ব্রিটিশ সরকার তার শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তবে তা কিছু কিছু অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ব্রিটিশ সরকারের "Divide and rule"অর্থাৎ ভাগ করো, শাসন করো নীতি বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। চারিদিকে আজ বিভেদের জাল, মানুষের মধ্যে মধুর সম্পর্কের টানাপড়েন, প্রতিটি ঘরে তনুদের বাঁচার জন্য শেষ আকুতির আত্মচিৎকার, নিজ ভূমিতে বিতাড়িত যেন পরবাসী মানুষের ধুকতে থাকা মর্মবেদনা, ক্ষমতাধর মানুষের চোখ রাঙানি মাড়িয়ে ভালো সমাজ ব্যবস্থা উপহার সত্যি দুঃসাধ্য।
৯ম স্থানীয় সরকার নির্বাচন অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার স্থায়ী বন্দোবস্ত যেমন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করতে যাচ্ছে তেমনি রাজনীতি দিয়ে মানুষের সম্পর্কের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরি হয়েছে। এখানে সব ক্ষমতা একক মালিকানাধীন! অর্থনীতি'র ভাষায়, একক মালিকানাভুক্ত সবকিছুই ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর। তবে রাজনীতিতে এটি আরো বেশি ক্ষতিকর এবং ভয়ংকর। জনগণের কল্যাণ একমাত্র গণতন্ত্র দ্বারা সম্ভব কারণ এখানেই যে সবার অধিকার সমান। যা বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। জেনিংসের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য, "If there is no opposition, there is no democracy."
প্রতিটি মানুষের চিন্তা-চেতনা, আদর্শিক দিক, বৈশিষ্ট্য কখনো এক হয় না। যা প্রকৃতি প্রদত্ত। জন্মলগ্ন থেকে মানুষ এমন স্বভাব বহন করে আসছে। তাই তো রুশো বলেন, Man was born free, and everywhere he is in chains. আমাদের রাজনীতিকদের ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ও পরের পরিস্থিতিতেও এই সূত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান, শওকত হয়ে শফিক রেহমানকে আটক করে সরকার কীসের গণতন্ত্র কার গণতন্ত্র দেখাতে চাচ্ছেন? না কি '৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন, আগের মতো ভুল না করে নিখুঁত সাফল্যের উদ্দেশ্য নিয়েই এবার সংসদে পাশ না করেই সরকার সেদিকেই হাটছেন? এ প্রশ্ন বিষয়ে বলতে পারি, "To be or not to be,that is the question." কোথায় যেন পড়েছিলাম, "Brevity is the soul of wit." তেমনি আমরা বলতে পারি, মুক্ত মতাদর্শ লেখার মাধ্যমে প্রকাশই হলো সংবাদিকতার প্রাণ। হোক সেটি পক্ষের কিংবা বিপক্ষের। সত্য তথ্য-উপাত্ত দ্বারা কোন বিষয় উপস্থাপন করা এবং অন্যদের জানানো একজন সাংবাদিকের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। একইসাথে নৈতিক দায়িত্বও। এই আদর্শ বজায় রেখে সাংবাদিকতার রশি কেউ সামনে টেনে নিতে চায়লে তা অন্যায় ও অপরাধ নয়। বরং দেশমাতার কাছে দায়বদ্ধ থেকেই এমন সত্য উচ্চারণ করা সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের কাজ।
গণতন্ত্র মানে একার সিদ্ধান্ত কিংবা মতামত নয়। অথচ বর্তমানে এই রীতিই প্রচল পেয়ে গেছে। যা দেশের সচেতন ও যুক্তিবিদ মানুষের কাছে কাম্য হতে পারে না। সরকারের কুক্ষিগত ক্ষমতা ও তার যথেচ্ছাচারিতা ব্যবহার অনাগত ভবিষ্যতের অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে। সরকারের এমন অনাহূত ভাবনার ও ক্ষমতাবল থেকে বেরিয়ে জনগণ বান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া উচিত।
২২.০৪.২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