somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিল্লা বিয়ে!

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিল্লা বিয়ে কি ইসলামি শরীয়ত সম্মত?

হিল্লা : উপায়, গতি, ব্যবস্থা, আশ্রয় ও অবলম্বন বিভিন্ন অর্থে আভিধানিকভাবে ব্যবহার হয়। পরিভাষায় হিল্লা বলা হয় : ‘কোন স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে’। এ বিয়ে বাতিল ও অশুদ্ধ, এর ফলে নারী তিন তালাকদাতা স্বামীর জন্য হালাল হয় না। ইমাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এর উদাহরণ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে, তখন স্ত্রী তার উপর হারাম হয়ে যায়, যতক্ষণ না স্ত্রী সে ব্যতীত অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। যেমন আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন, যেরূপ এসেছে তার নবীর সুন্নতে এবং যার উপর সকল উম্মতের ঐক্যমত। যখন কোন ব্যক্তি এ নারীকে তালাক দেয়ার নিয়তে বিয়ে করে, যেন সে তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, তখন এ বিয়ে হারাম ও বাতিল বলে গন্য। এভাবে বিয়ে করার পর তাকে রাখুক বা আলাদা করুক, অথবা আকদের সময় শর্ত করুক বা তার আগে শর্ত করুক, অথবা শাব্দিক কোন শর্ত ছাড়া উভয়ের মধ্যে শুধু প্রস্তাব আকারে ছিল, আর পুরুষ ও নারীর অবস্থা এবং মোহর ছিল শর্তের ন্যায়, অথবা এসব কিছুই ছিল না বরং পুরুষ ইচ্ছা করছে তাকে বিয়ে করবে, অতঃপর তাকে তালাক দেবে যেন তিন তালাকদাতার জন্য সে হালাল হয়, নারী ও তার অভিভাবকের সম্পূর্ণ অজান্তে, তিন তালাকদাতা জানুক বা না জানুক, সর্বাবস্থায় এ তালাক বাতিল হবে। যদিও হিল্লাকারী এ ধারণা করে যে, এটা একটা ভাল কাজ এবং তাকে তার স্বামীর নিকট ফিরিয়ে দিলে তাদের উপর বিরাট অনুগ্রহ হবে, কারণ তালাকের কারণে তাদের নিজেদের, তাদের সন্তানের ও তাদের দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বিসহ হয়েছে ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিতে এ বিয়ের কোন মূল্য নেই, এটা বিয়ে হিসেবে গণ্য হয় না, এ বিয়ের ফলে তিন তালাকদাতার তাকে বিয়ে করা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না কোন ব্যক্তি তাকে চুক্তি, প্রতারণা ও লুকোচুরি ব্যতীত আগ্রহসহ বিয়ে করে, সহবাসে লিপ্ত হয়ে একে অপরের সাথে মেলামেশা করে, অতঃপর যখন তাদের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয় মৃত্যুর কারণে, অথবা তালাক বা খোলা‌‌’ করার কারণে, তখনই শুধু প্রথম স্বামীর জন্য এ নারীকে বিয়ে করা বৈধ। আর যদি এ হিল্লাকারী তাকে তালাক না দিয়ে স্থায়ীভাবে রাখতে চায়, তাহলে নতুনভাবে আকদের মাধ্যমে বিয়ে করা জরুরী, কারণ পূর্বের আকদ ছিল বাতিল ও ফাসেদ, তা দ্বারা এ স্ত্রীর সাথে অবস্থান করা বৈধ নয়। এটাই কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য। এটাই সাহাবায়ে কেরাম, সকল তাবেয়ি ও তাদের পরবর্তী আলেমদের অভিমত।



