somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুন এবং ...

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাশটার দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাফা ।
বিশ্বাসঘাতকটাকে দেখে ওর ভেতরে কোন অনুভূতি আসার কথা না । আসেও নি । কিচেন নাইফটা বুকে আমূল ঢুকিয়ে দিতেই ধড়মড় করে পড়ে গেল শিশির । হাত বাড়িয়ে কিছু একটা ধরতে চাইছিল বোধহয় । প্রবল ঘৃণায় এক পা পিছিয়ে এসেছিল রাফা ।

কলিং বেলের শব্দ ।
মাথা গরম করলে চলবে না । টেনে শিশিরের শরীরটা সোফার নিচে ঢুকিয়ে দিল ভাল মত ।
‘আসছি!’ একটা চিৎকার ছুড়ে ও বন্ধ দরজার উদ্দেশ্যে । শিশির যেখানে পড়েছিল সেখানে রক্তের ছাপ ।
ওটা মোছার সময় নেই । ফ্রিজ থেকে একটা কেচাপের বোতল তুলে দরজার দিকে ছুটল ও ।

এষা বাইরে থেকে একটা বোতল ভাঙ্গার শব্দ শুনে । তারপরই দরজা খুলে দেয় রাফা ।
‘দোস্ত তোকে দাঁড় করিয়ে রেখেছি কতক্ষণ ।’ দুঃখপ্রকাশের ভঙ্গী করে রাফা । ‘কিচেনে ছিলাম ।’
‘আহা – তাই বলে এভাবে দৌড়ে আসবি ? ঘরবাড়ি ভাঙ্গার স্বভাব তো যায় না তোর । ’ ড্রইং রুমের মাঝে কেচাপের ভাংঙ্গা বোতলের দিকে তাকিয়ে হাসে এষা ।
‘বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলবি – ভেতরে আয় তো !’
‘না রে । ভার্সিটির দেরী হয়ে যাচ্ছে । তুই তোর ডিভিডিগুলো ধর । অস্থির ছিল !! ড্যান ব্রাউনের কোন বইটা জানি দিতি আমাকে ? ওটা দৌড় দিয়ে নিয়ে আয় তো।’
‘আনছি ।’ হাত বাড়িয়ে ডিভিডিগুলো ধরে রাফা । ‘তুই বস তো ।’

বেডরুম থেকে বইটা নিয়ে ফিরে এসেই রাফা দেখল এষা ঠিক শিশিরের ওপরে বসে আছে, এষার পায়ের দুই ইঞ্চি দূরেই শিশিরের হাতের আঙ্গুল । কানে ইয়ারফোন ছিল এষার । গানের তালে তালে মেঝেতে পা ঠুকে চলেছে । ঢোক গেলে রাফা । পা আর দুই ইঞ্চি সরে গেলেই আর দেখতে হবে না ।
রাফাকে দেখে থেমে গেল এষার পা ঠোকাঠুকি ।

‘আংকেল কবে আসবে রে ?’ কান থেকে ইয়ারফোন খুলে বইটা হাতে নেয় এষা ।
‘আগামী সপ্তাহে হয়ত । ’
‘ওক্কে দেন । থাক তুই । আমি দৌড়ালাম । দেরি হয়ে যাচ্ছে ।’
দরজা লাগিয়ে হাঁফ ছাড়ে রাফা । বাঁচা গেল ।
*
রাফার মা নেই । বাবা ব্যাবসায়িক কাজে সিংগাপুর গেছেন কয়েকদিন আগে ।
বাসায় রাফা ছিল একা। মাত্র ছয়দিন আগে ব্রেক-আপ হয় ওর শিশিরের সাথে ।

