somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফররুখ, আমাদের হৃদয়হীনতা মনে রেখো না, মাফ করে দিও। প্রিয় কবি ফররুখের জন্মদিন আজ

১১ ই জুন, ২০০৯ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তুলে আমি দাঁড় টানি ভুলে ;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি......

কিংবা

ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানি
ভোমরাটা গায় গান ঘুমভাঙানি
একঝাক পাখি এসে ঐকতানে
গান গায় এক সাথে ভোর বিহানে...

এমন অসংখ্য জনপ্রিয় কালজয়ী ও জনপ্রিয় কবিতার জনক আমাদের প্রিয় কবি ফররুখ আহমেদের ৯১তম জন্মদিন আজ। মাগুরার মাঝআইল গ্রামের খানসাহেব সৈয়দ হাতেম আলী ও রওশন আখতাতের দ্বিতীয় পুত্র ফররুখের জন্ম ১৯১৮ সালের আজকের দিনে।
সর্বশেষ ছাত্র ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের। তারও আগে পড়েছেন দর্শন। কিন্তু নানা কারণে একাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটেনি।
কর্মজীবন শুরু হয় আইজি প্রিজন অফিস ও সিভিল সাপ্লাই অভিসে স্বল্পকাল চাকরী দিয়ে। পরে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চাকেই জীবনের ব্রত হিসাবে বেছে নেন।
প্রথম জীবনে আসক্ত হন কমিউনিজমের প্রতি। পরবর্তীতে নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে এক পর্যায়ে মুগ্ধ হন ইসলামের বিশ্বজনীন মানবিক আদর্শ এবং মৌলিক সাম্যবাদের প্রতি। তার সাহিত্যেও এর প্রভাব পড়তে থাকে। এর খেসারতও দিতে হয় তাকে। সাহিত্যের নিরপেক্ষ বোদ্ধাদের বিবেচনায় জীবনানন্দ পরবর্তীতে কবিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাধর কবিদের একজন কবি ফররুখ। কারো কারো মতে সবচেয়ে প্রতিভাধর। স্বতন্ত্র কাব্য ভাষা নির্মান করেছেন তিনি। কাজী নজরুল এর পর আরবি ফারসিসহ বিদেশী ভাষার নান্দনিক ও গ্রহণযোগ্য প্রয়োগে ফররুখের মতো পারঙ্গমতা আর কেউ দেখাতে পারেনি। অনেক কালজয়ী কবিতার জনক তিনি। কিন্তু এতকিছুর পরও এদেশের মিডিয়ার নিরঙ্কুশ দখলদার এবং শিল্প সাহিত্যের স্বঘোষিত ইজারাদার সেকুলারদের প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকায় বিতাড়িত ফররুখ। কত হাবি জাবি, যদু মধুদের নিয়ে মিডিয়ার নিরন্তর মাতামাতি, কিন্তু ফররুখের জন্মদিন পার হয়ে যায় নিরবে নিভৃতে।
অনেক আগে একটি কবিতা পরেছিলাম। কার লেখা মনে নেই। তবে দু'টো লাইন মনে আছে। লাইন দু'টো ছিল এরকম-

'এখন বুঝি সেই দুঃসময়, যখন সতীরা নির্বাসিত
আর ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় পতিতার শব'

ফররুখের প্রতি এই অবিচার শুরু হয়েছে অনেক আগেই। অন্য অনেকের মতোই পাকিস্তান না ভেঙ্গে টিকে থাক, এটা চেয়েছিলেন তিনি। এটা করেছিলেন তিনি তার নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে। অনেক বিখ্যাত সেকুলার পন্ডিতেরাও পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে ছিলেন না। ভূল হোক শুদ্ধ হোক সেটা ছিল তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক বিবেচনা। কিন্তু পরবর্তীতে এমন সবার প্রতি সমান আচরণ করা হয়নি।
জিন্নাহকে মহান জাতির জনকসহ নানা স্তুতি বাক্যে কবিতা লেখা সুফিয়া কামালরা পরবর্তীতে ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগ করার সুবাদে নানা সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু নিজের অবস্থানে শক্ত থাকা স্পষ্টভাষী ব্যক্তিত্ববান ফররুখকে সহ্য করতে হয়েছে তদানীন্তন মুজিব সরকারের অত্যাচারের স্টীম রোলার।
মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ফররুখের চাকরী কেড়ে নেয়া হয়। সুফিয়া কামালরা যখন সরকারী খরচে বিদেশ সফরে মশগুল তখন বিনা চিকিৎসায় মারা যায় ফররুখের মেয়ে। বিষয়টি নিয়ে আহমদ ছফার একটি হৃদয়স্পর্শী প্রবন্ধ আছে। তৎকালীন গণকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এটি।
মুজিব সরকারের কোপানলে পড়ে ফররুখের শেষ জীবন কাটে আর্থিক দৈন্যতা ও নানা নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে। একপর্যায়ে মৃত্যুও হয়। মৃত্যুর পরও রেহায় পায়নি ফররুখ। সরকারী ভাবে জানিয়ে দেয়া হয় কোন সরকারী কবরস্থানে তাকে কবর দেয়া যাবে না। অবশেষে কবি ফজল শাহাবুদ্দিনের প্রচেষ্টায় তার বাড়ির সীমানায় দাফন করার হয় ফররুখকে।

প্রিয় কবি ফররুখ, আমাদের মাফ করে দিও। তোমার জন্ম দিনে তোমার কাছে এই বিনীত নিবেদন।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০০৯ রাত ১২:৪৩
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×