এতে সন্দেহ নেই, হিল্লা একটি গর্হিত, নিন্দিত ও বিকৃত রুচির কাজ, কিন্তু মূর্খ সমাজ ও বক ধার্মিক লোকেরা শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব ও আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতীত এটাকে ইসলামের বিধান জেনে তালাক প্রাপ্তা নারীদের ক্ষেত্রে হিল্লার ন্যায় ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে, যার ফলে বিতর্কিত বরং কলুষিত হচ্ছে ইসলামের সুন্দর বিধান ও মহান আদর্শ। আর শত্রুরা এটাকে তাদের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে, কুরআন ও ইসলামের কুৎসা রটনার ক্ষেত্রে তাদের কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখছে না, এটাকে তারা ফতোয়া হিসেবে প্রচার করে, ফতোয়া নিষিদ্ধের দাবিও তুলছে। তাই এ বিষয়ে ইসলামের মূল উৎস কুরআন ও হাদিস এবং ইসলামি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফতোয়ার নিরিখে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি। আশা করছি এর থেকে সব শ্রেণীর লোকেরাই বিশেষভাবে অবহিত ও উপকৃত হবেন। প্রথমে পাঠকবর্গের সামনে হিল্লা বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক হাদিস, অতঃপর বিশিষ্ট আলেমদের ছয়টি ফতোয়া, অতঃপর তালাক সংক্রান্ত দু’টি আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা পেশ করব, ইনশাআল্লাহ।



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লা থেকে নিষেধ করেছেন। এটা কতক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই লানত করেছেন হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর। আবার কতক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উভয়ের উপর লানত করেছেন, আবার কতক হাদিসে তিনি হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠার সাথে তুলনা করেছেন। এ বিষয়ে আমরা আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু, আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু, আলি রাদিআল্লাহু আনহু, উকবা ইব্‌ন আমের রাদিআল্লাহু আনহু, উবায়েদ ইব্‌ন উমায়ের রাদিআল্লাহু আনহু ও আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস রাদিআল্লাহু প্রমুখ থেকে বর্ণিত স্বতন্ত্র ছয়টি হাদিস, অতঃপর তাবেয়ি ও তাদের পরবর্তী মনীষীদের বাণী উল্লেখ করছি :



এক. ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস :



عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: ” لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ “.قَالَ أَبُو عِيسَى: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

ইব্‌ন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।” ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এ হাদিসটি হাসান সহিহ। তিনি আরো বলেন : এ হাদিসটি একাধিক সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, এ হাদিস মোতাবেকই আহলে ইলমদের আমল, যেমন ওমর ইব্‌ন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু, উসমান ইব্‌ন আফ্ফান রাদিআল্লাহু আনহু ও আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর রাদিআল্লাহু আনহু প্রমূখ ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম। সাহাবাদের পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কেরাম তথা তাবেয়িগণও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম সুফিয়ান সাওরি রাহিমাহুল্লাহ, ইব্নুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ, শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহ, আহমদ ইব্‌ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ ও ইসহাক রাহিমাহুল্লাহ প্রমূখদেরও অনুরূপ অভিমত। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন : আমি জারুদ ইব্‌ন ‘মুআজ’-কে ইমাম ‘ওয়াকি’ থেকে বর্ণনা করতে শোনেছি, তিনিও অনুরূপ বলেছেন, তিনি বলেছেন : এ হাদিসের ফলে যুক্তিবাদীদের কথা বাইরে নিক্ষেপ করা উচিত। ‘জারুদ’ বলেন : ‘ওয়াকি’ বলেছেন : আর সুফিয়ান রাহিমাহুল্লাহ বলেন : যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীকে হিল্লা করার নিয়তে বিয়ে করে, অতঃপর তাকে স্থায়ীভাবে নিজের কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার জন্য তাকে রাখা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না তাকে নতুন করে বিয়ে করে”।

সূত্র : জামে তিরমিজি : (পৃ.৪২৫), হাদিস নং : (১০৩৪), প্রকাশক : দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত। এ হাদিসটি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে আরো বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ : (৪২৮৩), (৪২৮৪), (৪৪০৩), নাসায়ি ফি সুনানিল কুবরা : (৩/৩২৫) ইব্‌ন আবি শায়বাহ : (৭/২৯২), দারামি : (২২৫), বায়হাকি : (৭/৩৩৯) প্রমুখগণ।



হাফেজ ইব্‌ন হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন, ইব্‌ন মাসউদ থেকে বর্ণিত এ হাদিসটি ইব্নুল কাত্তান ও ইব্‌ন দাকিকিল ঈদ বুখারির শর্ত মোতাবেক সহিহ ও বিশুদ্ধ বলেছেন। “তালখিস” : (৩/৩৭২),

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ থেকে বর্ণিত এ হাদিসের আরো একটি সনদ উল্লেখ করেছেন ইমাম আহমদ : (৪৩০), শাশি : (২/২৮৬,৮৬২) আবু ইয়ালা : (৮/৫৬৮,৫০৫৪) বগভি ফি শারহিস সুন্নাহ : (৫/৭৮,২২) এবং ইসহাক ইব্‌ন রাহওয়েহ তার মুসনাদ গ্রন্থে। দেখুন : নসবুর রায়াহ লিয-যায়লায়ি : (৩/২৩৯), এ সনদের একজন বর্ণনাকারী আাবুল ওয়াসেল ‘মজহুল’ (অপরিচিত), তার কারণে এ সনদটি দুর্বল। দেখুন : আল-ইকমাল : (পৃ:৫৬১), হাফেজ ইব্‌ন হাজার ‘তাজিলিল মানফাআ’ (পৃ:৫২৭) গ্রন্থে এ সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন।



আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ থেকে বর্ণিত এ হাদিসের আরো একটি সনদ উল্লেখ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক তার ‘মুসান্নাফ’ : (৬/২৬৭) গ্রন্থে। এ সনদের একজন বর্ণনাকারী ‘হারেস’ এর কারণে এ হাদিসটি দুর্বল। দেখুন : “আল-মাজমা” : (৪/১১) লিল হায়সামি।



দুই. ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَال: ” لَعَنَ َرسولُ اللَّهِ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ “

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন”। আহমদ : (২/৩২৩), ইব্নুল জারুদ ফিল “মুনতাকা” : (৬৮৪), বায়হাকি ফি সুনানিল কুবরা : (৭/৩৩৯), ইব্‌ন আবি হাতেম ফিল ইলাল : (১/৪১৩) এবং তিরমিজি ফি ইলালিল কাবির : (২৭৩), ইমাম যায়লায়ি তার “নসবুর রায়াহ” (৩/২৪০) গ্রন্থে এ সনদে বিদ্যমান বর্ণনাকারীদের আলোচনা করে বলেন হাদিসটি সহিহ। “ইলালুল কাবির” : (১/১৬০) গ্রন্থে ইমাম তিরমিজির বর্ণনা মতে এ হাদিসটি ইমাম বুখারি হাসান বলেছেন। তার সূত্রে হাফেজ ইব্‌ন হাজার তার “তালখিস” (৩/৩৭৩) গ্রন্থে ইমাম বুখারির এ মন্তব্য উল্লেখ করেন।



তিন. ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন :

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ “.

আলি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। আবু দাউদ : (পৃ.৫৭২), হাদিস নং : (১৭৮১), আহমদ : (৬৩৫), তিরমিজি : (১১১৯), ইব্‌ন মাজাহ : (১৯৩৫) ও ইব্নুল জাওযি ফিল ইলালিল মুতানাহিয়া : (২/৬৪৭), এ হাদিসের সনদ দুর্বল।



এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ‘আউনুল মাবুদ’ এর লেখক বলেন : হিল্লাকারী (অর্থাৎ অপরের তিন তালাক প্রাপ্তা নারীকে এ নিয়তে বিবাহকারী যে, সহবাসের পর তাকে তালাক দিবে, যেন তিন তালাকদাতা তথা পূর্বের স্বামী তাকে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে হালাল করে নেয়) সম্পর্কে কেউ বলেছেন, যেহেতু সে হালাল করার ইচ্ছা করেছে, তাই তাকে হিল্লাকারী বলা হয়। হাফেজ ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ তার ‘তালখিস’ নামক গ্রন্থে বলেন : হাদিস বিশরাদগণ এর ভিত্তিতে দলিল দেন যে, যদি প্রথম স্বামী দ্বিতীয় স্বামীকে শর্ত করে বিয়ের পরই সে তার থেকে আলাদা হয়ে যাবে, অথবা শর্ত করে সে তাকে তালাক দেবে, অথবা এরকম অন্য কোন শর্ত করে, তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। এ হাদিস থেকে এ অর্থই হাদিস বিশারদগণ গ্রহণ করেছেন।



ইমাম হাকেম রহ. ও ইমাম তাবরানি রহ. তার ‘আওসাত’ গ্রন্থে ওমর ইব্‌ন নাফে থেকে বর্ণনা করেন, সে তার পিতা নাফে সূত্রে বলেন :

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابن عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَسَأَلَهُ عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاثًا، فَتَزَوَّجَهَا أَخٌ لَهُ، مِنْ غَيْرِ مُؤَامَرَةٍ مِنْهُ، لِيُحِلَّهَا لأَخِيهِ، هَلْ تَحِلُّ لِلأَوَّلِ؟ قَالَ: ” لا، إلا نْكَاحُ رَغْبَةٌ، كُنَّا نَعُدُّ هَذَا سِفَاحًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ “.هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ

জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আগমন করে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, অতঃপর তার এক ভাই কোন পরামর্শ ছাড়াই তালাক প্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করে তার ভাইয়ের জন্য হালাল করার নিয়তে, এভাবে কি প্রথম স্বামীর জন্য স্ত্রী হালাল হবে ? তিনি বললেন : না, পছন্দ ও আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত হালাল হবে না, আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যেনা বিবেচনা করতাম। আল-মুসতাদরাক লিল হাকেম : হাদিস নং : (২৭৩১) ইমাম খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ ‘মাআলেম’ গ্রন্থে বলেন : {যদি এ বিয়ে সম্পাদিত হয় উভয়ের শর্ত মোতাবেক, তাহলে এ বিয়েই বাতিল, কারণ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে এ চুক্তি শেষ হয়ে যাবে ‘মুতআ’ বিয়ের ন্যায়, আর যদি শর্ত না হয়, বরং নিয়ত ও বিশ্বাস থাকে অনুরূপ, তাহলে এটা মাকরুহ, যদি দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করে অতঃপর তালাক দেয় এবং ইদ্দত শেষ হয়, তাহলে সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হল। তবে উভয়ের হিল্লার ইচ্ছা গোপন রাখা অথবা হিল্লার নিয়ত করা অথবা কোন একজনের হিল্লার ইচ্ছা করা অনেক আলেমই হারাম বলেছেন, যদিও উভয়ে এর কোন শর্ত না করে। ইবরাহিম নখয়ি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : ‘পছন্দ ও আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত প্রথম স্বামীর জন্য তিন তালাক প্রাপ্তা নারী হালাল হবে না, যদি তিন ব্যক্তির কেউ প্রথম স্বামী অথবা দ্বিতীয় স্বামী অথবা নারী হিল্লার নিয়ত করে, তাহলে বিয়ে বাতিল, প্রথম স্বামীর জন্য নারী হালাল হবে না’। সুফিয়ান সাউরি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : ‘যদি কোন ব্যক্তি হিল্লার নিয়তে বিয়ে করে, অতঃপর তাকে রাখার ইচ্ছা করে, তাহলে এটা আমার নিকট পছন্দনীয় নয়, যতক্ষণ না তাকে নতুনভাবে বিয়ে করে’। ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বলও অনুরূপ বলেছেন। মালেক ইব্‌ন আনাস রাহিমাহুল্লাহ বলেন : যে কোন অবস্থায় হোক উভয়ের মাঝে পৃথক করে দেয়া হবে।} খাত্তাবির কথা এখানেই শেষ। উভয়ে অভিশপ্ত এ জন্য যে, হিল্লাতে রুচি বোধ ও সম্মানের বিলুপ্তি ঘটে, আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয় এবং নিকৃষ্ট প্রকৃতি ও ইতর স্বভাব স্পষ্ট হয়, যার জন্য হিল্লা করা হয়, তার ব্যাপারে তো এসব স্পষ্ট, আর হিল্লাকারী এ জন্য যে, সে অপরের উদ্দেশ্য নিজেকে সহবাসের জন্য ভাড়া দেয়, কারণ যার জন্য হিল্লা করা হচ্ছে, তার সহবাসের উপযুক্ত করার জন্যই সে নারীর সাথে সহবাস করে। এ জন্যই তাকে ভাড়া করা পাঠার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কাদি আয়াদ সূত্রে মিরাকাতের লেখক এ উক্তি বর্ণনা করেছেন। ‘আউনুল মাবুদ’ হাদিস নং : (১৭৩৬), সংক্ষিপ্ত অনুবাদ।



