মেয়েটির নাম ‘হুমায়রা আক্তার’।দরিদ্র পরিবারে জন্ম তাঁর।শুধু দরিদ্র বললে ভূল হবে।ওরা ছিলো অতি দরিদ্র।পরিবারটা ছোট থাকলেও অভাব-অনটন পিছু ছাড়তো না।ওর বাসস্থানের অবস্থা ছিলো অত্যন্ত শোচনীয়।বাবা কোন রকম সংসার চালাতেন।
হুমায়রা পড়ালেখায় ছিলো অনেক ভালো।অভাব-অনটনের সংসার হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বাবা তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে বলেননি।ও মন দিয়ে পড়াশুনা করত।এস.এস.সি পরীক্ষায় সেবার সে জি.পি.এ ৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।
হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠলো হুমায়রা।কলেজে পড়তে গেলে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়।কিন্তু হুমায়রার বাবা দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে দেন নি।তিনি মেয়েকে ভালো পড়ালেখার জন্য ‘সিলেট উইমেন্স কলেজে’ ভর্তি করে দেন।
একই তো টানাপোড়নের সংসার তার উপর এত উচু মানের কলেজের ফি প্রদান করতে হত হুমায়রার বাবাকে।এর কারণে কত দীনতা-হীনতা,অপমান সহ্য করতে হয়েছে হুমায়রার বাবাকে,তা গোপন রাখাই ভালো।এমনকি গ্রামের উচ্চবিত্তদের কাছে হাত পাততেও দ্বিধাবোধ করেন নি তিনি।উনার একটাই আশা ছিলো যে,তাঁর মেয়ে একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে।
এদিকে কলেজে মেয়ের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিলো।এমন নামীদামী কলেজে পড়ে।অথচ তাঁর কি না মাত্র ২টা ড্রেস! হ্যাঁ,হুমায়রা মাত্র ২টা ড্রেস নিয়ে গিয়েছিল।হুময়রার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো।তাহলে হয়ত একটা লাগেজ কাপড় দিয়ে ভরে তুলে রাখতো।কিন্তু দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হওয়া এই হুমায়রা অনেকটা মাদার তেরেসার মতোই সাদামাটা জীবন-যাপন করেছিলো।
অনেক সাধনার পর বহুল প্রতিক্ষিত এইচ.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট এলো।হুমায়রা তাঁর এবং তাঁর বাবার কঠোর পরিশ্রমের উপযুক্ত ফল পেয়েছিল।হ্যাঁ,এইচ.এস.সি পরীক্ষায় হুমায়রা জিপিএ ৫ পেয়েছিলো।
এইচ.এস.সিতে এ প্লাস পাওয়া পরম সৌভাগ্যের বিষয়।যে ফলাফল অন্যান্যদের মনে খুশির বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো,সেই ফলাফল হুমায়রার জন্য কষ্টের সাগর রূপে আবির্ভূত হয়েছিলো।কারণ,তার বাবাকে আবার কারো না কারো কাছে হাত পাততে হবে।আবারও কারো কাছে অপমানিত হতে হবে।
কিন্তু হুমায়রার বাবা নাছোড়বান্দা।মেয়েকে তাঁর লক্ষ্যে পৌছে দিবেনই।এরকম বাবা পাওয়া, ভাগ্যের বিষয়, নয় কি?
অনেক মানুষের কাছে হাত পাততে হলো হুমায়রার বাবাকে।কিন্তু কোন মতেই টাকার জোগাড় হচ্ছিল না।পরক্ষণে একটা সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এক বুক আশা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেয় হুমায়রা এবং চান্সও পায়।বাবার কষ্ট এবং হুমায়রার চেষ্টা এই দুইয়ে মিলে একটা স্বপ্নের জন্ম দেয়।কিন্তু এটা আর স্বপ্ন হয়ে থাকে নি।এটা বাস্তবে রূপায়িত করে হুমায়রা।
এককালের দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত,সাদামাটা জীবন-যাপনকারী ‘হুমায়রা’,বর্তমানে ‘ডাঃ হুমায়রা আক্তার’ নামে সমধিক পরিচিত।এইতো কিছুদিন আগে এক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে হুমায়রা।দাওয়াতটা অবশ্য পেয়েছিলাম।কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয় নি।
হুমায়রার ডাক্তার হওয়ার পেছনে যে জিনিস দু’টি ভূমিকা পালন করেছিলো সেটা হল তাঁর প্রবল ইচ্ছা শক্তি এবং তাঁর কঠোর পরিশ্রম।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় বাবা।আজকালকার দিনে এ ধরনের বাবা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বিষয়।হাজার হাজার স্যালুট জানাই ঐ বাবাকে।
আজকের দিনে মেয়ের বাবারা মনে করেন যে,মেয়েদের পড়ালেখার কোন মানে হয় না।কোনমতে ১৮-২০বছর বয়স হলেই বিয়ে দিয়ে দেন।আশা করি এই বাস্তব ঘটনা থেকে মেয়েদের পড়ালেখা করার প্রতি হাজারো বাবা সচেতন হবেন।একজন সচেতন বাবাই পারেন নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে।কিন্তু বাবার সচেতনতার সাথে,সন্তানের ইচ্ছাশক্তিটা থাকা আবশ্যিক।