বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ও অবদান রেখেছেন এটি তখনই বুঝবেন যখন প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই সরকারের পেটোয়া(পুলিশ) বাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত ধবলধোলায় খাবেন! পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস আজ আমাদের স্বভাবজাত হয়ে উঠেছে। চাকরি থেকে শুরু করে শিক্ষার সর্বোস্তরে অর্থাৎ পিএসসি,জেএসসি,এসএসসি,এইচএসসি পর্যন্ত আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। হয়তো শিক্ষার জয়গান ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি অভিনব পদ্ধতি এই প্রশ্নফাঁস। কিংবা মেধা যাচাইয়ের সঠিক পদ্ধতি হিসেবে বর্তমান সরকারের কাছে প্রশ্নফাঁস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে! জাতি হিসেবে আমরাও তা অতি আনন্দের সহিত উপভোগ করছি। কারণ এসব বিষয় বাঙালিকে চলচিত্র ধ্বংসের যুগেও ব্যাপক বিনোদন দিতে সক্ষম হচ্ছে। বাঙালি বিনোদন প্রিয় জাতি। তাই নিজদের পতনের মধ্যেও বিনোদন খুঁজে আনন্দের প্রশান্তি লাভ করতে চায়। জাতি হিসেবে ধন্য বাঙালি।
'শিক্ষক জাতির বিবেক' এটি শুধুমাত্র নীতিকথা। আসলে একথার কোনো ভিত্তি নেই। 'বুদ্ধিজীবী জাতির পথপ্রদর্শক' এটিও নীতিকথা এর কোনো ভিত্তি নেই। বাঙালি হিসেবে আমাদের একটি সুনাম রয়েছে, নিজের ভাগটা আমরা ভালই বুঝি ও ভাগের অংশটা আদায় করতে যা যা করা প্রয়োজন তাই তাই করে থাকি। জমি জায়গা ভাগের সময়ও নিজ অংশে কম পড়ায় অনেক সন্তান মা-বাবার মাথায় লাঠি মারতেও কুণ্ঠিত হয় না। সম্প্রতি পে-স্কেল নিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন করতে দেখেছি। কারণ সর্বশেষ পে-স্কেলে নিজেদের ভাগটা কম পড়েছে। নিজেদের ভাগ আদায় করতে তারা ক্লাস পরীক্ষা পর্যন্ত বর্জন করেছে। একথাও ঠিক যে শিক্ষকদের আন্দোলন যুক্তিসঙ্গত কিন্তু যে শিক্ষকরা জাতির বিবেক তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ বুঝলেও জাতির ভবিষ্যৎ বুঝবে না বোঝার চেষ্টাও করবে না তা কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা জাতির বিবেক হয়েও শুধুমাত্র নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে, জাতির নয় তাদের কাছে স্বার্থপরতা ছাড়া আপনার শেখার আর কিছু আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না। নিজেদের ভাগে কম পড়াই তারা আন্দোলন করেছে কিন্তু এ পর্যন্ত কোন শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে আন্দোলন দূরে থাক প্রতিবাদ করেছে এমন কোনো কিছুই চোখে পড়েনি বা কানে আসেনি। প্রশ্নফাঁস একটি জাতির মেরুদণ্ডকে গুঁড়িয়ে দেয় আর জাতির বিবেক হিসেবে এ বিষয়ে শিক্ষকদের মৌনতা তাদের বিবেকশূন্যতা প্রমাণ করে। এই অপকর্মের বিরুদ্ধে নিরবতা জাতির সাথে বেঈমানি করার পর্যায়ে উপনীত। আর জাতির সাথে ধোঁকা দেয়া এসব শিক্ষকদের কাছে শিক্ষাগ্রহণও প্রশ্নবিদ্ধ।
একটি সত্য গল্প বললে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, ইমাম আবু হানিফা (র.) যখন হাদিস সংগ্রহ করতে লাগলেন তখন প্রচুর হাদিস জানা এক সাহাবির ছেলের কাছে গেলেন হাদিস জানতে। তিনি সাহাবির সন্তানের কাছে সব খুলে বললে সাহাবির সন্তান বলেন, আপনি একটু অপেক্ষা করেন আমি ঘোড়াটা বেঁধে নিই। হাতে পাত্র নিয়ে তিনি ঘোড়াকে ডেকে কাছে আসতেই ঘোড়াকে বাঁধলেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) দেখলেন তার হাতের পাত্রে কিছুই নেই অর্থাৎ শূন্য। ধোঁকা দিয়ে তিনি ঘোড়াকে বশ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) তার কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ না করেই ফিরে এলেন। কারণ যে একটি অবোধ পশুকে ধোঁকা দিতে পারে তার কাছে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া নৎসি ব্যাপারমাত্র।