তালকে তিল তিলকে তাল বানানো রটনার শিকার মেয়েটি অপবাদের কষ্ট ভুলবে কেমন করে?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমার চাচাতো বোন,বয়সে আমারা দুজন প্রায় সমান। তার বিয়ে হয়েছে ৪ বছর আগে। দুটি ছেলে সন্তান আছে। স্বামী সন্তান নিয়ে বেশ ভালভাবেই দিনাতিপাত করছে। তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা অনেক দিন ধরেই ভাবছি লিখব, আজ লিখলাম এবং শেয়ার করলাম, উদ্দেশ্য গুজব সম্পর্কে সবাইকে একটি সতর্ক বার্তা দেওয়া। আল্লাহ্ তায়ালার নিকট তাওফীক কামনা করছি।
সাত আট বছর আগে একদিন তার মায়ের সাথে কোনো নিয়ে বাদানুবাদ হয়,মা মেয়ে দুজনের মেজাজ প্রচন্ড গরম, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার মা হাতের ঝারু দিয়ে তার গায়ে আঘাত করে, এতে সে ক্ষিপ্ত হয় এবং ঘর থেকে বের হয়ে যায়,কিন্তু কখন কিভাবে ঘর থেকে বের হয় কেউ বলতে পারে না!
চাচি ভেবেছে,বরাবরের মতই রাগ করে হয়ত ঘরে শুয়ে আছে,সন্ধার পরেও যখন ঘরের ভেতর তাকে পাওয়া গেলো না, এমন কি বাড়িতে কারও ঘরেও খোঁজ মেলে না, তখন অজানা শঙ্কায় চাচীর বুকে মোচড় দিয়ে উঠে, ‘মেয়েটা তবে কোথায় গেলো?’ সারা গ্রাম,আত্মীয় স্বজন, সবার বাড়ীতে খোঁজ লাগিয়েও কোনো হদিস পাওয়া গেলো না। চাচীর দুশ্চিন্তা ক্রমশঃ বাড়তির দিকে,ভয়ে মুখ পাংশু বর্ণ ধারণ করলো,কারণ আগেই বলেছি চাচাতো মেজাজ বেতালা খারাপ, এইসব কখন কি দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তা আগাম বলা যায় না, মেয়েটা কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসলনাতো!
মুহূর্তের মধ্যে খবরটি রাষ্ট্র হয়ে যায়,মানুষের মুখ দিয়ে খৈ ফুটতে শুরু করে,তালকে তিল তিলকে তাল করার মতো একটি ইস্যু পাওয়া গেলো। কেও বলল,’এতো বড় মেয়ে কোথায় যাবে,আরে দূর তোরা যতো কথাই বলিস, পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে,গ্রামের মান সম্মান সব গেলো’, কেও বলল, ‘কেও তুলে নিয়ে গেছে, তারপর মেরে ফেলেছে’, কেও বলল, ‘সন্ধ্যা বেলায় রাস্তায় একা পেয়ে জিনেরা নিয়ে গেছে, বিয়ে করার জন্য’। এই ভাবে চলতে থাকে তাদের মুখরোচক ধারণাপ্রসুত গাল গল্প।
কোথাও না পেয়ে ধরনা সবশেষে ধরনা দেয় দরবেশ,কবিরাজের কাছে। কবিরাজরা চাচাতো সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে যেভাবে বর্ণনা দিলোঃ
এক কবিরাজ বলল, “সে আর এখন মাটিতে নেই,পরীরা তাকে নিয়ে আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে,আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,মেয়েটির শরীর ক্লান্ত,মুখ দিয়ে লালা পড়ছে,ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। মেয়েটিকে ফিরে পাবার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ, তবে মেয়েটির পরিবার যদি চায়,আমি আমার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে মাটিতে নামিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারি”।
অন্য এক কবিরাজ,”একটি পুরুষ জিন তাকে বিয়ে করতে চায়,সন্ধায় রাস্তায় একা পেয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়, এবং আমাদের বলেছে মেয়েটিকে সে বিয়ে করবে। বেশি দূরে নয়,বাড়ির আশে পাশেই তাকে নিয়ে জ্বিনেরা ঘুরা ঘুরি করছে”।
আরেক কবিরাজ বলল,”প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে,তারা বিয়ে করে অনেক দূরে অবস্থান করছে, আপাতত বাড়ি আসছে না, যখন অভাবে পড়বে, তখন মা বাবার পায়ের উপর এসে পড়বে”।
চাচি আমায় ডেকে নিয়ে বলল,বাবা,জীবনে কখনও কবিরাজের কাছে যাইনি,বিপদে পড়লে মানুষের ইমান হালকা হয়ে যায়,তুমিও একটু কোনো কবিরাজের কাছে গিয়ে দেখনা,সন্ধান পাওয়া যায় কিনা।
পরের সন্ধায় আমার ঘরের পিছনে জ্যাঠাত ভাই দেখতে পেলেন,চাচাতো বোনের মতো কেও বসে কাঁদছে, কাছে যেতেই কুকুর হয়ে পালিয়ে যায়। অদ্ভুত ব্যপার! মানুষ কুকুর হয়ে যাওয়া।শুনে সবাই কান্না কাটি শুরু করল।
এরই মাঝে বাড়ীতে এসে উপস্থিত হল এক ভাগ্নি,সে এমন এক খবর জানায়, শুনে সবাই সবাই থ হয়ে যায়, মুহুর্তেই সবার মুখে লাগাম পড়ে যায়,কুকুর হয়ে যাওয়া,আকাশে পরীর সাথে ঘুরে বেড়ানো,জ্বিনের সাথে বিয়ে,পালিয়ে বিয়ে সম্পন্ন,সকল গুজবের ডাল পালা লজ্জায় সংকুচিত হয়ে আসে লজ্জাবতী লতার মতো!
আসল ঘটনা হল,রাগ করে সোজা পাশের গ্রামে তার বান্ধবীর বাসায় চলে যায়। ভাগ্নি তাকে দেখেছে,কথাও বলেছে। ভাগ্নি তখন জানতোনা,তার খালাম্মা বাড়ি থেকে না বলে এসেছে।
মানুষের একটা প্রবণতা আছে, কোন কিছু শুনেই মন্তব্য করে বসা,ঘটনার সত্যতা যাচাই করার কোনো রকম চেষ্টা না করে শুধু শুধু গীবত পরনিন্দায় মেতে ওঠা,যা কখনো উচিৎ নয়। শুধুমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে কারও বিরুদ্ধে দোষ বলে কয়ে বেড়ানো নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। এইসব থেকে থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য একান্তই জরুরী।
চাচাতো বোনটি বাড়ি ফিরে আসে,স্বাভাবিক জীবন যাপন করে বটে,আরোপিত অপবাদগুলো মন থেকে সহজে মুছে ফেলতে পারেনা,ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে যায়,চাপা কষ্ট বয়ে বেড়ায়, মাথায় ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্ন কেন কিছু না করেও এতোগুলো অপবাদ বয়ে বেড়াচ্ছি?
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?
আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজীব নূর কোথায়?
আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন