somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ঠিক কোন জিনিষগুলি আমাদের আধুনিক মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে? -২

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

চল্লিশ হাজার বছর আগে বরফ যুগের শেষপ্রান্তে ফ্রান্স এবং স্পেনের বিভিন্ন যায়গায় যেখানে আগে নিয়ান্ডার্থালদের বসবাস ছিল সেখানে পুরোপুরি আধুনিক মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যেতে শুরু করল। এই আধুনিক মানুষ গুলোকে আমরা ক্রো ম্যাগনন হিসাবে জানি। এদের ছিল উন্নত ধরণের হাতিয়ার যা দিয়ে বড় এবং বিপজ্জ্বনক প্রাণী শিকার সম্ভব ছিল। যেমন বার্বড হারপুণ, ডার্টস, বর্শা, এবং তীর ধনুক। আগের চাইতে উন্নত হাতিয়ারের কারণে ক্রো ম্যাগননরা নতুন নতুন পরিবেশ দখল করে নিতে থাকে এবং ছড়িয়ে পরতে থাকে নতুন এবং পুরনো পৃথিবীর বিভিন্ন যায়গায়। ৫০ হাজার বছর আগে মানুষ প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ায় পৌছায়। ২০ হাজার বছর আগে উত্তর রাশিয়া এবং সাইবেরিয়ায় এবং সেখান থেকেই ১১ হাজার বছর আগে উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছে যায় মানুষ। ইউরোপে ক্রো ম্যাগননরা এবং তাদের সমসাময়িকরা অনেক দূর দূরান্ত পর্যন্ত হাতিয়ার এবং কখনও কখনও অর্থহীন গয়না তৈরির রসদ সংগ্রহের জন্য ভ্রমণ করত। ক্রো ম্যাগননদের যে সমস্ত শৈল্পিক নিদর্শন উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে গুহাচিত্র, বিশেষ ধরণের ভাস্কর্য (Bas relief), গলার হার, লকেট এবং সিরামিকের ভাস্কর্য অন্যতম। নিয়ান্ডার্থালরা যেখানে মাত্র চল্লিশ বছর বাঁচত সেখানে ক্রো ম্যাগননরা বেঁচে থাকত ৬০ বছর পর্যন্ত। আর এটা ছিল ক্রো ম্যাগননদের উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীল উন্নয়নের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রাক শিক্ষা যুগের মানুষদের জন্য এরকম একজন বা দুজন বয়স্ক মানুষ ছিল অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন। এরকম একজন মানুষই হতে পারে মৃত্যু এবং বেঁচে থাকার মধ্যকার পার্থক্য। ক্রো ম্যাগননদের নিয়ান্ডার্থালদের তুলনায় বিশ বছরের মত বেশী বেঁচে থাকাটা নিঃসন্দেহে তাদের উত্থানের পেছনে বড়সড় অবদান রেখেছিল।



["আজকে যেভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জ্ঞানের পরিমাণ কয়েক গুণ হয়ে যাচ্ছে তখন কিন্তু তেমনটি কোনভাবেই হতে পারতো না। কারণ তখন কোন মানুষের জীবন দিয়ে অর্জিত সকল জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা সীমাবদ্ধ থাকতো কেবলই তার সন্তান-সন্ততিদের মাঝে, তাও যদি সে মৃত্যুর সময় পূর্ণবয়স্ক সন্তান রেখে যেতে পারে। জ্ঞানের এই ঘনীভবনই হয়ত আদিম যুগে মানুষের ধীর অগ্রগতির প্রধান কারণ। ভাষা, শিল্প এবং লিখনপদ্ধতি আবিষ্কারের পর মানুষ খুব দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করে। বলা যায় মানুষের জ্ঞানের অগ্রগতি এবং জ্ঞান সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার অগ্রগতি একে অপরের পরিপূরক। তো যখন জ্ঞানের কোন সংরক্ষণ পদ্ধতি ছিল না তখন সামষ্টিক প্রগতির একমাত্র উপায় ছিল সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব পূর্ব প্রজন্মের জ্ঞানের ধারা অব্যাহত রাখা। কিন্তু এতেও বাধ সেধেছিল মানুষের স্বল্পায়ু। আনুমানিক ৪০ হাজার বছর পূর্বে মানুষের আয়ু হঠাৎ এত বেড়ে যাওয়ার কারণ দুই ধরণের হতে পারে: জৈবিক বা সাংস্কৃতিক। জৈবিক কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, হয়ত দৈহিকভাবে আধুনিক মানুষের মধ্যে যেসব জিনগত বৈশিষ্ট্য প্রভাব বিস্তার করেছিল তারই একটি দীর্ঘায়ু। গবেষকরা নিয়ানডার্থাল ও আধুনিক মানুষের জীবাশ্মের উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। এবং দেখেছেন এদের বৃসানুপাত ১ এর বেশ কাছাকাছি যা ইউরোপের নিয়ান্ডার্থালদের (০.৩৯) চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু ইউরোপের আধুনিক মানুষদের (২.০৮) চেয়ে বেশ কম। এই ফলাফল বিস্ময়কর। দৈহিক দিক দিয়ে পশ্চিম এশীয়দের সাথে ইউরোপীয়দের তেমন কোন পার্থক্য না থাকা সত্ত্বেও তাদের বৃসানুপাত যথেষ্ট আলাদা। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, জৈবিক কারণে আয়ু বাড়েনি। জৈবিক কারণে বাড়লে তো পশ্চিম এশিয়ার অপেক্ষাকৃত আদিম মানুষদের বৃসানুপাতও আধুনিক ইউরোপীয়দের সমান হওয়ার কথা। এই পরীক্ষায় আরও মজার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যেমন, পশ্চিম এশিয়ার নিয়ান্ডার্থালদের বৃদ্ধ জনসংখ্যা ইউরোপীয় নিয়ান্ডার্থালদের চেয়ে বেশি। এর কারণও সহজবোধ্য- বরফ যুগের ইউরোপের তুলনায় উষ্ণ আবহাওয়ার পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করা ছিল সহজ, এজন্যই সেখানে মানুষ বেশি বয়স পর্যন্ত টিকে থাকতো। কিন্তু সেক্ষেত্রে ইউরোপের আধুনিক মানুষদের আয়ু পশ্চিম এশিয়ার আধুনিক মানুষদের চেয়ে এত বেশি হওয়াটা আরও বিস্ময়কর হয়ে ওঠে। ইউরোপে পরিবেশ এত প্রতিকূলে থাকার পরও সেখানকার আধুনিক মানুষদের জীবনে এমন কি ঘটেছিল যা দৈহিকভাবে অন্য অঞ্চলের মানুষদের মত হওয়া সত্ত্বেও তাদের আয়ু এত বাড়িয়ে দিয়েছিল? বোঝাই যাচ্ছে কারণটি জৈবিক নয় বরং সাংস্কৃতিক। দেহের তাড়না নয় বরং সাংস্কৃতিক চেতনাই আয়ু বৃদ্ধির কারণ। সংস্কৃতি যে ৪০ হাজার বছর পূর্ব থেকেই মানব জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছিল তা বোধকরি এর আগে এতটা স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা সম্ভব ছিল না। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের আয়ু বৃদ্ধির কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে আমরা প্রথমবারের মত বুঝতে পারব কুল-বৃদ্ধাদের সেবা ও প্রজ্ঞা এবং সংস্কৃতির বিকাশ ছিল একে অপরের কার্যকারণ।



আমরা যদি টাইম মেশিনে করে ৪০ হাজার বছর আগে ফিরে যেতে পারতাম তবে আশ্চর্য হলেও দেখতে পেতাম ক্রো ম্যাগননরা ঠিক আমাদের মতই আধুনিক মানুষ যারা কিনা বিমান চালানোর বিদ্যা শিখতে সক্ষম। কিন্তু তারা শুধুই পাথর এবং হাঁড়ের তৈরি হাতিয়ার বানিয়েছে। কেন? কারণ আর কোন ধরণের হাতিয়ার তখনও আবিষ্কার হয়নি, তাই। ঐ টুকুই আবিষ্কৃত হয়েছিল তাদের শিখবার জন্য। কিন্তু ৬০ হাজার বছর আগে আমাদের দৈহিক কাঠামোতে একটি ম্যাজিক্যাল টুইস্ট যোগ হয় আর সেই টুইস্টের কারণেই সৃজনশীল আধুনিক মানুষেরা নিকট প্রাচ্য থেকে পশ্চিমে দিকে ইউরোপে ছড়িয়ে পরে এবং নিয়ান্ডার্থালদের অপসারণ করে। ২০ লক্ষ বছর আগে প্রথম-মানুষের বেশ কয়েকটি শাখা পাশাপাশি অবস্থান করেছিল। তারপর এক শেকডাউনে তা একটি মাত্র শাখায় নেমে আসে। সেরকমই আরেকটি শেকডাউন ঘটেছিল ৬০ হাজার বছর আগে। পরবর্তী সময়ে এবং আজকের আমরা সবাই সেই শেকডাউনে জয়ীদের বংশধর। কি ছিল সেই অর্জন যা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল?



উত্তরটা হল যৌগিক (complex) ভাষায় কথা বলতে পারার জন্য শারীরিক কাঠামো। শিম্পাঞ্জী, গরিলা এমনকি বানরেরাও কথ্য ভাষার উপর নির্ভরশীল না এমন সাংকেতিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান করতে সক্ষম। প্রাইমেটরা সংকেত এবং কম্পিউটার (শেখানো) কি'র ব্যবহার ছাড়াও শব্দকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করতে সক্ষম। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ভেরভেট বানরদের প্রতীকী ভাব বিনিময় করার জন্য একটা প্রাকৃতিক ফর্ম আচে যা তারা মুখ দিয়ে চাপা ঘোঁতঘোঁত (Grunt) শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে। কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন চাপা শব্দের দ্বারা চিতাবাঘ, ঈগল, কিংবা সাপ বুঝিয়ে থাকে। ভিকি নামের একটি শিশু শিম্পাঞ্জী সর্বসাকুল্যে চারটি শব্দ বলতে শিখেছিল। শব্দ চারটি হল “papa”, “mama”, “cup”, এবং “up”। ভিকি ঠিক কথা বলত না বরং শব্দগুলো বলত নিঃশ্বাস ছাড়ার মত করে। শব্দের সাহায্যে এই সাংকেতিক ভাষায় ভাব বিনিময়ের সক্ষমতা সত্যেও প্রাইমেটরা কেন তাদের নিজস্ব যৌগিক ভাষার উদ্ভব ঘটাতে সক্ষম হয়নি? উত্তরটা জড়িত আছে তিনটি জিনিষের সাথে - আমাদের জিহ্বা, স্বরযন্ত্র, এবং এদের সাথে সংযুক্ত পেশি যা আমাদের উচ্চারিত শব্দের উপর নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়।

শিম্পাঞ্জীরা শারীরিক ভাবেই আমরা যে সমস্ত স্বরবর্ণ ব্যবহার করি সেগুলোর মধ্য থেকে বেশিরভাগই উচ্চারণ করতে অক্ষম। আমরা যদি অল্প কিছু সংখ্যক স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জন বর্ণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতাম তবে আমাদের শব্দভাণ্ডারও অনেক সীমিত হত। যেমন এই লেখার যেকোনো একটি অনুচ্ছেদের "অ" এবং "ই" ঠিক রেখে যদি অন্য স্বরবর্ণ গুলোকে এই দুটি স্বরবর্ণের একটিতে পরিবর্তন করা হয় তবে এবং "ক", "ড", "ল", এবং "স" ব্যঞ্জন বর্ণগুলোকে ঠিক রেখে বাকী বর্ণগুলোকে যদি এই চারটি ব্যঞ্জন বর্ণের যে কোন একটিতে পরিবর্তিত করা হয় তবে সেই অনুচ্ছেদটি কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব হবে না বলেই ধরে নেয়া যাতে পারে। শারীরিক কাঠামোর ছোট্ট একটি পরিবর্তন যা আমাদের কথা বলাকে সম্ভব করেছিল এবং যার ফলশ্রুতিতে আমাদের আচরণে একটি বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তা খুব সহজেই আমরা অনুধাবন করতে পারি। ভাষার সাহায্যে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই আমরা ভাব আদান-প্রদান করতে পারি। "চার নাম্বার গাছটা পার হয়েই ডানে মোড় নিয়ে পুরুষ হরিণটাকে লাল রঙের বড় পাথরটার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে আসবে -- ঐখানে আমি লুকিয়ে থাকব এবং হরিণটা আসা মাত্রই বর্শা দিয়ে গেঁথে ফেলব।" ভাষা ছাড়া এই বার্তাটি কোন ভাবেই আরেকজনকে বোঝানো সম্ভব না। ভাষা ছাড়া দুজন আদি মানুষের পক্ষে কিভাবে আরও উন্নত হাতিয়ার বানানো যায় অথবা একটি চিত্রের মানে কি হতে পারে সেটা আলোচনা করে বের করা সম্ভব না। এমনকি ভাষা ছাড়া একজন আদিম মানুষের পক্ষে নিজে নিজেই কিভাবে আরও ভাল হাতিয়ার বানানো যায় সেটা ভেবে বের করাও খুবই কষ্টকর হওয়ার কথা।

একটা কথা বলে রাখা দরকার, যে মুহুর্তে আমাদের জিনে পরিব্যাপ্তি হয়েছিল যা আমাদের জিহ্বা এবং স্বরযন্ত্রে পরিবর্তন এনেছিল ঠিক সেই মূহুর্তেই "গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড" শুরু হয়েছিল এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। আজকে আমরা ভাষার যে নির্মিতিকে (structure) নিখুঁত হিসাবে মেনে নিয়েছি সঠিক দৈহিক কাঠামো সত্যেও অবধারিতভাবেই ভাষার সেই নির্মিতিকে দাঁড় করাতে আধুনিক মানুষের হাজার হাজার বছর সময় লেগেছে।

২০০১ সালে জার্মানির লিপজিগের ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের আণবিক জিনতত্ববিদ এসভ্যাস্টে পাবো এবং তার সহকর্মীরা আবিষ্কার করেন যে মানুষের দেহে FOXP2 নামে একটা জিন আছে যা কিনা আমাদের কথাবলা এবং ভাষার ব্যবহারের ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই জিনটির বিবর্তন হয়েছে ২ লক্ষ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্সদের আবির্ভাবের পর। লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল গেশুইন্ড এর গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারছি যে FOXP2 এর যে ভার্শনটা মানুষের মধ্যে আছে সেটাতে শিম্পাঞ্জীদের ভার্শনটা থেকে দুটো ভিন্ন এমাইনো এসিড আছে। এই ভিন্ন ভার্শনের FOXP2 মানুষের এবং শিম্পাঞ্জীর জিনে এবং মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের প্রভাব ফেলে।

UCLA and the Technion, Israel's Institute of Technology এর বিজ্ঞানীরা ২১ আগস্ট, ২০১২ Nature Communications এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখিয়েছেন কিভাবে আমাদের মস্তিষ্কের কোষে আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিটি স্বরবর্ণের উচ্চারণের সংকেত আবদ্ধ করা থাকে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে মস্তিষ্কের যে দুটি অঞ্চল কথা বলা এবং স্বরবর্ণের সাথে ওতপ্রোতভাবে সেগুলো হল সুপিরিয়র টেম্পোরাল জাইরাস এবং মিডিয়াল ফ্রন্টাল লোবের একটি অঞ্চল। মানুষের বাচন ক্ষমতা প্রজাতি-নির্দিষ্ট দৈহিক কাঠামোর সাথে সম্পর্কিত। এই কাঠামোর উদ্ভব হয়েছে অন্ননালীর উপরে অবস্থিত গহ্বরে জিহ্বার অবনমনের ফলে। বাচন ক্ষমতার জন্য আরও প্রয়োজন এমন একটি মস্তিষ্কের যা বাধাহীন ভাবে সঞ্চালক পেশির সীমিত সংখ্যক ভঙ্গিকে বস্তুত:পক্ষে অসীম সংখ্যক শব্দে বা বাক্যে পুনঃ বিন্যস্ত করতে সক্ষম। শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সূক্ষ্ম শব্দ তৈরি করতে সক্ষম এবং একইসাথে শব্দ তৈরি এবং উপলব্ধি করার কাজকে সহজ করে তোলা বাগ যন্ত্রের উপরে অবস্থিত কণ্ঠনালীর বর্ধিত অংশটি অনুপস্থিত। এছাড়াও শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে বিদ্যমান নির্দিষ্ট ভোকালাইজেশনের শাব্দিক বৈষম্যের পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম মস্তিষ্ক নেই। মানুষের কথা বলা এবং ভাষার শুরুটা সম্ভবত হয়েছিল হাঁটতে এবং দৌড়াতে শেখার সময় থেকেই। কিন্তু পুরোপুরিভাবে কথা বলতে পারার মত দৈহিক কাঠামো প্রথমবারের মত পাওয়া যায় ঊর্ধ্ব প্যালিওলিথিক যুগে, ৫০ হাজার বছর আগে। নিয়ান্ডার্থাল এবং এর আগের যুগের মানুষদের মধ্যে যা অনুপস্থিত। এটা পরিষ্কার যে স্নায়বিক সক্ষমতা যা মানুষকে কথা বলতে সাহায্য করে তা বেঁচে থাকা অন্যান্য নিকট আত্মীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অনুপস্থিত। মানুষের কথা বলতে পারার জন্য পুনর্বিন্যস্ত করার সক্ষমতার জন্য যে স্নায়বিক সার্কিটের দরকার হয় তা শিম্পাঞ্জি এবং অন্যান্য প্রাইমেটদের মধ্যে নেই।

