আল্লাহ নিরাকার নন,তাঁর আকার আছে। তিনি শুনেন,দেখেন এবং কথা বলেন।তাঁর হাত,পা,চেহারা চোখ ইত্যাদি রয়েছে। তবে তাঁর সাথে সৃষ্টির কোনো কিছুই তুলনীয় নয়।আল্লাহ তা'আলা বলেন,"কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়,তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।"
(সুরা আশ-শূরা,১১)।
সুতরাং তাঁর আকারের সাথে কিছুর আকারের তুলনা করা যাবে না।
আল্লাহ বলেন,"সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোনো সাদৃশ্য বর্ণনা করো না।"
(সুরা নাহল,৭৪)।
অতএব, আল্লাহর আকার আছে। তবে কোনো কিছুর সাথে তা তুলনীয় নয়।কুরআন ও সহিহ হাদিসে তাঁর আকৃতি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার কোনো রূপক বা বিকৃত অর্থ করা যাবে না।বরং বলতে হবে তিনি তাঁর মতো। আল্লাহ তা'আলা ইহুদীদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন এভাবে,"আর ইহুদীরা বলে,আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে এবং তাদের এ উক্তির কারণে তাদের উপর অভিশাপ করা হয়েছে ;বরং তাঁর (আল্লাহর) দুই হাতই প্রসারিত"
(সুরা মায়েদা,৬৪)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, "হে ইবলিশ! আমি যাকে আমার দুই হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাঁধা দিল?
(সুরা ছোয়াদ,৭৫)।
আল্লাহ তা'আলা তাঁর পায়ের নলা সম্পর্কে বলেন, " সেদিন পায়ের নলা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদেরকে(মুনাফিক) সিজদা করার জন্য বলা হবে।কিন্তু তাঁরা সিজদা করতে সক্ষম হবে না "
(সুরা কলম,৪২)।
হাদিসেও বহু স্থানে পায়ের কথা এসেছে। [১]
আল্লাহর চোখ সম্পর্কে এসেছে, তিনি মূসা(আ) কে লক্ষ্য করে বলেন, "আমি তোমার প্রতি আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও"
(সুরা ত্বো-হা,৩৯)।
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্ধ নন।সাবধান! দাজ্জালের ডান চোখ কানা।তার চোখটা যেন ফুলে যাওয়া একটি আঙ্গুরের মতো।" [২]
আল্লাহ বলেন, "তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই আল্লাহর চেহারা রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরিবেষ্টনকারী, পূর্ণ জ্ঞানবান"
(সুরা বাকারা,১১৫)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, "ভূ-পৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল।একমাত্র মহিমাময় ও মহানুভব আপনার পালনকর্তার চেহারা ব্যতীত"
(সুরা আর-রহমান,২৬-২৭)।
আল্লাহ তা'আলা মূসা (আ) এর সাথে কথা বলেছেন, "আর আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন "
(সুরা নিসা,১৬৪)।
অন্যত্র বলেন,"মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো,তখন তাঁর প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বলেছেন। তিনি তখন বললেন,হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দিন, আমি আপনাকে দেখবো।তখন আল্লাহ বলেন, তুমি আমাকে আদৌ দেখতে পাবে না"
(সুরা আ'রাফ,১৪৩)।
হাদিসেও এ মর্মে অনেক দলিল রয়েছে।[৩]
জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রা) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন: ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, ‘‘কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে’’- (সূরাহ্ ক্বাফ ৫০/৩৯)।
ইসমাঈল (রহ.) বলেন, এর অর্থ হল- এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়।[৪]
সতর্কতা:
উক্ত আয়াত সমূহে আল্লাহর আকার প্রমাণিত হলেও একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী আলেম রূপক অর্থ করে থাকেন। কুদরত, সত্তা ইত্যাদি অর্থ করেন।এটা আল্লাহর সিফাতকে বিকৃত করার শামিল।
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন,
"তাঁর (আল্লাহর) হাত, মুখমণ্ডল এবং নফস রয়েছে।যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তাঁর মুখমণ্ডল, হাত ও নফসের যে কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলো তাঁর গুণ। কিন্তু কারো সাথে সেগুলোর সাদৃশ্য নেই। আর একথা বলা যাবে না যে,তাঁর হাত অর্থ তাঁর কুদরত বা নে'মত।কারণ এতে আল্লাহর গুণকে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়।আর এটা ক্বাদারিয়া ও মু'তাজিলাদের বক্তব্য। বরং কারো হাতের সাথে সাদৃশ্য ছাড়াই তাঁর হাত তাঁর গুণ। আর আল্লাহর রাগ ও সন্তুষ্টি কারো রাগ ও সন্তুষ্টির সাথে সাদৃশ্য ছাড়াই তাঁর দুটি সিফাত বা গুণ।
[আল ফিকহুল আকবার,পৃঃ৬৬-৬৭]
এতো অকাট্য প্রমাণ থাকার পরেও কি আপনি বলবেন, " আল্লাহ নিরাকার!?"
টীকা:
১.বুখারী,হা/৪৯১৯,২/৭৩১পৃঃ(ইফাবা হা/৪৫৫৮,৮/২৬৫পৃঃ),তাফসীর অধ্যায়;মিশকাত হা/৫৫৪২,পৃঃ৪৮৪;বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩০৮,১০/৯৩ পৃঃ,"হাশরের বর্ণনা অনুচ্ছেদ ;বুখারী হা/৭৩৮৪,২/১০৯৮ পৃঃ,(ইফাবা হা/৬৮৮০,১০/৫৩৯পৃঃ),তাওহীদ অধ্যায়,অনুচ্ছেদ -৭;মুসলিম হা/২৮৪৮;মিশকাত হা/৫৬৯৫,পৃঃ৫০৫;মিশকাত বঙ্গানুবাদ হা/৫৪৫১,১০/১৭২ পৃঃ,'জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টি ' অনুচ্ছেদ।
২.সহিহ বুখারী হা/৩৪৩৯,১/৪৮৯পৃঃ(ইবাফা হা/৩১৯৭,৬/১২৯পৃঃ),'নবীদের ঘটনাবলী 'অধ্যায়,অনুচ্ছেদ -৪৮।
৩.ইবনু মাজাহ হা/১৯০।
৪.বুখারী হা/৫৫৪ ৫৭৩, ৪৮৫১, ৭৪৩৪, ৭৪৩৫,৭৪৩৬; মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩৩, আহমাদ ১৯২১১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৭)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৬