সর্বোচ্চ সুদের হার ২০ শতাংশ। যা সরকার নির্ধারিত সুদের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। তবে ক্যাটাগরি ভেদে সুদের হার কমও আছে। তথ্য লিঙ্ক Click This Link

বাঙালি কখনও অন্যের ভালো যেমন কামনা করে না, তেমনই অন্যের সাফল্যও সহ্য করতে পারে না। এটি মানুষ হিশেবে নয়, বাঙালি হিশেবেই তার জন্মগত সমস্যা। যা ত্যাগ করা কখনই সম্ভব বলে আমি মনে করি না। গল্প দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি বাঙালি কেমন! জাহান্নামের দুটি গর্তের একটিতে ফেরেস্তা রাখা হয়েছে পাহারা দেওয়ার জন্য অন্যটিতে কোনো পাহারাদার নেই। জাহান্নাম দেখতে আসা একজন জান্নাতি এ অবস্থা দেখে কৌতূহল চেপে না রেখে প্রশ্ন করলেন, 'দুটি গর্তের একটিতে পাহাদার আছে কিন্তু অন্যটিতে নেই কেন?' তখন একজন উত্তর দিলেন, 'এখানে একটি গর্তের মধ্যে বাঙালিকে রাখা হয়েছে, অন্যটিতে অন্যসব জাতিকে রাখা হয়েছে। বাঙালির ওখানে পাহাদার লাগে না তাই দেওয়া হয়নি। আর অন্যসব জাতির জন্য পাহাদার আবশ্যক তা-ই রাখা হয়েছে। আগন্তুক মনে মনে ভাবলেন, পৃথিবীতে খারাপ লোকদের শায়েস্তা ও শাস্তি দিতেই পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী প্রভৃতি নিরাপত্তা বাহিনী রাখা হতো। এখানেও হয়তো ওই একই পদ্ধতির জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি আরো ভাবলেন বাঙালি এতো ভালো(!) যে এদের জন্য কোনো পাহাদার লাগে না। এরা বুঝি খুবই শান্তিপ্রিয় ও শৃঙ্খলবদ্ধ! কিন্তু ভেবে পাচ্ছে না এমন ভালো জাতি কীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হলো! দ্বিধান্বিত হয়ে পুনরায় প্রশ্ন করলেন, ব্যাপারটা খুলে বলবেন আমি বুঝতে পারছি না। তখন একজন প্রহরী বাঙালির গর্তের পাশে আগন্তুককে নিয়ে গেল। তিনি দেখতে পেলেন, নিচ থেকে যখনই একজন ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে তখন আর একজন গিয়ে পা টেনে ধরছে। যখন আর একজন ওপরে আসার চেষ্টা করছে তখন আর একজন এসে নিচ থেকে পা টেনে ধরছে। ফলশ্রুতিতে কেউ-ই ওপরে উঠতে পারছে না। সবাই একের পর এক চেষ্টা অব্যাহত রাখছে কিন্তু কেউ-ই সফল হতে পারছে না। এবার কিছু বলার আগেই পাহাদার আগন্তুককে অন্যজাতির গর্তের পাশে নিয়ে গেলেন। তখন তিনি দেখতে পেলেন, যখন একজন ওপরে ওঠার জন্য চেষ্টা করছে তখন নিচ থেকে অন্যরা ওপরে ওঠার জন্য সাহায্য করছে। আর পাহাদার তখন-ই ওই ব্যক্তিকে পুনরায় গর্তের মধ্যে নামিয়ে দিচ্ছেন। এবার পাহাদার মুখ খুললেন, এদের যখন কেউ গর্তের ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে তখন অন্যরা নিচ থেকে সাহায্য করছে। তারা জানে একজন উঠতে পারলে বাকিদেরও সে তুলে নিবে। কিন্তু বাঙালি একজন অন্যজনের ভালো যেমন দেখতে পারছে না তেমনই একে অপরের ওপর বিশ্বাস করতে পারছে না। ফলে যে অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে তা তো নিজের চোখে-ই দেখলেন।

এপর্যন্ত যে কয়জন বাঙালি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে তন্মধ্যে সাহিত্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অর্থনীতিতে অমর্ত্য সেন, শান্তিতে ড. মুহম্মদ ইউনূস। নামের পিছন দিক থেকে বিবেচনা করি, অধিকাংশ বাংলাদেশি বাঙালি ইউনূসের নোবেল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা কী? কথাটি সম্পূর্ণ সত্য কারণ তিনি দেশের কোনো শান্তিতে অবদান রাখতে পারেননি, শুধু শান্তি এনেছেন দুস্থ পরিবার গুলোতে কারণ তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে জামানত ছাড়াই কয়েক হাজার থেকে লাখ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছেন। অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে কী উন্নয়ন করেছে জানি না তবে ভারতের অর্থনীতি এখনো অনেক ধীর গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যের পুরোধা রবীন্দ্রনাথকে এখানে টেনে আনা ভুল হচ্ছে তবু বাধ্য হয়ে শুধু এতটুকু বলবো, রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর লেখা দিয়ে ছাত্রদের বলা হতো ভুল খুঁজে বের করো! ভুলের মাত্রা বেশি কি কম তারা সঠিক তথ্য জানাতে পারবেন। তবে এই কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-ই সর্বপ্রথম নোবেল পাওয়ার পর ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। অথচ নোবেল পাওয়ার পর সবাই তাঁর সম্মানার্থে সমালোচনা করাও অসমীচীন মনে করলো। কারণ পশ্চিম বাংলার জনগণ রবীন্দ্রনাথকে মূল্য দিতে শিখেছে। আজ যদি ইউনূস বাংলাদেশি হিসেবে নোবেল না পেতো তবে এ প্রশ্ন পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। ইউনূসের কপালের দুর্ভাগ্যের জন্য নয়, আমি সত্যি খুশি যে রবীন্দ্রনাথ ও মি. সেন বাংলাদেশে জন্ম নেননি। যদি নিতেন তবে তাঁদের পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়েও হয়তো প্রশ্ন তুলতেন এসব সমালোচক। অন্তত এই অভাগারা জাতির সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন। উল্লেখ্য, কতিপয় সুজ্ঞানী বাঙালি দ্বারা ড. মুহম্মদ ইউনূস সমালোচিত হচ্ছেন অথচ বহির্বিশ্বের সবাই তাঁকে যোগ্য সম্মান দিয়েছে, এখনও দিচ্ছে, ভবিষ্যতেও দিবে। শুধু আমরা-ই তাঁকে চিনলাম না। এটি জাতি হিসেবে বাঙালির-ই ব্যর্থতা, ইউনূসের নয়। সারা বিশ্ব চিনলো, শুধু স্বজাতি ছাড়া। আমরা আসলেই অকৃতজ্ঞ। কারণ যোগ্যকে আমরা কখনই সম্মান দেই না, দিতে জানি না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:১৬
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×