আমরা ধরেই নিতে পারি যে যখন থেকে কণ্ঠনালীর কারণে আমরা শব্দকে খুব সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি তখন থেকেই আমাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার ক্রম উন্নতি ছিল শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। কথা বলতে শুরু করাটাই ছিল আমাদের মুক্তির শুরু। কিন্তু তারপরও কথা থাকে। কথা বলতে শুরু করার পরেও কেন এত বছর সময় লেগেছিল লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে কিংবা পার্থেনন তৈরি করতে? কারণ, লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার কিংবা পার্থেনন তৈরি করাটা ছিল হাজার হাজার বছরের সম্মিলিত উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের আগে পর্যন্ত মানুষের সংস্কৃতির উন্নয়ন হয়েছে খুবই ধীর গতিতে - শামুকের গতিতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে। কিন্তু গ্রেট লিপ পরবর্তী সময়ে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন আর শুধুমাত্র জেনেটিক পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল হয়ে রইল না। খুব ছোট একটি দৈহিক কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে গত ৪০-৫০ হাজার বছরে মানুষের মধ্যে যে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে তা এর আগের ২০ লক্ষ বছরেও হয়নি। নিয়ান্ডারথালদের সময়ে কোন ভিনগ্রহ বাসী যদি পৃথিবীতে আসত তবে তার কাছে মানুষ কোন বিশেষ প্রাণী হিসাবে বিবেচিত কিনা সন্দেহ। খুব বেশী হলে তারা মানুষকে বিভার কিংবা বাওয়ার পাখীর মত অদ্ভুত আচরণ করতে সক্ষম একটি প্রজাতি হিসাবেই গণ্য করত। তবে তারা হয়ত কল্পনাও করতে সক্ষম হত না যে খুব শীঘ্রই এই প্রাণীটি পৃথিবীর বুকে জীবনের ইতিহাসে প্রথম প্রাণী হিসাবে মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচণের দ্বার প্রান্তে এসে উপস্থিত হবে।


আগের পর্বঃ বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ঠিক কোন জিনিষগুলি আমাদের আধুনিক মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে? - ১

তথ্যসূত্র:

1. The Third Chimpanzee : The Evolution and Future of the Human Animal By Jared M. Diamond
2. How Man Began – Time Magazine March, 1994
3. Origins of Modern Humans: Multiregional or Out of Africa? – By Donald Johanson
4.What Makes us Different? By MICHAEL D. LEMONICK

5. মানুষের আয়ুষ্কালের বিবর্তন - (বিবর্তন উইকি স্পেস ডট কম)
6. Evolution of Human Brain By Ralph Holloway
7. Evolutionary Genetics: Is brain evolution still continuing in modern humans?
8. Brain's Code for Pronouncing Vowels Uncovered:
9. The Evolution of Human Speech - Its Anatomical and Neural Bases by Philip Lieberman; Brown University (Providence, RI)
10. Evolutionary Increase in Size of the Human Brain Explained:
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:১৫
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×