পাঁচ বছরের রিলেশনের পর বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নেয়া যায় না । শিশির রিয়ার সাথে গত একমাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে সেটা শুনেও বিশ্বাস করেনি রাফা । হাতে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আসার পর ব্রেক-আপ করে ও শিশিরের সাথে । শিশির ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু শোনার প্রয়োজন বোধ করেনি ও ।
তাতে অবশ্য বুকের জ্বালা নেভে নি রাফার । তাকেই কেন মেনে নিতে হবে সবকিছু ?
মুক্ত বিহঙ্গের মত যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াবে শিশির । অন্যায় মেনে নিতে হবে রাফাকে ।
গতকাল রাতে শিশিরের ফোন প্রথমবারের মত ধরে রাফা । শিশির অবাক হয় ওর বাসায় এসে কথা বলার আহবানে ।
ইনিয়ে বিনিয়ে অসুস্থতার বর্ণনা দেয় রাফা ।

ঘরে ঢুকে দরজা লাগানোর পর আর বেশি দেরী করেনি ও । বিশ্বাসঘাতকটাকে জীবিতদের কাতার থেকে একরকম আউট-ই করে দিয়েছে । কোনরকম অনুশোচনা তার মধ্যে কাজ করছে না । সোফার নীচ থেকে শিশিরের মৃতদেহটা বের করে আনল । মরার পরও শয়তান শয়তান একটা হাসি লেগে আছে শিশিরের মুখে – অন্তত রাফার সেরকমই মনে হল ।

একটা শয়তানকে মেরে ফেলার জন্য জেলে যেতে পারবে না রাফা । এই মরাটাকে স্রেফ ভ্যানিশ করে ফেলতে হবে ।
অনেক কষ্টে টেনে মৃতদেহটা বাথটাব পর্যন্ত নিয়ে যায় রাফা ।
রান্নাঘর থেকে ছুড়ি আর মীট ক্লেভারটা নিয়ে আসে ।
*
চারদিন পর ।
কলিং বেলের শব্দ ।
দরজা খুলে ধূর্ত চেহারার একজন মাঝবয়েসী লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ।

‘ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত । আপনি কি মিস রাফা? ’ চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় ।
সায় দিতেই বলে ওঠে আবারও, ‘আমি আসিফ জামান । প্রাইভেট ডিটেক্টিভ । ব্যাপারটা আপনার এক্স-বয়ফ্রেন্ড শিশিরকে নিয়ে । ভেতরে আসতে পারি ।’
‘নিশ্চয় ।' এখানে বাধা দিয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দিতে চায় না রাফা । ' তবে শিশিরের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই । দশদিন আগে থেকে ওর সাথে ব্রেকআপ’
‘মি. শিশির গত চারদিন ধরে নিখোঁজ । ’ ভ্রু কুঁচকে সরাসরি রাফার দিকে তাকায় আসিফ। ‘এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন?’
‘ওর নিখোঁজ থাকায় আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই ।’ মুখের ওপর বলে দিল রাফা। ‘তবে, শুধু মাত্র প্রসঙ্গক্রমে বলছি ওকে কয়েকদিন আগে আমার বাসায় আসার জন্য ফোন দিয়েছিলাম বটে । কিন্তু ও আসে নি । আসলেও বলার কিছু থাকত না ওর । তাই উপেক্ষা করেছে কাওয়ার্ডটা । ’
‘কিন্তু আপনার বাসা থেকে মাত্র একশ গজ দূরে উনার গাড়ি পার্কড গত চারদিন ধরে । আপনি বলতে চাইছেন এ ব্যাপারে কিছু জানেন না আপনি ?’
‘আপনাকে আমি বলেছি ও আমার বাসায় আসেনি ।’
‘উড ইউ মাইন্ড ইফ আই চেক?’ পারমিশনের ধার না ধেরে উঠে পড়ে প্রাইভেট ডিটেক্টিভ ।

তারস্বরে আপত্তি করতে করতে পিছে পিছে ছুটে রাফা । কান না দিয়ে সবগুলো ঘর ঘুরে আসে বিচ্ছু ডিটেকটিভ । বাথরুমগুলোতেও উঁকি দেয় । অবশেষে ফিরে আসে ড্রইং রুমে । ডিটেকটিভের মুখের দিকে ধরে চামচ নাচায় রাফা রাগে ।
‘আর ইউ হ্যাপী নাউ ? আপনাকে বাসার ত্রি-সীমানায় দেখলে আমি পুলিশ ডাকব এর পরে । কথাটা মাথায় রাখলে খুশি হব ।’