চার. ইমাম হাকেম তার মুসতাদরাক গ্রন্থে সাহাবি উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন:

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: ” أَلا أُخْبِرُكُمْ بِالتَّيْسِ الْمُسْتَعَارِ؟ “، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: ” هُوَ الْمُحِللُّ “، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: ” لَعَنَ اللَّهُ الْمُحِللَّ، وَالْمُحَلَّلَ لَهُ ” هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ، ووافقه الذهبي.

উকবা ইব্‌ন আমের রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলব ?” তারা বলল : অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন : “হিল্লাকারী”, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন”। হাকেম বলেন, এ হাদিসের সনদ সহিহ, কিন্তু বুখারি ও মুসলিম তা উল্লেখ করেননি। ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ তার সমর্থন করেছেন। আল-মুসতাদরাক লিল হাকেম : (পৃ.১০২৮), হাদিস নং : (২৭৩১), ইব্‌ন মাজাহ : (১৯৩৬), দারাকুতনি : (৩৫৭৬), বায়হাকি : (৭/৩৩৯), হাদিস নং : (১৪১৮৭), ইব্নুল জাওজি ফিল ইলালিল মুতানাহিয়াহ : (২/৬৪৬)



পাঁচ. উমার ইব্‌ন উবায়েদ নিজ পিতা -যিনি ছিলেন একজন সাহাবি- থেকে বর্ণনা করেন :

عن عبيد بن عميرقال : لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المحلل والمحلل له والمتشبهين من الرجال بالنساء والمتشبهات من النساء بالرجال.

“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় এবং যে সকল পুরুষরা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে ও যে সকল নারীরা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে তাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন”। ইব্‌ন কানে ফি “মুজামিস সাহাবাহ” : (২/২২৯), এ সনদটি দুর্বল, দেখুন : “তালখিস” : (৩/৩৭৩) লি ইব্‌ন হাজার আসকালানি রহ.।



ছয়. ইব্‌ন মাজাহ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন :

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: ” لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ “

ইব্‌ন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়, উভয়কে লানত করেছেন”। ইব্‌ন মাজাহ : (১৯৩৪), হাফেজ ইব্‌ন হাজার তার “তালখিস” : (৩/৩৭২) গ্রন্থ ও বুআইসিরি তার “জাওয়ায়েদ” : (২/১১২) গ্রন্থে এ সনদটি দুর্বল বলেছেন।

এ ছাড়াও এ হাদিসটি আরো বিভিন্ন সূত্রে অনেকে বর্ণনা করেছেন, যেমন ইব্‌ন মাজাহ : (১৯৩৫) ইব্‌ন আউন রা. সূত্রে, বায়হাকি তার সুনানুল কুবরা : (১৪১৮৩) গ্রন্থে কাতাদা রা. সূত্রে, ইমাম আহমদ : (৮৪৪), (১২৮) জাবের রা. সূত্রে ইত্যাদি।



হিল্লা হারাম সম্পর্কে সাহাবাদের ঐক্যমত :

ইব্‌ন তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (إقامة الدليل على إبطال التحليل) গ্রন্থে এ বিষয়ে সাহাবাদের ঐক্যমত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : কুবাইসা ইব্‌ন জাবের ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন :

والله لا أوتى بمحلٍّ ومحلَّل له إلا رجمتهما .

“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়, তাদেরকে আমার সামনে পেশ করা হলে আমি উভয়কে প্রস্তরাঘাত করব”। তার এ বাণী বর্ণনা করেছেন আবু বকর ইব্‌ন আবি শায়বাহ, আবু ইসহাক জাওজাজানি, হারবুল কারমানি ও আবু বকর আল-আসরম প্রমুখগণ। তার এ বাণী প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত। ‘জায়েদ’ ইব্‌ন আয়াদ ইব্‌ন জাদ থেকে বর্ণিত, তিনি নাফে রহ.-কে বলতে শোনেছেন, এক ব্যক্তি ইব্‌ন ওমরকে হিল্লাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তাকে ইব্‌ন ওমর বলেন :

عرفت ابن الخطاب رضي الله عنه لو رأى شيئا من ذلك لرجم فيه.

