somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাংলাদেশ এবং বন্দে মাতরম

১৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯ মার্চে বাংলাদেশীরা আম্পায়ারের তিন তিনটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তই ফেভরিট টীম ইন্ডিয়ার পক্ষে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি। কারণ, একটা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, মেনে নেওয়া চলে।
দুটো? হতেই পারে, আম্পায়ারও মানুষ।

কিন্তু তিনটা?
কাম অন!

তারওপর ব্যাটসম্যানের অনুকূলে অস্পষ্ট সিদ্ধান্ত [বাউন্ডারি লাইনে ধাওয়ানজী(!)র ক্যাচ] যায়নি সেদিন, নুনুর নিচের বলও 'নো বল' হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারসহ বহির্বিশ্বের অনেকেই এটা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এধরণের আম্পায়ারিং কখনোই গ্রহণযোগ্য না।

হক আই থেকে 'নুনু'র নিচের বলটা সরিয়ে ফেলে আইসিসি সমালোচনার তোপে পড়েছে। হাজারটা ভিডিও Bangladesh Region এ প্রচারযোগ্য হলেও, ক্রিকইনফো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বাউন্ডারি লাইনের ক্যাচটাকে "Region: India" বানিয়ে সমালোচনার তোপে পড়েছে। পুরো ওয়ার্ল্ড কাপের আর কোন ভিডিও দেখার সময় বাংলাদেশ অঞ্চলের কাওকে এই সমস্যাতে পড়তে হয়নি কিন্তু।

এরা সেই সমালোচনা শোনার যোগ্যতা যথেষ্ট পরিমাণে বাটপাড়ি করে অর্জন করে নিয়েছিলই বলব আমি। নাহলে অবশ্যই ক্ষোভের ঝড় উঠবে জেনেও এসব কেউ লুকিয়ে রাখে না।

ফেসবুকে বাংলাদেশীরা ঝড় তুলেছিল। International Cricket Council কে আমরা বলতে শুরু করেছিলাম ICC - Indian Cheating Council​। এতে করে ইন্ডিয়ান দাদাবাবুদের খুব লেগেছিল। তাঁদের মনে হয়েছিল খেলাটা ফেয়ার প্লে হয়েছিল [কাম অন, তিনটা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত? তিনটাই ইন্ডিয়ার পক্ষে?] । বাংলাদেশীরা নাকি 'ঘেউ ঘেউ' করছিল, কারণ তারা খেলা পারে না তো। আর কি করবে? বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে কোলকাতার পাড়ার দলও হারাতে পারবে বলে বলেছিলেন একাধিক কোলকাতার দাদাবাবু।

আমি তাঁদের একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমরা এত যোগ্য হলে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল টীমে তোমাদের দেখা যায় না কেন? বিপুল সংখ্যক বাঙ্গালীর মধ্যে একজনেরও যোগ্যতা নাই ওই টপ ১১তে ঢোকার তা তো আমি বিশ্বাস করি না। তারমানে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কি তোমাদের রেখেছে বাঙ্গালী করে, ইন্ডিয়ান করেনি?
অথচ, আমরাই কি না কাংলাদেশ।

যাই হোক, কোলকাতার সেই বাবু পাড়ার টীম দিয়ে আমাদের কিন্ডারগার্টেনের ছেলে ছোকড়াকে হারাতে চেয়েছিলেন কি না জানি না। ১৯৯৯তে আইসিসি আমাদের দেশ ভ্রমণ করে ক্রিকেট ক্রেজ দেখেই নরম হয়ে এসেছিল। আমরা মাঠে ঘাটে তেপান্তরে দিন রাত বাল ফেলতে ক্রিকেট খেলে খেলে বড় হই না। কোলকাতার পাড়ার যে কোন দল আমাদের দেশের বস্তির পোলাপাইনের দলকেও যদি ক্রিকেটে হারিয়ে দেখাতে পারে, তাহলে আমি তাদের যে কোন কথা আজীবন বিনা তর্কে মেনে নেব।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার যেটা ১৯শে মার্চের পর হয়েছিল, কোলকাতার অনেকেই তীব্র গালিগালাজ করেছিলেন আমাদের, বাংলাদেশীদের। আনস্টেবল একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল এখানে, ফেসবুক সহ আর সব গণযোগাযোগ মাধ্যমেও। স্নায়ুযুদ্ধই বলা যায় সেটাকে। দিনগুলো সবার মনে আছে বলেই মনে হয়।

কোলকাতার বাবুরা আমাদের কি বলেছে জানেন তো? 'যেসব বাংলাদেশীরা আজ নিজেদের বাঘের বাচ্চা বলছে, তাদের জন্য বিশেষ খবর। সেদিন রাতে বাঘ নয়, পাড়ার কুকুরটা তোদের ঘরে ঢুকেছিল।'
তারা আরও বলেছিল, "ভারতের কাছে তোরা ছোট্ট এক শিশু / ইন্ডিয়ার ব্যাটিং দেখে করে ফেলবি হিসু,"

