somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'আমার আদৃতা'

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকক্ষণ ধরে চশমাটা খুঁজছি। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় রেখেছি সেটাও মনে করতে পারছি না। সচরাচর, বিকেলে ঘুমানো হয় না। শীতের বিকেলগুলো ছাদে উঠে উপভোগ করি। কিন্তু হুমায়ুন স্যারের ‘আজ হিমুর বিয়ে’ বইটা পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, টেরই পাই নি। বইটা বাম হাতেই আছে। কিন্তু চশমাটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

ওহ, মনে পড়েছে। আমি বাদে ঘরের মধ্যে আরেকজনও তো আছে। হয়ত, উনিই কোথাও রেখে দিয়েছেন। উনার সম্পর্কে আপনাদের বলি। বাংলায় উনাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী বলা হয়। উনার নাম আদৃতা। নামখানা আজকের দিনে অনেকের কাছে সুশ্রী মনে হলেও, আমার কাছে কি রকম উদ্ভট মনে হয়! উনার নাম যে আমার অপছন্দ, সেটা উনাকে এখনো পর্যন্ত বলা হয় নি। আর বললে, আমার উপর ৩০২ ধারার বঙ্গীয় আইন কার্যকরের ব্যবস্থা করা হবে। সেটা আমি ভালো করেই জানি।

উনাকে আমার ডাকতে হয় নি। একটু পর উনি নিজে আমার সামনে এসে উপস্থিত হলেন। চশমা না থাকার দরুণ চোখে ঝাপসা দেখছি। উনাকে অনেকটা ছায়ামূর্তির মত মনে হচ্ছে। ছায়ামূর্তিটাকে আমার কাছে অপূর্ব লাগছে। কেন, সেটা জানি না। যদি পিকাসু হতাম, তাহলে এই অপরূপ ছায়ামূর্তিটার ছবি এঁকে বিশ্বখ্যাত হতাম।

-“এই নাও তোমার চশমা। আর বইটা এদিকে দাও__”
বাধ্য ছেলের মত বাম হাতে থাকা বইখানা এগিয়ে দিলাম ছায়ামূর্তিটার দিকে। তারপর ওর হাত থেকে চশমাখানা নিয়ে পড়ে নিলাম। এখন সবকিছু স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি। অপরূপ ছায়ামূর্তিটার দিকে তাকালাম।

“বিকেলের মৃদ্যু আলো জানালা দিয়ে ওর মুখের উপর এসে পড়েছে। খোলা চুল বাতাসে দোল খাচ্ছে। অপূর্ব লাগছে তাকে।”___ এরকম বলাটা আমার কাছে সৌন্দর্য্যের সাধারণ ব্যাখ্যা মনে হয়। কিন্তু আমার কাছে আদৃতাকে অসাধারণ লাগছে। সৌন্দর্য্যের সাধারণ ব্যাখ্যা কমবেশি সকল লেখকই দিয়ে থাকেন কিংবা দিয়েছেন। কিন্তু সৌন্দর্য্যের অসাধারণ ব্যাখ্যা কতজন দিতে পারেন বা পেরেছেন?

হয়ত, লেখকগণের কাছে সৌন্দর্য্যটাকে সাধারণই মনে হয়েছে। কিংবা, অসাধারণ সৌন্দর্য্যের প্রতিমাকে সাধারণে প্রকাশ করেছেন উনারা।

বই গোছানো শেষ করে উনি আমার দিকে তাকালেন। এক জোড়া চোখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটোকেও অসাধারণ দেখাচ্ছে।
-“তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে ছাঁদে এসো। আমি ছাঁদে গেলাম।”
আমি হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ালাম। আমি নাড়ালাম; নাকি অভ্যাসমত নড়লো।
একজন মহানুভব বলেছিলেন, “মনুষ্য বিবাহের পর মরহুম/স্বর্গীয় হয়ে যায়।”
এখন সংসার সুখী রাখতে রমণীর গুণকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। সংসার সুখী রাখতে সকল মরহুমদেরকে অর্ধাঙ্গিনীগণের সকল কথায় হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ানো উচিত।

উনি যেতে উদ্যত হলেন। আমি উনাকে থামালাম,
-“এই শোন...”
উনি ঘুরে দাঁড়ালেন।
-“হ্যাঁ, বল। কিছু লাগবে?”
-“নাহ, কিছু লাগবে না। একটা কথা ছিল।”
-“হুম বল কি বলবে...”
-“আমি তোমাকে আদৃতা ডাকতে পারব না।”
উনি ভ্রু কুচকালেন...
-“কেন?”

আমি নড়েচড়ে বসলাম।তারপর বলতে শুরু করলাম,
-“একই তো লম্বা নাম, তার উপর উচ্চারণ করতেও কষ্ট হয়। তাছাড়া নামটা কিরকম অর্থহীন অর্থহীন মনে হয়। তার চেয়ে বরং আমি তোমাকে একটা নতুন নাম দেব। আর আজ থেকে সেই নামেই ডাকবো।”
উনি কিছুটা বিব্রতবোধ করলেন। মনে হল, নাম পরিবর্তন করাটা উনার পছন্দসই নয়। কিন্তু আমি কি নাম দেব__ সেটা শোনার জন্য বেশ আগ্রহী। উনি জিজ্ঞেস করলেন,
-“কি নাম দেবে,শুনি?”