“আমি জানি যে, এ ধরনের কোন ঘটনা ইব্‌ন খাত্তাব দেখলে তিনি তাতে প্রস্তরাঘাত করতেন”। ইব্‌ন ওহাব জায়েদ সূত্রে এ বাণী বর্ণনা করেন, জায়েদকে অনেকে দুর্বল বলেছেন, তাই এ সনদটি দুর্বল। তবে সে ছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে এ বাণী বর্ণিত হয়েছে।



সুলাইমান ইব্‌ন ইয়াসার থেকে বর্ণিত,

رفع إلى عثمان رضي الله عنه رجل تزوج امرأة ليحلها لزوجها ففرق بينهما وقال لا ترجع إليه إلا بنكاح رغبة غير دلسة.

“এক ব্যক্তিকে উসমান রাদিআল্লাহু আনহুর দরবারে পেশ করা হয়, যে এক নারীকে বিয়ে করেছিল, তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল করার জন্য, তিনি তাদের মাঝে পৃথক করে দেন এবং বলেন, লুকাচুরি ও প্রতারণাহীন আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত সে তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারবে না”। এ হাদিসটি বর্ণনা করেন জাওজাজানি। আবু মারজুক আত-তাজিবি থেকে বর্ণিত,

أن رجلا أتى عثمان فقال إن جاري طلق امرأته في غضبه ولقي شدة فأردت أن أحتسب نفسي ومالي فأتزوجها ثم أبني بها ثم أطلقها فترجع إلى زوجها الأول فقال له عثمان لا تنكحها إلا نكاح رغبة.

“এক ব্যক্তি উসমানের নিকট এসে বলে, আমার প্রতিবেশী তার স্ত্রীকে গোস্বায় তালাক দিয়েছে, এখন সে খুব বিপদের সম্মুখীন, আমার ইচ্ছা আমার জান ও সম্পদ দ্বারা আমি তাকে উপকার করি, আমি নারীকে বিয়ে করি অতঃপর সহবাসে মিলিত হই অতঃপর তাকে তালাক দেই, যেন সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে পারে, উসমান তাকে বললেন, আগ্রহ বত্যীত তুমি তাকে বিয়ে করবে না”। এ হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু ইসহাক সিরাজি তার মুহাজ্জাব গ্রন্থে। ইব্‌ন ওহাব আব্দুর রহমান মুরাদি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবু মারওয়ান তাজিবিকে বলতে শোনেছেন :

إن رجلا طلق امرأته ثلاثا ندما وكان له جار فأراد أن يحلل بينهما بغير علمهما فسأل عن ذلك عثمان فقال له عثمان إلا نكاح رغبة غير مدالسة.

“এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে লজ্জিত হয়, তার এক প্রতিবেশী ছিল, যে তাদের অজান্তে উভয়ের মাঝে হিল্লা করার ইচ্ছা করে, এ সম্পর্কে তিনি উসমানকে জিজ্ঞাসা করেন, উসমান তাকে বলেন, প্রতারণাহীন আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত হালাল হবে না”।

আলি (রা.) থেকে বর্ণিত :

لعن الله المحلل والمحلل له.

“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। ইব্‌ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত :

لعن الله المحلل والمحلل له.

“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ লানত করেছেন”। ইব্‌ন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত :

لعن الله المحلل والمحلل له والمحللة.

“হিল্লাকারী পুরুষ, হালালকৃত নারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় সকলের উপর আল্লাহ লানত করেছেন”। আব্দুল মালিক ইব্‌ন মুগিরা ইব্‌ন নাওফেল থেকে বর্ণিত,

أن ابن عمر سئل عن تحليل المرأة لزوجها قال: ذلك السفاح لو أدرككم عمر لنكلكم.

“ইব্‌ন ওমরকে (রা.) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য হালাল করার বিধান কি, তিনি বলেন : এটা যেনা, যদি ওমর তোমাদের দেখত, তাহলে অবশ্যই তিনি তোমাদের শাস্তি দিতেন”। এ বাণী বর্ণনা করেন আবু ইব্‌ন আবি শায়বাহ। জুহরি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন শারিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি ইব্‌ন ওমরকে শোনেছি, তাকে হিল্লাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন :

لا يزالان زانيين وإن مكثا عشرين سنة إذا علم الله سبحانه أنهما أراد أن يحلها له.