দড়াম করে দরজা লাগায় ও ।
*
শিশিরের পুরো শরীরটা টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখতে সারা রাত পেরিয়ে যায় সেদিন রাফার । ছোট ছোট পলিব্যাগে করে রাখায় দেড় দিনের মধ্যে শক্ত হয়ে যায় ওর শিকার ।

পরের দুই দিনে মোট ছয়বার বেরিয়ে বিভিন্ন ডাস্টবিনে ডাম্প করে রাফা শিশিরের দেহাবশেষ ।
আর দুইবার বের হলেই কাজ শেষ হয়ে যেত ওর । এই সময় বেয়াদব ডিটেকটিভের আবির্ভাব , সন্ধ্যার পর আজই আরেকবার বের হতে হবে – ঠিক করে রাফা ।

ওই ব্যাটা ঘাঘু লোক । এর পরের বার ভালো মত সার্চ করবে । আজ রাতের প্রথম কাজ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রক্তের ছাপ সম্পূর্ণ দূর করা ।
*
আসিফ জামান এ লাইনে নতুন । তবে প্রথম পাঁচটি কেসেই অভাবনীয় সাফল্যে তার নাম ডাক ভালই ছড়িয়েছে ।
বাসায় এসেও মাথা থেকে ব্যাপারটা সরাতে পারছে না ও ।
শিশির নামক ছেলেটার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কেসটা অনেক বোরিং মনে হলেও টাকার অংক ফেলনা ছিল না । কাজেই হাতে নেয় ও ।

শিশিরের ব্যাকগ্রাউন্ড সুবিধের না । ড্রাগসের ব্যাপারে হালকা পাতলা কানেকশান দেখতে পেয়েছিল আসিফ । তবে এই এক্স-গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারটা ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে ব্যাপারটা ।
আসিফের মনে বদ্ধমূল হল ধারণা – খুন হয়ে গেছে শিশির ।
সাত দিনেও দেহ উদ্ধার করা না যাওয়ায় অফিশিয়ালি স্বীকার করা হচ্ছে না যদিও । খুবই ধূর্ততার পরিচয় দিয়েছে কেউ ।
নো বডি – নো ক্রাইম – কথাটার সত্যতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আসিফ ।

‘চা বানিয়েছি । দেব তোকে ?’ দরজা থেকে জানতে চাইলেন মা ।
‘দাও মা । চিনি বেশি দেবে না কিন্তু ।’
আবার গভীর চিন্তায় ডুবে যায় আসিফ ।
এই সময় কিছু একটা মনে পড়ায় সোজা হয়ে বসে পড়ে ও ।
মার চামচ হাতে ফ্রিজ খোলার দৃশ্য মাথায় এনে দেয় আইডিয়াটা ।
‘দেয়ার ওয়াজ দ্যা বডি ।’
উদ্ভাবনার আনন্দে চোখ চকচক করে ওঠে আসিফের ।

‘মা, বের হচ্ছি আমি । এসে তোমার চা খাব ।’
ছুট লাগায় আসিফ ।
*
ছুড়ি আর হাড্ডি কোপানোর দাটা ভালো মত ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধোয় রাফা ।
এগুলোর কাজ শেষ ।
রিপ্লেসমেন্ট কিনে কিনে ফেলে দেওয়া যাবে ওগুলোও ।
কলিং বেল বেজে ওঠে এসময় ।

দরজা খুলে হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে রাফার চেহারা, ‘বাবা ! একটা ফোনও তো দিতে পারতে ?’
‘সারপ্রাইজ, মামণি ।’ সম উচ্ছ্বাসেই বলেন মি. ইমতিয়াজ ।
বাবার সাথে কথা বলতে বলতে আড়চোখে একবার ডীপ ফ্রীজের দিকে তাকায় রাফা । ছোট ছোট পিসে আস্ত প্রাইভেট ডিটেকটিভটাই ঢুকে আছে ।

বাবাকে না বুঝতে দিয়ে আগামী কয়কটা দিন ঘন ঘন বের হতে হবে ওকে ।

[সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে :P :P ]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×