আমি মনে মনে নাম খুঁজছি এরকম একটা ভান করলাম। তারপর বললাম,
-“আজ থেকে তোমাকে আমি ‘রেণু’ নামে ডাকবো। এটা উচ্চারণ করতে তেমন কষ্ট হয় না। আর এর ভালো একটা অর্থও আছে।”
-“অর্থটা কি,শুনি?”
-“রেণু=Rayণু; রশ্মিণু। অর্থাৎ রসুন। কত সুন্দর অর্থ না?”

এবার উনি রেগে গেলেন। আস্তে আস্তে মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করছে। মুখমন্ডলের মধ্যে নাকের ডগাটা বেশি লাল হয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছি, এক্ষুণি উনি আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন।
-“কিইইইই!! আমি রসুন!!”
-“হ্যাঁ। এতে সমস্যা কি? রসুন তো আর খারাপ কিছু না।”

উনি কিছু বলছেন না। দাঁত দিয়ে দাঁত কামড়াচ্ছেন। এতে কট্‌ কট্‌ শব্দ হচ্ছে। এই দাঁত কামড়ানোর অর্থটা আমি বুঝি না। এটা কি রাগ নিবারণে সহায়ক?
আমি বলতে শুরু করলাম,
-“এত রাগ করার কি আছে? রসুনে খারাপ কি? রসুনের ভেতরের দিকটা যাই হোক, বাহ্যিক দিকটা আমার অনেক পছন্দ। ধবধবে সাদা। ঠিক তোমার মত...”
আমি মুচকি হাসলাম।
উনি আর দাঁড়ালেন না। দাঁত দিয়ে কট্‌ কট্‌ শব্দ করতে করতে চলে গেলেন।

আমি বিছানা থেকে উঠে হাত ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে গেলাম। এই দেখুন!! এখানেও নাম পরিবর্তনের বিড়ম্বনা। আগে সবাই এটাকে টয়লেট কিংবা শৌচাগার ডাকত। এরপর মধ্যিখানে এটাকে ‘বাথরুম’ বলে সম্মোধন করা হত। আর এখন সবাই বলে ‘ওয়াশরুম’!!

হাত-মুখ ধুয়ে, হলুদ টি শার্টটা পড়ে ছাঁদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। আমি ভালো করেই জানি, আমার রসুনপরী গাল ফুলিয়ে ছাঁদে বসে আছেন। হলুদ টি-শার্টটা আমার অনেক ভালো লাগে। উঁহু, দেখার বেলায় নয়; পড়ার বেলায়। একশত ভাগ খাঁটি তুলো দিয়ে তৈরি এই টি-শার্ট। এটা আমার বানানো কোন কথা নয়। এর পিছনের দিকটায় লেখা আছে ‘100% Cotton’…

সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠলাম। ছাঁদে উঠে বুঝলাম ঘরের ভেতরটায় নির্মল বাতাসের অভাব। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। সাইকাইট্রিস্টরা বলেন, নির্মল বাতাসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটা নাকি দুশ্চিন্তা দূরীকরণে সহায়ক।
জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়া বন্ধ করে ছাঁদের চারদিকে তাকালাম। আমার ধারণাই ঠিক। উনি ছাঁদের এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছেন। কিন্তু গাল ফোলা কিনা দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে না।

আস্তে আস্তে উনার দিকে অগ্রসর হলাম। প্রতিবারই রাগ ভাঙ্গানোর ক্ষেত্রে ‘কবিতা’ নামক সহজ এবং কার্যকরী উপায়টা অবলম্বণ করি। কিন্তু আজ ছন্দের বড় অভাব। ছন্দ মিলাতে পারিনি। আর আগের ছন্দগুলো কাজ করবে বলে মনে হয় না। কি করি এখন?
আচ্ছা, কারো ছন্দ নকল করলে কেমন হয়? আজকাল সব জায়গায় নকলের চর্চা হচ্ছে। পরীক্ষা থেকে শুরু করে এই সাহিত্যকর্মেও নকল হচ্ছে। আমি এখন কয়েকটা ছন্দ নকল করলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে, শুনি......!
আহসান হাবীবের ছন্দ নকল করলে কেমন হয়?
“আসমানের তারা সাক্ষী,
সাক্ষী এই জমিনের ফুল,এই
নিশিরাইত বাঁশ বাগান, বিস্তর জোনাকি সাক্ষী,
সাক্ষী এই জারুল জামরুল।
আমার সোনার ময়না,
আমি তোমায় ভালোবাসি।___”

নাহ,এটা হবে না। এতে উনি আবার আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন,
-“এই বিকেলে তুমি আসমানে তারা,বাঁশ বাগানে জোনাকি কই পেলে?”
কি যে করি
('আমার আদৃতা' উপন্যাসের খন্ডাংশ)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×