“তারা উভয়ে যেনা অবস্থায় থাকবে, যদিও এভাবে তারা বিশ বছর পার করে, যদি আল্লাহ জানেন যে, এদের উভয়ের নিয়ত হচ্ছে স্ত্রীকে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করা”। ইমরান ইব্‌ন হারেস সুলামি থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি ইব্‌ন আব্বাসের নিকট এসে বলে, তার চাচা নিজ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অনুতপ্ত, তিনি বলেন :

عمك عصى الله فأندمه وأطاع الشيطان فلم يجعل له مخرجا قال: أرأيت إن أنا تزوجت من غير علم منه أترجع إليه؟ قال: من يخادع الله يخدعه الله.

“তোমার চাচা আল্লাহর নাফরমানি করেছে, তাই আল্লাহ তাকে লজ্জিত করেছেন, সে শয়তানের আনুগত্য করেছে, তার জন্য আল্লাহ কোন পথ রাখেননি, সে বলল : আমি যদি তার অজান্তে তাকে বিয়ে করি, সে কি তার নিকট ফিরে যেতে পারবে ? তিনি বললেন : আল্লাহকে যে ধোঁকা দেয় আল্লাহ তাকে ধোঁকা দেবেন”। এসব হাদিস ও বাণী সাহাবাদের থেকে প্রসিদ্ধ। হিল্লার যে ইচ্ছা করে সেই হিল্লাকারী, তার এ ইচ্ছা প্রকাশ করুক বা গোপন রাখুক। ওমর রাদিআল্লাহু এসব ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদান করতেন। হিল্লাকারী ও তার স্ত্রীর মাঝে পৃথক করে দেয়া হবে, যদিও বিয়ের পর সর্বদার জন্য ঘর-সংসার করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়, যদি শুরুতে হিল্লার ইচ্ছা থাকে। আর তিন তালাক দাতা ব্যক্তি যদিও কষ্ট পায়, লজ্জিত হয় এবং তালাকের কারণে বড় মুসিবতের সম্মুখীন হয়, তার জন্য হিল্লা করা বৈধ নয়, যদিও সে তালাকের পরিণতি সম্পর্কে না জানে। এসব বর্ণনায় হিল্লার প্রতি যে কঠোরতা ও নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ পায়, তার থেকেই প্রমাণ হয় যে হিল্লা হারাম, হিল্লাকারী ব্যক্তি ওমর রা. ও তার পরবর্তী খলিফাদের জমানায় শাস্তি ভোগ করত। ইব্‌ন তাইমিয়া রহ. বলেন : আমরা কিতাবের শুরুতে হাসান বসরি থেকে বর্ণনা করেছি,

أنه قال له رجل إن رجلا من قومي طلق امرأته ثلاثا فندم وندمت فأردت أن أنطلق فأتزوجها وأصدقها صداقا ثم أدخل بها كما يدخل الرجل بامرأته ثم أطلقها فقال له الحسن إتق الله يا فتى ولا تكون مسمار نار لحدود الله.

“এক ব্যক্তি তাকে বলে, আমার বংশের এক লোক তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, এখন সে ও তার স্ত্রী লজ্জিত, আমি ইচ্ছা করছি আমি তাকে বিয়ে করি, মোহর প্রদান করি অতঃপর তার সাথে মিলিত হই, যেরূপ স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়, অতঃপর আমি তাকে তালাক দেই। হাসান তাকে বলেন : হে যুবক আল্লাহকে ভয় কর, তুমি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে জাহান্নামের পেরেকে পরিণত হয়ো না। হাসান থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন : মুসলমানগণ হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠা বলতেন। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, হিল্লার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সাহাবাদের যুগে মুসলমানদের নিকট প্রসিদ্ধ ছিল। দেখুন : ইব্‌ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।



ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর বাণী ইব্নুল মুনজির নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেন :

عن عمر بن الخطاب أنه قال : لا أوتى بمحلل ولا محللة إلا رجمتهما

“আমার নিকট হিল্লাকারী পুরুষ অথবা নারী পেশ করা হলে, আমি তাদেরকে প্রস্তরাঘাত করব”।



ইগাসাতুল লাহফান লি ইব্নুল কাইয়্যূম : (১/৪১১), তিনি বিশুদ্ধ সনদে তার এ বাণী বর্ণনা করেন।

وعن ابن عمر أن رجلا سأله فقال ما تقول في امرأة تزوجتها أحلها لزوجها لم يأمرني ولم يعلم فقال له ابن عمر لا إلا نكاح رغبة إن أعجبتك أمسكتها وإن كرهتها فارقتها وإنا كنا نعد هذا سفاحا على عهد رسول الله.

ইব্‌ন ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করে, এমন নারী সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যাকে আমি বিয়ে করেছি তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে, সে আমাকে নির্দেশ দেয়নি এবং আমার নিয়ত সম্পর্কে সে জানেও না। ইব্‌ন ওমর রা. বলেন, “আগ্রহ ব্যতীত কোন বিয়ে নেই, তোমার ভাল লাগলে তুমি রেখে দিবে, আর অপছন্দ হলে তাকে ত্যাগ করবে, আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ব্যাভিচারই গণ্য করতাম”। ইমাম আবু ইসহাক তাগলাবি ও ইমাম আবু মুহাম্মদ মাকদিসি এ বাণী উল্লেখ করেছেন। দেখুন : ইব্‌ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।

وقال إبراهيم النخعي إذا كان نية أحد الثلاثة الزوج الأول أو الزوج الآخر أو المرأة التحليل فنكاح الآخر باطل ولا تحل للأول.

ইবরাহিম নখয়ি রহ. বলেন, যদি তিনজনের কারো হালাল করার ইচ্ছা থাকে, প্রথম স্বামী, দ্বিতীয় স্বামী অথবা স্ত্রীর, তাহলে দ্বিতীয় স্বামীর বিয়ে বাতিল, প্রথম স্বামীর জন্য সে হালাল হবে না। দেখুন : ইব্‌ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।

وقال الحسن البصري إذا هم أحد الثلاثة بالتحليل فقد أفسد .

হাসান বসরী রহ. বলেন : তিন জনের কারো যদি হালাল করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিয়ে বাতিল। দেখুন : ইব্‌ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।

وقال سعيد بن المسيب إمام التابعين في رجل تزوج امرأة ليحلها لزوجها الأول فقال لا تحل وممن قال بذلك مالك بن أنس والليث بن سعد وسفيان الثوري والإمام أحمد وقال إسماعيل بن سعيد سألت الإمام أحمد عن الرجل يتزوج المرأة وفي نفسه أن يحللها لزوجها الأول ولم تعلم المرأة بذلك فقال هو محلل وإذا أراد بذلك الإحلال فهو ملعون.

তাবেয়িদের ইমাম সায়িদ ইব্‌ন মুসাইয়্যেব রহ. জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, যে প্রথম স্বামীর জন্য স্ত্রীকে হালাল করার নিয়তে বিয়ে করেছিল, তিনি বলেন সে হালাল হবে না। অনুরূপ মন্তব্য পেশ করেছেন মালেক ইব্‌ন আনাস রহ., লাইস ইব্‌ন সা’দ, সুফিয়ান ইব্‌ন সাওরি রহ. ও ইমাম আহমদ। ইসমাঈল ইব্‌ন সায়ীদ বলেন : আমি ইমাম আহমদকে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, যে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করে, কিন্তু নারী এ নিয়ত সম্পর্কে জানে না, তিনি বলেন এ ব্যক্তি হিল্লাকারী, যদি সে এ বিয়ের মাধ্যমে হালাল করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে অভিশপ্ত। দেখুন : ইব্‌ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।



উপরের আলোচনা থেকে আমাদের নিকট স্পষ্ট হল যে, হিল্লা বিয়ে ইসলামের বৈধ কোন পন্থা বা স্বীকৃত উপায় নয়, বরং তা ইসলামে নিষিদ্ধ, নিন্দিত, অভিশপ্ত ও কবিরা গুনাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×