প্রতিটা পোস্টে পাঁচ হাজার করে লাইক। চার-ছয় হাজার করে কমেন্ট। বেশিরভাগেই অশ্রাব্য ভাষাতে গালাগালি। একজন কোলকাতাবাসী বলেছিল, ইন্ডিয়ার মাটিতে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশীদের কাওকে তিনি দেখলেই জবাই করে ফেলবেন, এই শপথ নিয়েছেন। তারপর জেল ফাঁসী যা-ই হোক না কেন।

আমি তাঁর কমেন্টের প্রতিউত্তরে শুধু বলেছিলাম, আমাদের রক্ত এই মাটিতে পড়েছিল। সেই রক্তের বিনিময়ে তোমরা বুক ফুলিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারীতে নিজেদের ভাষার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন কর। রক্তের শোধ তো আমাদের গলা কেটেই দিতে চাবে। নাহলে আর ভারতীয় কেন?

সময় পাল্টেছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে আজ মিরপুরের মাঠে যাদের হিসু হয়েছিল তাদের কেউ বাংলাদেশী ছিল না এতটুকু নিশ্চিত। তবে, আজকের দিনে আম্পায়ারের কারণে 'নট আউট'কে আউট দেওয়া হয়েছে, এমন বিতর্কের সম্ভাবনা পর্যন্ত নেই। প্রতিটি সিদ্ধান্ত এতটাই পরিষ্কার ছিল। সেজন্যই বাংলাদেশ জিততে পেরেছে।

ভুল সিদ্ধান্তকে ঠিক বানিয়ে জোর করে হারালে তো আর জিততে পারে না কেউ। তাই না?
ফেয়ার গেম খেল। তারপর দেখবে, কাদের ঘরে সেরাতে কুকুর ঢুকেছিল। :)

কোলকাতার যারা যারা সেসময় আমার দেশকে, আমার দেশের মানুষকে অপমান করেছিল, তাদের সবাইকে বলছি, আপনারা লো ক্লাস বাইনচোদ ছাড়া আর কিছু না। এবং ঘিলুর জায়গাতে সম্ভবতঃ হলুদ রঙের আর কোন পদার্থ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে অভ্যস্ত ছিলেন আপনারা। তানাহলে বাংলাদেশের ফর্ম দেখে এতটুকু বোঝা উচিত ছিল, সে ম্যাচে ভুল সিদ্ধান্ত না থাকলে রেজাল্ট কি হত।

(আমার মনে হয় তারা বুঝেছিলও। ক্রিকেট বুঝলে এতটুকু বোঝার কথা। তবে স্বীকার করে ছোট হতে চায়নি এই আরকি। এটা ভাবেনি, স্বীকার করলে বড়ই হতে পারত তারা। আম্পায়ারের ভুল তো আর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টীমের দোষ ছিল না)

বিশিষ্ট সেসব বেজন্মারা এতটুকুও বুঝেনি, আগামীতে ভারত কোন ম্যাচই হবে না বাংলাদেশের সামনে। কুকুরের সাথে বাঘের লড়াই লাগলে বাঘই জিতবে। ইগো থেকে উদাহরণ টানছি না। শক্তির তুলনা করছি।

কয়েক বছর আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশে পার্থক্য আছে। ওই সময়ের বাংলাদেশকে বিড়াল বললে তাও কিছুটা বেস থাকতে পারত। আমরা নড়বড়ে একটা দল ছিলাম। এই বাংলাদেশের পরিবর্তন যারা দেখেও দেখে না, তাদের ক্রিকেট খেলা দেখাই উচিত না। খেলা না বুঝলে দেখবে কেন?

BTW, এই পোস্টেও ইন্ডিয়ান কোন ক্রিকেটারকে বা গোটা ইন্ডিয়াকে গালিগালাজ করিনি, এটা কি কোলকাতার বাবুরা লক্ষ্য করছেন? বেজন্মা এবং বোনকে স্ত্রীরূপে ভোগ করা কিছু ইন্ডিয়ান অন্যায় করেছে। তাদের গালির অংশটুকু তারাই পাবে। একজন বাংলাদেশী হিসেবে অবিবেচকের মত গোটা জাতির ওপর আমরা রাগ ঝাড়তে পারিনে।

আমরা কাংলাদেশী, তাই তো?
'কাংলাদেশ' শব্দটা উচ্চারণ করতেও ভয় লাগবে ক'টা দিন পর তা কি ইগোবাজ, অন্য জাতির প্রতিটা মানুষকে আক্রমণ করতে জানা ইন্ডিয়ানদের মাথাতে ঢুকছে?

গালিগালাজ যারা করেছিল সে সময়, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন আজকে আবারও করতে ইচ্ছা করছে।
দাদাবাবু?

নুনুর নিচের বল কি করে নো-বল হয়?
ক্রিকেট আইনের কোথায় আছে, দাদা?

#Fair_Play_Bangladesh_Defeated_India
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×